Dhaka 6:43 pm, Tuesday, 24 December 2024
বেকিং নিউজ :
Logo বাঘায় অবৈধ পুকুর খননে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা Logo লালমোহনে ফুটপাতের অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ অভিযান Logo বাউফলে সাদপন্থি তাবলীগ জামাতের নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল Logo বড়দিন উপলক্ষে বুধবার বন্ধ থাকবে বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি Logo গোদাগাড়ীতে রাত হলেই শুরু হয় পুকুর খননের মহাউৎসব,নিরব ভূমিকায় প্রশাসন Logo ময়মনসিংহে সরকারী দপ্তর থেকে বিদেশি পিস্তলসহ বিপুল অস্ত্র-মাদক উদ্ধার করেছে পুলিশ Logo রাজশাহী জেলা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত-সভাপতি আসাদ-সম্পাদক আখতার Logo লালমোহন টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক ফল প্রকাশ ও অভিভাবক সমাবেশ Logo বাউফলে ফ্লিম্মি ষ্টাইলে ধান ও মাছ লুটের অভিযোগ Logo বড়াইগ্রামে ছাত্রদলের আয়োজনে দুস্থদের মাঝে শীত বস্ত্র কম্বল উপহার

সরকারীকরণ হচ্ছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর

জাহানারা ইমাম বাঙালির স্বাধিকার ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি কোনো রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তবুও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের নানা ক্রান্তিলগ্নে তাঁর উপস্থিতি ছিল অগ্রভাগে। একাত্তরের ঘাতক দালালবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী, শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিকসহ তাঁর নানা পরিচয় থাকলেও ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমাম’ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত।

আজ তাঁর ৯৫তম জন্মদিন। ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন তিনি মারা যান। মৃত্যুর ৩০ বছর পর সরকারিভাবে শহীদ জননীর স্মৃতি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ২০০৭ সালের জুনে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে জাহানারা ইমামের বাড়িতে পারিবারিক উদ্যোগে গড়ে তোলা ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর’ আত্তীকরণ করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার জাতীয় জাদুঘরে বিশেষ অনুষ্ঠান হবে। এতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীসহ বিশিষ্টজন উপস্থিত থাকবেন।

জানা যায়, আত্তীকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর’-এর সমুদয় তত্ত্বাবধান গ্রহণ করবে জাতীয় জাদুঘর। ইতোমধ্যে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরের স্থাবর সম্পত্তির (ফ্ল্যাট ও অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন) দলিল জাতীয় জাদুঘরকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। দলিল হস্তান্তর করবেন জাহানারা ইমামের সন্তান প্রবাসী সাইফ ইমাম জামী।
এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমামের কর্মময় জীবন তরুণদের অনুপ্রাণিত করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সরকার সেই উদ্যোগই বাস্তবায়ন করছে।’

জাহানারা ইমাম ছিলেন ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে তাঁর সন্তান রুমী আর ফেরেননি; স্বামীও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হন। এর পরও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। একটুও দমে যাননি।

 

১৯৭৫ সালে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ হয়ে যায়। এর পর জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি বেগবান হয়ে ওঠে। তরুণ সমাজকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি আদায়ে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেন। তখন প্রতীকী গণআদালতে বিচারের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়। যার ধারাবাহিকতায় দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দ্বার উন্মুক্ত হয় ২০১০ সালে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে ২০১৩ সালে তরুণ প্রজন্ম ঢাকার শাহবাগে সমবেত হয়। তখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি আদায়ের আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন জাহানারা ইমাম। তাঁর ছবিসদৃশ বিলবোর্ড ও প্ল্যাকার্ড স্থান পেয়েছিল শাহবাগ চত্বরে।

রাজধানীর পুরোনো এলিফ্যান্ট রোডে ইস্টার্ন মল্লিকা থেকে একটু সামনেই গড়ে উঠেছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ‘কণিকা’ নামের বাড়িটির নামকরণ জাহানারা ইমামেরই করা। ২০০৩ সালে  মূল বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়। তারপর সেখানে গড়ে ওঠে বহুতল ভবন। ২০০৭ সালে ওই ভবনের দোতলায় জাদুঘরটি গড়ে তোলা হয়েছে। জাহানারা ইমামের ছোট সন্তান সাইফ ইমাম জামী এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে জাদুঘরটি সাজিয়েছেন।

বর্তমানে জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে আছেন ফরিদা ইয়াছমিন। তিনি বলেন, জাদুঘরে জাহানারা ইমাম-সংশ্লিষ্ট পাঁচ হাজারের বেশি বই-পুস্তক রয়েছে। স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে দুই হাজারের বেশি।
জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমামের স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘরটি  জাতীয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে আত্তীকরণ করা হচ্ছে। ফলে জাতীয় জাদুঘরই এর সব দায়ভার গ্রহণের পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ করবে।’

ট্যাগস :

Write Your Comment

About Author Information

জনপ্রিয়

বাঘায় অবৈধ পুকুর খননে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

সরকারীকরণ হচ্ছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর

আপলোড সময় : 10:56:41 pm, Friday, 3 May 2024

জাহানারা ইমাম বাঙালির স্বাধিকার ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি কোনো রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তবুও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের নানা ক্রান্তিলগ্নে তাঁর উপস্থিতি ছিল অগ্রভাগে। একাত্তরের ঘাতক দালালবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী, শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিকসহ তাঁর নানা পরিচয় থাকলেও ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমাম’ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত।

আজ তাঁর ৯৫তম জন্মদিন। ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন তিনি মারা যান। মৃত্যুর ৩০ বছর পর সরকারিভাবে শহীদ জননীর স্মৃতি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ২০০৭ সালের জুনে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে জাহানারা ইমামের বাড়িতে পারিবারিক উদ্যোগে গড়ে তোলা ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর’ আত্তীকরণ করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার জাতীয় জাদুঘরে বিশেষ অনুষ্ঠান হবে। এতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীসহ বিশিষ্টজন উপস্থিত থাকবেন।

জানা যায়, আত্তীকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর’-এর সমুদয় তত্ত্বাবধান গ্রহণ করবে জাতীয় জাদুঘর। ইতোমধ্যে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরের স্থাবর সম্পত্তির (ফ্ল্যাট ও অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন) দলিল জাতীয় জাদুঘরকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। দলিল হস্তান্তর করবেন জাহানারা ইমামের সন্তান প্রবাসী সাইফ ইমাম জামী।
এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমামের কর্মময় জীবন তরুণদের অনুপ্রাণিত করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সরকার সেই উদ্যোগই বাস্তবায়ন করছে।’

জাহানারা ইমাম ছিলেন ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে তাঁর সন্তান রুমী আর ফেরেননি; স্বামীও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হন। এর পরও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। একটুও দমে যাননি।

 

১৯৭৫ সালে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ হয়ে যায়। এর পর জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি বেগবান হয়ে ওঠে। তরুণ সমাজকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি আদায়ে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেন। তখন প্রতীকী গণআদালতে বিচারের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়। যার ধারাবাহিকতায় দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দ্বার উন্মুক্ত হয় ২০১০ সালে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে ২০১৩ সালে তরুণ প্রজন্ম ঢাকার শাহবাগে সমবেত হয়। তখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি আদায়ের আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন জাহানারা ইমাম। তাঁর ছবিসদৃশ বিলবোর্ড ও প্ল্যাকার্ড স্থান পেয়েছিল শাহবাগ চত্বরে।

রাজধানীর পুরোনো এলিফ্যান্ট রোডে ইস্টার্ন মল্লিকা থেকে একটু সামনেই গড়ে উঠেছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ‘কণিকা’ নামের বাড়িটির নামকরণ জাহানারা ইমামেরই করা। ২০০৩ সালে  মূল বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়। তারপর সেখানে গড়ে ওঠে বহুতল ভবন। ২০০৭ সালে ওই ভবনের দোতলায় জাদুঘরটি গড়ে তোলা হয়েছে। জাহানারা ইমামের ছোট সন্তান সাইফ ইমাম জামী এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে জাদুঘরটি সাজিয়েছেন।

বর্তমানে জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে আছেন ফরিদা ইয়াছমিন। তিনি বলেন, জাদুঘরে জাহানারা ইমাম-সংশ্লিষ্ট পাঁচ হাজারের বেশি বই-পুস্তক রয়েছে। স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে দুই হাজারের বেশি।
জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমামের স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘরটি  জাতীয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে আত্তীকরণ করা হচ্ছে। ফলে জাতীয় জাদুঘরই এর সব দায়ভার গ্রহণের পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ করবে।’