Dhaka 1:12 am, Tuesday, 24 December 2024

সম্ভাবনার সন্দ্বীপ হবে ‘সিঙ্গাপুর’

সন্দ্বীপ। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে একটুকরো বিচ্ছিন্ন জনপদ। একসময় জলপথে সহজ যোগাযোগ সুবিধার কারণে যে ভূমিতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ভ্রমণকারীরা তাদের জাহাজ নোঙর করতেন এবং বসতি স্থাপনে আগ্রহী হতেন, যেখানে প্রাণের আবাদ হয়েছিল হাজার বছর আগে, সেই ভূমিতেই সপ্তদশ শতকে ছিল জাহাজ, লবণ ও বস্ত্রশিল্পের সম্ভার। সময়ের ব্যবধানে সেই সোনা ফলানো উর্বর ভূমিতেই আছড়ে পড়তে থাকে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বঙ্গোপসাগরের ঢেউ। ধারাবাহিক ভাঙনে বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে ৭৬২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সন্দ্বীপের ভূমি টিকে থাকে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ ভূমিই নাই হয়ে যায়। 

 

বেঁচে থাকার অবলম্বন ভূমিসহ সর্বস্ব হারানো তরুণ, যুবক ও শিক্ষিতরা জীবিকার সন্ধানে দ্বীপ ছেড়ে হয়ে যান দেশ-দেশান্তরী। আর যারা নিরুপায় হয়ে দ্বীপ আঁকড়ে থাকেন তাদের বড় একটি অংশ জীবন পার করেন চরম দারিদ্র্যে।

সেই হতশ্রী জনপদে নতুন স্বপ্নের জন্ম হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। সন্দ্বীপে ফের শিল্পসম্ভার হবে, সেখানকার কলকারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে আয় হবে বিলিয়ন ডলার, মানুষের জীবনমান বাড়বে, যোগাযোগ অবকাঠামো সুদৃঢ় হবে, সমানতালে এগোবে কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন খাত- এমন স্বপ্ন এখন হাতের মুঠোয়। সন্দ্বীপের চারপাশে বঙ্গোপসাগরের বুক চেতিয়ে জেগে ওঠা হাজার হাজার একর চরে জন্ম নেওয়া স্বপ্নের নাম ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’।

 

সার্বিকভাবে জটিল জীবন-জীবিকার এই দ্বীপ হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির গেমচেঞ্জার। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির সমৃদ্ধ দেশ সিঙ্গাপুরের আয়তন মাত্র ৬৯৯ বর্গকিলোমিটার। হীরক আকৃতির ভূখণ্ডের সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া থেকে জোহরা প্রণালী এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর প্রণালী দ্বারা বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপরাষ্ট্র। আবার এই দ্বীপরাষ্ট্রের ভেতরেও বহু দ্বীপ আছে। সব দ্বীপ মিলিয়ে আধুনিক দ্বীপ রাষ্ট্রটির অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ উন্নত। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এশিয়ায় বেশ অগ্রগ্রামী। সেই সিঙ্গাপুরের আয়তনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় সন্দ্বীপ। সিঙ্গাপুরের বিশ্ব অর্থনীতির পরিচিত দেশ; আর প্রায় সমান আয়তনের সন্দ্বীপকে বাংলাদেশই যেন ভালোভাবে চেনে-জানে না। অথচ দ্বীপটিই বাংলাদেশের অর্থনীতির গেমচেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে সুনিপুণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে।

সন্দ্বীপের চরে প্রধানমন্ত্রী কীভাবে শিল্পপ্রাণ সঞ্চারে ভূমিকা রাখলেন? সে প্রশ্নের উত্তর শুনিয়েছেন সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা। বলেছেন, ‘পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলের বর্ধিত অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নিজে সন্দ্বীপের নতুন চরাঞ্চল শিল্পজোনের জন্য নির্ধারণ করেছেন এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) শিল্পজোন করার অনুমোদন দিয়েছেন।’

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

সম্ভাবনার সন্দ্বীপ হবে ‘সিঙ্গাপুর’

আপলোড সময় : 08:31:18 pm, Friday, 5 April 2024

সন্দ্বীপ। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে একটুকরো বিচ্ছিন্ন জনপদ। একসময় জলপথে সহজ যোগাযোগ সুবিধার কারণে যে ভূমিতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ভ্রমণকারীরা তাদের জাহাজ নোঙর করতেন এবং বসতি স্থাপনে আগ্রহী হতেন, যেখানে প্রাণের আবাদ হয়েছিল হাজার বছর আগে, সেই ভূমিতেই সপ্তদশ শতকে ছিল জাহাজ, লবণ ও বস্ত্রশিল্পের সম্ভার। সময়ের ব্যবধানে সেই সোনা ফলানো উর্বর ভূমিতেই আছড়ে পড়তে থাকে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বঙ্গোপসাগরের ঢেউ। ধারাবাহিক ভাঙনে বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে ৭৬২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সন্দ্বীপের ভূমি টিকে থাকে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ ভূমিই নাই হয়ে যায়। 

 

বেঁচে থাকার অবলম্বন ভূমিসহ সর্বস্ব হারানো তরুণ, যুবক ও শিক্ষিতরা জীবিকার সন্ধানে দ্বীপ ছেড়ে হয়ে যান দেশ-দেশান্তরী। আর যারা নিরুপায় হয়ে দ্বীপ আঁকড়ে থাকেন তাদের বড় একটি অংশ জীবন পার করেন চরম দারিদ্র্যে।

সেই হতশ্রী জনপদে নতুন স্বপ্নের জন্ম হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। সন্দ্বীপে ফের শিল্পসম্ভার হবে, সেখানকার কলকারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে আয় হবে বিলিয়ন ডলার, মানুষের জীবনমান বাড়বে, যোগাযোগ অবকাঠামো সুদৃঢ় হবে, সমানতালে এগোবে কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন খাত- এমন স্বপ্ন এখন হাতের মুঠোয়। সন্দ্বীপের চারপাশে বঙ্গোপসাগরের বুক চেতিয়ে জেগে ওঠা হাজার হাজার একর চরে জন্ম নেওয়া স্বপ্নের নাম ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’।

 

সার্বিকভাবে জটিল জীবন-জীবিকার এই দ্বীপ হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির গেমচেঞ্জার। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির সমৃদ্ধ দেশ সিঙ্গাপুরের আয়তন মাত্র ৬৯৯ বর্গকিলোমিটার। হীরক আকৃতির ভূখণ্ডের সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া থেকে জোহরা প্রণালী এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর প্রণালী দ্বারা বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপরাষ্ট্র। আবার এই দ্বীপরাষ্ট্রের ভেতরেও বহু দ্বীপ আছে। সব দ্বীপ মিলিয়ে আধুনিক দ্বীপ রাষ্ট্রটির অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ উন্নত। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এশিয়ায় বেশ অগ্রগ্রামী। সেই সিঙ্গাপুরের আয়তনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় সন্দ্বীপ। সিঙ্গাপুরের বিশ্ব অর্থনীতির পরিচিত দেশ; আর প্রায় সমান আয়তনের সন্দ্বীপকে বাংলাদেশই যেন ভালোভাবে চেনে-জানে না। অথচ দ্বীপটিই বাংলাদেশের অর্থনীতির গেমচেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে সুনিপুণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে।

সন্দ্বীপের চরে প্রধানমন্ত্রী কীভাবে শিল্পপ্রাণ সঞ্চারে ভূমিকা রাখলেন? সে প্রশ্নের উত্তর শুনিয়েছেন সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা। বলেছেন, ‘পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলের বর্ধিত অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নিজে সন্দ্বীপের নতুন চরাঞ্চল শিল্পজোনের জন্য নির্ধারণ করেছেন এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) শিল্পজোন করার অনুমোদন দিয়েছেন।’