Dhaka 8:02 am, Wednesday, 25 December 2024

শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীরা পড়বেন ব্ল্যাকলিস্টে

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শুরু হবে এ বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত দেবেন দলীয় সভানেত্রী। দলীয় সূত্র বলছে, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ অমান্যকারী ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের রাখা হবে ব্ল্যাকলিস্টে। আগামী সম্মেলনে দলীয় পদ থেকে বাদ দেওয়া এবং ভবিষ্যতে মনোনয়ন না-ও পেতে পারেন ব্ল্যাকলিস্ট তালিকায় থাকা নেতারা। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, অতীতে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিভিন্ন সময়ে নীরবে শাস্তি পেয়েছেন দলের অনেকেই। সময়ে সময়ে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা দলীয় পদ হারিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি কেউ কেউ। দল তাদের কাউকে বহিষ্কার না করলেও পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে এদের অনেকেই দলীয় রাজনীতি থেকে ছিটকে গেছেন। এখনো দলে নানাভাবে কোণঠাসা হয়ে আছেন কেউ কেউ। এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী এমপি-মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। যেসব এমপি-মন্ত্রী দলের সিদ্ধান্ত মানেননি পরবর্তীতে দলীয় কমিটিগুলোতে তাদের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। অনেকে কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন। যেসব মন্ত্রী দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদের প্রার্থী করেছেন, তারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর আস্থাভাজনের তালিকা থেকে বাদ যাবেন। অনেক এমপি হয়তো পরবর্তী নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রতীক ও প্রার্থী না দিয়ে উপজেলা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে তোলার সিদ্ধান্ত কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। জমে উঠেছে ভোটের মাঠ। তবে একই সঙ্গে বেড়ে গেছে সংঘাতের ঘটনাও। এ সংঘাতের আগুনে ঘি ঢেলেছেন এমপি-মন্ত্রীরা। মাইম্যান বসানোর তাড়নায় এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরাও দাঁড়িয়ে গেছেন ভোটের মাঠে। দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দলীয় নির্দেশনা ছিল, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মন্ত্রী-এমপিরা সমর্থন দেবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের এ নির্দেশনা অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি মানেননি। তারা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের প্রার্থী করেছেন। যারা আবার আত্মীয়-স্বজনকে প্রার্থী করেননি, তারা নিজস্ব বলয়ের ব্যক্তিকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখার উদ্দেশে। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, ঢালাও বহিষ্কার বা তাৎক্ষণিকভাবে দল থেকে বের করে দেওয়ার নীতিতে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না। দলীয় নির্দেশ অমান্য করার বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মনে রাখবেন এবং ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী নীরবে এবং ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেবেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, আজকের বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের বিভাগ অনুযায়ী কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে প্রার্থী হয়েছেন সে ব্যাপারে প্রতিবেদন তুলে ধরবেন। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ‘কারণ দর্শানোর নোটিস’ জারি করা হতে পারে। পরবর্তীতে জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সতর্ক করা হবে বা স্বজনদের পদ-পদবি থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করে উপজেলা নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও অবাধে অনুষ্ঠিত হতে পারে এটিই আমাদের মূল লক্ষ্য। আশা করছি আজকের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তগুলো আমরা নিতে পারব। খুলনা বিভাগের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয় প্রতীক ও প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচনের মাঠ সবার জন্যই উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তারপরও যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা এখনো ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন তাদের তালিকা আমরা প্রস্তুত করেছি। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ তালিকা তুলে ধরা হবে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীরা পড়বেন ব্ল্যাকলিস্টে

আপলোড সময় : 08:54:08 pm, Wednesday, 1 May 2024

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শুরু হবে এ বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত দেবেন দলীয় সভানেত্রী। দলীয় সূত্র বলছে, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ অমান্যকারী ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের রাখা হবে ব্ল্যাকলিস্টে। আগামী সম্মেলনে দলীয় পদ থেকে বাদ দেওয়া এবং ভবিষ্যতে মনোনয়ন না-ও পেতে পারেন ব্ল্যাকলিস্ট তালিকায় থাকা নেতারা। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, অতীতে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিভিন্ন সময়ে নীরবে শাস্তি পেয়েছেন দলের অনেকেই। সময়ে সময়ে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা দলীয় পদ হারিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি কেউ কেউ। দল তাদের কাউকে বহিষ্কার না করলেও পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে এদের অনেকেই দলীয় রাজনীতি থেকে ছিটকে গেছেন। এখনো দলে নানাভাবে কোণঠাসা হয়ে আছেন কেউ কেউ। এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী এমপি-মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। যেসব এমপি-মন্ত্রী দলের সিদ্ধান্ত মানেননি পরবর্তীতে দলীয় কমিটিগুলোতে তাদের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। অনেকে কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন। যেসব মন্ত্রী দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদের প্রার্থী করেছেন, তারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর আস্থাভাজনের তালিকা থেকে বাদ যাবেন। অনেক এমপি হয়তো পরবর্তী নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রতীক ও প্রার্থী না দিয়ে উপজেলা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে তোলার সিদ্ধান্ত কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। জমে উঠেছে ভোটের মাঠ। তবে একই সঙ্গে বেড়ে গেছে সংঘাতের ঘটনাও। এ সংঘাতের আগুনে ঘি ঢেলেছেন এমপি-মন্ত্রীরা। মাইম্যান বসানোর তাড়নায় এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরাও দাঁড়িয়ে গেছেন ভোটের মাঠে। দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দলীয় নির্দেশনা ছিল, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মন্ত্রী-এমপিরা সমর্থন দেবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের এ নির্দেশনা অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি মানেননি। তারা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের প্রার্থী করেছেন। যারা আবার আত্মীয়-স্বজনকে প্রার্থী করেননি, তারা নিজস্ব বলয়ের ব্যক্তিকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখার উদ্দেশে। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, ঢালাও বহিষ্কার বা তাৎক্ষণিকভাবে দল থেকে বের করে দেওয়ার নীতিতে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না। দলীয় নির্দেশ অমান্য করার বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মনে রাখবেন এবং ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী নীরবে এবং ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেবেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, আজকের বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের বিভাগ অনুযায়ী কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে প্রার্থী হয়েছেন সে ব্যাপারে প্রতিবেদন তুলে ধরবেন। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ‘কারণ দর্শানোর নোটিস’ জারি করা হতে পারে। পরবর্তীতে জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সতর্ক করা হবে বা স্বজনদের পদ-পদবি থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করে উপজেলা নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও অবাধে অনুষ্ঠিত হতে পারে এটিই আমাদের মূল লক্ষ্য। আশা করছি আজকের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তগুলো আমরা নিতে পারব। খুলনা বিভাগের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয় প্রতীক ও প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচনের মাঠ সবার জন্যই উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তারপরও যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা এখনো ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন তাদের তালিকা আমরা প্রস্তুত করেছি। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ তালিকা তুলে ধরা হবে।