Dhaka 6:24 pm, Saturday, 21 December 2024
বেকিং নিউজ :
Logo রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন নিহত Logo দাউদকান্দির বারোপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে আওয়ামীলীগ পন্থী সদস্য সচিব, নেতাকর্মীদের তীব্র ক্ষোভ Logo ভিক্টোরিয়া কলেজ রোভার স্কাউটের ৫০ বছর উদযাপন Logo সংবিধান দিয়ে ফ্যাস্টিট হাসিনা দেশের মানুষকে হত্যা করেছে:ইসহাক খন্দকার Logo সোনাইমুড়ীতে হোসেনপুর ফাতেমা (রা.) মহিলা মাদরাসার উদ্বোধন Logo মোহনপুরে ২০ বছর পরে আগামীকাল উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল Logo নাটোরে মহাশ্মশানে ডাকাতি, মন্দিরে লুটপাট ও খুন Logo রাজশাহী তানোরে দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রতারণায় প্রথম স্ত্রী নিঃস্ব Logo সাজাভোগ শেষে ভারত থেকে দেশে ফিরল ১৫ বাংলাদেশি নারী-শিশু Logo হোমনাকে জেলা ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগে জনপ্রশাসনের তাগিদ

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাবে সরকারের ৯৭৮টি দপ্তরে ৫ লাখ ৩ হাজার ৩৩৩টি পদ শূন্য রয়েছে। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে কর্মকর্তাদের ধারণা। এসব শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দিতে ৮৬ সচিব, ৮ বিভাগীয় কমিশনার ও ৬৪ জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের স্বাক্ষরে ওই চিঠি দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন করে সরকার গঠনের পর থেকে শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছে, সরকার শূন্য পদে নিয়োগে যথেষ্ট সচেষ্ট। চলতি মেয়াদে সরকার বড় ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করবে।

কর্মকর্তারা বলেন, সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়ার গতি খুবই কম। কোনো কোনো দপ্তর, সংস্থার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৪-৫ বছরের মধ্যেও নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হচ্ছে না। ফলে রাজস্ব খাতের শূন্য পদগুলো বছরের পর বছর শূন্যই থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও বাড়ছে। এ নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলে উদ্বেগ রয়েছে। তবে নিচের দিকের নিয়োগকারীরা এসব নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামান না বলেই অভিযোগ।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সকল মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তর, অধিদপ্তর এবং সংস্থার রাজস্ব খাতে শূন্য পদ জরুরি ভিত্তিতে পূরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের একটি চিঠি দিয়েছেন। সরকারের সব মন্ত্রণালয়-বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিবদের কাছে পাঠানো হয়েছে ওই চিঠি। এ ছাড়া আট বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জেলার ডিসিদেরও চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় এমন তাগিদ দিয়ে কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছিল জনপ্রশাসন।

জনপ্রশাসনের নতুন চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দাপ্তরিক কাজে গতিশীলতা আনতে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংস্থায় শর্তসাপেক্ষে জরুরি ভিত্তিতে পূরণের অনুরোধ করা হলো। এক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১০ সালের ২৪ নভেম্বরের পরিপত্র অনুসরণ করে রাজস্ব খাতের সরাসরি নিয়োগযোগ্য শূন্য পদের ৯০ শতাংশ পদ পূরণের জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ সংরক্ষিত শূন্য পদ পূরণের জন্য ২০১৫ সালের ২৮ মে তারিখের পরিপত্র মোতাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, নিজস্ব অনুমোদিত নিয়োগ বিধিমালা বা প্রবিধানমালা, এনাম কমিটি কর্তৃক তৈরিকৃত অর্গানোগ্রাম ও পদ সৃষ্টির আদেশ, শূন্য পদ পূরণ সংক্রান্ত সরকারের অপরাপর যাবতীয় বিধি-বিধান বা আদেশ এবং সব আনুষ্ঠানিকতা যথাযথ অনুসরণ করে শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। শূন্য পদ পূরণের তথ্য ১৫ দিনের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।

নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্বের পেছনে বেশ কিছু কারণের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোনো দপ্তর সংস্থা কিংবা মন্ত্রণালয়-বিভাগে শূন্য পদ পূরণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেই তদবিরের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন নিয়োগকারীরা। সরকারি দলের এমপি, মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেদের লোক নিয়োগের জন্য তদবির শুরু করেন। এসব তদবির রক্ষা করতে নিয়োগকারীদের হিমশিম খেতে হয়। দেখা গেছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে হয়তো ৫ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তদবির আসে ২০-২৫ জনের। ফলে তদবিরকারীদের মন রক্ষা করতে পারেন না কর্মকর্তারা। এ নিয়ে সচিব-মন্ত্রী কিংবা অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ফলে দ্বন্দ্ব ও তদবির ঝামেলা এড়াতে সংশ্লিষ্টরা নিয়োগ দেওয়ার কাজে হাতে দিতে চান না। চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেশি হওয়ার কারণেও নিয়োগে বিলম্ব হচ্ছে। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্যও কোনো কোনো কর্মকর্তা তার অধীন দপ্তর সংস্থায় নিয়োগে হাত দিতে চান না। তিনি পরবর্তী সময়ে যিনি দায়িত্বে আসবেন তার ওপর দিয়েই চলে যেতে চান। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি বলেই শোনা যায়। প্রশাসনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূইঞা কালবেলাকে বলেন, নানা কারণেই নিয়োগে বিলম্ব হয়। একটি-দুটি কারণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। গেজেটেড কর্মকর্তা এবং কিছু নন-গেজেটেড দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগ দেয় সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। এসব পদে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া একটু বিলম্বিত হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলোর নিয়োগেও অনেক সময় লেগে যায়। সেখানেও দেখা যায় প্রার্থী বেশি থাকার কারণে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারে না। এ ছাড়া নানা দপ্তর সংস্থায় নিয়োগের বিপক্ষে কোর্টে মামলা থাকার কারণে সেখানে জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হয় না। এতে করেই মূলত শূন্য পদের সংখ্যা বাড়ে। তবে তাড়াহুড়ো করে নিয়োগ দিতে যোগ্য প্রার্থী যেন বাদ না পড়ে সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শূন্য পদের যে তথ্য চেয়ে তা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। এতে করে কেন শূন্য পদ বাড়ছে, কী কারণে নিয়োগ করা যাচ্ছে না, তা জানা সম্ভব হতে পারে এবং সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত নিয়োগে হাত দিতে পারবে তারা।

জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রতি বছর যে পরিমাণ সরকারি চাকরিজীবী অবসরে যান, সে পরিমাণ নিয়োগ হয় না। পদগুলো শূন্যই থেকে যায়। ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এতে করে জনসাধারণও ঠিকমতো তাদের প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না। কিন্তু দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সম্প্রতি সংসদকে জানান, শূন্য পদগুলো পূরণে বিধি মোতাবেক নিয়মিত কার্যক্রম চলমান। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং এর অধীন দপ্তর-সংস্থাগুলোর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে নবম (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও ১০ থেকে ১২ গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) শূন্য পদে জনবল নিয়োগ করা হয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলোর ২০২৩ সালের নভেম্বরের কার্যাবলি সম্পর্কিত মাসিক প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী সরকারের শূন্য পদগুলো পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ অনুমোদন করেছেন, যা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোয় নিয়োগ কার্যক্রম চলমান আছে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন নিহত

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগে জনপ্রশাসনের তাগিদ

আপলোড সময় : 02:27:17 pm, Wednesday, 21 February 2024

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাবে সরকারের ৯৭৮টি দপ্তরে ৫ লাখ ৩ হাজার ৩৩৩টি পদ শূন্য রয়েছে। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে কর্মকর্তাদের ধারণা। এসব শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দিতে ৮৬ সচিব, ৮ বিভাগীয় কমিশনার ও ৬৪ জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের স্বাক্ষরে ওই চিঠি দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন করে সরকার গঠনের পর থেকে শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছে, সরকার শূন্য পদে নিয়োগে যথেষ্ট সচেষ্ট। চলতি মেয়াদে সরকার বড় ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করবে।

কর্মকর্তারা বলেন, সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়ার গতি খুবই কম। কোনো কোনো দপ্তর, সংস্থার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৪-৫ বছরের মধ্যেও নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হচ্ছে না। ফলে রাজস্ব খাতের শূন্য পদগুলো বছরের পর বছর শূন্যই থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও বাড়ছে। এ নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলে উদ্বেগ রয়েছে। তবে নিচের দিকের নিয়োগকারীরা এসব নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামান না বলেই অভিযোগ।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সকল মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তর, অধিদপ্তর এবং সংস্থার রাজস্ব খাতে শূন্য পদ জরুরি ভিত্তিতে পূরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের একটি চিঠি দিয়েছেন। সরকারের সব মন্ত্রণালয়-বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিবদের কাছে পাঠানো হয়েছে ওই চিঠি। এ ছাড়া আট বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জেলার ডিসিদেরও চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় এমন তাগিদ দিয়ে কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছিল জনপ্রশাসন।

জনপ্রশাসনের নতুন চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দাপ্তরিক কাজে গতিশীলতা আনতে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংস্থায় শর্তসাপেক্ষে জরুরি ভিত্তিতে পূরণের অনুরোধ করা হলো। এক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১০ সালের ২৪ নভেম্বরের পরিপত্র অনুসরণ করে রাজস্ব খাতের সরাসরি নিয়োগযোগ্য শূন্য পদের ৯০ শতাংশ পদ পূরণের জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ সংরক্ষিত শূন্য পদ পূরণের জন্য ২০১৫ সালের ২৮ মে তারিখের পরিপত্র মোতাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, নিজস্ব অনুমোদিত নিয়োগ বিধিমালা বা প্রবিধানমালা, এনাম কমিটি কর্তৃক তৈরিকৃত অর্গানোগ্রাম ও পদ সৃষ্টির আদেশ, শূন্য পদ পূরণ সংক্রান্ত সরকারের অপরাপর যাবতীয় বিধি-বিধান বা আদেশ এবং সব আনুষ্ঠানিকতা যথাযথ অনুসরণ করে শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। শূন্য পদ পূরণের তথ্য ১৫ দিনের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।

নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্বের পেছনে বেশ কিছু কারণের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোনো দপ্তর সংস্থা কিংবা মন্ত্রণালয়-বিভাগে শূন্য পদ পূরণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেই তদবিরের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন নিয়োগকারীরা। সরকারি দলের এমপি, মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেদের লোক নিয়োগের জন্য তদবির শুরু করেন। এসব তদবির রক্ষা করতে নিয়োগকারীদের হিমশিম খেতে হয়। দেখা গেছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে হয়তো ৫ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তদবির আসে ২০-২৫ জনের। ফলে তদবিরকারীদের মন রক্ষা করতে পারেন না কর্মকর্তারা। এ নিয়ে সচিব-মন্ত্রী কিংবা অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ফলে দ্বন্দ্ব ও তদবির ঝামেলা এড়াতে সংশ্লিষ্টরা নিয়োগ দেওয়ার কাজে হাতে দিতে চান না। চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেশি হওয়ার কারণেও নিয়োগে বিলম্ব হচ্ছে। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্যও কোনো কোনো কর্মকর্তা তার অধীন দপ্তর সংস্থায় নিয়োগে হাত দিতে চান না। তিনি পরবর্তী সময়ে যিনি দায়িত্বে আসবেন তার ওপর দিয়েই চলে যেতে চান। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি বলেই শোনা যায়। প্রশাসনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূইঞা কালবেলাকে বলেন, নানা কারণেই নিয়োগে বিলম্ব হয়। একটি-দুটি কারণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। গেজেটেড কর্মকর্তা এবং কিছু নন-গেজেটেড দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগ দেয় সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। এসব পদে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া একটু বিলম্বিত হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলোর নিয়োগেও অনেক সময় লেগে যায়। সেখানেও দেখা যায় প্রার্থী বেশি থাকার কারণে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারে না। এ ছাড়া নানা দপ্তর সংস্থায় নিয়োগের বিপক্ষে কোর্টে মামলা থাকার কারণে সেখানে জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হয় না। এতে করেই মূলত শূন্য পদের সংখ্যা বাড়ে। তবে তাড়াহুড়ো করে নিয়োগ দিতে যোগ্য প্রার্থী যেন বাদ না পড়ে সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শূন্য পদের যে তথ্য চেয়ে তা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। এতে করে কেন শূন্য পদ বাড়ছে, কী কারণে নিয়োগ করা যাচ্ছে না, তা জানা সম্ভব হতে পারে এবং সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত নিয়োগে হাত দিতে পারবে তারা।

জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রতি বছর যে পরিমাণ সরকারি চাকরিজীবী অবসরে যান, সে পরিমাণ নিয়োগ হয় না। পদগুলো শূন্যই থেকে যায়। ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এতে করে জনসাধারণও ঠিকমতো তাদের প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না। কিন্তু দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সম্প্রতি সংসদকে জানান, শূন্য পদগুলো পূরণে বিধি মোতাবেক নিয়মিত কার্যক্রম চলমান। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং এর অধীন দপ্তর-সংস্থাগুলোর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে নবম (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও ১০ থেকে ১২ গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) শূন্য পদে জনবল নিয়োগ করা হয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলোর ২০২৩ সালের নভেম্বরের কার্যাবলি সম্পর্কিত মাসিক প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী সরকারের শূন্য পদগুলো পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ অনুমোদন করেছেন, যা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোয় নিয়োগ কার্যক্রম চলমান আছে।