Dhaka 10:21 am, Wednesday, 25 December 2024

মান্দায় মদপানে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের

নওগাঁর মান্দায় ঈদের দিন বিকেলে বিষাক্ত মদপানে তিন কলেজছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নিহত কলেজছাত্র আশিকুর রহমানের চাচা জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মান্দা থানায়
৩০৪ এর (এ)/৩৪ প্যানাল কোডে মামলাটি করেন।মামলা নং ২১/২০২৪। মামলায় নিহতদের বন্ধু মুক্তার হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন যুবককে আসামি করা হয়েছে।

নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত শারিকুল ইসলাম পিন্টু (২২) ও আশিকুর রহমান আশিক (২২) মান্দা মমিন শাহানা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির এবং নাঈমুর রহমান নিশাত (২০) রাজশাহী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। এছাড়া নিহতদের আরেক বন্ধু রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাদিম হোসেন রাজশাহীর আরএমপি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

আজ শুক্রবার সরেজমিনে নিহত পিন্টু ও আশিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে পৃথক পৃথক জটলা করছেন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা। পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফনের প্রস্তুতি চলছে।

ঈদের আনন্দের পরিবর্তে শোকে স্তব্ধ দুই পরিবার। আশপাশের পরিবারগুলো থেকেও চলে গেছে ঈদের আনন্দ। হঠাৎ অনাকাঙ্খিত মৃত্যুতে পুরো এলাকাতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

এসময় কথা হয় নিহত শারিকুল ইসলাম পিন্টুর বাবা আক্কাস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিকেল ৩টার দিকে ছেলে পিন্টু খাওয়াদাওয়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে তার মৃত্যুর খবর জানতে পারি।’

পিন্টুর বাবা আক্কাস আলী আরও বলেন, ‘আমি দিনমজুর। নিজস্ব কোনো জায়গা জমি নেই। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে পিন্টুকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করার ইচ্ছে ছিল। আমার সেই ইচ্ছে অঙ্কুরের ধ্বংস হয়ে গেল।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় পাকুড়িয়া গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, বিথউথরাইল মাঠের তালতলি এলাকায় মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে ঈদের দিন বিকেলে মানুষের ঢল নামে। দর্শনার্থী হিসেবে সেখানে গিয়েছিলেন নিশাত, পিন্টু, আশিক, মুক্তার, নাদিম ও সোহেল। তারা মাঠের একটি নির্জন স্থানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও বলেন, এর কিছু পরে নিশাত, পিন্টু, আশিক ও নাদিম অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় চিৎকার চেঁচামেচিতে লোকজন তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে নিশাত, পিন্টু, আশিক মারা যান। ঘটনার পর মুক্তার ও সোহেল কৌশলে সটকে পড়েন।

এদিকে বিষাক্ত মদপানে অসুস্থ (বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন) নাদিম হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মাঠের নির্জন স্থানে আড্ডার সময় বন্ধু মুক্তার হোসেন পানীয় স্পিরিটের বোতলে নেশাজাতীয় দ্রব্য এনে তাদের খেতে দেন। নাদিম সামান্য খেলেও বেশি পান করে নিশাত, পিন্টু ও আশিক।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মান্দা থানার ওসি -তদন্ত আব্দুল গণি বলেন, নেশাজাতীয় দ্রব্যপানে মৃত্যুর ঘটনায় নিহত আশিকুর রহমানের চাচা বাদী হয়ে মুক্তার হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর তাদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য আজ শুক্রবার সকালে নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ওসি আরও বলেন, মামলার এজাহারভূক্ত আসামি মুক্তার হোসেনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আসামি মুক্তার হোসেন ও চিকিৎসাধীন নাদিম হোসেনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই এ ঘটনার পুরো মোটিভ জানা যাবে।

উল্লেখ্য, ঈদের দিন বিকেলে (বৃহস্পতিবার) উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের বিলউথরাইল মাঠে বিষাক্ত মদপানে নিশাত, পিন্টু, আশিক নামে তিন কলেজছাত্র মারা যান। তাদের আরেক বন্ধু নাদিম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

Write Your Comment

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

মান্দায় মদপানে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের

আপলোড সময় : 11:09:29 pm, Friday, 12 April 2024

নওগাঁর মান্দায় ঈদের দিন বিকেলে বিষাক্ত মদপানে তিন কলেজছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নিহত কলেজছাত্র আশিকুর রহমানের চাচা জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মান্দা থানায়
৩০৪ এর (এ)/৩৪ প্যানাল কোডে মামলাটি করেন।মামলা নং ২১/২০২৪। মামলায় নিহতদের বন্ধু মুক্তার হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন যুবককে আসামি করা হয়েছে।

নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত শারিকুল ইসলাম পিন্টু (২২) ও আশিকুর রহমান আশিক (২২) মান্দা মমিন শাহানা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির এবং নাঈমুর রহমান নিশাত (২০) রাজশাহী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। এছাড়া নিহতদের আরেক বন্ধু রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাদিম হোসেন রাজশাহীর আরএমপি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

আজ শুক্রবার সরেজমিনে নিহত পিন্টু ও আশিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে পৃথক পৃথক জটলা করছেন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা। পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফনের প্রস্তুতি চলছে।

ঈদের আনন্দের পরিবর্তে শোকে স্তব্ধ দুই পরিবার। আশপাশের পরিবারগুলো থেকেও চলে গেছে ঈদের আনন্দ। হঠাৎ অনাকাঙ্খিত মৃত্যুতে পুরো এলাকাতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

এসময় কথা হয় নিহত শারিকুল ইসলাম পিন্টুর বাবা আক্কাস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিকেল ৩টার দিকে ছেলে পিন্টু খাওয়াদাওয়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে তার মৃত্যুর খবর জানতে পারি।’

পিন্টুর বাবা আক্কাস আলী আরও বলেন, ‘আমি দিনমজুর। নিজস্ব কোনো জায়গা জমি নেই। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে পিন্টুকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করার ইচ্ছে ছিল। আমার সেই ইচ্ছে অঙ্কুরের ধ্বংস হয়ে গেল।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় পাকুড়িয়া গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, বিথউথরাইল মাঠের তালতলি এলাকায় মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে ঈদের দিন বিকেলে মানুষের ঢল নামে। দর্শনার্থী হিসেবে সেখানে গিয়েছিলেন নিশাত, পিন্টু, আশিক, মুক্তার, নাদিম ও সোহেল। তারা মাঠের একটি নির্জন স্থানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও বলেন, এর কিছু পরে নিশাত, পিন্টু, আশিক ও নাদিম অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় চিৎকার চেঁচামেচিতে লোকজন তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে নিশাত, পিন্টু, আশিক মারা যান। ঘটনার পর মুক্তার ও সোহেল কৌশলে সটকে পড়েন।

এদিকে বিষাক্ত মদপানে অসুস্থ (বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন) নাদিম হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মাঠের নির্জন স্থানে আড্ডার সময় বন্ধু মুক্তার হোসেন পানীয় স্পিরিটের বোতলে নেশাজাতীয় দ্রব্য এনে তাদের খেতে দেন। নাদিম সামান্য খেলেও বেশি পান করে নিশাত, পিন্টু ও আশিক।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে মান্দা থানার ওসি -তদন্ত আব্দুল গণি বলেন, নেশাজাতীয় দ্রব্যপানে মৃত্যুর ঘটনায় নিহত আশিকুর রহমানের চাচা বাদী হয়ে মুক্তার হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর তাদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য আজ শুক্রবার সকালে নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ওসি আরও বলেন, মামলার এজাহারভূক্ত আসামি মুক্তার হোসেনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আসামি মুক্তার হোসেন ও চিকিৎসাধীন নাদিম হোসেনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই এ ঘটনার পুরো মোটিভ জানা যাবে।

উল্লেখ্য, ঈদের দিন বিকেলে (বৃহস্পতিবার) উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের বিলউথরাইল মাঠে বিষাক্ত মদপানে নিশাত, পিন্টু, আশিক নামে তিন কলেজছাত্র মারা যান। তাদের আরেক বন্ধু নাদিম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।