সংশোধন হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন, বেঁধে দিতে পারবে নিত্যপণ্যের দাম
বাজার ‘সিন্ডিকেট’ মোকাবিলায় ১৯৫৬ সালে একটি আইন করেছিল পাকিস্তান সরকার। ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৫৬’ শীর্ষক ওই আইনটিতে বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তালিকাভুক্ত ছিল-যেগুলোর বাণিজ্য, ব্যবসায়িক লাইসেন্স থেকে শুরু করে মূল্য নির্ধারণ- সবকিছুতেই হস্তক্ষেপ করতে পারে সরকার। এবার ৬৮ বছরের পুরনো সেই আইনটিকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উদ্দেশ্য একটাই, ‘বাজার সিন্ডিকেট’ নিয়ন্ত্রণে আরও ক্ষমতাশালী হবে সরকার। সূত্র জানায়, প্রচলিত আইনের তালিকায় যেসব পণ্যের নাম রয়েছে, তার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সরকার। আইনের আওতায় এসব পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তালিকাভুক্ত পণ্যগুলোতে কোনো ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার জন্য যদি কারসাজি করে বা মজুত রেখে সংকট তৈরি করে তবে জেল-জরিমানাসহ আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে সরকার। তবে সমস্যা হচ্ছে- ছয় দশকেরও বেশি আগের ওই আইনটিতে যেসব পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় বা অতি প্রয়োজনীয় বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে-তার গ্রহণযোগ্যতা এখন আর নেই। এ কারণে আইনটি সংশোধন করে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের নতুন তালিকা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে- যাতে সরকার সংশ্লিষ্ট পণ্যের সিন্ডিকেট প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুরনো আইনটিতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে তামাক, সিগারেট, দিয়াশলাই (ম্যাচ)-এর মতো পণ্য তালিকাভুক্ত থাকলেও চাল, ডাল, আলুর মতো খাদ্যপণ্যের নাম তালিকায় নেই। ফলে ওই আইন দিয়ে বর্তমান সময়ের পণ্য ও বাজার ব্যবস্থায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এ কারণে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ১৯৫৬ সালের মূল আইনে ৪৪ ধরনের নিত্যপণ্যের তালিকা দেওয়া আছে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে খাদ্যপণ্য। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের মধ্যে আরও রয়েছে জ্বালানি তেল, ইস্পাত, প্রাকৃতিক রেশম সুতা, কয়লা, ওষুধ, সাইকেল ও সাইকেলের যন্ত্রাংশ, সিগারেট, দিয়াশালই, চা, চিনি, চর্বি, টর্চ সেল, টায়ার, টিউব, সেলাই মেশিন, শিশু খাদ্য, স্কুল-কলেজের পাঠ্যবই, তুলার সুতা, গ্যাসসহ রাসায়নিক পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল পণ্য, গ্লাস, কাঠ, স্যানিটারি ফিটিংস টাইলস, সিনেমার কাঁচা ফিল্ম, রাসায়নিক সার, টাইপ রাইটার ইত্যাদি। সময়ের প্রয়োজনে মানুষের ব্যবহারিক পণ্যের বদল ঘটলেও আইনটিতে থাকা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পরিবর্তন হয়নি। তালিকার অনেক পণ্যের ব্যবহার নেই বললেই চলে। উপরন্তু ২০১১ সালে এ আইনের আওতায় গেজেট নোটিফিকেশন জারির মাধ্যমে নতুন করে কিছু মসলাজাতীয় পণ্য যেমন : পিঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরা, তেজপাতা, লবঙ্গ, এলাচসহ ১৭টি পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও দুধ, ডিম, চাল, আলুর মতো নিত্যপণ্য তালিকার বাইরেই রয়ে গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ছয় দশক আগে টর্চ সেল, গাড়ির টায়ার-টিউব, দিয়াশলাই, সিনেমার ফিল্ম, টাইপ রাইটারের মতো পণ্যগুলোর গুরুত্ব থাকলেও বর্তমানে এসবের অনেকগুলোর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। ফলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে এগুলোকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তালিকার প্রথমে ‘খাদ্যপণ্য’ উল্লেখ রয়েছে, তালিকার শেষে যার ব্যাখ্যায় ভোজ্য তেল ও তেলবীজের অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে আইনে। এতে আর কী ধরনের খাদ্যপণ্য অন্তর্ভুক্ত করা যাবে তার কোনো উল্লেখ নেই। এ খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে চাল, দুধ, ডিম, আলু রয়েছে কি না সেটিও স্পষ্ট নয়। ফলে বাজারে চাল, ডিম, আলুর দাম বেড়ে গেলে বা কারসাজি অথবা মজুতদারি করে কেউ কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ালে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে পারছে না প্রশাসন। এ কারণে কয়েক মাস আগে ডিম ও আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার পরও প্রশাসন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এরই ফলশ্রুতিতে এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনেও ডিসিদের জোর দাবি ছিল- অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধনের। ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৫৬’ যুগোপযোগী করার বিষয়ে ডিসিদের সুপারিশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে মূলত প্রস্তাবনা ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তারা (ডিসি) কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন। তাদের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা ছিল ১৯৫৬-এর অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আইনটি যুগোপযোগী করা এবং সেখানে যে পণ্যগুলো আছে, সেগুলো আপডেট করা। প্রতিমন্ত্রী জানান, আমরা অচিরেই বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নিয়ে একটি মিটিং করে কীভাবে এ আইনটাকে আরও যুগোপযোগী করা যায়, পণ্যের তালিকাটাকে কীভাবে সুন্দর করা যায়, সেটি করব।