Dhaka 1:57 am, Tuesday, 24 December 2024

বাউফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গুলিবিদ্ধ সুমনের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন

গুলিবিদ্ধ সুমন ব্যাপারী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সুমনের ডান উরুতে গুলি লেগেছে। গুলি লেগেছে অন্ডকোষেও। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকার একটি হাসপাতালে গুলি বের করে অন্ডকোষের একাংশ কেটে ফেলা হয়। এরপর বাড়ি এসে সুস্থ হওয়ার জন্য ওষুধ সেবন করে যাচ্ছেন। কিন্তু সফল হননি। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে শতকরা ৫ টাকা হারে ৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এই সামান্য টাকায় কীভাবে চিকিৎসা করাবেন তিনি তাই বিত্তশালীদের সহযোগিতা চেয়েছেন সুমন বেপারী। সুমনের বাবার নাম মৃত. আব্দুল গনি বেপারী।

পটুয়াখালীর বাউফলের ধুলিয়া ইউপির মঠবাড়িয়া গ্রামে তার বাড়ি। মা সুমি বেগম (৬০), স্ত্রী শিরিনা (২৭) ছাড়াও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া জিদান (৯) ও আড়াই বছর বয়সী মীম নামে দুইটি ছেলে-মেয়ে রয়েছে। বাবা মারা গেছে এক যুগ আগে। ছয় ভাই-বোন তারা। বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নে তাের।
তাই জীবন জীবিকার আশায় ছয় বছর আগে বাড়ি ছেড়ে ঢাকা চলে যান। কাজ নেয় রায়েরবাগ এলাকার জামিল কঞ্জুমার লিমিটেড নামে এক মশার কয়েল তৈরির কারখানায়। গত ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে কদমতলী থানার কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। তাকে শনির আখরায় হাসপাতালে নিয়ে যায় ছাত্ররা। ওই হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রথমে তার চিকিৎসা করতে রাজি হননি। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেখানে তার অপারেশন করা হয়। কেটে ফেলা হয় তার অন্ডকোষের একাংশ। এরপর ২৭ জুলাই ঢাকা মেডিকেল রিলিজ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন তিনি।

সুমন বেপারী আরো জানায়, তার গ্রামের স্থানীয় সিকদারের বাজারে এক ফার্মেসিতে গিয়ে ক্ষতের স্থানে ড্রেসিং করতে হয় প্রতিদিন। তীব্র জ্বালা যন্ত্রণা হয়। প্রশ্রাব করতে হয় তলপেট ছিদ্র করে বের করা পাইপের সাহায্যে। কেটে ফেলে দেয়া হয়েছে অন্ডকোষের একাংশ। সেখানে সেলাইয়ের দিকে তাকালেই নিস্তেজ হয়ে যায় শরীরের সব শক্তি। রোজ ৪শ টাকার ইনজেকশন ছাড়াও ওষুধপত্র আর ডেসিং নিয়ে ১৪-১৫শ’টাকা খরচ হয়। ব্যথার কারণে ডান পা নড়চড় করতে পারছেন না।
ফার্মেসিতে ড্রেসিং করতে গেলে সেখানে গ্রাম্য ডাক্তার অবস্থা দেখে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার সমর্থ নেই তার। কয়েক দিন আগে ঢাকা মহানগর দক্ষিনের জামায়াতের সেক্রেটারী ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ ১১ হাজার টাকা সাহায্য দেন তাকে। এ টাকা দিয়েই এতো দিন চিকিৎসা চালিয়েছেন। এরপর প্রতিবেশি একজনের কাছ থেকে শতকরা ৫টাকা হারে সুদে ৪ হাজার টাকা ঋন নিয়েছেন। আরো কিছু টাকা ম্যানেজের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ২-৪ দিনের মধ্যে টাকা পেয়ে গেলে চিকিৎসার জন্য ঢাকার চলে যাবেন। সুমন বেপারীর স্ত্রী শিরিনা বেগম বলেন, ‘ঘরে বৃদ্ধা শাশুড়ি, দুইটা ছেলেমেয়ে। কামাই বন্ধ। এ্যাহন তার (স্বামী সুমন বেপারী) চিকিৎসা চালানোর কোন টাহা-পয়সা আমাগো নাই। সারাটা জীবন কস্ট কইরা চলছি। চিকিৎসা চালামু কিভাবে। রক্তের দাগ যায় নাই। রাজৈিক নেতারা এ্যাহনই এলাকায় ভোটের চিন্তা শুরু কইরা দিছে। আমাগো খবর কেডা নেয়?

এক প্রতিবেশির থাইক্কা মাসিক ৫টাহা সুধে ৪হাজার টাকা আইন্না ঢাকা যাইতেছে। কত ঋণ করমু আর পরিশোধই বা করমু কেমনে?’এখন তার চিকিৎনা উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছি।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

বাউফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গুলিবিদ্ধ সুমনের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন

আপলোড সময় : 04:53:34 pm, Monday, 2 September 2024

গুলিবিদ্ধ সুমন ব্যাপারী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সুমনের ডান উরুতে গুলি লেগেছে। গুলি লেগেছে অন্ডকোষেও। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকার একটি হাসপাতালে গুলি বের করে অন্ডকোষের একাংশ কেটে ফেলা হয়। এরপর বাড়ি এসে সুস্থ হওয়ার জন্য ওষুধ সেবন করে যাচ্ছেন। কিন্তু সফল হননি। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে শতকরা ৫ টাকা হারে ৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এই সামান্য টাকায় কীভাবে চিকিৎসা করাবেন তিনি তাই বিত্তশালীদের সহযোগিতা চেয়েছেন সুমন বেপারী। সুমনের বাবার নাম মৃত. আব্দুল গনি বেপারী।

পটুয়াখালীর বাউফলের ধুলিয়া ইউপির মঠবাড়িয়া গ্রামে তার বাড়ি। মা সুমি বেগম (৬০), স্ত্রী শিরিনা (২৭) ছাড়াও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া জিদান (৯) ও আড়াই বছর বয়সী মীম নামে দুইটি ছেলে-মেয়ে রয়েছে। বাবা মারা গেছে এক যুগ আগে। ছয় ভাই-বোন তারা। বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নে তাের।
তাই জীবন জীবিকার আশায় ছয় বছর আগে বাড়ি ছেড়ে ঢাকা চলে যান। কাজ নেয় রায়েরবাগ এলাকার জামিল কঞ্জুমার লিমিটেড নামে এক মশার কয়েল তৈরির কারখানায়। গত ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে কদমতলী থানার কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। তাকে শনির আখরায় হাসপাতালে নিয়ে যায় ছাত্ররা। ওই হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রথমে তার চিকিৎসা করতে রাজি হননি। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেখানে তার অপারেশন করা হয়। কেটে ফেলা হয় তার অন্ডকোষের একাংশ। এরপর ২৭ জুলাই ঢাকা মেডিকেল রিলিজ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন তিনি।

সুমন বেপারী আরো জানায়, তার গ্রামের স্থানীয় সিকদারের বাজারে এক ফার্মেসিতে গিয়ে ক্ষতের স্থানে ড্রেসিং করতে হয় প্রতিদিন। তীব্র জ্বালা যন্ত্রণা হয়। প্রশ্রাব করতে হয় তলপেট ছিদ্র করে বের করা পাইপের সাহায্যে। কেটে ফেলে দেয়া হয়েছে অন্ডকোষের একাংশ। সেখানে সেলাইয়ের দিকে তাকালেই নিস্তেজ হয়ে যায় শরীরের সব শক্তি। রোজ ৪শ টাকার ইনজেকশন ছাড়াও ওষুধপত্র আর ডেসিং নিয়ে ১৪-১৫শ’টাকা খরচ হয়। ব্যথার কারণে ডান পা নড়চড় করতে পারছেন না।
ফার্মেসিতে ড্রেসিং করতে গেলে সেখানে গ্রাম্য ডাক্তার অবস্থা দেখে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার সমর্থ নেই তার। কয়েক দিন আগে ঢাকা মহানগর দক্ষিনের জামায়াতের সেক্রেটারী ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ ১১ হাজার টাকা সাহায্য দেন তাকে। এ টাকা দিয়েই এতো দিন চিকিৎসা চালিয়েছেন। এরপর প্রতিবেশি একজনের কাছ থেকে শতকরা ৫টাকা হারে সুদে ৪ হাজার টাকা ঋন নিয়েছেন। আরো কিছু টাকা ম্যানেজের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ২-৪ দিনের মধ্যে টাকা পেয়ে গেলে চিকিৎসার জন্য ঢাকার চলে যাবেন। সুমন বেপারীর স্ত্রী শিরিনা বেগম বলেন, ‘ঘরে বৃদ্ধা শাশুড়ি, দুইটা ছেলেমেয়ে। কামাই বন্ধ। এ্যাহন তার (স্বামী সুমন বেপারী) চিকিৎসা চালানোর কোন টাহা-পয়সা আমাগো নাই। সারাটা জীবন কস্ট কইরা চলছি। চিকিৎসা চালামু কিভাবে। রক্তের দাগ যায় নাই। রাজৈিক নেতারা এ্যাহনই এলাকায় ভোটের চিন্তা শুরু কইরা দিছে। আমাগো খবর কেডা নেয়?

এক প্রতিবেশির থাইক্কা মাসিক ৫টাহা সুধে ৪হাজার টাকা আইন্না ঢাকা যাইতেছে। কত ঋণ করমু আর পরিশোধই বা করমু কেমনে?’এখন তার চিকিৎনা উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছি।