Dhaka 9:09 pm, Monday, 23 December 2024

ফ্রান্স যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, চূড়ান্ত হবে এয়ারবাস কেনার চুক্তি

চলতি বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্স যাচ্ছেন এবং সেই সফরে এয়ারবাস ক্রয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই হবে বলে আশাবাদী ঢাকাস্থ ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই। বুধবার ঢাকায় নিজ বাসায় এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ফ্রান্সসহ তিন দেশের বহুজাতিক মালিকানাধীন এয়ারবাস এডি থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার পাশাপাশি একই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট নেয়ার আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত প্যারিস সফরের আগেই এটি চূড়ান্ত করতে নীতিগতভাবে সম্মত দুই দেশ। স্বল্পসংখ্যক মিডিয়া প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপে ফ্রান্সের দূত দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে কথা বলেন। ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানান, দুই দেশের সম্পর্কের কৌশলগত সহযোগিতায় মহাকাশ ও আকাশপথে সংযুক্তি, প্রতিরক্ষা, ইন্টারনেট ও সাইবার সংক্রান্ত বিষয়গুলো রয়েছে। এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ ও স্যাটেলাইট ক্রয় বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, গত ছয় মাসে এয়ারবাস গ্রুপের নির্বাহী কমিটির তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসে উড়োজাহাজ ও স্যাটেলাইটের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। দুটি বিষয়েই আলোচনা ভালোভাবে এগুচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন প্যারিস সফরে এ বিষয়গুলো নিয়ে চুক্তি চূড়ান্ত হবে। তাদের প্রস্তাবকে সেরা প্রস্তাব দাবি করে তিনি বলেন, এ কারণেই আমরা বেশ আশাবাদী।

 

 

রাষ্ট্রদূত জানান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ এই মুহূর্তে প্যারিস সফর করছেন। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কাছে ড্যাসাল্ট রাফালে জঙ্গি বিমান বিক্রির বিষয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা করছে ফ্রান্স। এ নিয়ে জানতে চাইলে ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, ড্যাসাল্ট রাফাল নিয়ে আসলেই কী হচ্ছে তা খোলাখুলি বলতে পারছি না। তবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী পক্ষ ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে, এটা বলতে পারি এবং এ নিয়েও আমরা বেশ আশাবাদী। তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে সামনের সারিতেই রয়েছে বাংলাদেশ।

 

আবার অভিযোজনের ক্ষেত্রেও এগিয়ে। তাই এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহযোগিতার জন্য ফ্রান্স, ইউরোপের অন্য অংশীদারদের যুক্ত করেছে। বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে। সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে একশ’ কোটি ইউরোর হ্রাসকৃত ঋণের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (এএফডি) মাধ্যমে এ সহায়তা দেয়া হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। ওই সফরে তিনি ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের বিষয়ে তৃৃতীয় একটি পথ অনুসরণের কথা বলেন। এ নিয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ফ্রান্সের স্বতন্ত্র ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল রয়েছে। ইউরোপের অন্য দেশগুলো তাদের নিজেদের কৌশল গ্রহণ করছে। ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের কৌশল গ্রহণ করেছে।

 

বলা যেতে পারে যে ফ্রান্সের কৌশলে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয় ইইউ’র কৌশল। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের বিষয়ে ব্যবসা, বাণিজ্য, কারিগরি ও শৈল্পিক আবিষ্কারের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য জোটের চেয়ে আলাদা। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বেশ সহযোগিতামূলক। সাংঘর্ষিক নয়। এখানে চীন, ভারত ও অন্য দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দৃষ্টিতে সবার সঙ্গে সহযোগিতা ও সংলাপ বজায় রাখা জরুরি। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের নিবিড় সহযোগিতার ধারাবাহিকতায় কয়েক মাসের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে আসছেন ফ্রান্সের মন্ত্রিসভার একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য।  ভ্রমণ, ব্যবসা ও পড়াশোনা সব মিলিয়ে ফ্রান্স যেতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসার আবেদনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগের চেয়ে এখন অনেক বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী ফ্রান্সে যাচ্ছেন। এই বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে। তারা রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রামে যাব।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

ফ্রান্স যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, চূড়ান্ত হবে এয়ারবাস কেনার চুক্তি

আপলোড সময় : 08:38:01 pm, Thursday, 23 May 2024

চলতি বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্স যাচ্ছেন এবং সেই সফরে এয়ারবাস ক্রয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই হবে বলে আশাবাদী ঢাকাস্থ ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই। বুধবার ঢাকায় নিজ বাসায় এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ফ্রান্সসহ তিন দেশের বহুজাতিক মালিকানাধীন এয়ারবাস এডি থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার পাশাপাশি একই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট নেয়ার আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত প্যারিস সফরের আগেই এটি চূড়ান্ত করতে নীতিগতভাবে সম্মত দুই দেশ। স্বল্পসংখ্যক মিডিয়া প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপে ফ্রান্সের দূত দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে কথা বলেন। ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানান, দুই দেশের সম্পর্কের কৌশলগত সহযোগিতায় মহাকাশ ও আকাশপথে সংযুক্তি, প্রতিরক্ষা, ইন্টারনেট ও সাইবার সংক্রান্ত বিষয়গুলো রয়েছে। এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ ও স্যাটেলাইট ক্রয় বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, গত ছয় মাসে এয়ারবাস গ্রুপের নির্বাহী কমিটির তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসে উড়োজাহাজ ও স্যাটেলাইটের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। দুটি বিষয়েই আলোচনা ভালোভাবে এগুচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন প্যারিস সফরে এ বিষয়গুলো নিয়ে চুক্তি চূড়ান্ত হবে। তাদের প্রস্তাবকে সেরা প্রস্তাব দাবি করে তিনি বলেন, এ কারণেই আমরা বেশ আশাবাদী।

 

 

রাষ্ট্রদূত জানান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ এই মুহূর্তে প্যারিস সফর করছেন। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কাছে ড্যাসাল্ট রাফালে জঙ্গি বিমান বিক্রির বিষয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা করছে ফ্রান্স। এ নিয়ে জানতে চাইলে ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, ড্যাসাল্ট রাফাল নিয়ে আসলেই কী হচ্ছে তা খোলাখুলি বলতে পারছি না। তবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী পক্ষ ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে, এটা বলতে পারি এবং এ নিয়েও আমরা বেশ আশাবাদী। তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে সামনের সারিতেই রয়েছে বাংলাদেশ।

 

আবার অভিযোজনের ক্ষেত্রেও এগিয়ে। তাই এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহযোগিতার জন্য ফ্রান্স, ইউরোপের অন্য অংশীদারদের যুক্ত করেছে। বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে। সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে একশ’ কোটি ইউরোর হ্রাসকৃত ঋণের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (এএফডি) মাধ্যমে এ সহায়তা দেয়া হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। ওই সফরে তিনি ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের বিষয়ে তৃৃতীয় একটি পথ অনুসরণের কথা বলেন। এ নিয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ফ্রান্সের স্বতন্ত্র ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল রয়েছে। ইউরোপের অন্য দেশগুলো তাদের নিজেদের কৌশল গ্রহণ করছে। ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের কৌশল গ্রহণ করেছে।

 

বলা যেতে পারে যে ফ্রান্সের কৌশলে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয় ইইউ’র কৌশল। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের বিষয়ে ব্যবসা, বাণিজ্য, কারিগরি ও শৈল্পিক আবিষ্কারের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য জোটের চেয়ে আলাদা। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বেশ সহযোগিতামূলক। সাংঘর্ষিক নয়। এখানে চীন, ভারত ও অন্য দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দৃষ্টিতে সবার সঙ্গে সহযোগিতা ও সংলাপ বজায় রাখা জরুরি। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের নিবিড় সহযোগিতার ধারাবাহিকতায় কয়েক মাসের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে আসছেন ফ্রান্সের মন্ত্রিসভার একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য।  ভ্রমণ, ব্যবসা ও পড়াশোনা সব মিলিয়ে ফ্রান্স যেতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসার আবেদনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগের চেয়ে এখন অনেক বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী ফ্রান্সে যাচ্ছেন। এই বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে। তারা রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রামে যাব।