Dhaka 5:08 pm, Saturday, 21 December 2024
বেকিং নিউজ :

নিয়মের তোয়াক্কা না করে হয়েছেন অধ্যক্ষ, রয়েছে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাও

শাহিন সাগর, রাজশাহী : নাম দুরুল হুদা। চাকরি করতেন একটি মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক হিসেবে। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বাগিয়েছেন পদ, করেছেন দুর্নীতি, গড়েছেন অবৈধ সম্পদ। এমন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসার বৈষম্যের শিকার হওয়া শিক্ষক ও অবিভাবকরা।

শনিবার (২৪ আগষ্ট) দুপুরে মোহনপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের অধ্যক্ষ দুরুল হুদার নানা অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসার সহকারি মৌলভি শিক্ষক এসএমএ রউফ, অবিভাবক হিসেবে ছিলেন সাবেক বিজিবি সদস্য আ: মানিক, মোঃ আঃ হামিদ, মোঃ মুরাদ মোল্লা ও সাবেক ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য মোঃ সিরাজুল মোল্লা। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের পক্ষে মামুনুর রশীদ, মোঃ জুয়েল রানা, মোঃ রাফি খান, মোঃ সৌরভসহ অনেক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় ভুক্তভোগী শিক্ষকদের পক্ষে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহকারি মৌলভি শিক্ষক এসএমএ রউফ। লিখিত ঐ বক্তব্যে তিনি দাবী করেন এই দুরুল হুদা রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও নানা অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য কারনে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ দুরুল হুদার বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করেছেন তারাই হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। দুরুল হোদা মাদ্রাসায় যোগদানের পর থেকে অসংখ্য অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। যার তথ্য প্রমান দেন উপস্থিত সাংবাদিকদের।

এছাড়াও নিজের দুর্নীতি ঢাঁকতে ২০১৭ সালের পর আওয়ামীলীগের সাথে হাত মিলিয়ে রাতের আধারে পছন্দসই লোক নিয়ে গভর্নিং বডি তৈরী করে নিজের ইচ্ছেমত মাদ্রাসা পরিচালনা করেছেন। তিনি প্রথমে প্রভাষক পদে নিয়োগ নিয়ে সহকারী মৌলভী হিসেবে বেতন ভোগ করেন। তারপর প্রভাষক পদ হতে আলিম স্তরের কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেন। উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়ে তিনি প্রভাষক পদে প্রায় ১৫ বছর বেতন নেন। এরপর তিনি উপাধ্যক্ষ পদে ৫ গ্রেডে বেতন করে নেন।
প্রায় ২৮ বছর চাকুরীর পর নিজের শিক্ষা সনদে তৃতীয় শ্রেনী থাকা সত্বেও মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি, মোহনপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন কবিরাজকে মোটা টাকার বিনিময়ে ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে তিনি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হয়ে যান। গত ৫ আগষ্ট গনঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে অধ্যক্ষ দুরুল হুদা প্রায় এক সপ্তাহ মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিলেন।

তবে তার নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন শফিকুল ইসলাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তি। সে ২০০২ মাদ্রাসার পিয়ন হিসেবে নিয়োগ পান। প্রায় ২ বছর দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তবুও দুরুল হুদার বিষাক্ত পরিকল্পনায় সেই শফিকুল ইসলামকে বাদ দেয়া হয়। শফিকুলের দাবি তিনি চাকরির জন্য বর্তমান অধ্যক্ষ দুরুল হুদার হাতে ৫লক্ষ টাকা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী মামলাও করেছেন। যার মামলা নং ১০৬/২৩। ২০১৬ সালে গ্রন্থাগারিক সাইফুল ইসলাম ততকালীন উপাধ্যক্ষ দুরুল হুদার বিরুদ্ধে জঙ্ সংশ্লিষ্টতার অিযোগ ুলে থানায় একটি জিডি করেছিলেন। যার কারনে আজও তার বেতন হয়নি।

এসকল অভিযোগের ব্যাপারে ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষ দুরুল হুদার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমাকে নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তার সবই মিথ্যা। আমার চাকরি প্রায় শেষের দিকে। আমি এতদিনে রাজশাহী শহরে একটি জমি কিনেছি। যা কিছু করেছি, নিয়মের মধ্যে করেছি। আপনি দয়া করে আমার অফিসে আসেন। আমি সব বিষয় খুলে বলবো। মাদ্রাসায় অনুপস্থিতির ব্যাপারে বললে তিনি বলেন, আমি ইউএনও স্যারের থেকে ছুটি নিয়েছিলাম।

পরে ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকা বলেন, অধ্যক্ষ ছুটি নিয়েছেন কি না জানা নাই। ৬ আগষ্ট হতে ১৪ আগষ্ট পর্যন্ত ছুটি না নিয়ে থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

নিয়মের তোয়াক্কা না করে হয়েছেন অধ্যক্ষ, রয়েছে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাও

আপলোড সময় : 05:21:27 pm, Saturday, 24 August 2024

শাহিন সাগর, রাজশাহী : নাম দুরুল হুদা। চাকরি করতেন একটি মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক হিসেবে। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বাগিয়েছেন পদ, করেছেন দুর্নীতি, গড়েছেন অবৈধ সম্পদ। এমন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসার বৈষম্যের শিকার হওয়া শিক্ষক ও অবিভাবকরা।

শনিবার (২৪ আগষ্ট) দুপুরে মোহনপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের অধ্যক্ষ দুরুল হুদার নানা অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসার সহকারি মৌলভি শিক্ষক এসএমএ রউফ, অবিভাবক হিসেবে ছিলেন সাবেক বিজিবি সদস্য আ: মানিক, মোঃ আঃ হামিদ, মোঃ মুরাদ মোল্লা ও সাবেক ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য মোঃ সিরাজুল মোল্লা। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের পক্ষে মামুনুর রশীদ, মোঃ জুয়েল রানা, মোঃ রাফি খান, মোঃ সৌরভসহ অনেক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় ভুক্তভোগী শিক্ষকদের পক্ষে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহকারি মৌলভি শিক্ষক এসএমএ রউফ। লিখিত ঐ বক্তব্যে তিনি দাবী করেন এই দুরুল হুদা রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও নানা অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য কারনে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ দুরুল হুদার বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করেছেন তারাই হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। দুরুল হোদা মাদ্রাসায় যোগদানের পর থেকে অসংখ্য অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। যার তথ্য প্রমান দেন উপস্থিত সাংবাদিকদের।

এছাড়াও নিজের দুর্নীতি ঢাঁকতে ২০১৭ সালের পর আওয়ামীলীগের সাথে হাত মিলিয়ে রাতের আধারে পছন্দসই লোক নিয়ে গভর্নিং বডি তৈরী করে নিজের ইচ্ছেমত মাদ্রাসা পরিচালনা করেছেন। তিনি প্রথমে প্রভাষক পদে নিয়োগ নিয়ে সহকারী মৌলভী হিসেবে বেতন ভোগ করেন। তারপর প্রভাষক পদ হতে আলিম স্তরের কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেন। উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়ে তিনি প্রভাষক পদে প্রায় ১৫ বছর বেতন নেন। এরপর তিনি উপাধ্যক্ষ পদে ৫ গ্রেডে বেতন করে নেন।
প্রায় ২৮ বছর চাকুরীর পর নিজের শিক্ষা সনদে তৃতীয় শ্রেনী থাকা সত্বেও মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি, মোহনপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন কবিরাজকে মোটা টাকার বিনিময়ে ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে তিনি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হয়ে যান। গত ৫ আগষ্ট গনঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে অধ্যক্ষ দুরুল হুদা প্রায় এক সপ্তাহ মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিলেন।

তবে তার নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন শফিকুল ইসলাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তি। সে ২০০২ মাদ্রাসার পিয়ন হিসেবে নিয়োগ পান। প্রায় ২ বছর দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তবুও দুরুল হুদার বিষাক্ত পরিকল্পনায় সেই শফিকুল ইসলামকে বাদ দেয়া হয়। শফিকুলের দাবি তিনি চাকরির জন্য বর্তমান অধ্যক্ষ দুরুল হুদার হাতে ৫লক্ষ টাকা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী মামলাও করেছেন। যার মামলা নং ১০৬/২৩। ২০১৬ সালে গ্রন্থাগারিক সাইফুল ইসলাম ততকালীন উপাধ্যক্ষ দুরুল হুদার বিরুদ্ধে জঙ্ সংশ্লিষ্টতার অিযোগ ুলে থানায় একটি জিডি করেছিলেন। যার কারনে আজও তার বেতন হয়নি।

এসকল অভিযোগের ব্যাপারে ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষ দুরুল হুদার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমাকে নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তার সবই মিথ্যা। আমার চাকরি প্রায় শেষের দিকে। আমি এতদিনে রাজশাহী শহরে একটি জমি কিনেছি। যা কিছু করেছি, নিয়মের মধ্যে করেছি। আপনি দয়া করে আমার অফিসে আসেন। আমি সব বিষয় খুলে বলবো। মাদ্রাসায় অনুপস্থিতির ব্যাপারে বললে তিনি বলেন, আমি ইউএনও স্যারের থেকে ছুটি নিয়েছিলাম।

পরে ধুরইল ডিএস কামিল মাদ্রাসার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকা বলেন, অধ্যক্ষ ছুটি নিয়েছেন কি না জানা নাই। ৬ আগষ্ট হতে ১৪ আগষ্ট পর্যন্ত ছুটি না নিয়ে থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।