Dhaka 10:43 am, Monday, 23 December 2024

নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে আশার আলো

সোমালি জলদস্যুদের সঙ্গে এমভি আবদুল্লহার মালিকপক্ষের যোগাযোগ শুরু হয়েছে। জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের ছাড়ানোর জন্য মুক্তিপণ নিয়ে তারা আলোচনা করছেন। জিম্মি মুক্তির বিষয়ে কাজ করে এমন তৃতীয়পক্ষ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুধবার সকালে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কবির গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম।

 

তিনি যুগান্তরকে জানান, জিম্মি মুক্তির বিষয়ে তারা আশাবাদী। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে তারা ২৩ নাবিক ও জাহাজটি উদ্ধার করতে পারবেন। তিনি জিম্মি নাবিকের পরিবারগুলোকেও আশ্বস্ত করেছেন। সব নাবিক বুধবার তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান তিনি। তবে মুক্তিপণ হিসাবে কত টাকা বা ডলার চেয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানাননি।

২০১০ সালে এমভি জাহানমণি নামে কবির গ্রুপের আরেকটি জাহাজ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। ২৭ নাবিকসহ জাহাজটি ১০০ দিন পর মুক্তিপণের বিনিময়ে উদ্ধার করা হয়েছিল। জলদস্যুদের সঙ্গে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে সমঝোতার মাধ্যমে ওই জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিইও মেহেরুল করিম। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজও তার নেতৃত্বে উদ্ধার করা সক্ষম হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।

জানা যায়, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি সোমালিয়ার গোদবজিরান উপকূলের দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে উপকূলের একেবারে কাছাকাছি অবস্থান করছে। এক নাবিক মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে তার পরিবারের কাছে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছেন। ওই মেসেজে তিনি বলেছেন, তাদের ফ্রেশ ওয়াটার বা বিশুদ্ধ পানি দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। জলদস্যুরা একসঙ্গে খাবার খাওয়ায় অন্যান্য খাদ্যও ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানিতে সপ্তাহ খানেক চলবে। আর ১০-১২ দিনের খাবার মজুত আছে। দ্রুত তাদের উদ্ধার করা না গেলে খাদ্য সংকটে পড়তে হবে। তাছাড়া সবাইকে একটিমাত্র ওয়াশরুম ব্যবহার করতে দিচ্ছে। এ কারণে ওয়াশরুমের পরিবেশ একেবারেই অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। শৌচকর্ম সারতে তাদের কষ্ট হচ্ছে।

ওই নাবিক আরও জানান, ইতালিয়ান নৌবাহিনীর একটি জাহাজ এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি টহল দিচ্ছে। এসব জাহাজ দেখার পর জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের সঙ্গে ‘রাফ’ আচরণ করছে। তাই জিম্মি নাবিকরা একটু আতঙ্কে আছেন।

এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান বুধবার সকালে তার পরিবারের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন আতিকুল্লহার দুলাভাই ইউসিবিএল ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আজিজুল হক। তিনি বলেন, আতিকুল্লাহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভোরে নামাজ পড়েছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের উদ্ধারের বিষয়ে কোম্পানি কী করছে, কোনো অগ্রগতি আছে কিনা সে বিষয়টিও জানতে চেয়েছেন। আজিজুল হক আরও বলেন, জাহাজের মালিকপক্ষ তাদের বলেছে, জলদস্যুদের সঙ্গে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে মুক্তিপণের বিষয়ে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। মালিকপক্ষ নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছে।

১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশি পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ার মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সশস্ত্র জলদস্যুরা ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এমভি আবদুল্লাহ প্রায় ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরে যাচ্ছিল। ১৪ মার্চ দুপুরের দিকে দস্যুরা জাহাজটিকে সোমালিয়ার গ্যারাকাড উপকূলে নোঙর করতে বাধ্য করে।

১৫ মার্চ শুক্রবার বিকালে গ্যারাকাড উপকূল থেকে জাহাজটিকে আবারও সরিয়ে নেয়। বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার গোদবজিরান উপকূলের দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে আছে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে আশার আলো

আপলোড সময় : 07:58:48 pm, Friday, 22 March 2024

সোমালি জলদস্যুদের সঙ্গে এমভি আবদুল্লহার মালিকপক্ষের যোগাযোগ শুরু হয়েছে। জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের ছাড়ানোর জন্য মুক্তিপণ নিয়ে তারা আলোচনা করছেন। জিম্মি মুক্তির বিষয়ে কাজ করে এমন তৃতীয়পক্ষ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুধবার সকালে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কবির গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম।

 

তিনি যুগান্তরকে জানান, জিম্মি মুক্তির বিষয়ে তারা আশাবাদী। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে তারা ২৩ নাবিক ও জাহাজটি উদ্ধার করতে পারবেন। তিনি জিম্মি নাবিকের পরিবারগুলোকেও আশ্বস্ত করেছেন। সব নাবিক বুধবার তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান তিনি। তবে মুক্তিপণ হিসাবে কত টাকা বা ডলার চেয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানাননি।

২০১০ সালে এমভি জাহানমণি নামে কবির গ্রুপের আরেকটি জাহাজ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। ২৭ নাবিকসহ জাহাজটি ১০০ দিন পর মুক্তিপণের বিনিময়ে উদ্ধার করা হয়েছিল। জলদস্যুদের সঙ্গে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে সমঝোতার মাধ্যমে ওই জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিইও মেহেরুল করিম। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজও তার নেতৃত্বে উদ্ধার করা সক্ষম হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।

জানা যায়, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি সোমালিয়ার গোদবজিরান উপকূলের দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে উপকূলের একেবারে কাছাকাছি অবস্থান করছে। এক নাবিক মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে তার পরিবারের কাছে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছেন। ওই মেসেজে তিনি বলেছেন, তাদের ফ্রেশ ওয়াটার বা বিশুদ্ধ পানি দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। জলদস্যুরা একসঙ্গে খাবার খাওয়ায় অন্যান্য খাদ্যও ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানিতে সপ্তাহ খানেক চলবে। আর ১০-১২ দিনের খাবার মজুত আছে। দ্রুত তাদের উদ্ধার করা না গেলে খাদ্য সংকটে পড়তে হবে। তাছাড়া সবাইকে একটিমাত্র ওয়াশরুম ব্যবহার করতে দিচ্ছে। এ কারণে ওয়াশরুমের পরিবেশ একেবারেই অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। শৌচকর্ম সারতে তাদের কষ্ট হচ্ছে।

ওই নাবিক আরও জানান, ইতালিয়ান নৌবাহিনীর একটি জাহাজ এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি টহল দিচ্ছে। এসব জাহাজ দেখার পর জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের সঙ্গে ‘রাফ’ আচরণ করছে। তাই জিম্মি নাবিকরা একটু আতঙ্কে আছেন।

এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান বুধবার সকালে তার পরিবারের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন আতিকুল্লহার দুলাভাই ইউসিবিএল ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আজিজুল হক। তিনি বলেন, আতিকুল্লাহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভোরে নামাজ পড়েছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের উদ্ধারের বিষয়ে কোম্পানি কী করছে, কোনো অগ্রগতি আছে কিনা সে বিষয়টিও জানতে চেয়েছেন। আজিজুল হক আরও বলেন, জাহাজের মালিকপক্ষ তাদের বলেছে, জলদস্যুদের সঙ্গে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে মুক্তিপণের বিষয়ে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। মালিকপক্ষ নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছে।

১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশি পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ার মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সশস্ত্র জলদস্যুরা ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এমভি আবদুল্লাহ প্রায় ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরে যাচ্ছিল। ১৪ মার্চ দুপুরের দিকে দস্যুরা জাহাজটিকে সোমালিয়ার গ্যারাকাড উপকূলে নোঙর করতে বাধ্য করে।

১৫ মার্চ শুক্রবার বিকালে গ্যারাকাড উপকূল থেকে জাহাজটিকে আবারও সরিয়ে নেয়। বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার গোদবজিরান উপকূলের দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে আছে।