কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে যৌন হয়রানি, অর্থ আত্মসাত সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে সাময়িক বহিস্কৃত মাদরাসা সুপার মাওলানা আবু ইউছুফের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
গতকাল উপজেলা প্রশাসনের নিকট দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা, দাতা সদস্য, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এ দাবি জানান। এতে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৭টি বিষয়ে অভিযোগ আনা হয়। অভিযুক্ত সুপার আবু ইউছুফ উপজেলার রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের কুকুরিখিল গ্রামের মাওলানা আলী আকবরের ছেলে। এর আগেও মাদরাসার নারী কর্মচারীকে যৌন হয়রানি, ভুয়া ভাইচারে মাদরাসার অর্থ-আত্মসাত সহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত সুপারকে সর্বসম্মতিক্রমে সাময়িক বহিস্কার করে ম্যানেজিং কমিটি। তারপরও নানা কায়দায় নিজ দায়িত্বে পুনর্বহাল থাকেন তিনি। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে স্থানীয়রা ফুসে উঠেছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতার ফলে মাদরাসার সুনাম নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বারবার। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের দাসনাইপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায়। এ ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহল কর্তৃক লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, কাগজে-কলমে মাদরাসার ছাত্র সংখ্যা শতাধিক দেখা গেলেও প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষগুলো তালাবদ্ধ ছিলো। পঞ্চম শ্রেণিতে ১ জন শিক্ষার্থী ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ২ জন সহ সবমিলিয়ে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ১৮ থেকে ২০ জন। মাদরাসা সুপার দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানে আসেন না এবং শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার কোন স্বাক্ষর নেই। প্রতিষ্ঠানে না এসেও স্বীয় বেতন-ভাতা গ্রহণ করছেন তিনি। স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে এগার জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী সরকারি বেতন-ভাতা সহ সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করায় প্রতিমাসে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ গচ্ছা যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
ভুক্তভোগি ও স্থানীয়রা জানান, ২০০৫ সালে মাদরাসা সুপার আবু ইউছুফ নাম পরিবর্তন করে ঢাকার একটি মাদরাসা সহ একইসাথে দু’টি মাদসারার সুপারের দায়িত্ব পালন ও সরকারি সকল সুবিধা ভোগ করেন। একপর্যায়ে বিষয়টি অবগত হলে দু’টি প্রতিষ্ঠান থেকেই তাকে শোকজ করা হয়। ২০০৭ সালে তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন সহ শিক্ষা অধিদপ্তর তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ম্যানেজিং কমিটিকে সুপারিশ করে। এছাড়াও মাদরাসার নারী কর্মচারী নাজমা আক্তার তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তোলেন। বিষয়টির তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। ছাত্রীদের সাথেও তার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় অনেক সচেতন অভিভাবকই নিজ সন্তানকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসার মঞ্জুরী নবায়ন না করেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করা, কারণে অকারণে অন্যায়ভাবে শিক্ষক-কর্মচারীকে শোকজ করা, চাকুরি থেকে বহিস্কারের হুমকি প্রদান, প্রতিষ্ঠানে আসতে বাধা দেওয়া, বাড়তি ক্লাস চাপিয়ে দেওয়া সহ মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন হয়রানি করা, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় প্রতিষ্ঠানের শুভাকাঙ্খী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি যেন তার নিত্যদিনের কাজ। দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ রাখায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ভুক্তভোগি নিম্মমান সহকারী নাজমা আক্তার। ভুক্তভোগি অনেকেই তার রোষানলে পড়ে চাকুরি যাওয়ার ভয়ে মুখ খুলছেন না। চারিত্রিক স্খলন ও নৈতিক অবক্ষয় প্রমাণিত হওয়ার পরও তিনি কিভাবে স্বীয় পদে দায়িত্ব পালন করেন, বিষয়টি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুপার আবু ইউছুফের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি জানান, আমি বাধা পেয়ে মাদরাসায় আসতে পারছিনা। আনিত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। আদালতে এ সংক্রান্ত মামলা চলমান রয়েছে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সাথে ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ করে লাইনটি কেটে দেন।
নাঙ্গলকোট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, দাসনাইপাড়া মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, ভুক্তভোগি মাদরাসা কর্মচারী নাজমা আক্তার ও এলাকাবাসী কর্তৃক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।