নড়াইলের কালিয়ায় পড়ে থাকা নবগঙ্গা নদীর ওপর বারইপাড়া সেতুর নির্মাণ কাজ। নড়াইলের কালিয়ায় নবগঙ্গা নদীর ওপর বারইপাড়া সেতুর নির্মাণ কাজ তিন দফায় সময় বেড়েছে, সেই সঙ্গে ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বদলেছে নকশা, বদলেছে ঠিকাদারও। তবুও যেন শেষ হচ্ছে না কাজ। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, যদিও সড়ক বিভাগ বলছে, জটিলতা কাটিয়ে কাজ শুরু হয়েছে, আগামী বছর জুনের মধ্যেই সেতু নির্মাণের বাকি কাজ শেষ হবে। তবে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও চলাচলকারীদের প্রশ্ন নির্মাণ কাজ কবে শেষ হবে। তাদের স্বপ্ন কি দুঃস্বপ্ন হবে।
২০১৮ সালে শুরু হয়ে কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে সাড়ে ছয় বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। সেতুর নকশায় জটিলতায় ৬৫ কোটি টাকার সেতুর নির্মাণ ব্যয় এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা।
সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, সড়ক পথে নড়াইল সদরের সঙ্গে কালিয়া উপজেলাসহ, বাগেরহাট, খুলনা, গোপালগঞ্জের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালে শুরু হয় নবগঙ্গা নদীর ওপর কালিয়া বারইপাড়া সেতুর নির্মাণ কাজ। ৬৫১ দশমিক ৮৩ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণে চুক্তি মূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। সেতু নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামিল ইকবাল এন্ড মঈনুদ্দিন কনস্ট্রাকশন।
প্রথম থেকেই অল্প শ্রমিক দিয়ে ধীর গতিতে কাজ শুরুর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে করোনার জন্য আরও পিছিয়ে পড়ে কাজ। এরপর ধরা পড়ে নকশা জটিলতা। থেমে যায় কাজ। পরে দুই দফা সময় বাড়িয়ে নদীর দুই তীরবর্তী অংশের সংযোগ সড়কসহ ১৫টি পায়ার এবং ১১টি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হলেও মধ্যবর্তী অংশের ৩টি স্প্যান বসানোর কাজ এখনো বাকি।
এর মধ্যে ২০২০ সালের ২০ জুন মাসে একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় ৯ নম্বর পিলারটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাল্ক হেডের ধাক্কায় ৯নং পিলারটি আবার নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার পর মূল অংশের ৪টি পায়ার ও ৩টি স্প্যান বসানোর কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই সড়ক বিভাগ প্রথম মেয়াদের চুক্তি শেষ করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। পরে দ্বিতীয় মেয়াদে কংক্রিট এন্ড স্টিল টেকনোলজিস্ট লিমিটেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতুর বাকি অংশ নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, বিদেশ থেকে আমদানি করা ৮৬ দশমিক ৭৩ মিটার স্টিল আর্চ স্প্যানসহ আরও দুটি স্প্যান এবং বাড়তি পায়ারের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে।
মাধবপাশা গ্রামের ডা. অসীম কুমার অধিকারী বলেন, সেতুটি নিয়ে আমাদের দীর্ঘ দিন স্বপ্ন ছিল। বাস্তবায়ন হওয়ার প্রক্রিয়া দেখেছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো আজকে ছয় সাত বছরেও সেতুটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পেল না। সেতু হলে কালিয়াবাসী নড়াইলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য খুবই উপকৃত হবে।
বিষ্ণপুর গ্রামের শরিফুল সরদার বলেন, ‘সাড়ে ছয় বছর ধরে সেতু হয়েও হচ্ছে না। আমরা খুবই ভোগান্তিতে আছি। ঝুঁকি নিয়ে নৌকা পারাপার হতে হয়। ব্রিজের কাজ দ্রম্নত শেষ হলে যাতায়াতের ভোগান্তি শেষ হতো।
জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, বিআইডবিস্নউটিএ কর্তৃপক্ষ নবগঙ্গা নদীকে ‘সি’ গ্রেডের নদী হিসেবে আমাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠায়। পরে বিআইডবিস্নউটিএ কর্তৃপক্ষ নবগঙ্গা নদীর গ্রেড পরিবর্তন করে ‘বি’ গ্রেডের নদী হিসেবে প্রতিবেদন দেয়। পরবর্তীতে তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী সেতুর নকশা পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। ২০২৩ সালে একনেক সভায় নকশা পরিবর্তন করে স্টিল স্প্যান বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় মেয়াদে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ২০২৫ সালের জুন মাসে নির্দিষ্ট মেয়াদে সেতুর কাজ শেষ হবে।