Dhaka 1:23 am, Monday, 23 December 2024

দরপত্র আহ্বান ॥ সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধান

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। সমুদ্রের ২৪টি ব্লক ইজারা দিতে রবিবার প্রকাশ হয়েছে দরপত্র। চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে হবে দর প্রস্তাব। সেগুলোর মূল্যায়ন শেষে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত বছরেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পায় সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য উৎপাদনের অংশীদার চুক্তি (পিএসসি)। বছরের শেষের দিকেই দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনাও নেয় জ্বালানি বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের এক্সোনমোবিল, শেভরনসহ বেশ কয়েকটি বাঘা বাঘা কোম্পানি আগ্রহও প্রকাশ করে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনসহ বেশ কিছু বাস্তবতায় কিছুটা স্থবির হয়ে পড়লেও নতুন বছরের শুরুতে আবারও এর জন্য জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ। কোনো একটি নির্দিষ্ট কোম্পানি নয় বরং সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে দরপত্র পাওয়ার পর দরপত্রের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ‘রোড-শো’। এ দরপত্রের মাধ্যমে ২৪টি ব্লকে জ্বালানি অনুসন্ধানে বিশ্বের অন্তত ৫৫টি কোম্পানিকে দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। দেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগও আহ্বান করা হবে এই রোড-শো’র মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোকে (আইওসি) দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী করে তুলতে একাধিক রোডশোর আয়োজন করা হবে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন দেশের ৫৫টি কোম্পানিকে দরপত্রে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এর মধ্যে মার্কিন কোম্পানি শেভরন, এক্সোনমবিল, কনোকো ফিলিপস, ডিভন এনার্জি, যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, তাল্লো, শেল ও নেপচুন এনার্জি, চীনের চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল, চায়না ন্যাশনাল   পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, সিনোপ্যাক, ভারতের ওএনজিসি ও অয়েল ইন্ডিয়া, ফ্রান্সের টোটাল এনার্জিস, অস্ট্রেলিয়ার সান্তোস, রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ও লুক অয়েল উল্লেখযোগ্য।

গত বছরের জুলাইয়ে দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এবার স্থলভাগের সঙ্গে সঙ্গে জলভাগেও তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে অনুমোদন হয় পিএসএসির। একই সময়ে দেশের জলভাগে অনুসন্ধান কার্যক্রমে আগ্রহী তাদের সঙ্গে সমঝোতা করার পাশাপাশি দেশের স্বার্থে সবচেয়ে বেশি কোনো কোম্পানি প্রাধান্য পেতে পারে তা খুঁজে বের করার কাজও শুরু করে জ্বালানি বিভাগ। সম্প্রতি শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শনে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সমুদ্রে অনুসন্ধানের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।

এর প্রেক্ষিতে এই কোম্পানিটিও একাধিক ব্লক অনুসন্ধানের জন্য অনুমোদন পেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যতম বড় কোম্পানি হিসেবে পরিচিত এক্সোনমবিলের একটি প্রতিনিধি দলও তাদের প্রস্তাব নিয়ে ঢাকায় এসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং জ্বালানি সচিব মো. নূরুল আলমের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন। তবে চারটির বেশি ব্লক এক কোম্পানিকে দিতে চায় না সরকার। এক্ষত্রে ভাগ হওয়া সমুদ্র অঞ্চলের ২৪ ব্লকে এক্সোন মোবিল, শেভরনসহ অন্যান্য কোম্পানিগুলো থেকেও আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের লক্ষ্যেই এ রোড শো উল্লেখ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, দরপত্র ছাড়া বিশেষ বিধানের আওতায় কোনো কোম্পানিকে সমুদ্রে অনুসন্ধানের কাজ দেওয়া হবে না। দরপত্র উন্মুক্ত হয়েছে। কাল (আজ) সংবাদ সম্মেলনে সব ধরনের শর্ত ও সুবিধা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

এর আগে জনকণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সাগরে চলমান জরিপ শেষ হয়েছে। স্লামবার্জের বহুমাত্রিক জরিপের রিপোর্ট ইতোমধ্যে আমাদের হাতে এসেছে। এবার আন্তর্জাতিকভাবে দরপত্র আহ্বান করার পালা। এক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে দেশে দেশে রোড শো করার। কয়েকদিন আগে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক দরপত্র বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে শেভরন লিখিতভাবে অনুসন্ধান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে লিখিতভাবে জানিয়ে তিনি বলেন, এক্সোন মোবিল আগেই আগ্রহ দেখিয়েছে। লিখিতভাবে আমরা দুই কোম্পানির অফার পেলাম, সার্ভের রেজাল্ট আসার আগেই। তাদের আমরা অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছি। আরও যদি কেউ সার্ভে করে তাদের সঙ্গে একটা ‘কম্পিটিটিভ বিডিংয়ে’ যাব।

দেশের উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদ মেটাতে গভীর ও অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে প্রণিত খসড়া ‘বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্টাক (পিএসসি) ২০২৩’ অনুমোদন দেওয়া হয়। সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর এক দশক ধরে ব্যর্থতার বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছিল বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ। চারটি বিদেশী কোম্পানি কাজ শুরু করলেও তিনটি ছেড়ে গেছে বঙ্গোপসাগর। গত ১০ বছরে নতুন করে কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। এতদিন নতুন করে দরপত্র আহ্বানের উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) চূড়ান্ত না তার চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন ৭ জুলাই। তাই এ কার্যক্রমে আর কোনো বাধা থাকল না জানিয়ে ওই দিনই এক প্রতিক্রিয়ায় নসরুল হামিদ জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, এতদিন তো আমরা নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানি পাচ্ছিলাম না যারা অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এবার এক্সোন মোবিলসহ আরও ১০টি ছোট-বড় কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কোম্পানি এক্সোন মোবিলই। পিএসসির অনুমোদন পেয়েছি। আমাদের এই পিএসসি বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আগে ছিল দশে। দেশের স্বার্থ বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় এটি প্রস্তুত হয়েছে। এরপর দরপত্র আহ্বানে আর কোনো বাধা নেই।

জানা যায়, গ্যাস ও খনিজ প্রাপ্তির সম্ভাবনা বিবেচনায় দেশের স্থলভাগকে ২২টি এবং সমুদ্রভাগকে ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এই ২৬টির মধ্যে ১১টি ব্লক অগভীর সমুদ্রে অবস্থিত। বাকি ১৫টি গভীর সমুদ্রে। এখন ২৪টি ব্লকে অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বর্তমানে শুধু অগভীর অংশের দুটি ব্লকে (এসএস-০৪ এবং এসএস-০৯) অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড ও অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড। চলতি বছরে তাদের জরিপ কাজের ফলাফল পাওয়ার কথা রয়েছে।

পিএসসির কপি বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট ৩৮টি আর্টিকেলে ঠিকাদারদারদের বাধ্যবাধতকা, চুক্তির এলাকা, চুক্তির শর্ত, বাণিজ্যিক আবিষ্কারের মূল্যায়নসহ মূল্য পরিশোধ, কর পরিশোধ সব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। পেট্রোবাংলা বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই পিএসসির যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়। পরে জ্বালানি বিভাগের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়। তার অনুমোদন সাপেক্ষে তা তোলা হয় ক্রয় সংক্রান্ত বৈঠকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি বছরেই আমরা সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করতে চাই।

এর আগে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সবশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১২ সালে। এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে নতুন পিএসসির কাজ চলেছে।

এবার দরপত্র আহ্বানের পালা জানিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জিকে দিয়ে পিএসসির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা নিজস্ব মতামতসহ এটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পাঠায় গত ফেব্রুয়ারিতে। আগেরটি থেকে এটিতে উৎপাদন ও দাম আরও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে এতে কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এটি অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিপরিষদ কমিটি বিশ্লেষণ করেছে। এরপরই তা অনুমোদন পায়। আমাদের সার্ভেও প্রায় শেষের পথে। আশা করছি ১০ মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই শুরু হবে রোড-শো’র কার্যক্রম। উন্মুক্ত করা হবে দরপত্র। দরপত্রের কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য ৬ মাস সময় দেয়া হবে। নভেম্বর বা ডিসেম্বর পিএসসি (উৎপাদন ও বন্টন চুক্তি) চূড়ান্ত করতে চাই। তবে আমরা এটি নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির জন্য না রেখে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে দর আহ্বান করব। যেটা আমাদের দেশের স্বার্থের জন্য বেশি ভালো হবে তাদেরই কাজ দেওয়া হবে।

আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানি এক্সোনমবিল ও শেভরনের মতো কোম্পানি যারা আগে আগ্রহ দেখিয়েছেন তাদের বিষয়ে কি ভাবা হচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রতিযোগিতামূলক দরের দিকে যাচ্ছি। এখানে যে কোম্পানির প্রস্তাব সুবিধাজনক হবে এবং যাদের যোগ্য মনে করা হবে তারাই কাজ পাবে। সবার আগে দেশের স্বার্থ।

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরাও। যদি এটি শুরু হয় তাহলে দেশের অভ্যন্তরে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই আলো দেখাবে উল্লেখ করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ভারত-মিয়ানমার উভয় দেশের সঙ্গেই আমরা সমুদ্র বিজয় করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশগুলো সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অনেকটাই এগিয়ে গেলেও আমরা এখনো পিছিয়েই রয়েছি। এখনো পিএসসি চূড়ান্ত অনুমোদনই পায়নি। তবে যদি সত্যি সত্যি এ কার্যক্রম শুরু হয় তাহলে আশা করছি তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে আমরা অনেকটাই এগিয়ে যাব। শুধু স্থলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না আমাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম মনে করেন, বিনিয়োগকারীরা তখনই কেবল আগ্রহী হবেন যখন তাদের সামনে যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য উপাত্ত প্রদর্শন করতে পারবেন, যেটা দেখাবে  যে, এখানে সম্ভাবনা অনেক ভালো। আমাদের পিএসসি যথেষ্ট উন্নতমানের হয়েছে। এখন দেখার বিষয় চূড়ান্তভাবে কারা কাজ পায় এবং তা কবে নাগাদ শুরু হয়।

এর আগে, ২০০৮ সালের গভীর সমুদ্রের ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ নম্বর ব্লক ইজারা পেয়েছিল আমেরিকান কোম্পানি কনোকো ফিলিপস। কোম্পানিটি দুই বছর অনুসন্ধান করার পর চুক্তি সংশোধন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির দাবি জানায়। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় ব্লক দুটি ছেড়ে দিয়ে চলে যায় ২০১৪ সালে। অন্যদিকে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক দরপত্রে গভীর সমুদ্রের ডিএস-১২, ডিএস-১৬ ও ডিএস-২১ এই তিন ব্লকের জন্য যৌথভাবে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছিল কনোকো ফিলিপস ও স্টেট অয়েল। পরবর্তী সময়ে কনোকো নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ব্লকগুলো ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। একই সময়ে অগভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোর জন্য ভিন্ন একটি দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। ওই দর প্রক্রিয়া এসএস ১১ নম্বর ব্লক সান্তোস ও ক্রিস এনার্জি এবং এসএস ৪ ও এসএস ৯ নম্বর ব্লক ভারতীয় দুটি কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ (ওভিএল) ও অয়েল ইন্ডিয়া (ওআইএল) ইজারা নিয়েছিল। সান্তোস এসএস-১১ ব্লকে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপ করার পর কূপ খনন না করেই বাংলাদেশ  থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। ওএনজিসি দুই ব্লকে থ্রি-ডি ও টু-ডি সাইসমিক জরিপ চালানোর পর ৪ নম্বর ব্লকে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করে, কিন্তু গ্যাস মেলেনি। এবার নতুন করে আশা দেখছেন জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা।

গভীর বঙ্গোপসাগরে নিজ সীমানায় অনুসন্ধান চালিয়ে এরই মধ্যে বড় সাফল্য পেয়েছে ভারত ও মিয়ানমার। চলতি বছরের শুরুতে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে গভীর সাগরে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বড় মজুত আবিষ্কার করেছে ওএনজিসি।

আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমানার নিকটবর্তী এলাকার মিয়া ও শোয়ে নামে দুটি গ্যাসকূপ থেকে এরই মধ্যে কয়েক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে ফেলেছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় মিয়ানমারের। এরপর ২০১৩ সালে এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে দেশটি। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর থেকে বাংলাদেশেও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

দরপত্র আহ্বান ॥ সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধান

আপলোড সময় : 07:44:54 pm, Wednesday, 13 March 2024

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। সমুদ্রের ২৪টি ব্লক ইজারা দিতে রবিবার প্রকাশ হয়েছে দরপত্র। চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে হবে দর প্রস্তাব। সেগুলোর মূল্যায়ন শেষে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত বছরেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পায় সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য উৎপাদনের অংশীদার চুক্তি (পিএসসি)। বছরের শেষের দিকেই দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনাও নেয় জ্বালানি বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের এক্সোনমোবিল, শেভরনসহ বেশ কয়েকটি বাঘা বাঘা কোম্পানি আগ্রহও প্রকাশ করে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনসহ বেশ কিছু বাস্তবতায় কিছুটা স্থবির হয়ে পড়লেও নতুন বছরের শুরুতে আবারও এর জন্য জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ। কোনো একটি নির্দিষ্ট কোম্পানি নয় বরং সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে দরপত্র পাওয়ার পর দরপত্রের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ‘রোড-শো’। এ দরপত্রের মাধ্যমে ২৪টি ব্লকে জ্বালানি অনুসন্ধানে বিশ্বের অন্তত ৫৫টি কোম্পানিকে দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। দেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগও আহ্বান করা হবে এই রোড-শো’র মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোকে (আইওসি) দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী করে তুলতে একাধিক রোডশোর আয়োজন করা হবে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন দেশের ৫৫টি কোম্পানিকে দরপত্রে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এর মধ্যে মার্কিন কোম্পানি শেভরন, এক্সোনমবিল, কনোকো ফিলিপস, ডিভন এনার্জি, যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, তাল্লো, শেল ও নেপচুন এনার্জি, চীনের চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল, চায়না ন্যাশনাল   পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, সিনোপ্যাক, ভারতের ওএনজিসি ও অয়েল ইন্ডিয়া, ফ্রান্সের টোটাল এনার্জিস, অস্ট্রেলিয়ার সান্তোস, রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ও লুক অয়েল উল্লেখযোগ্য।

গত বছরের জুলাইয়ে দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এবার স্থলভাগের সঙ্গে সঙ্গে জলভাগেও তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে অনুমোদন হয় পিএসএসির। একই সময়ে দেশের জলভাগে অনুসন্ধান কার্যক্রমে আগ্রহী তাদের সঙ্গে সমঝোতা করার পাশাপাশি দেশের স্বার্থে সবচেয়ে বেশি কোনো কোম্পানি প্রাধান্য পেতে পারে তা খুঁজে বের করার কাজও শুরু করে জ্বালানি বিভাগ। সম্প্রতি শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শনে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সমুদ্রে অনুসন্ধানের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।

এর প্রেক্ষিতে এই কোম্পানিটিও একাধিক ব্লক অনুসন্ধানের জন্য অনুমোদন পেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যতম বড় কোম্পানি হিসেবে পরিচিত এক্সোনমবিলের একটি প্রতিনিধি দলও তাদের প্রস্তাব নিয়ে ঢাকায় এসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং জ্বালানি সচিব মো. নূরুল আলমের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন। তবে চারটির বেশি ব্লক এক কোম্পানিকে দিতে চায় না সরকার। এক্ষত্রে ভাগ হওয়া সমুদ্র অঞ্চলের ২৪ ব্লকে এক্সোন মোবিল, শেভরনসহ অন্যান্য কোম্পানিগুলো থেকেও আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের লক্ষ্যেই এ রোড শো উল্লেখ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, দরপত্র ছাড়া বিশেষ বিধানের আওতায় কোনো কোম্পানিকে সমুদ্রে অনুসন্ধানের কাজ দেওয়া হবে না। দরপত্র উন্মুক্ত হয়েছে। কাল (আজ) সংবাদ সম্মেলনে সব ধরনের শর্ত ও সুবিধা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

এর আগে জনকণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সাগরে চলমান জরিপ শেষ হয়েছে। স্লামবার্জের বহুমাত্রিক জরিপের রিপোর্ট ইতোমধ্যে আমাদের হাতে এসেছে। এবার আন্তর্জাতিকভাবে দরপত্র আহ্বান করার পালা। এক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে দেশে দেশে রোড শো করার। কয়েকদিন আগে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক দরপত্র বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে শেভরন লিখিতভাবে অনুসন্ধান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে লিখিতভাবে জানিয়ে তিনি বলেন, এক্সোন মোবিল আগেই আগ্রহ দেখিয়েছে। লিখিতভাবে আমরা দুই কোম্পানির অফার পেলাম, সার্ভের রেজাল্ট আসার আগেই। তাদের আমরা অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছি। আরও যদি কেউ সার্ভে করে তাদের সঙ্গে একটা ‘কম্পিটিটিভ বিডিংয়ে’ যাব।

দেশের উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদ মেটাতে গভীর ও অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে প্রণিত খসড়া ‘বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্টাক (পিএসসি) ২০২৩’ অনুমোদন দেওয়া হয়। সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর এক দশক ধরে ব্যর্থতার বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছিল বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ। চারটি বিদেশী কোম্পানি কাজ শুরু করলেও তিনটি ছেড়ে গেছে বঙ্গোপসাগর। গত ১০ বছরে নতুন করে কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। এতদিন নতুন করে দরপত্র আহ্বানের উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) চূড়ান্ত না তার চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন ৭ জুলাই। তাই এ কার্যক্রমে আর কোনো বাধা থাকল না জানিয়ে ওই দিনই এক প্রতিক্রিয়ায় নসরুল হামিদ জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, এতদিন তো আমরা নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানি পাচ্ছিলাম না যারা অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এবার এক্সোন মোবিলসহ আরও ১০টি ছোট-বড় কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কোম্পানি এক্সোন মোবিলই। পিএসসির অনুমোদন পেয়েছি। আমাদের এই পিএসসি বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আগে ছিল দশে। দেশের স্বার্থ বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় এটি প্রস্তুত হয়েছে। এরপর দরপত্র আহ্বানে আর কোনো বাধা নেই।

জানা যায়, গ্যাস ও খনিজ প্রাপ্তির সম্ভাবনা বিবেচনায় দেশের স্থলভাগকে ২২টি এবং সমুদ্রভাগকে ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এই ২৬টির মধ্যে ১১টি ব্লক অগভীর সমুদ্রে অবস্থিত। বাকি ১৫টি গভীর সমুদ্রে। এখন ২৪টি ব্লকে অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বর্তমানে শুধু অগভীর অংশের দুটি ব্লকে (এসএস-০৪ এবং এসএস-০৯) অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড ও অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড। চলতি বছরে তাদের জরিপ কাজের ফলাফল পাওয়ার কথা রয়েছে।

পিএসসির কপি বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট ৩৮টি আর্টিকেলে ঠিকাদারদারদের বাধ্যবাধতকা, চুক্তির এলাকা, চুক্তির শর্ত, বাণিজ্যিক আবিষ্কারের মূল্যায়নসহ মূল্য পরিশোধ, কর পরিশোধ সব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। পেট্রোবাংলা বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই পিএসসির যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়। পরে জ্বালানি বিভাগের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়। তার অনুমোদন সাপেক্ষে তা তোলা হয় ক্রয় সংক্রান্ত বৈঠকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি বছরেই আমরা সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করতে চাই।

এর আগে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সবশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১২ সালে। এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে নতুন পিএসসির কাজ চলেছে।

এবার দরপত্র আহ্বানের পালা জানিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জিকে দিয়ে পিএসসির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা নিজস্ব মতামতসহ এটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পাঠায় গত ফেব্রুয়ারিতে। আগেরটি থেকে এটিতে উৎপাদন ও দাম আরও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে এতে কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এটি অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিপরিষদ কমিটি বিশ্লেষণ করেছে। এরপরই তা অনুমোদন পায়। আমাদের সার্ভেও প্রায় শেষের পথে। আশা করছি ১০ মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই শুরু হবে রোড-শো’র কার্যক্রম। উন্মুক্ত করা হবে দরপত্র। দরপত্রের কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য ৬ মাস সময় দেয়া হবে। নভেম্বর বা ডিসেম্বর পিএসসি (উৎপাদন ও বন্টন চুক্তি) চূড়ান্ত করতে চাই। তবে আমরা এটি নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির জন্য না রেখে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে দর আহ্বান করব। যেটা আমাদের দেশের স্বার্থের জন্য বেশি ভালো হবে তাদেরই কাজ দেওয়া হবে।

আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানি এক্সোনমবিল ও শেভরনের মতো কোম্পানি যারা আগে আগ্রহ দেখিয়েছেন তাদের বিষয়ে কি ভাবা হচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রতিযোগিতামূলক দরের দিকে যাচ্ছি। এখানে যে কোম্পানির প্রস্তাব সুবিধাজনক হবে এবং যাদের যোগ্য মনে করা হবে তারাই কাজ পাবে। সবার আগে দেশের স্বার্থ।

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরাও। যদি এটি শুরু হয় তাহলে দেশের অভ্যন্তরে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই আলো দেখাবে উল্লেখ করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ভারত-মিয়ানমার উভয় দেশের সঙ্গেই আমরা সমুদ্র বিজয় করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশগুলো সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অনেকটাই এগিয়ে গেলেও আমরা এখনো পিছিয়েই রয়েছি। এখনো পিএসসি চূড়ান্ত অনুমোদনই পায়নি। তবে যদি সত্যি সত্যি এ কার্যক্রম শুরু হয় তাহলে আশা করছি তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে আমরা অনেকটাই এগিয়ে যাব। শুধু স্থলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না আমাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম মনে করেন, বিনিয়োগকারীরা তখনই কেবল আগ্রহী হবেন যখন তাদের সামনে যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য উপাত্ত প্রদর্শন করতে পারবেন, যেটা দেখাবে  যে, এখানে সম্ভাবনা অনেক ভালো। আমাদের পিএসসি যথেষ্ট উন্নতমানের হয়েছে। এখন দেখার বিষয় চূড়ান্তভাবে কারা কাজ পায় এবং তা কবে নাগাদ শুরু হয়।

এর আগে, ২০০৮ সালের গভীর সমুদ্রের ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ নম্বর ব্লক ইজারা পেয়েছিল আমেরিকান কোম্পানি কনোকো ফিলিপস। কোম্পানিটি দুই বছর অনুসন্ধান করার পর চুক্তি সংশোধন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির দাবি জানায়। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় ব্লক দুটি ছেড়ে দিয়ে চলে যায় ২০১৪ সালে। অন্যদিকে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক দরপত্রে গভীর সমুদ্রের ডিএস-১২, ডিএস-১৬ ও ডিএস-২১ এই তিন ব্লকের জন্য যৌথভাবে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছিল কনোকো ফিলিপস ও স্টেট অয়েল। পরবর্তী সময়ে কনোকো নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ব্লকগুলো ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। একই সময়ে অগভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোর জন্য ভিন্ন একটি দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। ওই দর প্রক্রিয়া এসএস ১১ নম্বর ব্লক সান্তোস ও ক্রিস এনার্জি এবং এসএস ৪ ও এসএস ৯ নম্বর ব্লক ভারতীয় দুটি কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ (ওভিএল) ও অয়েল ইন্ডিয়া (ওআইএল) ইজারা নিয়েছিল। সান্তোস এসএস-১১ ব্লকে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপ করার পর কূপ খনন না করেই বাংলাদেশ  থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। ওএনজিসি দুই ব্লকে থ্রি-ডি ও টু-ডি সাইসমিক জরিপ চালানোর পর ৪ নম্বর ব্লকে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করে, কিন্তু গ্যাস মেলেনি। এবার নতুন করে আশা দেখছেন জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা।

গভীর বঙ্গোপসাগরে নিজ সীমানায় অনুসন্ধান চালিয়ে এরই মধ্যে বড় সাফল্য পেয়েছে ভারত ও মিয়ানমার। চলতি বছরের শুরুতে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে গভীর সাগরে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বড় মজুত আবিষ্কার করেছে ওএনজিসি।

আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমানার নিকটবর্তী এলাকার মিয়া ও শোয়ে নামে দুটি গ্যাসকূপ থেকে এরই মধ্যে কয়েক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে ফেলেছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় মিয়ানমারের। এরপর ২০১৩ সালে এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে দেশটি। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর থেকে বাংলাদেশেও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।