Dhaka 12:30 pm, Sunday, 22 December 2024

জেলের ছদ্মবেশে নৌকায় আনা হচ্ছে মাদক

স্টাফ রিপোর্টার : ভারত থেকে ফেনসিডিল চোরাচালানের অন্যতম রুট রাজশাহী। পদ্মা পাড়ি দিয়ে হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিলের চালান এ রুট হয়ে দেশে ঢোকার পর সর্বত্র ছড়িয়ে যায়। আগে বিজিবি ও পুলিশের হাতে বড় বড় ফেনসিডিলের চালান ধরা পড়ত। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কখনো কখনো ছোট ছোট চালান ধরা পড়লেও বড় চালানের হদিস মিলছে না। কারণ মাদককারবারিরা কৌশল পাল্টে ফেলেছে। বোতলে করে ফেনসিডিল আসছে না। জার ভর্তি করে খোলা ফেনসিডিল পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে জেলেদের ছদ্মবেশে। পদ্মায় মাছ ধরার অজুহাতে মাদককারবারিরা ফেনসিডিল নিয়ে আসছে।
সীমান্তবর্তী এলাকার জনসাধারণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, বড় বড় চালান ধরার কারণে মাদককারবারিরা নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। বর্তমানে বোতলজাত ফেনসিডিল আসছে না। আসছে ফেনসিডিল তৈরির পাউডার কোডিন ও পাঁচ-দশ লিটারের জারে লিকুইড ফেনসিডিল। আলাদাভাবে আসছে ফেনসিডিলের বোতলের লেবেলও। এরপর সীমান্তবর্তী চর এলাকা কিংবা ফাঁকা মাঠে এগুলো বোতলজাত করে বিক্রি করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঁচ-দশ লিটারের জারে করেও লিকুইড ফেনসিডিল পাঠানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে খুব সহজেই তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

চারঘাট মডেল ও বাঘা থানা সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে এ দুই থানায় ৮১৩টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৮২টিই মাদক মামলা। প্রতি মাসে এ দুই থানায় ৬৫-৭৫টি মামলা রেকর্ড হয়। এর মধ্যে ৫৫-৬৫টিই মাদক মামলা। কিন্তু গত এক বছরে দায়েরকৃত মাদক মামলার অধিকাংশই ১০-২০ বোতল ফেনসিডিলের মামলা।

সরেজমিন চারঘাট ও বাঘা সীমান্তের পদ্মা নদীর পাড়ে কথা হয় স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে সরকারি কার্ডধারী জেলে সাহাবুদ্দিন আলী বলেন, দুই উপজেলা মিলে প্রায় তিন হাজার কার্ডধারী জেলে আছেন। কিন্তু সবাই মাছ ধরতে নদীতে নামে না। অনেকেই নৌকা-জাল নিয়ে নদীতে নেমে ভারতীয় জেলেদের জন্য অপেক্ষা করে। ভারতীয় জেলেরা মাঝ নদীতে এসে নৌকা থেকে পাউডার কিংবা বোতলে করে তরল ফেনসিডিল, বোতলের লেবেল এসব জেলের নৌকায় তুলে দেয়। পরে নদীর তীরে এনে সুবিধাজনক জায়গায় পুরনো বোতলে ফেনসিডিল ভরে বিশেষ যন্ত্র দিয়ে নতুন লেবেল লাগিয়ে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয়। এভাবেই নৌকায় নৌকায় ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদকের চালান আসছে।

জেলেদের কথার সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদককারবারিরা দুই লিটার লিকুইড ফেনসিডিল নিয়ে আসতে পারলে তার সাথে দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানির কাশির সিরাপ ও ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রণ করে ৫০-৬০ বোতল ফেনসিডিল তৈরি করেন। আসল ফেনসিডিলের দাম প্রতি পিস দেশে ২৫০০-৩০০০ টাকা। সেক্ষেত্রে ১৫০০-২০০০ টাকা দামে বিক্রি করেন তারা। সংগ্রহে থাকা পুরনো বোতল পরিষ্কার করে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে বোতলের গায়ে ও মুখে নতুন লেবেল লাগানো হয়। দেশের বিভিন্ন শহরে জারে করে লিকুইড ফেনসিডিলের সাথে শুধু লেবেল পাঠানো হয়। সাইজমতো বোতল তৈরি করে প্যাকেটজাত করেন সেখানকার কারবারিরা।

তথ্য বলছে, নকল ফেনসিডিল তৈরির কারখানার মধ্যে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, ডাকবাংলো বাজার ও ধুলিয়ান বাজারের কারখানার মালিক যথাক্রমে সুখচাঁদ চন্দ, অনু মোদি ও বাদল। গ্রামগুলো বাংলাদেশের সীমান্তের সবচেয়ে নিকটবর্তী। ভারতের কারবারিদের সঙ্গে বাংলাদেশের আতিয়ার রহমান, নজির উদ্দিন, আশরাফুল, মাহবুব, নজরুল ওপারে গিয়ে যৌথ মূলধনে কারবার পরিচালনা করে থাকে।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাজশাহী সীমান্তের ওপারে ভারতীয় এলাকায় অন্তত ৭০টি ফেনডিসিলের কারখানা রয়েছে। বাংলাদেশের ক্রেতাদের টার্গেট করেই এসব কারখানা গড়ে উঠেছে। কাজেই বিভিন্ন সময়ে নানা কৌশলে সীমান্ত গলে ফেনসিডিলের চালান তারা বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। এ দেশের চোরাকারবারিরাও নানা কায়দায় সেগুলো আনছে, বিক্রি করছে। ফেনসিডিলসহ ছোটখাটো কারবারিরা ধরা পড়লেও গডফাদাররা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। মামলা হয় কেবল বহনকারীদের নামে। ফলে মাদক কেনাবেচা কোনোভাবে কমছে না। এতে যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই।

গত ২১ আগস্ট বাঘার পদ্মা নদী থেকে ভাসমান দুই বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি পাকুড়িয়া এলাকা থেকে। দুই বস্তায় ৫৫০ বোতল ফেনসিডিল ছিল। নাপিতপাড়া মোড় সীমান্ত এলাকার পদ্মা নদী থেকে রশিতে বাঁধা পানিতে ভাসমান অবস্থায় দুই বস্তা ফেনসিডিল জব্দ করে রাজশাহী ব্যাটালিয়ন-১ আলাইপুর ক্যাম্পের বিজিবি টহল দল। সম্প্রতি পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার পর থেকে মাদক চোরাচালান ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সুযোগে মাদককারবারিরা দেদার ফেনসিডিলও নিয়ে আসছে।

বাঘা মীরগঞ্জ এলাকার ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী শরীফ আলী বলেন, আগে সীমান্তের এসব এলাকা থেকে প্রতি মাসে অন্তত দশ বস্তা ফেনসিডিলের খালি বোতল কেজি দরে বিক্রির জন্য আসত। কিন্তু এখন হাফ বস্তাও হয় না। কিছু বোতল গ্রামে ফেরি করা ভাঙাড়িদের কাছে পাওয়া গেলেও সেগুলো পিস হিসাবে ফের অতিরিক্ত দামে কিনে নিয়ে যায় অনেকে। তবে এর কারণ তিনি জানেন না বলে জানান।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহীর পরিদর্শক (সার্কেল-খ) সাইফুল আলম বলেন, আমরা প্রতি মাসেই চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় ১০-১৫টি অভিযান পরিচলনা করি। কিন্তু এখন ফেনসিডিল ধরা অনেক কঠিন। কোডিন পাউডার দেশে এনে কাশির সিরাপের সাথে মিশিয়ে ফেনসিডিল তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন বোতল ও পলিথিনেও লিকুইড ফেনসিডিল ও লেবেল এনে পুরনো বোতলে ঢুকিয়ে নতুন ফেনসিডিল তৈরি করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে পলিথিনে করে পরিবহনের সময় লিকুইড ফেনসিডিল উদ্ধার করেছি। কৌশল পরিবর্তন করায় অভিযান পরিচালনা করতে বেগ পেতে হচ্ছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চারঘাটের ইউসুফপুর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার হাবিবুর রহমান বলেন, ফেনসিডিলের বড় চালান না আসায় আমি বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে জেনেছি, পাঁচ-দশ লিটারের জারে করে লিকুইড ফেনসিডিল দেশে আসছে। তেলের এসব জার কেউ সন্দেহ না করায় মাদককারবারিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সহজেই রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ জন্য আমরাও সতকর্তার সাথে সীমান্তে দায়িত্ব পালন করছি।

বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মতিউল ইসলাম মণ্ডল জানিয়েছেন, পদ্মা নদীতে জেলেদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নৌকা নিয়ে ছদ্মবেশে মাদকবকারবারিরা ধরা পড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদকের ব্যাপারে বিজিবি একদম জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে। সীমান্তগুলোতেও নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। পদ্মাকে ঘিরেও বিজিবির কড়া নজরদারি রয়েছে।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, কয়েক দিন আগেই তিন বস্তা ফেনসিডিল জব্দ করা হয়েছে। প্রতিনিয়তই নানা কায়দায় মাদক আসছে। এসব রোধে সজাগ রয়েছে পুলিশ। প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চলছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

জেলের ছদ্মবেশে নৌকায় আনা হচ্ছে মাদক

আপলোড সময় : 03:11:37 am, Sunday, 29 September 2024

স্টাফ রিপোর্টার : ভারত থেকে ফেনসিডিল চোরাচালানের অন্যতম রুট রাজশাহী। পদ্মা পাড়ি দিয়ে হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিলের চালান এ রুট হয়ে দেশে ঢোকার পর সর্বত্র ছড়িয়ে যায়। আগে বিজিবি ও পুলিশের হাতে বড় বড় ফেনসিডিলের চালান ধরা পড়ত। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কখনো কখনো ছোট ছোট চালান ধরা পড়লেও বড় চালানের হদিস মিলছে না। কারণ মাদককারবারিরা কৌশল পাল্টে ফেলেছে। বোতলে করে ফেনসিডিল আসছে না। জার ভর্তি করে খোলা ফেনসিডিল পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে জেলেদের ছদ্মবেশে। পদ্মায় মাছ ধরার অজুহাতে মাদককারবারিরা ফেনসিডিল নিয়ে আসছে।
সীমান্তবর্তী এলাকার জনসাধারণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, বড় বড় চালান ধরার কারণে মাদককারবারিরা নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। বর্তমানে বোতলজাত ফেনসিডিল আসছে না। আসছে ফেনসিডিল তৈরির পাউডার কোডিন ও পাঁচ-দশ লিটারের জারে লিকুইড ফেনসিডিল। আলাদাভাবে আসছে ফেনসিডিলের বোতলের লেবেলও। এরপর সীমান্তবর্তী চর এলাকা কিংবা ফাঁকা মাঠে এগুলো বোতলজাত করে বিক্রি করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঁচ-দশ লিটারের জারে করেও লিকুইড ফেনসিডিল পাঠানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে খুব সহজেই তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

চারঘাট মডেল ও বাঘা থানা সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে এ দুই থানায় ৮১৩টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৮২টিই মাদক মামলা। প্রতি মাসে এ দুই থানায় ৬৫-৭৫টি মামলা রেকর্ড হয়। এর মধ্যে ৫৫-৬৫টিই মাদক মামলা। কিন্তু গত এক বছরে দায়েরকৃত মাদক মামলার অধিকাংশই ১০-২০ বোতল ফেনসিডিলের মামলা।

সরেজমিন চারঘাট ও বাঘা সীমান্তের পদ্মা নদীর পাড়ে কথা হয় স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে সরকারি কার্ডধারী জেলে সাহাবুদ্দিন আলী বলেন, দুই উপজেলা মিলে প্রায় তিন হাজার কার্ডধারী জেলে আছেন। কিন্তু সবাই মাছ ধরতে নদীতে নামে না। অনেকেই নৌকা-জাল নিয়ে নদীতে নেমে ভারতীয় জেলেদের জন্য অপেক্ষা করে। ভারতীয় জেলেরা মাঝ নদীতে এসে নৌকা থেকে পাউডার কিংবা বোতলে করে তরল ফেনসিডিল, বোতলের লেবেল এসব জেলের নৌকায় তুলে দেয়। পরে নদীর তীরে এনে সুবিধাজনক জায়গায় পুরনো বোতলে ফেনসিডিল ভরে বিশেষ যন্ত্র দিয়ে নতুন লেবেল লাগিয়ে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয়। এভাবেই নৌকায় নৌকায় ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদকের চালান আসছে।

জেলেদের কথার সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদককারবারিরা দুই লিটার লিকুইড ফেনসিডিল নিয়ে আসতে পারলে তার সাথে দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানির কাশির সিরাপ ও ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রণ করে ৫০-৬০ বোতল ফেনসিডিল তৈরি করেন। আসল ফেনসিডিলের দাম প্রতি পিস দেশে ২৫০০-৩০০০ টাকা। সেক্ষেত্রে ১৫০০-২০০০ টাকা দামে বিক্রি করেন তারা। সংগ্রহে থাকা পুরনো বোতল পরিষ্কার করে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে বোতলের গায়ে ও মুখে নতুন লেবেল লাগানো হয়। দেশের বিভিন্ন শহরে জারে করে লিকুইড ফেনসিডিলের সাথে শুধু লেবেল পাঠানো হয়। সাইজমতো বোতল তৈরি করে প্যাকেটজাত করেন সেখানকার কারবারিরা।

তথ্য বলছে, নকল ফেনসিডিল তৈরির কারখানার মধ্যে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, ডাকবাংলো বাজার ও ধুলিয়ান বাজারের কারখানার মালিক যথাক্রমে সুখচাঁদ চন্দ, অনু মোদি ও বাদল। গ্রামগুলো বাংলাদেশের সীমান্তের সবচেয়ে নিকটবর্তী। ভারতের কারবারিদের সঙ্গে বাংলাদেশের আতিয়ার রহমান, নজির উদ্দিন, আশরাফুল, মাহবুব, নজরুল ওপারে গিয়ে যৌথ মূলধনে কারবার পরিচালনা করে থাকে।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাজশাহী সীমান্তের ওপারে ভারতীয় এলাকায় অন্তত ৭০টি ফেনডিসিলের কারখানা রয়েছে। বাংলাদেশের ক্রেতাদের টার্গেট করেই এসব কারখানা গড়ে উঠেছে। কাজেই বিভিন্ন সময়ে নানা কৌশলে সীমান্ত গলে ফেনসিডিলের চালান তারা বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। এ দেশের চোরাকারবারিরাও নানা কায়দায় সেগুলো আনছে, বিক্রি করছে। ফেনসিডিলসহ ছোটখাটো কারবারিরা ধরা পড়লেও গডফাদাররা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। মামলা হয় কেবল বহনকারীদের নামে। ফলে মাদক কেনাবেচা কোনোভাবে কমছে না। এতে যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই।

গত ২১ আগস্ট বাঘার পদ্মা নদী থেকে ভাসমান দুই বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি পাকুড়িয়া এলাকা থেকে। দুই বস্তায় ৫৫০ বোতল ফেনসিডিল ছিল। নাপিতপাড়া মোড় সীমান্ত এলাকার পদ্মা নদী থেকে রশিতে বাঁধা পানিতে ভাসমান অবস্থায় দুই বস্তা ফেনসিডিল জব্দ করে রাজশাহী ব্যাটালিয়ন-১ আলাইপুর ক্যাম্পের বিজিবি টহল দল। সম্প্রতি পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার পর থেকে মাদক চোরাচালান ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সুযোগে মাদককারবারিরা দেদার ফেনসিডিলও নিয়ে আসছে।

বাঘা মীরগঞ্জ এলাকার ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী শরীফ আলী বলেন, আগে সীমান্তের এসব এলাকা থেকে প্রতি মাসে অন্তত দশ বস্তা ফেনসিডিলের খালি বোতল কেজি দরে বিক্রির জন্য আসত। কিন্তু এখন হাফ বস্তাও হয় না। কিছু বোতল গ্রামে ফেরি করা ভাঙাড়িদের কাছে পাওয়া গেলেও সেগুলো পিস হিসাবে ফের অতিরিক্ত দামে কিনে নিয়ে যায় অনেকে। তবে এর কারণ তিনি জানেন না বলে জানান।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহীর পরিদর্শক (সার্কেল-খ) সাইফুল আলম বলেন, আমরা প্রতি মাসেই চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় ১০-১৫টি অভিযান পরিচলনা করি। কিন্তু এখন ফেনসিডিল ধরা অনেক কঠিন। কোডিন পাউডার দেশে এনে কাশির সিরাপের সাথে মিশিয়ে ফেনসিডিল তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন বোতল ও পলিথিনেও লিকুইড ফেনসিডিল ও লেবেল এনে পুরনো বোতলে ঢুকিয়ে নতুন ফেনসিডিল তৈরি করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে পলিথিনে করে পরিবহনের সময় লিকুইড ফেনসিডিল উদ্ধার করেছি। কৌশল পরিবর্তন করায় অভিযান পরিচালনা করতে বেগ পেতে হচ্ছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চারঘাটের ইউসুফপুর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার হাবিবুর রহমান বলেন, ফেনসিডিলের বড় চালান না আসায় আমি বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে জেনেছি, পাঁচ-দশ লিটারের জারে করে লিকুইড ফেনসিডিল দেশে আসছে। তেলের এসব জার কেউ সন্দেহ না করায় মাদককারবারিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সহজেই রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ জন্য আমরাও সতকর্তার সাথে সীমান্তে দায়িত্ব পালন করছি।

বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মতিউল ইসলাম মণ্ডল জানিয়েছেন, পদ্মা নদীতে জেলেদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নৌকা নিয়ে ছদ্মবেশে মাদকবকারবারিরা ধরা পড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদকের ব্যাপারে বিজিবি একদম জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে। সীমান্তগুলোতেও নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। পদ্মাকে ঘিরেও বিজিবির কড়া নজরদারি রয়েছে।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, কয়েক দিন আগেই তিন বস্তা ফেনসিডিল জব্দ করা হয়েছে। প্রতিনিয়তই নানা কায়দায় মাদক আসছে। এসব রোধে সজাগ রয়েছে পুলিশ। প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চলছে।