Dhaka 3:15 pm, Sunday, 22 December 2024

গুলিতে রিজভীর মাথার খুলি উড়ে যায়,মায়ের অগোচরে যেত জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে

জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এক অদম্য সাহসের নাম ছিল রিজভী। তার পুরো নাম মাহমুদুল হাসান। এই তরুণ বীর শহীদ সবার কাছে রিজভী নামেই পরিচিত। গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কাঁদতে কাঁদতে সেই ছেলে হারানোর কাহিনী জানালেন মা। নোয়াখালীর মাইজদী শহরের ভাড়া বাসায় গিয়ে কথা হয় তার শোকাহত মা–ভাইয়ের সঙ্গে। মা শোনালেন  রিজভী কীভাবে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে এতটা সাহসী হয়ে উঠল।  রিজভী নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের মৌলভী তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ির জামাল উদ্দিনের ছেলে।
ছোটকাল থেকে রিজভী ছিল পরোপকারী। মা ফরিদা ইয়াছমিন গৃহিনী, বাবা জামাল উদ্দিন এনজিও সংস্থার আশা ব্যাংকের ম্যানেজার। দুই ভাই,এক বোনের মধ্যে রিজভী ছিল সবার বড়। পরিবারের অনেক আদরের ছিল রিজভী। তাকে ঘিরেই ছিল পরিবারের সকল স্বপ্ন।   ওর ওপর ভরসা করেই বেঁচে ছিল মা-বাবা। পরিবারের অভাব অনটন থাকলেও মা-বাবা তার পড়ালেখার জন্য ছিলেন উন্মূখ। ২০ বছরের তরুণ রিজভী লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ট্রেড থেকে অষ্টম সেমিস্টার শেষ করে ছিলেন। এরপর তাকে ইর্টানি করার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। চেয়েছিলেন পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবেন। এর মধ্যে ঢাকাতে শুরু হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলন।
রিজভীর মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানার সামনে হাইওয়ে রোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রিজভীর মাথার খুলি উড়ে যায়। মাথার মগজ বের হয়ে রাস্তায় পড়ে। তখন রিজভী রাস্তায় পড়ে কই মাছের মত ছটফট করতে থাকে। ফ্লাইওভার ওপর থেকে তাকে গুলি করা হয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার উত্তরা কিচিন হসপিটালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি রাত ১০টার দিকে মারা যান। ঢাকায় জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হলে রিজভীর আমি তাকে ফোন দিয়ে সাবধানে থাকতে বলতাম। ফোনে রিজভী আমাকে আশ্বস্ত করে সে কোন আন্দোলনে যায়না। কিন্ত ছেলে গুলিবৃদ্ধ হওয়ার পর আমি জানতে পারি আমাদের অগোচরে ছেলে আন্দোলতে যেত।
ফরিদা ইয়াছমিন আরও জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রিজভীকে তার বন্ধুরা নিয়ে যায় উত্তরা কিচিন হসপিটালে। তাৎক্ষণিক ওই হাসপাতালে পায়নি কোনো চিকিৎসা। এমনকি তার আমি ছেলের লাশ দেখে হাসপাতালে কান্নাও করতে পারেনি। তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশে অনেকটা গোপনে তার মরদেহ নোয়াখালীতে নিয়ে আসা হয়। পরিস্থিতি ভয়াবহতা বিবেচনায় তার মরদেহ নেওয়া যায়নি হাতিয়ার নিজ বাড়িতে। অনেকটা নিরবে নিভৃতে সমাহিত করা হয় হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের পূর্ব মোহাম্মদপুর গ্রামের নানার বাড়ির কবরস্থানে।

শহীদ রিজভীর ছোট শাহরিয়ার হাসান রিমন বলেন, দেশের স্বার্থে কখনো যদি প্রয়োজন হয় আমিও যাবো আন্দোলনে। তবুও জুলাই ছাত্র-জনতার বিপ্লব যেন স্বার্থক হয় এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের পরিবারের।

এ ঘটনায় নিহতের মা উত্তরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামিরা নানা ভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে শুনছেন রিজভীর মা।  এজন্য তিনি আল্লার কাছে চাইলেন ছেলে হত্যার বিচার। পরিবারের আক্ষেপ রিজভী জীবনের অধ্যায় শুরু হওয়ার আগেই সমাপ্তি ঘটে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

গুলিতে রিজভীর মাথার খুলি উড়ে যায়,মায়ের অগোচরে যেত জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে

আপলোড সময় : 11:55:54 am, Friday, 6 December 2024

জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এক অদম্য সাহসের নাম ছিল রিজভী। তার পুরো নাম মাহমুদুল হাসান। এই তরুণ বীর শহীদ সবার কাছে রিজভী নামেই পরিচিত। গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কাঁদতে কাঁদতে সেই ছেলে হারানোর কাহিনী জানালেন মা। নোয়াখালীর মাইজদী শহরের ভাড়া বাসায় গিয়ে কথা হয় তার শোকাহত মা–ভাইয়ের সঙ্গে। মা শোনালেন  রিজভী কীভাবে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে এতটা সাহসী হয়ে উঠল।  রিজভী নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের মৌলভী তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ির জামাল উদ্দিনের ছেলে।
ছোটকাল থেকে রিজভী ছিল পরোপকারী। মা ফরিদা ইয়াছমিন গৃহিনী, বাবা জামাল উদ্দিন এনজিও সংস্থার আশা ব্যাংকের ম্যানেজার। দুই ভাই,এক বোনের মধ্যে রিজভী ছিল সবার বড়। পরিবারের অনেক আদরের ছিল রিজভী। তাকে ঘিরেই ছিল পরিবারের সকল স্বপ্ন।   ওর ওপর ভরসা করেই বেঁচে ছিল মা-বাবা। পরিবারের অভাব অনটন থাকলেও মা-বাবা তার পড়ালেখার জন্য ছিলেন উন্মূখ। ২০ বছরের তরুণ রিজভী লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ট্রেড থেকে অষ্টম সেমিস্টার শেষ করে ছিলেন। এরপর তাকে ইর্টানি করার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। চেয়েছিলেন পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবেন। এর মধ্যে ঢাকাতে শুরু হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলন।
রিজভীর মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানার সামনে হাইওয়ে রোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রিজভীর মাথার খুলি উড়ে যায়। মাথার মগজ বের হয়ে রাস্তায় পড়ে। তখন রিজভী রাস্তায় পড়ে কই মাছের মত ছটফট করতে থাকে। ফ্লাইওভার ওপর থেকে তাকে গুলি করা হয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার উত্তরা কিচিন হসপিটালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি রাত ১০টার দিকে মারা যান। ঢাকায় জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হলে রিজভীর আমি তাকে ফোন দিয়ে সাবধানে থাকতে বলতাম। ফোনে রিজভী আমাকে আশ্বস্ত করে সে কোন আন্দোলনে যায়না। কিন্ত ছেলে গুলিবৃদ্ধ হওয়ার পর আমি জানতে পারি আমাদের অগোচরে ছেলে আন্দোলতে যেত।
ফরিদা ইয়াছমিন আরও জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রিজভীকে তার বন্ধুরা নিয়ে যায় উত্তরা কিচিন হসপিটালে। তাৎক্ষণিক ওই হাসপাতালে পায়নি কোনো চিকিৎসা। এমনকি তার আমি ছেলের লাশ দেখে হাসপাতালে কান্নাও করতে পারেনি। তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশে অনেকটা গোপনে তার মরদেহ নোয়াখালীতে নিয়ে আসা হয়। পরিস্থিতি ভয়াবহতা বিবেচনায় তার মরদেহ নেওয়া যায়নি হাতিয়ার নিজ বাড়িতে। অনেকটা নিরবে নিভৃতে সমাহিত করা হয় হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের পূর্ব মোহাম্মদপুর গ্রামের নানার বাড়ির কবরস্থানে।

শহীদ রিজভীর ছোট শাহরিয়ার হাসান রিমন বলেন, দেশের স্বার্থে কখনো যদি প্রয়োজন হয় আমিও যাবো আন্দোলনে। তবুও জুলাই ছাত্র-জনতার বিপ্লব যেন স্বার্থক হয় এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের পরিবারের।

এ ঘটনায় নিহতের মা উত্তরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামিরা নানা ভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে শুনছেন রিজভীর মা।  এজন্য তিনি আল্লার কাছে চাইলেন ছেলে হত্যার বিচার। পরিবারের আক্ষেপ রিজভী জীবনের অধ্যায় শুরু হওয়ার আগেই সমাপ্তি ঘটে।