Dhaka 4:18 pm, Monday, 23 December 2024

খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে জরাজীর্ণ গুদাম সংস্কারের উদ্যোগ

দেশের খাদ্যনিরাপত্তা বাড়াতে জরাজীর্ণ খাদ্যগুদাম সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে মোট ৪২৪টি খাদ্যগুদাম ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো মেরামত এবং সংস্কারের লক্ষ্যে ‘সারাদেশে অবস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যগুদাম ও অন্যান্য স্থাপনা’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অনুদানে মোট ৬৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হবে।   

ইতোপূর্বে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ‘সারাদেশে পুরোনো খাদ্যগুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদির মেরামত এবং নতুন অবকাঠামো নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে মোট ৫০৭টি খাদ্যগুদাম মেরামত ও সংস্কার করা হয়। স্বল্প ব্যয়ে এসব ক্ষতিগ্রস্ত, জরাজীর্ণ খাদ্যগুদাম এবং অন্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামো মেরামত ও সংস্কার করলে খাদ্য শস্যের ধারণক্ষমতা ঠিক থাকবে। খাদ্যের গুণগত মান বজায় রেখে অপচয় রোধ করাও সম্ভব। ২০২৪ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

দেশের খাদ্য সংরক্ষণাগারগুলোর সম্মিলিত ধারণ ক্ষমতা ২১ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন। অধিকাংশ খাদ্যগুদাম ১৯৬০, ’৭০ ও ৮০’র দশকে নির্মিত। এসব স্থাপনা জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ধীরে ধীরে কমছে ধারণ ক্ষমতা। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার গুদামগুলোর অবস্থা বেশি নাজুক। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খাদ্যনিরাপত্তা বাড়াতে জরাজীর্ণ খাদ্যগুদামগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

সরকারের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের জন্য বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৪৭৬টি উপজেলায় ৬৩৩টি স্থানীয় সরবরাহ ডিপো (এলএসডি), বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে ১৩টি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগার (সিএসডি), সমুদ্র ও নদী বন্দরকেন্দ্রিক ছয়টি সাইলো এবং বগুড়া জেলার সান্তাহারে একটি আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার (ওয়্যারহাউস) আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত পাঁচ বছরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালন বাজেটে ১৫৫টি খাদ্যগুদাম ও ৬৮টি অন্য স্থাপনাসহ মোট ২২৩টি অবকাঠামো সংস্কার ও মেরামত বাবদ অর্থ বিভাগ থেকে মোট ১৯৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা পাওয়া যায়, যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগ) মো. মহসীন বলেন, দেশে অনেক জরাজীর্ণ খাদ্যগুদাম রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার ও উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যমান খাদ্যগুদামগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। কারণ এসব এলাকার পানি লবণাক্ত। যেগুলো আছে সেগুলো সংস্কার করা জরুরি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কখন কী দুর্যোগ দেশে হানা দেয় তা বোঝা দায়। এসব কারণে খাদ্যনিরাপত্তা বাড়ানো জরুরি। খাদ্য ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। কোনো কারণে যদি একটা ফসল নষ্ট হয় তখন কী অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখুন। বন্যা-খরা-শিলাবৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হতে পারে। আমরা পুরোনো খাদ্যগুদামগুলো সংস্কার করলে খাদ্যনিরাপত্তা বাড়বে।
বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের পুনর্গঠিত ডিপিপিতে  খাদ্যগুদাম ও অন্য স্থাপনা পুনর্র্নির্মাণের পরিবর্তে আনুষঙ্গিক অবকাঠামো মেরামত এবং সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ পিইসি সভার সিদ্ধান্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বর্তমানে পুনর্গঠিত ডিপিপিতে পুনর্র্নিমাণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত না করে মেরামত ও সংস্কার কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের মানুষের জন্য সর্বদা খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অধিক পরিমাণে খাদ্য মজুতের সক্ষমতার প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের সার্বিক মজুত সক্ষমতার লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৭ লাখ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের প্রেক্ষাপটে খরা মৌসুমে গড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টন এবং যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে ১৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণ করে জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৪২৪টি খাদ্যগুদামের মেরামত বাবদ মোট ১১৮ কোটি এবং ৬১ হাজার ২৬৯ বর্গমিটারের অন্য ভবন ও স্থাপনা মেরামত বা পুনর্র্নির্মাণের জন্য মোট ২৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার সংস্থানও রাখা হয়েছে। এছাড়া বহির্বিদ্যুতায়ন, ড্রেন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা পুনর্র্নির্মাণ, সীমানাপ্রাচীর, মেরামত বা পুনর্র্নির্মাণ ও টিউবওয়েল পুনঃস্থাপন প্রভৃতি কাজ সম্পাদনের জন্য ২৩৪ কোটি পাঁচ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।

বিভিন্ন প্রকল্পের ডিপিপি পর্যালোচনায় সাধারণত নতুন ভবন নির্মাণে প্রতি বর্গমিটারে ২৫ হাজার টাকা (প্রতি বর্গফুট ২৩শ’ টাকা) ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু এ প্রকল্পের আওতায় সংস্কার ও মেরামত কাজের জন্য প্রতি বর্গমিটারে ব্যয় ৪৫ হাজার টাকা (প্রতি বর্গফুট ৪১শ টাকা) প্রস্তাব করা হয়েছে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে জরাজীর্ণ গুদাম সংস্কারের উদ্যোগ

আপলোড সময় : 04:44:34 pm, Monday, 25 March 2024

দেশের খাদ্যনিরাপত্তা বাড়াতে জরাজীর্ণ খাদ্যগুদাম সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে মোট ৪২৪টি খাদ্যগুদাম ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো মেরামত এবং সংস্কারের লক্ষ্যে ‘সারাদেশে অবস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যগুদাম ও অন্যান্য স্থাপনা’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অনুদানে মোট ৬৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হবে।   

ইতোপূর্বে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ‘সারাদেশে পুরোনো খাদ্যগুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদির মেরামত এবং নতুন অবকাঠামো নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে মোট ৫০৭টি খাদ্যগুদাম মেরামত ও সংস্কার করা হয়। স্বল্প ব্যয়ে এসব ক্ষতিগ্রস্ত, জরাজীর্ণ খাদ্যগুদাম এবং অন্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামো মেরামত ও সংস্কার করলে খাদ্য শস্যের ধারণক্ষমতা ঠিক থাকবে। খাদ্যের গুণগত মান বজায় রেখে অপচয় রোধ করাও সম্ভব। ২০২৪ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

দেশের খাদ্য সংরক্ষণাগারগুলোর সম্মিলিত ধারণ ক্ষমতা ২১ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন। অধিকাংশ খাদ্যগুদাম ১৯৬০, ’৭০ ও ৮০’র দশকে নির্মিত। এসব স্থাপনা জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ধীরে ধীরে কমছে ধারণ ক্ষমতা। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার গুদামগুলোর অবস্থা বেশি নাজুক। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খাদ্যনিরাপত্তা বাড়াতে জরাজীর্ণ খাদ্যগুদামগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

সরকারের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের জন্য বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৪৭৬টি উপজেলায় ৬৩৩টি স্থানীয় সরবরাহ ডিপো (এলএসডি), বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে ১৩টি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগার (সিএসডি), সমুদ্র ও নদী বন্দরকেন্দ্রিক ছয়টি সাইলো এবং বগুড়া জেলার সান্তাহারে একটি আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার (ওয়্যারহাউস) আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত পাঁচ বছরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালন বাজেটে ১৫৫টি খাদ্যগুদাম ও ৬৮টি অন্য স্থাপনাসহ মোট ২২৩টি অবকাঠামো সংস্কার ও মেরামত বাবদ অর্থ বিভাগ থেকে মোট ১৯৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা পাওয়া যায়, যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগ) মো. মহসীন বলেন, দেশে অনেক জরাজীর্ণ খাদ্যগুদাম রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার ও উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যমান খাদ্যগুদামগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। কারণ এসব এলাকার পানি লবণাক্ত। যেগুলো আছে সেগুলো সংস্কার করা জরুরি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কখন কী দুর্যোগ দেশে হানা দেয় তা বোঝা দায়। এসব কারণে খাদ্যনিরাপত্তা বাড়ানো জরুরি। খাদ্য ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। কোনো কারণে যদি একটা ফসল নষ্ট হয় তখন কী অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখুন। বন্যা-খরা-শিলাবৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হতে পারে। আমরা পুরোনো খাদ্যগুদামগুলো সংস্কার করলে খাদ্যনিরাপত্তা বাড়বে।
বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের পুনর্গঠিত ডিপিপিতে  খাদ্যগুদাম ও অন্য স্থাপনা পুনর্র্নির্মাণের পরিবর্তে আনুষঙ্গিক অবকাঠামো মেরামত এবং সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ পিইসি সভার সিদ্ধান্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বর্তমানে পুনর্গঠিত ডিপিপিতে পুনর্র্নিমাণ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত না করে মেরামত ও সংস্কার কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের মানুষের জন্য সর্বদা খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অধিক পরিমাণে খাদ্য মজুতের সক্ষমতার প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের সার্বিক মজুত সক্ষমতার লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৭ লাখ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের প্রেক্ষাপটে খরা মৌসুমে গড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টন এবং যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে ১৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণ করে জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৪২৪টি খাদ্যগুদামের মেরামত বাবদ মোট ১১৮ কোটি এবং ৬১ হাজার ২৬৯ বর্গমিটারের অন্য ভবন ও স্থাপনা মেরামত বা পুনর্র্নির্মাণের জন্য মোট ২৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার সংস্থানও রাখা হয়েছে। এছাড়া বহির্বিদ্যুতায়ন, ড্রেন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা পুনর্র্নির্মাণ, সীমানাপ্রাচীর, মেরামত বা পুনর্র্নির্মাণ ও টিউবওয়েল পুনঃস্থাপন প্রভৃতি কাজ সম্পাদনের জন্য ২৩৪ কোটি পাঁচ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।

বিভিন্ন প্রকল্পের ডিপিপি পর্যালোচনায় সাধারণত নতুন ভবন নির্মাণে প্রতি বর্গমিটারে ২৫ হাজার টাকা (প্রতি বর্গফুট ২৩শ’ টাকা) ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু এ প্রকল্পের আওতায় সংস্কার ও মেরামত কাজের জন্য প্রতি বর্গমিটারে ব্যয় ৪৫ হাজার টাকা (প্রতি বর্গফুট ৪১শ টাকা) প্রস্তাব করা হয়েছে।