Dhaka 5:44 pm, Monday, 23 December 2024

কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কৌশল পরিবর্তন করে চলছে বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্য

“দালালের পরিবর্তে দলিল লেখকরাই অফিস খরচের নামে সাব রেজিস্ট্রারে নাম ভাঙ্গিয়ে ঘুষ গ্রহন করেন বলে অসংখ্য অভিযোগ।”

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 
কুমিল্লা সদর উপজেলার সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কৌশল পরিবর্তন করে অফিস খরচের নামে প্রকাশ্যে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ। জমির নিবন্ধন, নামজারি, জাল দলিলে জমি দখলসহ নানা ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন জমির মালিকসহ সেবা গ্রহিতারা।

সরেজমিনে ভুক্তভোগীরা বলছেন, কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ না দিলে অতি সহজ কাজটাও নানান অজুহাতে খুব কঠিনে পরিণত হয়। আবার কন্ট্রাকে দালাল কিংবা দলিল লেখকদের মাধ্যমে গেলে রফা করে মোটা অংকের টাকা দিলে যত কঠিন কাজই হউক না কেন স্বল্প সময়ে খুব সহজে সমাধান হয়ে যায়। আর দালাল ছাড়া সরাসরি কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে অসংখ্য হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। অফিস খরচের নামে দিতে হয় নির্ধারিত টাকা। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয়না বিষয়টি প্রকাশ্যে না জানালেও দলিল লেখকদের মাধ্যমে তা গ্রহন করেন এমন তথ্য সেবা গ্রহিতারা জানান।

আরো জানা যায়, ওপেন টিপ সই দিয়ে ঘুষ নিচ্ছেন ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। রফিক মিয়া নামের এক ৭০ বয়সী বৃদ্ধ তার বসত ভিটা দলিলের নকল উঠাতে আসেন সদরের কালির বাজার ইউনিয়ন এলাকা থেকে কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঢুকতে সামনে এগিয়ে এসে সাত্তার নামের এক লোক বলেন, চাচা কি জন্য আইছেন এখানে ভুক্তভোগী রফিক বলেন দলিলের নকল উঠাতে। দালাল প্রকৃতির লোক সাত্তার বলেন চাচা সরাসরি উঠাতে গেলে তো অনেকদিন ঘুরতে হবে,আর আমাকে দিয়ে উঠালে ৩ হাজার টাকা দিলে হবে। রফিক বললো এতো টাকা কি জন্য,সাত্তার বললো চাচা সরকারি চালানই তো ২ হাজার টাকার বেশি দিতে হয়। রফিক বললো “আমি বাবা গরীব মানুষ ইনকাম নাই ছেলেটা অটো চালায় কিছু কমিয়ে আমার কাজটা করে দাও বাইছা থাকতে বসতটা পোলা মাইয়ারে ভাগ করে দেই”। এক পর্যায়ে দলিলের নকল উঠানো বাবদ রফা হয় ২৬০০ টাকা। এতে সরল মনে বৃদ্ধ রফিক সাত্তার কাছে ১৫০০ টাকা দিয়ে দিলেন। দলিল লেখকের সহকারি পরিচয়দানকারী সাত্তার বলেন, চাচা  আগামী সপ্তাহে বৃহস্প্রতিবার এসে নিয়ে যাবেন। সে সাত্তারের কথা মতো বৃহস্প্রতিবার কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে তার কাছ থেকে কাগজ নিতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকেন ভুক্তভোগী বৃদ্ধ রফিক মিয়া জানান।

সরেজমিনে গত সপ্তাহে দুইদিন অনুসন্ধানকালে সেবা নিতে আসা বেশ কয়েক গ্রাহক ভুক্তভোগীর সাথে কথা বললে তারা জানান,শোনছি রেজিষ্ট্রি অফিসে ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে হয়। কিন্তু সরাসরি এসে দেখছি এই অফিসের প্রতিটি টেবিলেই বিভিন্ন অজুহাতে ঘুষের টাকা ছাড়া কোন কাজই হয়না। মামুন নামের এক ভুক্তভোগী জানান, আমি আমার বাড়ির জায়গা রেজিস্ট্রির জন্য আজ কয়েকদিন ঘুরছি যার সাথেই কথা বলি সেই বলে সরকারি ফি’র বাহিরে অফিস খরচ দিতে হবে। মামুন জানান,এক দলিল লেখকের সাথে কথা বললে দলিল লেখক মামুনকে নাকি জানান, সাব রেজিস্টার স্যার খুব কঠিন লোক বিকালে ফাইল গুনে গুনে কমিশন নিয়ে যায়। অফিস খরচের টাকা না দিলে বিভিন্ন অজুহাতে একটা পর একটা ক্রুটি ধরে দলিল ঘুরায়।

সরেজমিনে ভুক্তভোগী জসিম মিয়ার সাথে দেখা হয়। তার কাছ থেকে জানা যায়, তিনি আসছেন কুমিল্লা সদর উপজেলা জগন্নাথপুর ইউনিয়ন থেকে। জসিম জানান,এখানে তো যত রকমের ঘুষ বানিজ্য হয় দলিল লেখকদের মাধ্যমেই হয়। তারা যে কোন লোক দলিল করতে আসলে কৌশলে অফিস খরচের দোহাই দিয়ে সরকারি ফি ছাড়াও যার কাছ থেকে যেমন পারেন নিয়ে দলিল রেজিস্টারের কাজ করেন।আর দলিল লেখকদের সাথে রফা না করলে চরম ভাবে বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানীর শিকার হতে হয় বলে জানান জসিম। জসিম আরো জানান,এখানে দালালের মুল কাজটাই এখন কৌশলে দলিল লেখকরাই করেন। কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখকদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শক্তিশালী সিন্ডিকেট থাকায় কেউ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিবাদ করতে কেউ সাহস পায় না বলেন জানান সেবা গ্রহিতা জসিম।

সরেজমিনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের আশ পাশের বেশ কযেকজন স্হানীয় দোকানির সাথে কথা বললে তারা জানান, এই রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় এমনটা নাকি তাদের জানা নেই । তারা জানান, ঘুষের টাকা দিয়েও তো গ্রাহকদের ঘুরতে হয় হয়রানীর শিকার হতে হয়, দলিল লেখকদের সাথে কথা কাটাকাটি পর্যন্ত প্রায় দেখি।
স্হানীয়রা জানান, বর্তমান সাব রেজিস্ট্রার আসার পর থেকে শুনছি তিনি নাকি টাকা ছাড়া কিছুই বুঝে না।আর এই সুযোগে দলিল লেখকরাও  গ্রাহকদের কোন ছাড় দেয় না তারা অফিস খরচের নামে ঘুষের টাকা ছাড়া কোন কাজ করতে চায় না।
রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল করতে আসা ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বললে তারা জানান,এই সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ বানিজ্য কমেনি শুধু কৌশলটা পরিবর্তন করে দলিল লেখকদের মাধ্যমে অফিস খরচের নামে বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রারের সাথে তার মুঠো ফোনে কয়েকবার কল দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার মোবাইল ফোন সংযোগটি পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে অনিয়ম বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত জন স্বার্থে ধারাবাহিক ভাবে নিউজ চলমান থাকবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কৌশল পরিবর্তন করে চলছে বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্য

আপলোড সময় : 05:35:27 pm, Thursday, 17 October 2024

“দালালের পরিবর্তে দলিল লেখকরাই অফিস খরচের নামে সাব রেজিস্ট্রারে নাম ভাঙ্গিয়ে ঘুষ গ্রহন করেন বলে অসংখ্য অভিযোগ।”

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 
কুমিল্লা সদর উপজেলার সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কৌশল পরিবর্তন করে অফিস খরচের নামে প্রকাশ্যে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ। জমির নিবন্ধন, নামজারি, জাল দলিলে জমি দখলসহ নানা ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন জমির মালিকসহ সেবা গ্রহিতারা।

সরেজমিনে ভুক্তভোগীরা বলছেন, কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ না দিলে অতি সহজ কাজটাও নানান অজুহাতে খুব কঠিনে পরিণত হয়। আবার কন্ট্রাকে দালাল কিংবা দলিল লেখকদের মাধ্যমে গেলে রফা করে মোটা অংকের টাকা দিলে যত কঠিন কাজই হউক না কেন স্বল্প সময়ে খুব সহজে সমাধান হয়ে যায়। আর দালাল ছাড়া সরাসরি কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে অসংখ্য হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। অফিস খরচের নামে দিতে হয় নির্ধারিত টাকা। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয়না বিষয়টি প্রকাশ্যে না জানালেও দলিল লেখকদের মাধ্যমে তা গ্রহন করেন এমন তথ্য সেবা গ্রহিতারা জানান।

আরো জানা যায়, ওপেন টিপ সই দিয়ে ঘুষ নিচ্ছেন ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। রফিক মিয়া নামের এক ৭০ বয়সী বৃদ্ধ তার বসত ভিটা দলিলের নকল উঠাতে আসেন সদরের কালির বাজার ইউনিয়ন এলাকা থেকে কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঢুকতে সামনে এগিয়ে এসে সাত্তার নামের এক লোক বলেন, চাচা কি জন্য আইছেন এখানে ভুক্তভোগী রফিক বলেন দলিলের নকল উঠাতে। দালাল প্রকৃতির লোক সাত্তার বলেন চাচা সরাসরি উঠাতে গেলে তো অনেকদিন ঘুরতে হবে,আর আমাকে দিয়ে উঠালে ৩ হাজার টাকা দিলে হবে। রফিক বললো এতো টাকা কি জন্য,সাত্তার বললো চাচা সরকারি চালানই তো ২ হাজার টাকার বেশি দিতে হয়। রফিক বললো “আমি বাবা গরীব মানুষ ইনকাম নাই ছেলেটা অটো চালায় কিছু কমিয়ে আমার কাজটা করে দাও বাইছা থাকতে বসতটা পোলা মাইয়ারে ভাগ করে দেই”। এক পর্যায়ে দলিলের নকল উঠানো বাবদ রফা হয় ২৬০০ টাকা। এতে সরল মনে বৃদ্ধ রফিক সাত্তার কাছে ১৫০০ টাকা দিয়ে দিলেন। দলিল লেখকের সহকারি পরিচয়দানকারী সাত্তার বলেন, চাচা  আগামী সপ্তাহে বৃহস্প্রতিবার এসে নিয়ে যাবেন। সে সাত্তারের কথা মতো বৃহস্প্রতিবার কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে তার কাছ থেকে কাগজ নিতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকেন ভুক্তভোগী বৃদ্ধ রফিক মিয়া জানান।

সরেজমিনে গত সপ্তাহে দুইদিন অনুসন্ধানকালে সেবা নিতে আসা বেশ কয়েক গ্রাহক ভুক্তভোগীর সাথে কথা বললে তারা জানান,শোনছি রেজিষ্ট্রি অফিসে ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে হয়। কিন্তু সরাসরি এসে দেখছি এই অফিসের প্রতিটি টেবিলেই বিভিন্ন অজুহাতে ঘুষের টাকা ছাড়া কোন কাজই হয়না। মামুন নামের এক ভুক্তভোগী জানান, আমি আমার বাড়ির জায়গা রেজিস্ট্রির জন্য আজ কয়েকদিন ঘুরছি যার সাথেই কথা বলি সেই বলে সরকারি ফি’র বাহিরে অফিস খরচ দিতে হবে। মামুন জানান,এক দলিল লেখকের সাথে কথা বললে দলিল লেখক মামুনকে নাকি জানান, সাব রেজিস্টার স্যার খুব কঠিন লোক বিকালে ফাইল গুনে গুনে কমিশন নিয়ে যায়। অফিস খরচের টাকা না দিলে বিভিন্ন অজুহাতে একটা পর একটা ক্রুটি ধরে দলিল ঘুরায়।

সরেজমিনে ভুক্তভোগী জসিম মিয়ার সাথে দেখা হয়। তার কাছ থেকে জানা যায়, তিনি আসছেন কুমিল্লা সদর উপজেলা জগন্নাথপুর ইউনিয়ন থেকে। জসিম জানান,এখানে তো যত রকমের ঘুষ বানিজ্য হয় দলিল লেখকদের মাধ্যমেই হয়। তারা যে কোন লোক দলিল করতে আসলে কৌশলে অফিস খরচের দোহাই দিয়ে সরকারি ফি ছাড়াও যার কাছ থেকে যেমন পারেন নিয়ে দলিল রেজিস্টারের কাজ করেন।আর দলিল লেখকদের সাথে রফা না করলে চরম ভাবে বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানীর শিকার হতে হয় বলে জানান জসিম। জসিম আরো জানান,এখানে দালালের মুল কাজটাই এখন কৌশলে দলিল লেখকরাই করেন। কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখকদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শক্তিশালী সিন্ডিকেট থাকায় কেউ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিবাদ করতে কেউ সাহস পায় না বলেন জানান সেবা গ্রহিতা জসিম।

সরেজমিনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের আশ পাশের বেশ কযেকজন স্হানীয় দোকানির সাথে কথা বললে তারা জানান, এই রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় এমনটা নাকি তাদের জানা নেই । তারা জানান, ঘুষের টাকা দিয়েও তো গ্রাহকদের ঘুরতে হয় হয়রানীর শিকার হতে হয়, দলিল লেখকদের সাথে কথা কাটাকাটি পর্যন্ত প্রায় দেখি।
স্হানীয়রা জানান, বর্তমান সাব রেজিস্ট্রার আসার পর থেকে শুনছি তিনি নাকি টাকা ছাড়া কিছুই বুঝে না।আর এই সুযোগে দলিল লেখকরাও  গ্রাহকদের কোন ছাড় দেয় না তারা অফিস খরচের নামে ঘুষের টাকা ছাড়া কোন কাজ করতে চায় না।
রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল করতে আসা ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বললে তারা জানান,এই সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ বানিজ্য কমেনি শুধু কৌশলটা পরিবর্তন করে দলিল লেখকদের মাধ্যমে অফিস খরচের নামে বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রারের সাথে তার মুঠো ফোনে কয়েকবার কল দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার মোবাইল ফোন সংযোগটি পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে অনিয়ম বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত জন স্বার্থে ধারাবাহিক ভাবে নিউজ চলমান থাকবে।