ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার একই পরিবারের সদস্য। আজ শুক্রবার সকালে তাদের লাশ উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। পরে জানাজা শেষে তাদের লাশ দাফন করা হয়।
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে হঠাৎ একটি লঞ্চের ধাক্কায় টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি লঞ্চের ছিঁড়ে যাওয়া রশির আঘাতে ৫ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ঘটিচোরা এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে বেলাল হোসেন (২৬), তার স্ত্রী মুক্তা খাতুন ও তাদের চার বছরের মেয়ে মাইশা আক্তার।
এদিকে নিহত বেলাল হোসেন, তার স্ত্রী ও মেয়ের আকস্মিক মৃত্যুতে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বাড়িতে মাতম চলছে। খবরটি শোনার পর বেলালের মা আলেয়া বেগমের কান্না থামছে না। মাতম করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। কিছুক্ষণ পরপর চিৎকার করে তিনি বলে উঠছেন, লঞ্চ আমারে নিঃস্ব কইরা দিয়া গেল।
কাঁদতে কাঁদতে আলেয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে, বউ, নাতি সব হারালাম। আমার আরেক নাতি পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে গেল। যারা চারটা প্রাণ নিয়ে গেল, আমি তাদের বিচার চাই।
তিনি বলেন, ১৫ রোজায় বেলাল বাড়ি আইছিল। ওরে কইলাম বউ ও নাতিরে লইয়া ঈদে বাড়ি আইস। সবাই মিল্লা ঈদ করমু। আমার লগে ঈদ করতে পোলায় বাড়ি আওয়ার পথে মইরা গেল। লঞ্চ আমার বংশ নির্বংশ কইরা দিল।
নিহত মুক্তা বেগমের চাচাতো ভাই রিয়াজ খান বলেন, বেলালের বাড়িতে দাফনের মতো জমি নেই। তাই আমরা চেয়েছিলাম তিনজনের লাশ আমাদের বাড়িতে পাশাপাশি দাফন করতে। কিন্তু বেলালের মায়ের ইচ্ছা ছেলের লাশ তার বাবার বাড়িতে দাফন করার। মায়ের ইচ্ছায় ছেলের লাশ সেখানে হয়েছে।
উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের দাফন বাবদ সহায়তা করা হবে। ইউএনও ছুটিতে আছেন। উনি এলে সহায়তার টাকা পাওয়া যাবে।
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে হঠাৎ একটি লঞ্চের ধাক্কায় টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি লঞ্চের ছিঁড়ে যাওয়া রশির আঘাতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস বলছে, এমভি তাসরিফ-৪ ও এমভি পূবালী-১ রশি দিয়ে সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনে বাঁধা ছিল। এ দুটি লঞ্চের মাঝখান দিয়ে ফারহান-৬ নামের আরেকটি লঞ্চ ঢুকানোর সময় এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে যায়।
দুর্ঘটনার খবর শুনে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ছুটে আসেন বেলালের ফুফাতো বোন হনুফা আক্তার। তিনি বলেন, বেলালের স্ত্রী ৬-৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। সন্তান প্রসবের আগে তাকে বাড়িতে রেখে আসার কথা ছিল। ওয়াইফের এ অবস্থায় ঝঞ্জাটের কারণে ঈদের দিন রওনা করছে। এখন তো সবাই একসাথে মরে গেল। ওরাও শেষ, দুই বাচ্চাও শেষ।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জেলার উপসহকারী পরিচালক ফয়সালুর রহমান বলেন, এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের ধাক্কায় তাসরিফ-৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে ঘাটে থাকা পাঁচ যাত্রীকে গুরুতর আঘাত করে। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠাই। পরে সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।