দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে কোনো আমানতকারী আমানত রেখে বা কোনো বাংলাদেশি অনিবাসী ঋণদাতা কর্তৃক গৃহীত সুদ বা মুনাফার ওপর এখন থেকে আর কোনো কর দিতে হবে না। আগে এ খাতে অর্জিত সুদ বা মুনাফার ওপর ১০ বা ১৫ শতাংশ উৎসে কর দিতে হতো। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে। এর আগে অফশোর ব্যাংকিং আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, এতে এ বিধান করা হয়েছে। এর আলোকে সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই সার্কুলার জারি করল। সূত্র জানায়, দেশে প্রায় দুই বছর ধরে প্রবল ডলার সংকট চলছে। এ সংকট মোকাবিলায় বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়াতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসাবেই অফশোর ব্যাংকিংয়ের মুনাফার ওপর কর প্রত্যাহার করা হলো।
অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট হলো ব্যাংকগুলোর আলাদা একটি ইউনিট। এর সঙ্গে মূল ব্যাংকিংয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে বছর শেষে লাভ বা লোকসান মূল ব্যাংকের স্থিতিপত্রে যোগ বা বিয়োগ হবে। এতে কেবল বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশিরা, বাংলাদেশি প্রবাসী বা দেশে ইপিজেড বা অর্থনৈতিক অঞ্চল বা শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত রাখতে বা ঋণ নিতে পারে।
অফশোর ব্যাংকিংয়ে কোনো আমানতকারী বা বাংলাদেশের অনিবাসী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমানত রাখলে তিনি মেয়াদ শেষে যে সুদ বা মুনাফা পাবেন, তার ওপর আগে ১০ বা ১৫ শতাংশ উৎসে কর দিতে হতো। বর্তমানে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) না থাকলে আমানতের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ আর টিআইএন থাকলে ১০ শতাংশ কর দিতে হয়। নতুন আইনের কারণে এ খাতে আমানতের ওপর বা অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটকে ঋণ দিলে তার মুনাফার ওপর কোনো কর দিতে হবে না। ফলে আমানতের গ্রাহকরা মুনাফার পুরো অর্থই নিয়ে যেতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, এতে দেশের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলোয় ডলারের প্রবাহ বাড়বে। ফলে ডলারের ব্যাংকগুলো ঋণও দিতে পারবে। এছাড়া অফশোর ব্যাংক থেকে মূল ব্যাংকেও তারা চাহিদা অনুযায়ী ডলার স্থানান্তর করতে পারবে। এছাড়া দেশে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত রাখলে সুদের হারও বেড়েছে। বিশেষ করে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট (লাইবর) বা সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটের (সোফর) সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট অংশ যোগ করে সুদ দিতে পারে। আগে লাইবর রেট ছিল দেড় শতাংশ। এখন তা বেড়ে পৌনে ৬ শতাংশ হয়েছে। সোফর রেট আগে ছিল ১ শতাংশের কিছু বেশি। এখন তা বেড়ে সাড়ে ৫ শতাংশে উঠেছে। এর সঙ্গে ২ থেকে আড়াই শতাংশ যোগ করে অফশোর ব্যাংকগুলো আমানত নিতে পারে। ফলে লাইবর রেটে আমানতের সুদহার পৌনে ৮ থেকে সোয়া ৮ শতাংশ দিতে পারবে। সোফরে সাড়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশ সুদ দিতে পারবে। এতে বাড়তি মুনাফার আশায় অনেকেই ডলারে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। চড়া সুদে ডলার আমানত নিলে ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি সুদ দিতে হবে। এতে ঋণের খরচ বেড়ে যাবে। ফলে উদ্যোক্তারা চাপের মুখে পড়বেন। এমনিতেই দেশে স্থানীয় মুদ্রায় ব্যাংক ঋণের সুদের হার সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আগে সর্বোচ্চ সুদ ছিল ৯ শতাংশ। স্থানীয় মুদ্রার সুদহার বাড়ায় এমনিতেই উদ্যোক্তারা চাপে পড়েছেন।