ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে গোমতীর পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। গোমতীর ভাঙনে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থাও। এদিকে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার দৌলতপুরে পানির চাপে ভেঙেছে সালদা নদীর বাঁধ। এতে আরও ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এর আগে বুড়িচংয়ের বুড়বুড়িয়ায় ভাঙে গোমতীর বাঁধ। সব মিলিয়ে পুরো কুমিল্লায় এখন ১০ লাখ পানিবন্দি মানুষের দুর্ভেোগ চরমে পৌঁছেছে। এর মধ্যে নৌকা ও স্পিডবোট না থাকায় সংকটে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়ায় গোমতী নদীর ভাঙনের পর ক্রমান্বয়ে প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন গ্রাম। নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। বিদ্যুৎ না থাকা ও খাদ্য সংকটে চরম আকার ধারণ করেছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ।
পানিবন্দি এসব মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে এগিয়ে আসলেও নৌকা কিংবা স্পিডবোট না থাকায় বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই। কেউ অনাহার আর কেউবা র্াহারে রয়েছেন। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে এলেও নৌকা না থাকায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। আবার কিছু কিছু আশ্রয়কেন্দ্রেও পানি ওঠায় সেখান থেকেও স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধার করছে মানুষদের।
এদিকে গত দুদিনে গোমতীর পানি বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্লাবিত করলেও এবার নতুন করে জেলার উত্তরের সালদা নদীতে ভাঙনের ফলে দ্রুত প্লাবিত হচ্ছে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বিস্তৃত এলাকা। এ উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের নাগাইশ, গঙ্গা নগর, মানরা, মলিকা দিঘি, কালেম কাঁদি, দেউস, চৌব্বাসসহ ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
স্থানীয়রা বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের দৌলতপুর এলাকায়। একদিকে গোমতির পানি অন্যদিকে সালদা নদীর পানি দুদিক দিয়ে যেন ঘিরে ধরেছে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলাকে। দুই নদীর পানিতে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থাও। অনেকস্থানে নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত সালদা নদীর পানিও বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে নদী তীরবর্তী শতাধিক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া এলাকার বাসিন্দা মুসলেম মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় সালদা নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। সবাই বাঁধ ভাঙা দেখতে আসে, কোনো সহযোগিতা করে না। অসহায় অবস্থায় আছি।
বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়ার বাসিন্দা মতিন মিয়া বলেন, ‘পরিবার পরিজন নিয়ে সড়কের ওপরে আছি। ঘরবাড়ি সব শেষ। আমরা ত্রাণ পাচ্ছি। কিন্তু এলাকার ভেতরে আমার বোন ভাগনিরা আছে তাদের কাছে কেউই যায় না ত্রাণ দিতে।
বুড়িচং উপজেলায় ত্রাণ দিতে আসা এপেক্স ক্লাব অব কুমিল্লার সদস্য মাহফুজুর রহমান বলেন, গ্রামের ভেতরে অনেক লোক আটকা আছে। নৌকা না থাকায় অনেকেই সেখানে যান না। আমরা চেষ্টা করছি সেখানে যাওয়ার। আমি সবাইকে অনুরোধ করব কষ্ট করে হলেও গ্রামের ভেতরের মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় লে নি বেড়েছে কুমিল্লার তি নদী ও খালগুলোতে। সর্বশেষ আজ শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া পানিবন্দি অসহায়দের মধ্যে খাদ্যসহায়তা দিচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের লোকজন মাঠে কাজ করছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ্য আলী বলেন, জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ১২০ ইউনিয়ন। আমাদের সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম চলমান আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক এনজিও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রাজনৈতিক দল তাদের ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। বুড়িচং উপজেলাটি এমনভাবে পরিবেষ্টিত যেখানে সহজে নৌকা আনা নেওয়া কঠিন। তারপরও আমরা নৌকা আনার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নৌকা ও স্পিডবোট এনে কাজ শুরু করেছে।’
এ ছাড়া প্লাবিত হয়েছে চৌদ্দগ্রাম, আদর্শ সদর, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, হোমনা তিতাসসহ ১৭ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। এতে পানি বন্ধী হয়ে পড়ে ১০ লাখ মানুষ। নষ্ট হয়ে বাড়িঘর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মসজিদ মন্দিরসহ ফসলি জমি।
এদিকে কুমিল্লায় বন্যার অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত দামে চিড়া, মুড়ি ও এলপিজি গ্যাস বিক্রির অভিযোগে চার দোকানিকে মোট ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।