Dhaka 11:05 pm, Saturday, 21 December 2024

বৃটেনে অন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

বৃটেনে নতুন ইতিহাস। নতুন রেকর্ড। প্রথমবার সেখানে মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই পেয়েছেন দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তাও তারা নারী। একজন হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। অন্যজন সিলেটের বিশ্বনাথের কন্যা রুশনারা আলী। টিউলিপ সিদ্দিককে প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের মন্ত্রিপরিষদে সিটি মিনিস্টার বা নগর মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে রুশনারা আলীকে দেয়া হয়েছে হাউজিং, কমিউনিটিজ অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট মিনিস্টারের দায়িত্ব। তারা দু’জনেই লেবার দলের টিকিটে নির্বাচিত এমপি। নতুন এই দায়িত্ব পাওয়ায় তারা বিদেশে, বিশেষ করে বৃটেনে বাংলাদেশের নামকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছেন।

 

ব্লুমবার্গ বলছে, টিউলিপ সিদ্দিককে যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা আর্থিক সেবাখাত দেখাশোনা করে। উল্লেখ্য, টিউলিপ সিদ্দিক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। টিউলিপের বয়স ৪১ বছর। তিনি বর্তমানে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির আর্থিক খাত ‘দ্য সিটি’ নিয়ে পলিসি নির্ধারণে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। উল্লেখ্য, দ্য সিটি অব লন্ডনের আর্থিক খাতকে এই নামে অভিহিত করা হয়। লেবার পার্টি কয়েকদিন আগে পর্যন্তও যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন তিনি লেবার দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বিম আফোলামির স্থলাভিষিক্ত হবেন টিউলিপ সিদ্দিক।  উল্লেখ্য, মে মাসে তিনি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, লেবার দল ফিন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটি নিয়ে কাজ করবে। এটি হলো বৃটেনের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। টিউলিপের জন্ম ১৯৮২ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর লন্ডনের সাটনে। তার পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক শফিক আহমেদ সিদ্দিক। তিনি হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট থেকে এবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আগে এই আসনটি পরিচিত ছিল হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন নামে। এই আসনে ২০১৫ সাল থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন টিউলিপ। এ বছর ৯ই জুলাই থেকে তিনি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটিজ মিনিস্টারের ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি রিজেন্ট পার্কের ক্যামডেন লন্ডন বরো কাউন্সিলর ছিলেন। টিউলিপ সিদ্দিকের বড়ভাই রেদওয়ান ববি মুজিব এবং ছোটবোন আজমিনা সিদ্দিক। শৈশবে তার সাক্ষাৎ হয় বর্ণবাদবিরোধী কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলা, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, নোবেলজয়ী মাদার তেরেসাঁর সঙ্গে। তার পরিবারকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। টিউলিপ ঢাকায় অবস্থিত ্কলাস্টিকা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।

 

লন্ডন থেকে আরিফ মাহফুজ জানান, যুক্তরাজ্যের নবগঠিত  লেবার সরকারের মন্ত্রিপরিষদে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ এমপি রুশনারা আলী। তাকে হাউজিং, কমিউনিটিজ অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সদ্য সম্পন্ন হওয়া যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে  লেবার পার্টির হয়ে পঞ্চমবারের মতো এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন রুশনারা আলী। লেবার সরকার গঠন করার পরপরই জল্পনাকল্পনা ছিল স্টারমারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন বৃটিশ বাংলাদেশি কেউ। কিন্তু প্রথম কেবিনেট মন্ত্রীদের তালিকায় কেউ স্থান পাননি। সর্বশেষ বৃটিশ মন্ত্রী পরিষদে ইতিহাসের প্রথম মন্ত্রী হলেন বৃটিশ বাংলাদেশি দুই এমপি। টোরি সরকারের আমলে রুশনারা আলী যুক্তরাজ্যে ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ই মার্চ তার জন্ম। ২০১০ সাল থেকে তিনি বৃটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। এই পার্লামেন্টে প্রথম কোনো বাংলাদেশি বৃটিশ নাগরিক হিসেবে রুশনারা আলী নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে তিনি বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে আসনটি বিলুপ্ত করা হয়। এ পর্যন্ত এ আসনের এমপি ছিলেন তিনি। এবার তিনি বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ থেকে ইস্ট অ্যান্ড অব লন্ডনে অভিবাসী হন। সেখানে যোগ দেন মালবেরি স্কুল ফর গার্লস এবং টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজে। রুশনারা আলী বেড়ে ওঠেন টাওয়ার হ্যামলেটসে। সেখানে তার পিতা একজন শ্রমিকের কাজ করতেন। রুশনারা আলী সেইন্ট জনস কলেজ, অক্সফোর্ডে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

বৃটেনে অন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

আপলোড সময় : 06:14:49 pm, Friday, 12 July 2024

বৃটেনে নতুন ইতিহাস। নতুন রেকর্ড। প্রথমবার সেখানে মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই পেয়েছেন দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তাও তারা নারী। একজন হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। অন্যজন সিলেটের বিশ্বনাথের কন্যা রুশনারা আলী। টিউলিপ সিদ্দিককে প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের মন্ত্রিপরিষদে সিটি মিনিস্টার বা নগর মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে রুশনারা আলীকে দেয়া হয়েছে হাউজিং, কমিউনিটিজ অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট মিনিস্টারের দায়িত্ব। তারা দু’জনেই লেবার দলের টিকিটে নির্বাচিত এমপি। নতুন এই দায়িত্ব পাওয়ায় তারা বিদেশে, বিশেষ করে বৃটেনে বাংলাদেশের নামকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছেন।

 

ব্লুমবার্গ বলছে, টিউলিপ সিদ্দিককে যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা আর্থিক সেবাখাত দেখাশোনা করে। উল্লেখ্য, টিউলিপ সিদ্দিক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। টিউলিপের বয়স ৪১ বছর। তিনি বর্তমানে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির আর্থিক খাত ‘দ্য সিটি’ নিয়ে পলিসি নির্ধারণে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। উল্লেখ্য, দ্য সিটি অব লন্ডনের আর্থিক খাতকে এই নামে অভিহিত করা হয়। লেবার পার্টি কয়েকদিন আগে পর্যন্তও যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন তিনি লেবার দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বিম আফোলামির স্থলাভিষিক্ত হবেন টিউলিপ সিদ্দিক।  উল্লেখ্য, মে মাসে তিনি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, লেবার দল ফিন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটি নিয়ে কাজ করবে। এটি হলো বৃটেনের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। টিউলিপের জন্ম ১৯৮২ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর লন্ডনের সাটনে। তার পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক শফিক আহমেদ সিদ্দিক। তিনি হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট থেকে এবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আগে এই আসনটি পরিচিত ছিল হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন নামে। এই আসনে ২০১৫ সাল থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন টিউলিপ। এ বছর ৯ই জুলাই থেকে তিনি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটিজ মিনিস্টারের ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি রিজেন্ট পার্কের ক্যামডেন লন্ডন বরো কাউন্সিলর ছিলেন। টিউলিপ সিদ্দিকের বড়ভাই রেদওয়ান ববি মুজিব এবং ছোটবোন আজমিনা সিদ্দিক। শৈশবে তার সাক্ষাৎ হয় বর্ণবাদবিরোধী কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলা, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, নোবেলজয়ী মাদার তেরেসাঁর সঙ্গে। তার পরিবারকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। টিউলিপ ঢাকায় অবস্থিত ্কলাস্টিকা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।

 

লন্ডন থেকে আরিফ মাহফুজ জানান, যুক্তরাজ্যের নবগঠিত  লেবার সরকারের মন্ত্রিপরিষদে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ এমপি রুশনারা আলী। তাকে হাউজিং, কমিউনিটিজ অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সদ্য সম্পন্ন হওয়া যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে  লেবার পার্টির হয়ে পঞ্চমবারের মতো এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন রুশনারা আলী। লেবার সরকার গঠন করার পরপরই জল্পনাকল্পনা ছিল স্টারমারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন বৃটিশ বাংলাদেশি কেউ। কিন্তু প্রথম কেবিনেট মন্ত্রীদের তালিকায় কেউ স্থান পাননি। সর্বশেষ বৃটিশ মন্ত্রী পরিষদে ইতিহাসের প্রথম মন্ত্রী হলেন বৃটিশ বাংলাদেশি দুই এমপি। টোরি সরকারের আমলে রুশনারা আলী যুক্তরাজ্যে ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ই মার্চ তার জন্ম। ২০১০ সাল থেকে তিনি বৃটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। এই পার্লামেন্টে প্রথম কোনো বাংলাদেশি বৃটিশ নাগরিক হিসেবে রুশনারা আলী নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে তিনি বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে আসনটি বিলুপ্ত করা হয়। এ পর্যন্ত এ আসনের এমপি ছিলেন তিনি। এবার তিনি বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ থেকে ইস্ট অ্যান্ড অব লন্ডনে অভিবাসী হন। সেখানে যোগ দেন মালবেরি স্কুল ফর গার্লস এবং টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজে। রুশনারা আলী বেড়ে ওঠেন টাওয়ার হ্যামলেটসে। সেখানে তার পিতা একজন শ্রমিকের কাজ করতেন। রুশনারা আলী সেইন্ট জনস কলেজ, অক্সফোর্ডে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন।