দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি উপেক্ষা করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি সংবাদ সম্মেলন না করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ১৮ জুলাই বিকেল ৩টায় মুদ্রানীতির তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম। এখন পর্যন্ত এটাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে মুদ্রানীতিসংক্রান্ত স্টেকহোল্ডারদের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে গত মঙ্গলবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মিরধা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আগের অবস্থানে থেকেই মুদ্রানীতি কাভার করার জন্য আমাদের আহবান জানিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মোবাইল করে পাস নিয়ে যাওয়ার বিষয়টা সমর্থন করি না। আগের মতো অবাধ প্রবেশাধিকার না দেওয়ায় আহবান প্রত্যাখ্যান করেছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম। সেই বৈঠকে ইআরএফের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মিরধা, কোষাধ্যক্ষ রহিম শেখ, সিনিয়র সদস্য ওবায়দুল্লাহ রনি ও সানাউল্লাহ সাকিব।
এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু সাংবাদিকদের সংগঠন আমাদের মুদ্রানীতির সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে অনাগ্রহী, তাই আমরা অনুষ্ঠান আয়োজন করে পুনরায় অপমানিত হতে চাই না। সাংবাদিকরা রাজি হলে সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হতো। কিন্তু যেহেতু তাঁরা রাজি হননি, তাই ১৮ তারিখ বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট, ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমগুলোতে প্রকাশ করা হবে। এখন পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন করার কোনো সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এবারের মুদ্রানীতিতে খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পথনির্দেশনা আসছে। কারণ গত মুদ্রানীতিতেও একই ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এরই মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটাই এখনো ঠিকমতো কাজ করছে না।
কবে নাগাদ কাজ শুরু করবে তা-ও বলা যাচ্ছে না। তাই নীতি সুদহার বৃদ্ধি, ক্রলিং পেগে অটল এবং খেলাপি ঋণ কমানোর মতো পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তই আবারও আসতে পারে নতুন অর্থবছরের প্রথম অধ্যায়ের মুদ্রানীতিতে।
উল্লেখ্য, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মার্কিন ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় টাকার সংকট, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা এবং সুশাসনের অভাবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক খাত, মোটাদাগে এই সবই হচ্ছে এখন দেশের আর্থিক খাতে প্রধান সমস্যা। এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই জুলাই মাসের ১৮ তারিখ নতুন অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিবিএসের তথ্য মতে, এখন মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ধারাবাহিকভাবে ঋণের সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। যদিও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে দেখা যায়নি। সর্বশেষ গত মে মাসে দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯.৮৯ শতাংশ ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগের মুদ্রানীতিগুলোর মতো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতেও সংকুলানমুখী ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
এ ক্ষেত্রে সুদহার আরো বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। বাড়ানো হতে পারে নীতি সুদহার, রেপো, রিভার্স রেপোর মতো মুদ্রানীতির মৌলিক সুদ কাঠামোগুলোও।