Dhaka 8:05 am, Wednesday, 25 December 2024

রেলপথে মাত্র ৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে খুলনা, শুরু জুলাই থেকে

আগামী জুলাই থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে আট জোড়া ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। জুলাইয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু-ভাঙ্গা-মধুমতী সেতু হয়ে যশোর দিয়ে ট্রেন যাবে। ফলে এই রুটে খুলনা পর্যন্ত দূরত্ব অর্ধেকেরও বেশি কমে যাবে, কমবে যাত্রার সময়ও। মাত্র চার ঘণ্টায় তখন ঢাকা থেকে খুলনায় যাওয়া সম্ভব হবে। 

 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পদ্মা সেতু দিয়ে মাত্র চারটি ট্রেন চলছে; যা মোটেও লাভজনক নয়। তাই পদ্মা সেতু দিয়ে চার রুটে চলতি বছরেই নতুন আট জোড়া ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই চার রুট হচ্ছে ঢাকা-যশোর-খুলনা, ঢাকা-যশোর-বেনাপোল, ঢাকা-ভাঙ্গা-গোপালগঞ্জ এবং ঢাকা-ফরিদপুর-দর্শনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১০ অক্টোবর পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ১ নভেম্বর থেকে ওই রেলপথে চালু হয় বাণিজ্যিক ট্রেন। বর্তমানে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে তিন আন্তনগর ট্রেন—খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, বেনাপোলগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ও রাজশাহীগামী মধুমতি এক্সপ্রেস চলছে।

 

এ ছাড়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী কমিউটার ট্রেন নকশিকাঁথা এক্সপ্রেসও পদ্মা সেতু দিয়ে চলে। বর্তমানে ঢাকা থেকে ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর-কুষ্টিয়া-দর্শনা হয়ে খুলনায় যায়। তবে জুলাইয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু-ভাঙ্গা-মধুমতী সেতু হয়ে যশোর দিয়ে যাবে ট্রেন। ফলে ঢাকা-খুলনা রেলপথের দূরত্ব ১৯৫ কিলোমিটার কমে দাঁড়াবে মাত্র ১৭২ কিলোমিটারে। বর্তমানে দূরত্ব প্রায় ৩৬৭ কিলোমিটার। দূরত্ব কমায় যাতায়াতের সময় তিন ঘণ্টা কমে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বেনাপোল পথে লাগবে মাত্র চার ঘণ্টা।

রেলসচিব হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে গত রোববার বলেন, ‘পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করে ঢাকা-খুলনা পথে চিত্রা ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস দ্বিগুণ করে চারটি ট্রেন চলবে। ঢাকা-বেনাপোল পথেও দুটি ট্রেন চালানো সম্ভব। তিনি বলেন, এই রেলপথের কাজ শেষের পথে। জুলাই মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পুরোদমে ট্রেন চালুর জন্য সময় চাওয়া হবে।’

রেলসচিব আরও বলেন, ঢাকা-দর্শনা ও ঢাকা-গোপালগঞ্জ পথে এক জোড়া ট্রেন ইঞ্জিন ও বগি পাওয়া সাপেক্ষে চালু করা হবে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন আট জোড়া ট্রেন চালু করা হবে। তিনি জানান, আগামী দুই বছরের মধ্যে আরও ২০০টি ব্রডগেজ ট্রেন আসলে এ রুটে সেবার মান ও ট্রেন সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, এর মধ্যে খুলনা-ঢাকা রুটের দুটি আন্তনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস এক জোড়া চললেও সময় ও দূরত্ব কমে যাওয়ায় একটা রেক (ট্রেন সেট) দিয়েই দুই জোড়া ট্রেন চালানো হবে। সুন্দরবন প্রভাতি/গোধূলি নামে চলতে পারে এ দুটি ট্রেন। ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চলাচলকারী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটিও পদ্মা সেতু হয়ে চলবে। এ ট্রেনের এক রেক দিয়েই দুই জোড়া ট্রেন চিত্রা এক্সপ্রেস প্রভাতি/গোধূলি নামে চলতে পারে।

এ ছাড়া, ঢাকা-বেনাপোল রুটে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচলকারী বেনাপোল এক্সপ্রেসও বর্তমান রুট পরিবর্তন করে ভাঙ্গা থেকে মধুমতী সেতু—যশোর হয়ে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করবে। বর্তমান বেনাপোল এক্সপ্রেসের এক রেক দিয়েই দুই জোড়া ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেস প্রভাতি/গোধূলি নামে চলতে পারে।

এদিকে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত রেলরুট চালু থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ট্রেন চলাচল করে না। এ রুটেও দুই জোড়া ট্রেন চালানোর চিন্তা করছে রেলওয়ে। অন্য দিকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেসের রুট পরিবর্তন করা হলে ঢাকা থেকে ফরিদপুর-কুষ্টিয়া-দর্শনা রুটে কোনো ট্রেন থাকবে না। তাই এ রুটে নতুন একটি রেক দিয়ে দুই জোড়া ট্রেন চালানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে রেলওয়ে। এ ছাড়া, ঢাকা-কলকাতা রুটের আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসও রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল করবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে আরও ট্রেন চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খুলনা রুটে ট্রেন সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টিও জানিয়েছেন তিনি।

ট্যাগস :

Write Your Comment

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

রেলপথে মাত্র ৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে খুলনা, শুরু জুলাই থেকে

আপলোড সময় : 11:09:38 am, Thursday, 2 May 2024

আগামী জুলাই থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে আট জোড়া ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। জুলাইয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু-ভাঙ্গা-মধুমতী সেতু হয়ে যশোর দিয়ে ট্রেন যাবে। ফলে এই রুটে খুলনা পর্যন্ত দূরত্ব অর্ধেকেরও বেশি কমে যাবে, কমবে যাত্রার সময়ও। মাত্র চার ঘণ্টায় তখন ঢাকা থেকে খুলনায় যাওয়া সম্ভব হবে। 

 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পদ্মা সেতু দিয়ে মাত্র চারটি ট্রেন চলছে; যা মোটেও লাভজনক নয়। তাই পদ্মা সেতু দিয়ে চার রুটে চলতি বছরেই নতুন আট জোড়া ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই চার রুট হচ্ছে ঢাকা-যশোর-খুলনা, ঢাকা-যশোর-বেনাপোল, ঢাকা-ভাঙ্গা-গোপালগঞ্জ এবং ঢাকা-ফরিদপুর-দর্শনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১০ অক্টোবর পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ১ নভেম্বর থেকে ওই রেলপথে চালু হয় বাণিজ্যিক ট্রেন। বর্তমানে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে তিন আন্তনগর ট্রেন—খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, বেনাপোলগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ও রাজশাহীগামী মধুমতি এক্সপ্রেস চলছে।

 

এ ছাড়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী কমিউটার ট্রেন নকশিকাঁথা এক্সপ্রেসও পদ্মা সেতু দিয়ে চলে। বর্তমানে ঢাকা থেকে ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর-কুষ্টিয়া-দর্শনা হয়ে খুলনায় যায়। তবে জুলাইয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু-ভাঙ্গা-মধুমতী সেতু হয়ে যশোর দিয়ে যাবে ট্রেন। ফলে ঢাকা-খুলনা রেলপথের দূরত্ব ১৯৫ কিলোমিটার কমে দাঁড়াবে মাত্র ১৭২ কিলোমিটারে। বর্তমানে দূরত্ব প্রায় ৩৬৭ কিলোমিটার। দূরত্ব কমায় যাতায়াতের সময় তিন ঘণ্টা কমে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বেনাপোল পথে লাগবে মাত্র চার ঘণ্টা।

রেলসচিব হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে গত রোববার বলেন, ‘পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করে ঢাকা-খুলনা পথে চিত্রা ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস দ্বিগুণ করে চারটি ট্রেন চলবে। ঢাকা-বেনাপোল পথেও দুটি ট্রেন চালানো সম্ভব। তিনি বলেন, এই রেলপথের কাজ শেষের পথে। জুলাই মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পুরোদমে ট্রেন চালুর জন্য সময় চাওয়া হবে।’

রেলসচিব আরও বলেন, ঢাকা-দর্শনা ও ঢাকা-গোপালগঞ্জ পথে এক জোড়া ট্রেন ইঞ্জিন ও বগি পাওয়া সাপেক্ষে চালু করা হবে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন আট জোড়া ট্রেন চালু করা হবে। তিনি জানান, আগামী দুই বছরের মধ্যে আরও ২০০টি ব্রডগেজ ট্রেন আসলে এ রুটে সেবার মান ও ট্রেন সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, এর মধ্যে খুলনা-ঢাকা রুটের দুটি আন্তনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস এক জোড়া চললেও সময় ও দূরত্ব কমে যাওয়ায় একটা রেক (ট্রেন সেট) দিয়েই দুই জোড়া ট্রেন চালানো হবে। সুন্দরবন প্রভাতি/গোধূলি নামে চলতে পারে এ দুটি ট্রেন। ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চলাচলকারী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটিও পদ্মা সেতু হয়ে চলবে। এ ট্রেনের এক রেক দিয়েই দুই জোড়া ট্রেন চিত্রা এক্সপ্রেস প্রভাতি/গোধূলি নামে চলতে পারে।

এ ছাড়া, ঢাকা-বেনাপোল রুটে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচলকারী বেনাপোল এক্সপ্রেসও বর্তমান রুট পরিবর্তন করে ভাঙ্গা থেকে মধুমতী সেতু—যশোর হয়ে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করবে। বর্তমান বেনাপোল এক্সপ্রেসের এক রেক দিয়েই দুই জোড়া ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেস প্রভাতি/গোধূলি নামে চলতে পারে।

এদিকে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত রেলরুট চালু থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ট্রেন চলাচল করে না। এ রুটেও দুই জোড়া ট্রেন চালানোর চিন্তা করছে রেলওয়ে। অন্য দিকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেসের রুট পরিবর্তন করা হলে ঢাকা থেকে ফরিদপুর-কুষ্টিয়া-দর্শনা রুটে কোনো ট্রেন থাকবে না। তাই এ রুটে নতুন একটি রেক দিয়ে দুই জোড়া ট্রেন চালানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে রেলওয়ে। এ ছাড়া, ঢাকা-কলকাতা রুটের আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসও রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল করবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে আরও ট্রেন চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খুলনা রুটে ট্রেন সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টিও জানিয়েছেন তিনি।