Dhaka 7:59 pm, Wednesday, 25 December 2024
বেকিং নিউজ :

বাজেট হবে জনবান্ধব

আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জনবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ১৩০টি কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের প্রায় ১২ কোটি নাগরিককে সহায়তা দেওয়া হবে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে ব্যয় করা হবে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ লক্ষ্যে উপকারভোগীর সংখ্যা এবং তাদের ভাতার পরিমাণ আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের ৬০ লাখ অসহায় প্রবীণ মানুষ প্রতিমাসে পাবেন সরকারি ভাতা। কোনো প্রতিবন্ধী ভাতার বাইরে থাকবে না। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা বা দুস্থ নারী, জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী, অসহায় মা-শিশু ও হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষদের দিকে থাকবে বিশেষ নজর। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আগামী বাজেটে সবার দাবি পূরণে তিনি সচেষ্ট থাকবেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সিনিয়র নাগরিকদের ভাতা বাড়ানো হবে।

জানা গেছে, কাউকে বাদ দিয়ে নয় বরং জাতীয় বাজেট থেকে দেশের সকল নাগরিক যাতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সুবিধা পান, সেই বিষয়ে এবার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগামী ৬ জুন প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। নতুন বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বাজেটের বড় অংশ ব্যয় করা হলেও অর্থের অপচয়, অনিয়ম ও বিভিন্ন স্তরে নানামুখী দুর্নীতির কারণে সঠিকভাবে উপকারভোগীদের কাছে ভাতা পৌঁছোয় না। আবার অনেক সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাদের পছন্দমতো তালিকা প্রণয়ন করে ভাতা ও নগদ সহায়তা উত্তোলন করে থাকে। ফলে সামাজিক নিরাপত্তার আওয়ায় যেসব কর্মসূচি রয়েছে তা বাস্তবায়ন সব সময় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। অথচ দারিদ্র্য বিমোচন এবং পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নিতে এ কর্মসূচির বিকল্প নেই সরকারের সামনে। এ অবস্থায় সমাজের পিছিয়ে পড়া অসহায় প্রকৃত নাগরিকরা যাতে উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন সেই বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ভাতার টাকা যাতে উপকারভোগীদের হাতে পৌঁছায় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করবে সরকার।

এ লক্ষ্যে চলতি মাসের শুরুতে দেওয়া এক পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সব টাকা উপকারভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দিতে হবে। আগামী ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে, গত একবছরের বেশি সময় ধরে ক্রমবর্ধমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে হিমশিম খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা  আরও বাড়াতে যাচ্ছে। বর্তমান ২৪টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রায় ১১ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে এই সংখ্যা আরও অন্তত ২০ লাখ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় পর্যায়ক্রমে দেশের আট কোটি মানুষকে নিয়ে আসতে চায় সরকার। বর্তমান ৬০ হাজার মানুষ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে।

 

এর পাশাপাশি টিসিবির কার্যক্রম বাড়িয়ে কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, ওএমএস (খোলা বাজার বিক্রি) এবং খাদ্যবান্ধক কর্মসূচির আওতায় আরও প্রায় ১ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের নানাভাবে ভর্তুকি প্রদান, নগদ সহায়তা, খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্য সহায়তা এবং শিক্ষা সহায়তার মতো বড় বড় কর্মসূচি রয়েছে। এসব খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষকে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা  হচ্ছে। এর বাইরে ৬০ লাখ প্রবীণ, ৩২ লাখ প্রতিবন্ধী, মা ও শিশু ১৫ লাখ ৬৪ হাজার, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা প্রায় ২৬ লাখ, ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধা এবং ৫০ হাজার জটিল রোগী নিয়মিত ভাতার আওতায় আসবেন। বর্তমানে প্রায় দেশের ২২ লাখ মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে মুনাফা পাচ্ছেন। এই কার্যক্রমকেও এগিয়ে নেওয়ার কর্মসূচি থাকবে নতুন বাজেটে। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন খাতে নগদ প্রদান, খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রম, উপবৃত্তি কার্যক্রম, নগদ উপকরণ হস্তান্তর বিশেষ কার্যক্রম, ঋণ সহায়তা কার্যক্রম, বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা, বিবিধ তহবিল ও কার্যক্রম, উন্নয়ন খাতের কার্যক্রমসমূহ চলমান (আশ্রয়ণ প্রকল্প) ও উন্নয়ন খাতের কার্যক্রমসমূহ নতুন প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১২ কোটি মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা হবে।

 

সম্প্রতি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি নিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নতুন সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ প্রকল্পের ভাতার পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকছে। এ ছাড়া অর্থের অপব্যবহার ও দুর্নীতি কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সব কার্যক্রম নতুন কাঠামোর আওতায় আনতে চলতি মাসের শুরুতে দুটি পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সরকার দুটি বড় প্রকল্পের মাধ্যমে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা বা দুস্থ নারী হিসেবে ভাতা পাওয়া সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়াবে। তহবিল সীমাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন কর্মসূচির ভাতার পরিমাণ বাড়ানো যায়নি। এ ছাড়া নতুন বাজেট প্রণয়নে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মধ্যপ্রাচ্য সংকট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে। এই সময়ে কিভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং রপ্তানি বাড়ানো যায় সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে অর্থবিভাগ।

 

এ ছাড়া ২০২৬ সালের এলডিসি উত্তরণের তিনশর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বিমোচন ও দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে। সরকার মনে করছে, জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বিবেচনায় নিয়ে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ালে তা দরিদ্রদের স্বস্তি  দেবে। দেশে গত ১৩ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি। এ কারণে দ্রব্যমূল্য কমাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে কর ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি, দারিদ্র্য দূরীকরণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ থেকে সরে আসার মতো পদক্ষেপ গ্রহণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান সম্প্রতি বাজেট সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে জানান, মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হবে। এক কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ওএমএস কার্যক্রম, কাবিখা, ও সরকারের খাদ্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচির জোর দেওয়া হবে নতুন বাজেটে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।

দেশের ৬০ লাখ প্রবীণ ভাতা পাবেন ॥ চলতি অর্থবছরে ৫৮ লাখ এক হাজার প্রবীণ প্রতি মাসে ৬০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। ২০২৪-২৫ সালে তাদের সংখ্যা দুই লাখ বাড়বে। অর্থাৎ ৬০ লাখ প্রবীণ সরকারি ভাতা পাবেন। সরকার চলতি অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা’ কর্মসূচিতে চার হাজার ২০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বার্ষিক গড় আয় ১০ হাজার টাকার কম এমন ৬৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ ও ৬২ বছরের বেশি বয়সী নারীকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। দেশের ২৬২ উপজেলায় সব যোগ্য প্রবীণ নাগরিক এ সুবিধা পাচ্ছেন। উপকারভোগীর সংখ্যা আট লাখ বাড়ানো হলে বাকি ২৩৩ উপজেলায় সব যোগ্য ব্যক্তিকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর উপকারভোগী প্রতিবন্ধীর সংখ্যা তিন লাখ ৩৪ হাজার বাড়ানো হবে। বর্তমানে এ সুবিধা পাচ্ছেন ২৯ লাখ জন। পাশাপাশি নতুন করে হিজড়া সম্প্রদায় উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ২২৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতা ২০ শতাংশ এবং ভাতার অঙ্ক একশ’ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৩ লাখ ৪ জন এ সুবিধা পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে নতুন মুখ যুক্ত হবে ২ লাখ ৬০ হাজার। ফলে মা ও শিশু সহায়তার উপকারভোগী দাঁড়াবে ১৫ লাখ ৬৪ হাজারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, পর্যায়ক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। চলতি অর্থবছরে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা বা দুস্থ নারীদের জন্য এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা বরাদ্দ  দেওয়া হয়। প্রায় ২৫ লাখ ৭৫ হাজার নারী এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। এই সুবিধা আরও দুই লাখ মানুষ পাবেন। এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ বছর ও এর বেশি বয়সী নারী যাদের বার্ষিক গড় আয় ১২ হাজার টাকার নিচে তারা প্রতি মাসে ৫৫০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও, ৮০ বছর বা এর বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকরা আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে প্রতি মাসে ৯০০ টাকা হারে ভাতা পাবেন। এটি বর্তমানে ৬০০ টাকা। ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে ৩০ হাজার উপকারভোগীকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার করা হবে। দেশের গর্বিত সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের অবসর ও পারিবারিক অবসর ভাতাও দেওয়া হচ্ছে। এ সব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২৮ লাখ ৪৭ হাজার। এর বাইরে ১১টি কর্মসূচির মাধ্যমে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৭ হাজার জনকে বিভিন্নভাবে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নগদ অর্থ ও খাদ্যসহায়তার সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪ কোটি ৯১ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ভিজিএফে ১ কোটি ৮০ লাখ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৬২ লাখ ৫০ হাজার, ওএমএস ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার, জিআর (খাদ্য) ৩৩ লাখ, কাবিটা ১৮ লাখ ২০ হাজার, কাবিখা ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ খাদ্যসুবিধা পাচ্ছে। ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে দেশে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় পরিচালিত হয়।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করা হবে ॥ দুর্নীতি, অপচয় ও স্বজনপ্রীতি বন্ধে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সব টাকা উপকারভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দিতে হবে। ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে অনেক কর্মসূচির ভাতা এমএফএসের মাধ্যমে দেওয়া হলেও অনেক সময় উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা হয় না।

তাই টাকার অপব্যবহারও হয়। সরকার প্রায় ১৩০টি কর্মসূচির আওতায় নিরাপত্তা বেষ্টনী সুবিধা দিচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জন্য মোট বরাদ্দ ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। তবে আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাদে বরাদ্দ প্রায়  ৪ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে বলেছে যে, এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য ও কারা ভাতা পাচ্ছেন তা নিয়ে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের আওতায় ১৩০টি কর্মসূচি বা বিষয় রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলোর মধ্যে ৮টি কর্মসূচি হচ্ছে নগদ ভাতা, আর ১১টি খাদ্য সহায়তা। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে মহিলা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীও বাড়ানো হবে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তায় জোর দিতেই হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন এবং এসডিজি অর্জন করতে হলে ধীরে ধীরে দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। এ জন্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা বেশি জরুরি। সেদিকে সরকারকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের যাতে সঠিক ব্যবহার হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

এদিকে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৪.৬২ শতাংশ বেশি বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রাও ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি অর্জনের গুরুত্ব কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড় বেশ কয়েক মাস মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে থাকলেও আগামী অর্থবছরে গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখতে চায় সরকার। আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ ১০ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এগুলো হচ্ছে-বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় নিয়ে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্র্মাণ, প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা, বাজেট ঘাটতি ধারণা পর্যায়ে রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আমার গ্রাম আমার শহর পরিকল্পনা দ্রুত এগিয়ে নেওয়া, সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো, ডিজিটাল শিক্ষায় নজর, ফাস্ট-ট্র্যাক অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করা।

ট্যাগস :

Write Your Comment

About Author Information

জনপ্রিয়

কুমিল্লায় জিএমপিএ এর আয়োজনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

বাজেট হবে জনবান্ধব

আপলোড সময় : 10:41:46 pm, Monday, 29 April 2024

আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জনবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ১৩০টি কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের প্রায় ১২ কোটি নাগরিককে সহায়তা দেওয়া হবে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে ব্যয় করা হবে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ লক্ষ্যে উপকারভোগীর সংখ্যা এবং তাদের ভাতার পরিমাণ আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের ৬০ লাখ অসহায় প্রবীণ মানুষ প্রতিমাসে পাবেন সরকারি ভাতা। কোনো প্রতিবন্ধী ভাতার বাইরে থাকবে না। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা বা দুস্থ নারী, জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী, অসহায় মা-শিশু ও হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষদের দিকে থাকবে বিশেষ নজর। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আগামী বাজেটে সবার দাবি পূরণে তিনি সচেষ্ট থাকবেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সিনিয়র নাগরিকদের ভাতা বাড়ানো হবে।

জানা গেছে, কাউকে বাদ দিয়ে নয় বরং জাতীয় বাজেট থেকে দেশের সকল নাগরিক যাতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সুবিধা পান, সেই বিষয়ে এবার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগামী ৬ জুন প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। নতুন বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বাজেটের বড় অংশ ব্যয় করা হলেও অর্থের অপচয়, অনিয়ম ও বিভিন্ন স্তরে নানামুখী দুর্নীতির কারণে সঠিকভাবে উপকারভোগীদের কাছে ভাতা পৌঁছোয় না। আবার অনেক সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাদের পছন্দমতো তালিকা প্রণয়ন করে ভাতা ও নগদ সহায়তা উত্তোলন করে থাকে। ফলে সামাজিক নিরাপত্তার আওয়ায় যেসব কর্মসূচি রয়েছে তা বাস্তবায়ন সব সময় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। অথচ দারিদ্র্য বিমোচন এবং পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নিতে এ কর্মসূচির বিকল্প নেই সরকারের সামনে। এ অবস্থায় সমাজের পিছিয়ে পড়া অসহায় প্রকৃত নাগরিকরা যাতে উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন সেই বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ভাতার টাকা যাতে উপকারভোগীদের হাতে পৌঁছায় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করবে সরকার।

এ লক্ষ্যে চলতি মাসের শুরুতে দেওয়া এক পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সব টাকা উপকারভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দিতে হবে। আগামী ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে, গত একবছরের বেশি সময় ধরে ক্রমবর্ধমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে হিমশিম খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা  আরও বাড়াতে যাচ্ছে। বর্তমান ২৪টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রায় ১১ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে এই সংখ্যা আরও অন্তত ২০ লাখ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় পর্যায়ক্রমে দেশের আট কোটি মানুষকে নিয়ে আসতে চায় সরকার। বর্তমান ৬০ হাজার মানুষ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে।

 

এর পাশাপাশি টিসিবির কার্যক্রম বাড়িয়ে কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, ওএমএস (খোলা বাজার বিক্রি) এবং খাদ্যবান্ধক কর্মসূচির আওতায় আরও প্রায় ১ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের নানাভাবে ভর্তুকি প্রদান, নগদ সহায়তা, খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্য সহায়তা এবং শিক্ষা সহায়তার মতো বড় বড় কর্মসূচি রয়েছে। এসব খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষকে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা  হচ্ছে। এর বাইরে ৬০ লাখ প্রবীণ, ৩২ লাখ প্রতিবন্ধী, মা ও শিশু ১৫ লাখ ৬৪ হাজার, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা প্রায় ২৬ লাখ, ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধা এবং ৫০ হাজার জটিল রোগী নিয়মিত ভাতার আওতায় আসবেন। বর্তমানে প্রায় দেশের ২২ লাখ মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে মুনাফা পাচ্ছেন। এই কার্যক্রমকেও এগিয়ে নেওয়ার কর্মসূচি থাকবে নতুন বাজেটে। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন খাতে নগদ প্রদান, খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রম, উপবৃত্তি কার্যক্রম, নগদ উপকরণ হস্তান্তর বিশেষ কার্যক্রম, ঋণ সহায়তা কার্যক্রম, বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা, বিবিধ তহবিল ও কার্যক্রম, উন্নয়ন খাতের কার্যক্রমসমূহ চলমান (আশ্রয়ণ প্রকল্প) ও উন্নয়ন খাতের কার্যক্রমসমূহ নতুন প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১২ কোটি মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা হবে।

 

সম্প্রতি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি নিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নতুন সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ প্রকল্পের ভাতার পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকছে। এ ছাড়া অর্থের অপব্যবহার ও দুর্নীতি কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সব কার্যক্রম নতুন কাঠামোর আওতায় আনতে চলতি মাসের শুরুতে দুটি পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সরকার দুটি বড় প্রকল্পের মাধ্যমে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা বা দুস্থ নারী হিসেবে ভাতা পাওয়া সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়াবে। তহবিল সীমাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন কর্মসূচির ভাতার পরিমাণ বাড়ানো যায়নি। এ ছাড়া নতুন বাজেট প্রণয়নে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মধ্যপ্রাচ্য সংকট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে। এই সময়ে কিভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং রপ্তানি বাড়ানো যায় সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে অর্থবিভাগ।

 

এ ছাড়া ২০২৬ সালের এলডিসি উত্তরণের তিনশর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বিমোচন ও দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে। সরকার মনে করছে, জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বিবেচনায় নিয়ে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ালে তা দরিদ্রদের স্বস্তি  দেবে। দেশে গত ১৩ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি। এ কারণে দ্রব্যমূল্য কমাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে কর ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি, দারিদ্র্য দূরীকরণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ থেকে সরে আসার মতো পদক্ষেপ গ্রহণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান সম্প্রতি বাজেট সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে জানান, মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হবে। এক কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ওএমএস কার্যক্রম, কাবিখা, ও সরকারের খাদ্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচির জোর দেওয়া হবে নতুন বাজেটে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।

দেশের ৬০ লাখ প্রবীণ ভাতা পাবেন ॥ চলতি অর্থবছরে ৫৮ লাখ এক হাজার প্রবীণ প্রতি মাসে ৬০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। ২০২৪-২৫ সালে তাদের সংখ্যা দুই লাখ বাড়বে। অর্থাৎ ৬০ লাখ প্রবীণ সরকারি ভাতা পাবেন। সরকার চলতি অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা’ কর্মসূচিতে চার হাজার ২০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বার্ষিক গড় আয় ১০ হাজার টাকার কম এমন ৬৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ ও ৬২ বছরের বেশি বয়সী নারীকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। দেশের ২৬২ উপজেলায় সব যোগ্য প্রবীণ নাগরিক এ সুবিধা পাচ্ছেন। উপকারভোগীর সংখ্যা আট লাখ বাড়ানো হলে বাকি ২৩৩ উপজেলায় সব যোগ্য ব্যক্তিকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর উপকারভোগী প্রতিবন্ধীর সংখ্যা তিন লাখ ৩৪ হাজার বাড়ানো হবে। বর্তমানে এ সুবিধা পাচ্ছেন ২৯ লাখ জন। পাশাপাশি নতুন করে হিজড়া সম্প্রদায় উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ২২৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতা ২০ শতাংশ এবং ভাতার অঙ্ক একশ’ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৩ লাখ ৪ জন এ সুবিধা পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে নতুন মুখ যুক্ত হবে ২ লাখ ৬০ হাজার। ফলে মা ও শিশু সহায়তার উপকারভোগী দাঁড়াবে ১৫ লাখ ৬৪ হাজারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, পর্যায়ক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। চলতি অর্থবছরে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা বা দুস্থ নারীদের জন্য এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা বরাদ্দ  দেওয়া হয়। প্রায় ২৫ লাখ ৭৫ হাজার নারী এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। এই সুবিধা আরও দুই লাখ মানুষ পাবেন। এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ বছর ও এর বেশি বয়সী নারী যাদের বার্ষিক গড় আয় ১২ হাজার টাকার নিচে তারা প্রতি মাসে ৫৫০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও, ৮০ বছর বা এর বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকরা আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে প্রতি মাসে ৯০০ টাকা হারে ভাতা পাবেন। এটি বর্তমানে ৬০০ টাকা। ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের জন্য আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে ৩০ হাজার উপকারভোগীকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার করা হবে। দেশের গর্বিত সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের অবসর ও পারিবারিক অবসর ভাতাও দেওয়া হচ্ছে। এ সব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২৮ লাখ ৪৭ হাজার। এর বাইরে ১১টি কর্মসূচির মাধ্যমে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৭ হাজার জনকে বিভিন্নভাবে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নগদ অর্থ ও খাদ্যসহায়তার সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪ কোটি ৯১ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ভিজিএফে ১ কোটি ৮০ লাখ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৬২ লাখ ৫০ হাজার, ওএমএস ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার, জিআর (খাদ্য) ৩৩ লাখ, কাবিটা ১৮ লাখ ২০ হাজার, কাবিখা ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ খাদ্যসুবিধা পাচ্ছে। ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে দেশে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় পরিচালিত হয়।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করা হবে ॥ দুর্নীতি, অপচয় ও স্বজনপ্রীতি বন্ধে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সব টাকা উপকারভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দিতে হবে। ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে অনেক কর্মসূচির ভাতা এমএফএসের মাধ্যমে দেওয়া হলেও অনেক সময় উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা হয় না।

তাই টাকার অপব্যবহারও হয়। সরকার প্রায় ১৩০টি কর্মসূচির আওতায় নিরাপত্তা বেষ্টনী সুবিধা দিচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জন্য মোট বরাদ্দ ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। তবে আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাদে বরাদ্দ প্রায়  ৪ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে বলেছে যে, এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য ও কারা ভাতা পাচ্ছেন তা নিয়ে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের আওতায় ১৩০টি কর্মসূচি বা বিষয় রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলোর মধ্যে ৮টি কর্মসূচি হচ্ছে নগদ ভাতা, আর ১১টি খাদ্য সহায়তা। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে মহিলা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীও বাড়ানো হবে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তায় জোর দিতেই হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন এবং এসডিজি অর্জন করতে হলে ধীরে ধীরে দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। এ জন্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা বেশি জরুরি। সেদিকে সরকারকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের যাতে সঠিক ব্যবহার হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

এদিকে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৪.৬২ শতাংশ বেশি বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রাও ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি অর্জনের গুরুত্ব কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড় বেশ কয়েক মাস মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে থাকলেও আগামী অর্থবছরে গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখতে চায় সরকার। আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ ১০ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এগুলো হচ্ছে-বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় নিয়ে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্র্মাণ, প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা, বাজেট ঘাটতি ধারণা পর্যায়ে রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আমার গ্রাম আমার শহর পরিকল্পনা দ্রুত এগিয়ে নেওয়া, সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো, ডিজিটাল শিক্ষায় নজর, ফাস্ট-ট্র্যাক অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করা।