Dhaka 10:39 pm, Tuesday, 24 December 2024
বেকিং নিউজ :
Logo বাঘায় অবৈধ পুকুর খননে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা Logo লালমোহনে ফুটপাতের অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ অভিযান Logo বাউফলে সাদপন্থি তাবলীগ জামাতের নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল Logo বড়দিন উপলক্ষে বুধবার বন্ধ থাকবে বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি Logo Tratar para Recursos Real en Casino con manga larga Facultad Logo গোদাগাড়ীতে রাত হলেই শুরু হয় পুকুর খননের মহাউৎসব,নিরব ভূমিকায় প্রশাসন Logo ময়মনসিংহে সরকারী দপ্তর থেকে বিদেশি পিস্তলসহ বিপুল অস্ত্র-মাদক উদ্ধার করেছে পুলিশ Logo রাজশাহী জেলা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত-সভাপতি আসাদ-সম্পাদক আখতার Logo লালমোহন টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক ফল প্রকাশ ও অভিভাবক সমাবেশ Logo বাউফলে ফ্লিম্মি ষ্টাইলে ধান ও মাছ লুটের অভিযোগ

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ইসরায়েলে ইরানের হামলার পর তৈরি হওয়া উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এই সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন কোন খাতে প্রভাব পড়তে পারে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে তা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।

গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশসহ মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের এসব ঘটনার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, সে বিষয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন সেক্টরে প্রভাব পড়তে পারে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যালোচনা করছেন।

যার যার সেক্টরে যেন প্রস্তুতি নেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী সেটিও বলেছেন।

এপ্রিলের শুরুতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনসুলেটে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে, যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করছে ইরান। এর প্রতিশোধ হিসেবে গত শনিবার রাতে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এই ঘটনায় ইরাক, জর্দানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে এক দিনের জন্য বাণিজ্যিক বিমান চলাচল বন্ধ ছিল।

এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেয় কি না—বিশ্লেষকরা সেই আশঙ্কা করছেন। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাসের জোগানদাতা অঞ্চল।

 

মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন বলেন, মিডল ইস্টে এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সেদিকে নজর রাখার জন্য সব মন্ত্রণালয়কে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্ভাব্য রি-অ্যাকশন কী হতে পারে সে বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সংঘাত দীর্ঘমেয়াদি হলে তা মোকাবেলা কিভাবে করা হবে সে জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।

ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখতে বলেছেন। মন্ত্রণালয়গুলোকেও পর্যালোচনা করতে বলেছেন। কী কী করতে হবে সেটা ঠিক করতে বলেছেন। সংকট তৈরি হলে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে, তখন কী করা যায়, সেসব বিষয়ে পরিকল্পনা রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা জরুরি। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের অনেক নির্ভরশীলতা আছে। এসব দেশের সঙ্গে তেল পরিবহনসহ বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ—দুইভাবে প্রভাব পড়বে। এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধসহ কয়েকটি সংকট চলছে। পাশাপাশি বিশ্বরাজনীতিতে মেরুকরণ বদলে গেছে। কয়েক বছর আগে করোনারও আঘাত ছিল। বিশ্বমন্দা ও বিশ্ব অর্থনীতি সংকটের মধ্যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ একটি বড় জায়গা।’

তিনি বলেন, ‘তেল-জ্বালানির বিকল্প উৎস সিঙ্গাপুর ও নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। যেসব দেশের সঙ্গে জ্বালানি নিয়ে সরকারের চুক্তি হচ্ছে, সেগুলোর দিকে আরো বেশি নজর দিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধানের যে সক্ষমতা, সেটা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের রিয়েল টাইমের দিকে নজর রাখতে হবে। কূটনৈতিক প্রভাবও খুব গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো যেমন পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে যুুক্ত, তেমনি একদিকে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যেন বজায় থাকে, অটুট থাকে। জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে দর-কষাকষি করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের সংকটে সুবিধাভোগী হয়ে যায় আরব দেশগুলো। কারণ তেলের দাম বাড়তে থাকে, তখন তাদের রেভিনিউ বাড়ে। যারা নির্ভরশীল তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের সংকট দীর্ঘমেয়াদি হলে শ্রমবাজারেও প্রভাব পড়বে। এতে রেমিট্যান্স কমতে থাকবে।’

 

জানাতে হবে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণ

ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বৈঠকে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন উপস্থাপন পর্বে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব প্রকল্প প্রতিবেদনে বারবার বাস্তবায়নাধীন লেখা হচ্ছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। হয় বাস্তবায়ন করতে হবে, অথবা সেগুলো আবার মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসতে হবে। বলতে হবে যে এই এই কারণে এগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে দ্রুত মন্ত্রিসভাকে অবহিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। হয় বাস্তবায়ন করবে, না হয় বিলম্বের কারণ আমাদের জানতে হবে।’

 

মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া অনুমোদন

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ‘মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, মহেশখালী মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথ ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার আওতায় মাতাবাড়ীতে উন্নয়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে যাতে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা যায়, সেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর সুবিধা থেকে শুরু করে উন্নয়নের মৌলিক কিছু অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে সামগ্রিক কিছু অঞ্চল চিহ্নিত করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করা যায়, সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুরো কাজ এখন আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় করছে।

মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, সমন্বিতভাবে এসব কাজ করতে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীকে নিয়ে ১৭ সদস্যের বোর্ড থাকবে। কর্তৃপক্ষের মূল কাজ হবে নির্ধারিত এলাকায় ভূমি ব্যবহারের মাস্টারপ্ল্যান করে তা বাস্তবায়ন করা। যাদের ভূমি দেওয়া হবে, তারা যেন যথাযথভাবে কাজ করে। মূল লক্ষ্য হবে বিদেশি বিনিয়োগ। এক্সপোর্ট ও ইমপোর্টের নিট টাইম যেন কম হয়। তিনি বলেন, ৫৫ হাজার ৯৬৮ একর জমি নিয়ে প্রকল্প এলাকার যে মাস্টারপ্ল্যান হবে, সেখানে যেন পরিবেশ সংরক্ষণ করা হয়, লবণ চাষ, পান চাষও যেন সুরক্ষিত থাকে, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ যাতে ঘটে, তাতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে এটি করা হচ্ছে। কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো নিষ্পত্তি করে পুনরায় আইনটি মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। কক্সবাজারে কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় হবে। ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিস করা যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব।

 

বিচারপতিদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাবেন নির্বাচন কমিশনাররা

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনাররা আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির সমান বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন৷ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে৷ এ আইনের আওতায় এসব সুবিধা পাবেন নির্বাচন কমিশনাররা।

মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এর আগে এ আইনের ইংরেজি ভার্সন ছিল, আমাদের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি যে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পান আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও সেই সুযোগ-সুবিধা পাবেন৷ এই আইনটিই পুনরায় বাংলায় করা হয়েছে৷ সেটির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ এর আগে গত বছর ২১ আগস্ট বিচারপতিদের সমান সুযোগ-সুবিধা চেয়ে আইনের খসড়া অনুমোদন করে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা যে সুযোগ-সুবিধা পান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সেই সুবিধা এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের সমপর্যায়ের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে অন্য কমিশনারদের জন্য।’

এই বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন-২০২৩-এর বিষয়ে ১৯৮৩ সালের যে অর্ডিন্যান্স আছে, সেটা বাংলায় করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকার ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সামরিক শাসনমালে যেসব আইন ছিল, সেগুলো বাংলায় করা হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই কমিশনের নির্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন-২০২৩ কমিশন সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

About Author Information

জনপ্রিয়

বাঘায় অবৈধ পুকুর খননে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

আপলোড সময় : 08:28:56 pm, Friday, 19 April 2024

ইসরায়েলে ইরানের হামলার পর তৈরি হওয়া উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এই সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন কোন খাতে প্রভাব পড়তে পারে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে তা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।

গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশসহ মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের এসব ঘটনার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, সে বিষয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন সেক্টরে প্রভাব পড়তে পারে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যালোচনা করছেন।

যার যার সেক্টরে যেন প্রস্তুতি নেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী সেটিও বলেছেন।

এপ্রিলের শুরুতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনসুলেটে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে, যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করছে ইরান। এর প্রতিশোধ হিসেবে গত শনিবার রাতে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এই ঘটনায় ইরাক, জর্দানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে এক দিনের জন্য বাণিজ্যিক বিমান চলাচল বন্ধ ছিল।

এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেয় কি না—বিশ্লেষকরা সেই আশঙ্কা করছেন। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাসের জোগানদাতা অঞ্চল।

 

মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন বলেন, মিডল ইস্টে এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সেদিকে নজর রাখার জন্য সব মন্ত্রণালয়কে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্ভাব্য রি-অ্যাকশন কী হতে পারে সে বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সংঘাত দীর্ঘমেয়াদি হলে তা মোকাবেলা কিভাবে করা হবে সে জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।

ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখতে বলেছেন। মন্ত্রণালয়গুলোকেও পর্যালোচনা করতে বলেছেন। কী কী করতে হবে সেটা ঠিক করতে বলেছেন। সংকট তৈরি হলে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে, তখন কী করা যায়, সেসব বিষয়ে পরিকল্পনা রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা জরুরি। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের অনেক নির্ভরশীলতা আছে। এসব দেশের সঙ্গে তেল পরিবহনসহ বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ—দুইভাবে প্রভাব পড়বে। এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধসহ কয়েকটি সংকট চলছে। পাশাপাশি বিশ্বরাজনীতিতে মেরুকরণ বদলে গেছে। কয়েক বছর আগে করোনারও আঘাত ছিল। বিশ্বমন্দা ও বিশ্ব অর্থনীতি সংকটের মধ্যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ একটি বড় জায়গা।’

তিনি বলেন, ‘তেল-জ্বালানির বিকল্প উৎস সিঙ্গাপুর ও নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। যেসব দেশের সঙ্গে জ্বালানি নিয়ে সরকারের চুক্তি হচ্ছে, সেগুলোর দিকে আরো বেশি নজর দিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধানের যে সক্ষমতা, সেটা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের রিয়েল টাইমের দিকে নজর রাখতে হবে। কূটনৈতিক প্রভাবও খুব গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো যেমন পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে যুুক্ত, তেমনি একদিকে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যেন বজায় থাকে, অটুট থাকে। জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে দর-কষাকষি করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের সংকটে সুবিধাভোগী হয়ে যায় আরব দেশগুলো। কারণ তেলের দাম বাড়তে থাকে, তখন তাদের রেভিনিউ বাড়ে। যারা নির্ভরশীল তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের সংকট দীর্ঘমেয়াদি হলে শ্রমবাজারেও প্রভাব পড়বে। এতে রেমিট্যান্স কমতে থাকবে।’

 

জানাতে হবে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণ

ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বৈঠকে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন উপস্থাপন পর্বে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব প্রকল্প প্রতিবেদনে বারবার বাস্তবায়নাধীন লেখা হচ্ছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। হয় বাস্তবায়ন করতে হবে, অথবা সেগুলো আবার মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসতে হবে। বলতে হবে যে এই এই কারণে এগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে দ্রুত মন্ত্রিসভাকে অবহিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। হয় বাস্তবায়ন করবে, না হয় বিলম্বের কারণ আমাদের জানতে হবে।’

 

মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া অনুমোদন

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ‘মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, মহেশখালী মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথ ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণার আওতায় মাতাবাড়ীতে উন্নয়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে যাতে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা যায়, সেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর সুবিধা থেকে শুরু করে উন্নয়নের মৌলিক কিছু অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে সামগ্রিক কিছু অঞ্চল চিহ্নিত করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করা যায়, সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুরো কাজ এখন আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় করছে।

মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, সমন্বিতভাবে এসব কাজ করতে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীকে নিয়ে ১৭ সদস্যের বোর্ড থাকবে। কর্তৃপক্ষের মূল কাজ হবে নির্ধারিত এলাকায় ভূমি ব্যবহারের মাস্টারপ্ল্যান করে তা বাস্তবায়ন করা। যাদের ভূমি দেওয়া হবে, তারা যেন যথাযথভাবে কাজ করে। মূল লক্ষ্য হবে বিদেশি বিনিয়োগ। এক্সপোর্ট ও ইমপোর্টের নিট টাইম যেন কম হয়। তিনি বলেন, ৫৫ হাজার ৯৬৮ একর জমি নিয়ে প্রকল্প এলাকার যে মাস্টারপ্ল্যান হবে, সেখানে যেন পরিবেশ সংরক্ষণ করা হয়, লবণ চাষ, পান চাষও যেন সুরক্ষিত থাকে, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ যাতে ঘটে, তাতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে এটি করা হচ্ছে। কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো নিষ্পত্তি করে পুনরায় আইনটি মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। কক্সবাজারে কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় হবে। ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিস করা যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব।

 

বিচারপতিদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাবেন নির্বাচন কমিশনাররা

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনাররা আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির সমান বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন৷ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে৷ এ আইনের আওতায় এসব সুবিধা পাবেন নির্বাচন কমিশনাররা।

মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এর আগে এ আইনের ইংরেজি ভার্সন ছিল, আমাদের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি যে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পান আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও সেই সুযোগ-সুবিধা পাবেন৷ এই আইনটিই পুনরায় বাংলায় করা হয়েছে৷ সেটির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ এর আগে গত বছর ২১ আগস্ট বিচারপতিদের সমান সুযোগ-সুবিধা চেয়ে আইনের খসড়া অনুমোদন করে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা যে সুযোগ-সুবিধা পান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সেই সুবিধা এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের সমপর্যায়ের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে অন্য কমিশনারদের জন্য।’

এই বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন-২০২৩-এর বিষয়ে ১৯৮৩ সালের যে অর্ডিন্যান্স আছে, সেটা বাংলায় করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকার ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সামরিক শাসনমালে যেসব আইন ছিল, সেগুলো বাংলায় করা হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই কমিশনের নির্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন-২০২৩ কমিশন সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।