চৌদ্দগ্রামের কৃতি সন্তান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.বি (স্নাতক) এবং এলএল.এম (স্নাতকোত্তর)-এ ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান অধিকারী মোঃ মোজাম্মেল হক। তিনি কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আইনজীবী হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। আইনজীবী হিসেবে মনোনীত হওয়ায় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন তার পরিবার, শিক্ষক, শুভাকাঙ্খী এবং নিজ উপজেলা চৌদ্দগ্রামের সকল শ্রেণীপেশার মানুষ।
অ্যাডভোকেট মোঃ মোজাম্মেল হক ৪নং শ্রীপুর ইউনিয়নের নারচর গ্রামের মৃত মোঃ আলী আজম মুন্সির ৫ম সন্তান। তিনি ছোটবেলা থেকেই নম্র ভদ্র,পড়াশোনায় মনযোগী ও তুখোড় মেধার অধিকারী ছিলেন। তিনি প্রতিটি ক্লাসেই প্রথম স্থান থাকতেন। অজপাড়া গ্রাম থেকে বেড়ে উঠা মেধাবী এই কৃতি অ্যাডভোকেট মোঃ মোজাম্মেল হকের শিক্ষাজীবন আর দশজন সাধারণ শিক্ষার্থীর মত সহজ ছিল না।
ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি বড় ভগ্নিপতির বাড়িতে থাকতেন এবং তার মুদিখানার দোকান দেখাশুনা করতেন। কিন্তু তার স্বপ্নজয়ী মন থাকে স্কুলের আঙ্গিনায় এবং পড়াশোনার প্রতি সবসময় প্রবল আগ্রহ কাজ করত। দোকান দেখাশোনার পাশাপাশি নিজগ্রাম নারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী শেষ করেন। পরবর্তীতে মাধ্যমিকে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ- ৫.০০ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ- ৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেও ছোটবেলা থেকে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন পূরণে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচ ইউনিটে মেধা তালিকায় ৩২তম হয়ে আইন অনুষদের অধীন আল-ফিক্হ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন এবং কৃতিত্বের সাথে এলএল.বি (স্নাতক) এবং এলএল.এম (স্নাতকোত্তর)-এ ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান অধিকার করেন। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়¯’ বৃহত্তর কুমিল্লা (কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ছাত্র কল্যাণ ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বিএনসিসি’র ক্যাডেট ছিলেন। বিভিন্ন ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন এবং ড্র্রিল কম্পিটিশনে প্রথম সহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কতৃক গৃহীত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং সফলতার সাথে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ প্রাপ্তির পর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, “আমি যখন ছোট তখন আমরা আমাদের বাবাকে হারাই। বাবাকে হারানোর পর আমি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পড়ি । আমাদের সংসারে নেমে আসে অর্থনৈতিক বিপর্যয়। পরবর্তীতে আমার শ্রদ্ধেয় দুই বড় ভাই মোঃ রবিউল আলম ও মোঃ মুজিবুর রহমান অল্প বয়স থেকেই আমাদের সংসারের হাল ধরেন এবং আমাদের ৩ ভাই বোনকে লেখাপড়া করান। আমার মা এবং ভাই-বোনদের অবদান কখনোই ভুলার নয়। স্বপ্নজয়ের কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি খুব মেধাবী সেটা কখনোই দাবি করি না। যেকোনো প্রাপ্তির পেছনে আল্লাহর সন্তুষ্টি, চেষ্টা, একাগ্রতা, পরিবার এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের দোয়াকেই আমি প্রাধান্য দিবো। তাই ধৈর্য্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে গেলে সফলতা আসবেই। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, আমি বিচারপতি হতে চাই। সততা ও নিষ্ঠার সাথে বিচারপ্রার্থীদেরকে ন্যায়বিচার পেতে সহায়তা করতে চাই। সামর্থ্যরে মধ্যে অসহায়, দুস্থ, গরীব ও মেহনতী মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। তিনি এই সাফল্যে তার পরিবার, শিক্ষক, শুভাকাঙ্খী এবং মামা সহকারী অধ্যাপক এ.টি.এম মাহবুবুল আলম মজুমদারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বিশেষ করে হক ল’ একাডেমি এবং এর পরিচালক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নূরুল হক ভাইয়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তার এই কৃতিত্বে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে খুশির আমেজ বিরাজ করছে। তিনি ভবিষ্যৎ সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।