Dhaka 3:06 pm, Saturday, 21 December 2024
বেকিং নিউজ :
Logo হোমনাকে জেলা ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ Logo Kometa Casino Live Casino 💰 Get 200% up to INR 10 000 INR 💰 180 Free Spins Logo কুমিল্লার দেবিদ্বার বিহার মন্ডল এলাকায় বিএনপি’র কর্মী সভা অনুষ্ঠিত Logo মোহনপুরে এবার দেড় লাখ টন আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা Logo চৌদ্দগ্রামে ডলবা গ্রাম কমিটি গঠন ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo বিচারবিভাগের রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুণঃপ্রবর্তনের সুযোগ এসেছে – কুমিল্লায় হাবিব উন নবী সোহেল Logo আবাসিক হোটেল থেকে ৫ তরুণ ও ৩ তরুণী গ্রেফতার  Logo কুমিল্লায় কাপড়ের ব‍্যাগে গাঁজা পাচারকালে আটক দুই নারী Logo ময়মনসিংহ সদরে প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট -২০২৪ Logo মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৯ নং ওয়ার্ডে দিনব্যাপী ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

কুমিল্লা সদরের বৌয়ারা ফাজিল মাদ্রাসায় বাড়তি রেজিঃ ফি নেওয়ার অভিযোগ

কুমিল্লা সদরের ঐতিহ্যবাহী বৌয়ারা ফাজিল মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীতে সরকারী নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি’র বাহিরে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ সহ সকল কার্যক্রমে অধ্যক্ষের এক রোখা সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক নেতাদের প্রকাশ্যে তোষামোদী,মাদ্রাসার বার্ষিক আয় ব্যয়ের হিসাব নিয়ে স্হানীয়দের মাঝে সন্দেহ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি এবং অনিয়ম বন্ধে প্রয়োজনে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোলাইমান লস্করের অপসারণের দাবি এলাকাবাসীর।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বৌয়ারা ফাজিল মাদ্রাসাটিতে স্হানীয় এলাকার হরিপুর,নোয়াপাড়া,শাহাপুর,সূর্য্যনগর,বৌয়ারাপাড়,মান্দারী,শোভানগর, মনোহরপুর, লক্ষীুপুর,আনন্দপুর,দূর্লভপুর,রামধনপুর সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা অধ্যয়নরত আছেন। চলতি বছরের শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মাদ্রাসাটিতে ৬ষ্ঠ এবং অষ্টম শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন ফি সরকারি নির্ধারণ হিসেব অনুযায়ী সরকারি ফি,রেড ক্রিসেট ফি এবং মাদ্রাসার ফান্ড সহ সর্বোচ্চ ১৪০-১৬০ টাকা নেওয়ার বিধান থাকলেও অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্করের যোগসাজশে কোন রিসিট ছাড়াই ৬ষ্ঠ শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন ফি ৩০০ টাকা এবং অষ্টম শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন ফি ৪০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন একাধিক ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকগণ।

এছাড়াও আশপাশের অন্যান্য মাদ্রাসার তুলনায় ছাত্রছাত্রীদের মাসিক বেতন,বার্ষিক সেশন ফি বেশি নেওয়া,মাসে মাসে বিভিন্ন পরিক্ষার নামে পরিক্ষার ফি আদায় করা। অধ্যক্ষের পছন্দের লাইব্রেবী থেকে গাইড বই ক্রয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়েও অভিযোগ রয়েছে।

উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই বিষয়ে জানতে বৌয়ারা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এর অফিসিয়াল ০১৭১৬-৯০০৮৪৬ নাম্বারে টানা তিন দিনের সকাল যাবৎ কল দিলেও তার মোবাইল ফোনের সংযোগটি পাওয়া যায়নি,তৃতীয় দিনের দুপুরের দিকে মোবাইল নাম্বারটিতে ফোন দিলে সংযোগটি পাওয়া যায়। সংযোগ পেয়ে সালাম দিয়ে কথার শুরুতেই কৌশল বিনিময় হয়।তারপর মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্করের কাছে ষষ্ঠ শ্রেনী এবং ৮শ্রেনীর রেজিস্ট্রেশন এর বাড়তি ফি এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি খোঁজ নিয়ে জানাবো এবং তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কত টাকা নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আমতা আমতা খাম খেয়ালি ভাবে বলেন ১/২ শত টাকা হবে বলে মনে হয়।

প্রশ্ন হলো একজন অধ্যক্ষ কিভাবে বলতে পারেন “মনে হয়” তার মনে হয় জবাবের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য কিনা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দপ্তর সহ সকলের দৃষ্টি আর্কষণ করছি। অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর মাদ্রাসার অথরিটি হিসেবে তিনি “মনে হয়” শব্দটি ব্যবহার করতে পারেন কিনা?। অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর কে পুনরায় রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি মোবাইল ফোনে বলেন,আমি আপনার এসব বিষয়ে কিছুক্ষন পরে কথা বলবো আমি এখন ক্লাসে আছি বলে তিনি কলটি কেটে দেন। তার কথা অনুযায়ী তাকে ওই দিন বিকালের দিকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কলটি রিসিভ না করে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন।

তার কিছু সময় পর মাদ্রাসাটির পদবীতে সিনিয়র শিক্ষক নেছার উদ্দিন লস্কর এর ০১৬৪৭-৩৮০৬৬৩ নাম্বারে ফোন করে সার্বিক বিষয়ে তাকে জানানোর পর আলোচনার এক পর্যায়ে শিক্ষক নেছার উদ্দিন জানান, আপনি দশ মিনিট আগে ফোন দিলেই তো হুজুরকে পেতেন, তিনি তো এতোক্ষন অফিসেই ছিলেন তার সামনেই আমি ছিলাম। নেছার উদ্দিন হুজুরকে যখন প্রশ্ন করি কেন হুজুর তো বললো তিনি ক্লাসে আছেন। তখন নেছার উদ্দিন হুজুর চুপ হয়ে যায় এবং তিনি শিকার করেন রেজিস্ট্রেশনের টাকা ৩০০-৪০০ টাকা নেওয়া হয়েছে, তবে এটার রিসিট না দিলেও এটা সমাধান করবেন বলে জানান। নেছার উদ্দিন হুজুর বলেন, শাহীন ভাই আপনি আমাদের এলাকার মানুষ, যা হবার হয়ে গেছে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এটা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ করে বলেন,হুজুর কেন বিষয়টি নিয়ে আপনার সাথে কথা বলেননি, আমি হুজুরের সাথে কথা বলবো এবং হুজুরকে বলবো আপনাকে কল দিয়ে কথা বলতে।

তার কিছুক্ষন পর কুমিল্লার নিরক্ষণ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পরিচয়দানকারী ইয়াসিন নামের একজন ফোন দিয়ে জানতে চায় আমি কে আমি বৌয়ারা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কে কেন ফোন দিয়েছি। তখন আমি আমার পরিচয় দিয়ে বলার এক পর্যায়ে ইয়াসিন জানান,তাকে নাকি অধ্যক্ষ সোলাইমান হুজুর বিষয়টি জানিয়েছেন তার জন্য তিনি আমাকে কল দিয়েছেন। ইয়াসিনকে এর জবাবে সর্বশেষ বলা হয় এই বিষয়ে ধারাবাহিক নিউজ হবে।

এবিষয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলার পর দিন বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্করের ছোট ভাই জহির লস্কর ফেসবুক থেকে আপত্তিকর হুমকি স্বরূপ মন্তব্য সহ কমেন্ট করেন।তিনি আমার ম্যাসেঞ্জারে নক করে নিজেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের ক্যাডার হিসেবে উপস্হাপন করতে শুরু করেন। এছাড়া জহির লস্কর নিজেকে উচ্চ ডির্গ্রীধারী দাবি করে আমাকে আপত্তিকর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ আমাকে মিথ্যা মামলা,আমার বিরুদ্ধে লিখালিখি সহ মারধরের হুমকি দমকি দেন যা ইতি মধ্যে এলাকাবাসীকে জানিয়ে তার ম্যান্সেজারের কথোপকথন স্কীন কপি ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্করের পক্ষ নিয়ে স্হানীয় এলাকার হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা জৈনক এক ব্যক্তি আমাকে বৌয়ারা মাদ্রাসার বিষয়ে ফেসবুক লাইভে না আসার অনুরোধ করেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালের দিকে তিনি পুনরায় আবার আমার ০১৭৮৯-৬১০৮০৩ নাম্বারে কল করে মাদ্রাসার বিষয়ে যেন আর বাড়াবাড়ি এবং কোন কিছু আর না লিখি সেই জন্য আমার সন্মানে টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে সমাধান করতে আমাকে তিনি এলাকার ভাতিজা দাবি করে আমার বিকাশ নাম্বার চান। এছাড়াও আমার পারিবারিক বিষয় নিয়ে আকার ইঙ্গিত করে আমাকে ব্ল্যাক মেইল করার অহেতুক বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি।

স্হানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, মাদ্রাসাটি অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর এর নিজ এলাকায় হওয়ায় বিগত দিন গুলোতে তিনি তার বংশীয় ও আত্নীয় স্বজনের পেশীশক্তির প্রভাব সহ স্হানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে তার সখ্যতা থাকার কারণে সরকারের শিক্ষানীতির কোন আইনকানুন এর তোয়াক্কা না করে সে এলাকার কারো কথার পাত্তা না দিয়ে তার নিজ ইচ্ছা ও খেয়াল খুশি মতো গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক স্হানীয় এলাকার বাসিন্দারা জানান, এই অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর হলেন হলুদ মার্কা লোক।তিনি আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় ছিলো তিনি তখন আওয়ামীলীগ নেতাদের মাদ্রাসার কমিটিতে এনে মাদ্রাসাটির কার্যালয়কে আওয়ামীলীগের অঘোষিত কার্যালয়ে পরিণত করেছেন। মাদ্রাসায় কিছু একটা হলেই তিনি আওয়ামীলীগ নেতাদের ছাড়া কিছুই করতেন না। এখন আবার গত কয়েকদিন আগে মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষকদের পিছনের সারিতে বসিয়ে এলাকার কিছু বিতর্কিত লোককে সামনের সারিতে তার পাশের চেয়ারে বসিয়ে তিনি ঈদুলমিলাদুন্নবী দিবস উদযাপন করেন। তিনি এতোদিন আওয়ামীলীগের নেতাদের তেল মারছেন এখন আবার বিএনপি মনা লোকদের মাদ্রাসার বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভিড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকাবাসীর দাবি তিনি যে একজন শিক্ষক তা তিনি ভুলেই গেছেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বৌয়ারা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর এই চাকুরীর সুবাধে কুমিল্লা শহরের হাউজিং ষ্টেট এ বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন।আরো জানা যায়,তিনি বৌয়ারা মাদ্রাসায় যোগদানের পর পুনরায় শহরের হযরত পাড়ায় আরো একটি জায়গা ক্রয় করেন। সে জায়গায় নিয়ে অভিযোগ রয়েছে তার প্রতিবেশীর জায়গা জোরপূর্বক দখল করে তিনি দেয়াল নির্মাণ করেছেন।

প্রশ্ন হলো তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে মাসিক কত টাকা বেতন পান,শহরে থেকে ছেলেকে মেডিকেলে পড়াশোনা করান।মেয়েকে পড়াশোনা করান।

স্হানীয়দের ভাষ্য মতে জানা যায়, অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর বৌয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যোগদানের পর থেকে গত কয়েক বছর মাদ্রাসার নামে দেশ-বিদেশ থেকে বার্ষিক বহু অনুদানসহ বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে নগদ অর্থ কালেকশন হলেও তিনি বার্ষিক আয় ব্যয়ের কোন হিসাব নিকাশ জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি। মাদ্রাসাটি তার নিজ এলাকায় হওয়ায় তিনি একরোখা নীতি নিয়ে চলার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। মাদ্রাসাটিতে প্রতি বছর স্হানীয় লোকজন লাখ লাখ টাকা অনুদান দেন এবং সরকারি ভাবেও বহু সুযোগ সুবিধা আনা হয়। এলাকাবাসীর দাবি অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্করের কার্যক্রমে সকলে অসন্তুষ্ট। স্হানীয় লোকজন মাদ্রাসাটির বার্ষিক আয় ব্যয়ে সঠিক স্বচ্ছতা চায়। তাদের দাবি মাদ্রাসার আয় ব্যয়ের হিসাব জন-সম্মুখে প্রকাশ করা হউক, এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকুক। মাদ্রাসার হিসাব নিকাশে গড়মিল থাকলে এবং অস্বচ্ছতার দায়ে অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর কে মাদ্রাসাটি থেকে প্রয়োজনে অপসারণ করা হউক এমনটাই দাবি স্হানীয় এলাকাবাসীর।
সর্বশেষ জানা যায়, মাদ্রাসারটির বহুতল নতুন ভবন নির্মাণেও বহু অনিয়ম হয়েছে তার অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।

এই বিষয়ে অবগত সহ জানতে চেয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মার সাথে তার সরকারি মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই মাদ্রাসাটির বর্তমান সভাপতি তো আমি নিজেই। কোন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হলে তো আমার সাথে যোগাযোগ করে করতে হবে। অধ্যক্ষ সাহেব তো আমাকে কিছু জানাননি। তিনি আরো বলেন, অধ্যক্ষ সাহেব যে ঈদে মিলাদুন্নবী দিবস পালন করেছে তা তো আমার জানা নেই। তিনি এই প্রোগ্রামের আয়োজন/ খরচ করেছে, আমাকে না জানিয়ে আমার অনুমতি কিংবা আমাকে তো তারা জানায়নি। এই বিষয় গুলো আমি আপনার কাছে জানতে পারলাম। এই বিষয়ে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশ্বস্হ করেন। অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্করের বিষয়ে আমাদের সরেজমিন অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। তা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

হোমনাকে জেলা ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

কুমিল্লা সদরের বৌয়ারা ফাজিল মাদ্রাসায় বাড়তি রেজিঃ ফি নেওয়ার অভিযোগ

আপলোড সময় : 07:35:38 pm, Friday, 20 September 2024

কুমিল্লা সদরের ঐতিহ্যবাহী বৌয়ারা ফাজিল মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীতে সরকারী নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি’র বাহিরে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ সহ সকল কার্যক্রমে অধ্যক্ষের এক রোখা সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক নেতাদের প্রকাশ্যে তোষামোদী,মাদ্রাসার বার্ষিক আয় ব্যয়ের হিসাব নিয়ে স্হানীয়দের মাঝে সন্দেহ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি এবং অনিয়ম বন্ধে প্রয়োজনে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোলাইমান লস্করের অপসারণের দাবি এলাকাবাসীর।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বৌয়ারা ফাজিল মাদ্রাসাটিতে স্হানীয় এলাকার হরিপুর,নোয়াপাড়া,শাহাপুর,সূর্য্যনগর,বৌয়ারাপাড়,মান্দারী,শোভানগর, মনোহরপুর, লক্ষীুপুর,আনন্দপুর,দূর্লভপুর,রামধনপুর সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা অধ্যয়নরত আছেন। চলতি বছরের শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মাদ্রাসাটিতে ৬ষ্ঠ এবং অষ্টম শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন ফি সরকারি নির্ধারণ হিসেব অনুযায়ী সরকারি ফি,রেড ক্রিসেট ফি এবং মাদ্রাসার ফান্ড সহ সর্বোচ্চ ১৪০-১৬০ টাকা নেওয়ার বিধান থাকলেও অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্করের যোগসাজশে কোন রিসিট ছাড়াই ৬ষ্ঠ শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন ফি ৩০০ টাকা এবং অষ্টম শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন ফি ৪০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন একাধিক ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকগণ।

এছাড়াও আশপাশের অন্যান্য মাদ্রাসার তুলনায় ছাত্রছাত্রীদের মাসিক বেতন,বার্ষিক সেশন ফি বেশি নেওয়া,মাসে মাসে বিভিন্ন পরিক্ষার নামে পরিক্ষার ফি আদায় করা। অধ্যক্ষের পছন্দের লাইব্রেবী থেকে গাইড বই ক্রয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়েও অভিযোগ রয়েছে।

উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই বিষয়ে জানতে বৌয়ারা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এর অফিসিয়াল ০১৭১৬-৯০০৮৪৬ নাম্বারে টানা তিন দিনের সকাল যাবৎ কল দিলেও তার মোবাইল ফোনের সংযোগটি পাওয়া যায়নি,তৃতীয় দিনের দুপুরের দিকে মোবাইল নাম্বারটিতে ফোন দিলে সংযোগটি পাওয়া যায়। সংযোগ পেয়ে সালাম দিয়ে কথার শুরুতেই কৌশল বিনিময় হয়।তারপর মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্করের কাছে ষষ্ঠ শ্রেনী এবং ৮শ্রেনীর রেজিস্ট্রেশন এর বাড়তি ফি এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি খোঁজ নিয়ে জানাবো এবং তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কত টাকা নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আমতা আমতা খাম খেয়ালি ভাবে বলেন ১/২ শত টাকা হবে বলে মনে হয়।

প্রশ্ন হলো একজন অধ্যক্ষ কিভাবে বলতে পারেন “মনে হয়” তার মনে হয় জবাবের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য কিনা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দপ্তর সহ সকলের দৃষ্টি আর্কষণ করছি। অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর মাদ্রাসার অথরিটি হিসেবে তিনি “মনে হয়” শব্দটি ব্যবহার করতে পারেন কিনা?। অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর কে পুনরায় রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি মোবাইল ফোনে বলেন,আমি আপনার এসব বিষয়ে কিছুক্ষন পরে কথা বলবো আমি এখন ক্লাসে আছি বলে তিনি কলটি কেটে দেন। তার কথা অনুযায়ী তাকে ওই দিন বিকালের দিকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কলটি রিসিভ না করে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন।

তার কিছু সময় পর মাদ্রাসাটির পদবীতে সিনিয়র শিক্ষক নেছার উদ্দিন লস্কর এর ০১৬৪৭-৩৮০৬৬৩ নাম্বারে ফোন করে সার্বিক বিষয়ে তাকে জানানোর পর আলোচনার এক পর্যায়ে শিক্ষক নেছার উদ্দিন জানান, আপনি দশ মিনিট আগে ফোন দিলেই তো হুজুরকে পেতেন, তিনি তো এতোক্ষন অফিসেই ছিলেন তার সামনেই আমি ছিলাম। নেছার উদ্দিন হুজুরকে যখন প্রশ্ন করি কেন হুজুর তো বললো তিনি ক্লাসে আছেন। তখন নেছার উদ্দিন হুজুর চুপ হয়ে যায় এবং তিনি শিকার করেন রেজিস্ট্রেশনের টাকা ৩০০-৪০০ টাকা নেওয়া হয়েছে, তবে এটার রিসিট না দিলেও এটা সমাধান করবেন বলে জানান। নেছার উদ্দিন হুজুর বলেন, শাহীন ভাই আপনি আমাদের এলাকার মানুষ, যা হবার হয়ে গেছে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এটা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ করে বলেন,হুজুর কেন বিষয়টি নিয়ে আপনার সাথে কথা বলেননি, আমি হুজুরের সাথে কথা বলবো এবং হুজুরকে বলবো আপনাকে কল দিয়ে কথা বলতে।

তার কিছুক্ষন পর কুমিল্লার নিরক্ষণ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পরিচয়দানকারী ইয়াসিন নামের একজন ফোন দিয়ে জানতে চায় আমি কে আমি বৌয়ারা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কে কেন ফোন দিয়েছি। তখন আমি আমার পরিচয় দিয়ে বলার এক পর্যায়ে ইয়াসিন জানান,তাকে নাকি অধ্যক্ষ সোলাইমান হুজুর বিষয়টি জানিয়েছেন তার জন্য তিনি আমাকে কল দিয়েছেন। ইয়াসিনকে এর জবাবে সর্বশেষ বলা হয় এই বিষয়ে ধারাবাহিক নিউজ হবে।

এবিষয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলার পর দিন বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্করের ছোট ভাই জহির লস্কর ফেসবুক থেকে আপত্তিকর হুমকি স্বরূপ মন্তব্য সহ কমেন্ট করেন।তিনি আমার ম্যাসেঞ্জারে নক করে নিজেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের ক্যাডার হিসেবে উপস্হাপন করতে শুরু করেন। এছাড়া জহির লস্কর নিজেকে উচ্চ ডির্গ্রীধারী দাবি করে আমাকে আপত্তিকর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ আমাকে মিথ্যা মামলা,আমার বিরুদ্ধে লিখালিখি সহ মারধরের হুমকি দমকি দেন যা ইতি মধ্যে এলাকাবাসীকে জানিয়ে তার ম্যান্সেজারের কথোপকথন স্কীন কপি ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্করের পক্ষ নিয়ে স্হানীয় এলাকার হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা জৈনক এক ব্যক্তি আমাকে বৌয়ারা মাদ্রাসার বিষয়ে ফেসবুক লাইভে না আসার অনুরোধ করেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালের দিকে তিনি পুনরায় আবার আমার ০১৭৮৯-৬১০৮০৩ নাম্বারে কল করে মাদ্রাসার বিষয়ে যেন আর বাড়াবাড়ি এবং কোন কিছু আর না লিখি সেই জন্য আমার সন্মানে টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে সমাধান করতে আমাকে তিনি এলাকার ভাতিজা দাবি করে আমার বিকাশ নাম্বার চান। এছাড়াও আমার পারিবারিক বিষয় নিয়ে আকার ইঙ্গিত করে আমাকে ব্ল্যাক মেইল করার অহেতুক বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি।

স্হানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, মাদ্রাসাটি অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর এর নিজ এলাকায় হওয়ায় বিগত দিন গুলোতে তিনি তার বংশীয় ও আত্নীয় স্বজনের পেশীশক্তির প্রভাব সহ স্হানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে তার সখ্যতা থাকার কারণে সরকারের শিক্ষানীতির কোন আইনকানুন এর তোয়াক্কা না করে সে এলাকার কারো কথার পাত্তা না দিয়ে তার নিজ ইচ্ছা ও খেয়াল খুশি মতো গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক স্হানীয় এলাকার বাসিন্দারা জানান, এই অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর হলেন হলুদ মার্কা লোক।তিনি আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় ছিলো তিনি তখন আওয়ামীলীগ নেতাদের মাদ্রাসার কমিটিতে এনে মাদ্রাসাটির কার্যালয়কে আওয়ামীলীগের অঘোষিত কার্যালয়ে পরিণত করেছেন। মাদ্রাসায় কিছু একটা হলেই তিনি আওয়ামীলীগ নেতাদের ছাড়া কিছুই করতেন না। এখন আবার গত কয়েকদিন আগে মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষকদের পিছনের সারিতে বসিয়ে এলাকার কিছু বিতর্কিত লোককে সামনের সারিতে তার পাশের চেয়ারে বসিয়ে তিনি ঈদুলমিলাদুন্নবী দিবস উদযাপন করেন। তিনি এতোদিন আওয়ামীলীগের নেতাদের তেল মারছেন এখন আবার বিএনপি মনা লোকদের মাদ্রাসার বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভিড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকাবাসীর দাবি তিনি যে একজন শিক্ষক তা তিনি ভুলেই গেছেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বৌয়ারা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর এই চাকুরীর সুবাধে কুমিল্লা শহরের হাউজিং ষ্টেট এ বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন।আরো জানা যায়,তিনি বৌয়ারা মাদ্রাসায় যোগদানের পর পুনরায় শহরের হযরত পাড়ায় আরো একটি জায়গা ক্রয় করেন। সে জায়গায় নিয়ে অভিযোগ রয়েছে তার প্রতিবেশীর জায়গা জোরপূর্বক দখল করে তিনি দেয়াল নির্মাণ করেছেন।

প্রশ্ন হলো তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে মাসিক কত টাকা বেতন পান,শহরে থেকে ছেলেকে মেডিকেলে পড়াশোনা করান।মেয়েকে পড়াশোনা করান।

স্হানীয়দের ভাষ্য মতে জানা যায়, অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর বৌয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যোগদানের পর থেকে গত কয়েক বছর মাদ্রাসার নামে দেশ-বিদেশ থেকে বার্ষিক বহু অনুদানসহ বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে নগদ অর্থ কালেকশন হলেও তিনি বার্ষিক আয় ব্যয়ের কোন হিসাব নিকাশ জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি। মাদ্রাসাটি তার নিজ এলাকায় হওয়ায় তিনি একরোখা নীতি নিয়ে চলার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। মাদ্রাসাটিতে প্রতি বছর স্হানীয় লোকজন লাখ লাখ টাকা অনুদান দেন এবং সরকারি ভাবেও বহু সুযোগ সুবিধা আনা হয়। এলাকাবাসীর দাবি অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্করের কার্যক্রমে সকলে অসন্তুষ্ট। স্হানীয় লোকজন মাদ্রাসাটির বার্ষিক আয় ব্যয়ে সঠিক স্বচ্ছতা চায়। তাদের দাবি মাদ্রাসার আয় ব্যয়ের হিসাব জন-সম্মুখে প্রকাশ করা হউক, এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকুক। মাদ্রাসার হিসাব নিকাশে গড়মিল থাকলে এবং অস্বচ্ছতার দায়ে অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্কর কে মাদ্রাসাটি থেকে প্রয়োজনে অপসারণ করা হউক এমনটাই দাবি স্হানীয় এলাকাবাসীর।
সর্বশেষ জানা যায়, মাদ্রাসারটির বহুতল নতুন ভবন নির্মাণেও বহু অনিয়ম হয়েছে তার অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।

এই বিষয়ে অবগত সহ জানতে চেয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মার সাথে তার সরকারি মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই মাদ্রাসাটির বর্তমান সভাপতি তো আমি নিজেই। কোন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হলে তো আমার সাথে যোগাযোগ করে করতে হবে। অধ্যক্ষ সাহেব তো আমাকে কিছু জানাননি। তিনি আরো বলেন, অধ্যক্ষ সাহেব যে ঈদে মিলাদুন্নবী দিবস পালন করেছে তা তো আমার জানা নেই। তিনি এই প্রোগ্রামের আয়োজন/ খরচ করেছে, আমাকে না জানিয়ে আমার অনুমতি কিংবা আমাকে তো তারা জানায়নি। এই বিষয় গুলো আমি আপনার কাছে জানতে পারলাম। এই বিষয়ে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশ্বস্হ করেন। অধ্যক্ষ সোলাইমান লস্করের বিষয়ে আমাদের সরেজমিন অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। তা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে।