বিসিএস লিখিত পরীক্ষার খাতা পরীক্ষকরা আর বাসায় নিতে পারবেন না। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) বসেই খাতা দেখতে হবে। ৪৫তম বিসিএস থেকেই এ নিয়ম কার্যকর হবে। তবে এবার হবে পাইলটিং। কার্যকর ফল পাওয়া গেলে পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকেই এ নিয়ম পুরোপুরি কার্যকর করতে চাচ্ছে পিএসসি।
পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাতা আর বাসায় দিতে চাই না। হয়রানির শেষ নেই। পাইলটিংয়ে পজিটিভ রেজাল্ট (ইতিবাচক ফল) এলে পিএসসিতে বসেই খাতা দেখতে হবে।’
বিসিএসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ লিখিত পরীক্ষা। বিষয়ভিত্তিক ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। এর মধ্যে ৬০০ নম্বর আবশ্যিক। সবচেয়ে বেশি সময় লাগে এই লিখিত পরীক্ষার ফল তৈরিতে। এক পরীক্ষক খাতা দেখার পর তা আবার দেখেন দ্বিতীয় পরীক্ষক। দুই পরীক্ষকের মূল্যায়নে ২০ নম্বরের ব্যবধান হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয় সেই খাতা। তিন পরীক্ষকের এই বিপুল কর্মযজ্ঞে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। যে কারণে একটি বিসিএস শেষ হতেই কয়েক বছর লেগে যায়। যার ফল হিসেবে বয়স চলে যাওয়ায় চাকরিপ্রার্থী যেমন ভোগান্তিতে পড়েন, তেমনি পিএসসিও হয় প্রশ্নবিদ্ধ। এই প্রশ্নবিদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার রোডম্যাপ তৈরি করেছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।
পিএসসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, লিখিত পরীক্ষার খাতা যাতে কম সময়ে দেখা শেষ করে ফলাফল দেওয়া যায়, এজন্য আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে খাতা দেখার ফি ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ১০০ নম্বরের তিন ঘণ্টার পরীক্ষার উত্তরপত্র পরীক্ষণ ফি ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আগে এ খাতার পরীক্ষণ ফি ছিল ২০০ টাকা। এখন তা ৩০০ টাকা করা হয়েছে। খাতা দেখতে কোন পরীক্ষকরা বেশি সময় নিচ্ছেন তা পর্যবেক্ষণ করেছে পিএসসির একটি কমিটি। খাতা দেখার জন্য পরীক্ষকদের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে খাতা দেখা শেষ করতে দফায় দফায় তাগাদাপত্র যাচ্ছে পরীক্ষকের ঠিকানায়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাতা দেখতে না পারলে ওই পরীক্ষককে আর কোনো খাতা দেখতে না দেওয়ারও সিদ্ধান্ত রয়েছে। পরীক্ষকদের বিষয়গুলো বারবার বুঝিয়ে বলা হচ্ছে। তাদের জন্য কর্মশালাও করা হয়েছে। তারপরও কিছু পরীক্ষক গা করছেন না। সমাজে সুপরিচিত হওয়ায় এসব পরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ কম। তা ছাড়া তারা পিএসসিতে চাকরি করেন না। খ্যাতিমান মানুষ হওয়ায় তাদের কড়াভাবে কিছু বলতেও পারছে না পিএসসি। যদিও একবার দেরি করলে পরের বিসিএসে তাদের খাতা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে যারা সময়মতো খাতা দেখছেন ও জমা দিচ্ছেন, তাদের আরও বেশি খাতা দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে যাদের খাতা কম যায় তাদেরও খাতা বেশি দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষকদের পিএসসিতে বসিয়ে খাতা দেখাতে পারলে বিসিএসের ফল প্রকাশে দীর্ঘ সময় কমে আসবে। আরও কম সময়ে চূড়ান্ত ফল দেওয়া যাবে। তবে এজন্য পরীক্ষকদের আরও বেশি আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান হতে হবে।
৪১তম বিসিএসের খাতা দেখা নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষক ৬ মাসে ৩০টি খাতা দেখেছেন। আরেক পরীক্ষক খাতা জমা না দিয়েই বিদেশে চলে গেছেন।
পিএসসি ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে চাহিদা অনুযায়ী সরকারের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করে। ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) এবং অন্যান্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য নন-ক্যাডার পরীক্ষার আয়োজন করে। এসব পরীক্ষায় বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আমলাদের সংশ্লিষ্টতা থাকে। বিশেষ করে বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন পিএসসির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত শিক্ষকরা। কিছু সরকারি কর্মকর্তাও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আর পিএসসির সদস্যদের নেতৃত্বে মৌখিক পরীক্ষায় শিক্ষক, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের রাখা হয়।