Dhaka 10:35 pm, Saturday, 21 December 2024

পোশাক রপ্তানিতে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ডেনিম

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে ডেনিস বা জিনস খাত। বস্ত্র খাতের অন্যান্য উপখাতের তুলনায় ডেনিমে মূল্য সংযোজন বা ভ্যালু এডিশন বেশি। রপ্তানিও দিনদিন বাড়ছে। চীন, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, তুরস্ক এবং মেক্সিকোর সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে বাংলাদেশের ডেনিম খাত। ২০২৬ সালে বিশ্ব ডেনিম বাজারের আকার দাঁড়াবে ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে। ক্রমবর্ধমান বাজারটির শেয়ার ধরতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা  মরিয়া। এ খাতে ব্যবহার করা কাপড়ের সিংহভাগ দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পাওয়া ডেনিম উৎপাদনে উদ্যোক্তাদের আগ্রহও বাড়ছে

 

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মাত্র ৪০টি কারখানা ডেনিম কাপড় উত্পাদন করে। এছাড়া জিনস সেলাইয়ের জন্য আরও অন্তত ৫০০টি কারখানা গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি ডেনিমের হিস্যা ২২ শতাংশের ওপরে। আর ইউরোপের বাজারে এর হিস্যা ২৭ শতাংশ। শুধু এক বছরেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম রপ্তানি ৪২ শতাংশ এবং ইউরোপের বাজারে ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশের ডেনিম শিল্প বর্তমান অবস্থায় আসতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। শুরুটা হয়েছিল চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড)। প্রয়াত নাসির উদ্দিন ১৯৮৪ সালে এনজেডএন ফ্যাশন ওয়্যার নামে একটি কারখানা চালু করেন। ছোট এ কারখানাতে তিনি জিনসের প্যান্ট উৎপাদন শুরু করেন। কিন্তু তখন বাংলাদেশে কোনো ওয়াশিং প্ল্যান্ট (ধৌত কারখানা) না থাকায় বেশ বেগ পেতে হয়েছিল তাদের। ওয়াশিংয়ের কাজটি তখন তারা ইতালি থেকে করিয়ে আনতেন। এটি যেমন সময়সাপেক্ষ ছিল তেমনি ছিল ব্যয়সাপেক্ষও। পরে ইতালির এক ক্রেতার কারিগরি সহায়তায় তারা বাংলাদেশে একটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপন করেন। এরপর পরিস্থিতি দ্রুত পালটে যেতে থাকে। নাসির উদ্দিন পরে সিইপিজেডে প্যাসিফিক জিন্স নামে একটি কারখানা চালু করেন। এটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বড় ডেনিম প্ল্যান্ট।

বাংলাদেশের ডেনিম জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে একজন উদ্যোক্তা জানান, বাংলাদেশ এখন ডেনিমের বাজারে অন্যতম রোল মডেল। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। রপ্তানিযোগ্য ডেনিম কাপড়ের সিংহভাগ বাংলাদেশে উৎপাদিত হওয়ায় কম সময়ে পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে। আমদানি করা কাপড়ের ক্ষেত্রে লিড টাইম বেশি হওয়ায় একসময় ডেনিম রপ্তানিতে লিড টাইম ছিল অনেক বেশি। কিন্তু দেশীয় কাপড়ের কারণে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সস্তায় পণ্য পাঠাতে পারেন। অন্য এক উদ্যোক্তা জানান, কাপড় উৎপাদন, সেলাই এবং ওয়াশিংয়ের পুরো কাজটি এখন দেশেই হচ্ছে। এতে আমদানিকারকদের ভরসা বেড়েছে। গুণমানও ঠিক রাখা যাচ্ছে। এতে আমদানিকারকদের আস্থা বেড়েছে। ঐ উদ্যোক্তা বলেন, বাংলাদেশ ২০৩০ সালে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। ডেনিম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

 

এদিকে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতি বছরই বাংলাদেশের ডেনিম রপ্তানি বেড়ে চলেছে। ২০২০ সালে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের ডেনিম রপ্তানি ছিল ১ হাজার ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে এটি ১ হাজার ১৮২ মিলিয়ন, ২০২২ সালে ১ হাজার ৫৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০২০ সালে বাংলাদেশের ডেনিমের বাজার ছিল ৫৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে তা ৭৯৮ মিলিয়ন এবং ২০২২ সালে তা ৯৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। ২০২৩ সালেও ডেনিম রপ্তানির এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।

ডেনিম খাতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ডেনিম খাতের উদ্যোক্তা ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ খাতটি এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এ খাতে প্রধান সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি। বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের অভাবে উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরকারকে এ খাতে আরও নজর দিতে হবে।

বাংলাদেশের ডেনিম খাতের সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ হচ্ছে ওয়াশিং। এতে প্রচুর পানির ব্যবহার করতে হয়। বিভিন্ন প্রকার রং-রসায়নও ব্যবহার করতে হয় এতে। এটি পরিবেশের ক্ষতি করে কি না—সে প্রশ্ন ছিল এ খাতের উদ্যোক্তা বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলের কাছে। তিনি ইত্তেফাককে জানান, আইনে আছে এ ধরনের সব কারখানাতে এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপনবাধ্যতামূলক। এখন অনেকে তাদের কারখানায় বায়োলজিক্যাল ইটিপি স্থাপন করেছেন। এসব ইটিপির পানি পরে বাগান, মেঝে পরিষ্কার, গাড়ি ধোয়াসহ  বাথরুমে নানা কাজে ব্যবহার করা হয়।

দক্ষ জনশক্তিও ডেনিম খাত বিকাশে বাধা হিসেবে কাজ করছে। তবে শুরুর দিকে এ খাতে প্রচুর বিদেশি কাজ করলেও স্থানীয়রা এ খাতে দক্ষ হওয়ায় বিদেশীদের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

পোশাক রপ্তানিতে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ডেনিম

আপলোড সময় : 08:10:07 pm, Thursday, 29 February 2024

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে ডেনিস বা জিনস খাত। বস্ত্র খাতের অন্যান্য উপখাতের তুলনায় ডেনিমে মূল্য সংযোজন বা ভ্যালু এডিশন বেশি। রপ্তানিও দিনদিন বাড়ছে। চীন, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, তুরস্ক এবং মেক্সিকোর সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে বাংলাদেশের ডেনিম খাত। ২০২৬ সালে বিশ্ব ডেনিম বাজারের আকার দাঁড়াবে ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে। ক্রমবর্ধমান বাজারটির শেয়ার ধরতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা  মরিয়া। এ খাতে ব্যবহার করা কাপড়ের সিংহভাগ দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পাওয়া ডেনিম উৎপাদনে উদ্যোক্তাদের আগ্রহও বাড়ছে

 

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মাত্র ৪০টি কারখানা ডেনিম কাপড় উত্পাদন করে। এছাড়া জিনস সেলাইয়ের জন্য আরও অন্তত ৫০০টি কারখানা গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি ডেনিমের হিস্যা ২২ শতাংশের ওপরে। আর ইউরোপের বাজারে এর হিস্যা ২৭ শতাংশ। শুধু এক বছরেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম রপ্তানি ৪২ শতাংশ এবং ইউরোপের বাজারে ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশের ডেনিম শিল্প বর্তমান অবস্থায় আসতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। শুরুটা হয়েছিল চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড)। প্রয়াত নাসির উদ্দিন ১৯৮৪ সালে এনজেডএন ফ্যাশন ওয়্যার নামে একটি কারখানা চালু করেন। ছোট এ কারখানাতে তিনি জিনসের প্যান্ট উৎপাদন শুরু করেন। কিন্তু তখন বাংলাদেশে কোনো ওয়াশিং প্ল্যান্ট (ধৌত কারখানা) না থাকায় বেশ বেগ পেতে হয়েছিল তাদের। ওয়াশিংয়ের কাজটি তখন তারা ইতালি থেকে করিয়ে আনতেন। এটি যেমন সময়সাপেক্ষ ছিল তেমনি ছিল ব্যয়সাপেক্ষও। পরে ইতালির এক ক্রেতার কারিগরি সহায়তায় তারা বাংলাদেশে একটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপন করেন। এরপর পরিস্থিতি দ্রুত পালটে যেতে থাকে। নাসির উদ্দিন পরে সিইপিজেডে প্যাসিফিক জিন্স নামে একটি কারখানা চালু করেন। এটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বড় ডেনিম প্ল্যান্ট।

বাংলাদেশের ডেনিম জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে একজন উদ্যোক্তা জানান, বাংলাদেশ এখন ডেনিমের বাজারে অন্যতম রোল মডেল। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। রপ্তানিযোগ্য ডেনিম কাপড়ের সিংহভাগ বাংলাদেশে উৎপাদিত হওয়ায় কম সময়ে পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে। আমদানি করা কাপড়ের ক্ষেত্রে লিড টাইম বেশি হওয়ায় একসময় ডেনিম রপ্তানিতে লিড টাইম ছিল অনেক বেশি। কিন্তু দেশীয় কাপড়ের কারণে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সস্তায় পণ্য পাঠাতে পারেন। অন্য এক উদ্যোক্তা জানান, কাপড় উৎপাদন, সেলাই এবং ওয়াশিংয়ের পুরো কাজটি এখন দেশেই হচ্ছে। এতে আমদানিকারকদের ভরসা বেড়েছে। গুণমানও ঠিক রাখা যাচ্ছে। এতে আমদানিকারকদের আস্থা বেড়েছে। ঐ উদ্যোক্তা বলেন, বাংলাদেশ ২০৩০ সালে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। ডেনিম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

 

এদিকে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতি বছরই বাংলাদেশের ডেনিম রপ্তানি বেড়ে চলেছে। ২০২০ সালে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের ডেনিম রপ্তানি ছিল ১ হাজার ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে এটি ১ হাজার ১৮২ মিলিয়ন, ২০২২ সালে ১ হাজার ৫৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০২০ সালে বাংলাদেশের ডেনিমের বাজার ছিল ৫৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে তা ৭৯৮ মিলিয়ন এবং ২০২২ সালে তা ৯৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। ২০২৩ সালেও ডেনিম রপ্তানির এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।

ডেনিম খাতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ডেনিম খাতের উদ্যোক্তা ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ খাতটি এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এ খাতে প্রধান সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি। বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের অভাবে উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরকারকে এ খাতে আরও নজর দিতে হবে।

বাংলাদেশের ডেনিম খাতের সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ হচ্ছে ওয়াশিং। এতে প্রচুর পানির ব্যবহার করতে হয়। বিভিন্ন প্রকার রং-রসায়নও ব্যবহার করতে হয় এতে। এটি পরিবেশের ক্ষতি করে কি না—সে প্রশ্ন ছিল এ খাতের উদ্যোক্তা বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলের কাছে। তিনি ইত্তেফাককে জানান, আইনে আছে এ ধরনের সব কারখানাতে এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপনবাধ্যতামূলক। এখন অনেকে তাদের কারখানায় বায়োলজিক্যাল ইটিপি স্থাপন করেছেন। এসব ইটিপির পানি পরে বাগান, মেঝে পরিষ্কার, গাড়ি ধোয়াসহ  বাথরুমে নানা কাজে ব্যবহার করা হয়।

দক্ষ জনশক্তিও ডেনিম খাত বিকাশে বাধা হিসেবে কাজ করছে। তবে শুরুর দিকে এ খাতে প্রচুর বিদেশি কাজ করলেও স্থানীয়রা এ খাতে দক্ষ হওয়ায় বিদেশীদের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে।