Dhaka 2:56 pm, Saturday, 21 December 2024
বেকিং নিউজ :
Logo হোমনাকে জেলা ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ Logo Kometa Casino Live Casino 💰 Get 200% up to INR 10 000 INR 💰 180 Free Spins Logo কুমিল্লার দেবিদ্বার বিহার মন্ডল এলাকায় বিএনপি’র কর্মী সভা অনুষ্ঠিত Logo মোহনপুরে এবার দেড় লাখ টন আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা Logo চৌদ্দগ্রামে ডলবা গ্রাম কমিটি গঠন ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo বিচারবিভাগের রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুণঃপ্রবর্তনের সুযোগ এসেছে – কুমিল্লায় হাবিব উন নবী সোহেল Logo আবাসিক হোটেল থেকে ৫ তরুণ ও ৩ তরুণী গ্রেফতার  Logo কুমিল্লায় কাপড়ের ব‍্যাগে গাঁজা পাচারকালে আটক দুই নারী Logo ময়মনসিংহ সদরে প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট -২০২৪ Logo মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৯ নং ওয়ার্ডে দিনব্যাপী ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

রাজশাহীর টিটিসির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

রাজশাহী প্রতিনিধি : প্রতারণার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ক্ষমতাচ্যুত আ’লীগ সরকারের কিছু মন্ত্রী, এমপি ও দলটির কতিপয় নেতার অত্যন্ত ঘণিষ্ঠ হিসেবে বহুল পরিচিত এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। অধ্যক্ষ এমদাদুল হক নিয়মিত অফিস করছেন। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডও নিয়মিত পরিচালনা করছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাকে ধরছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে জোরপূর্বক একাধিক কোর্সে ভর্তি করিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির চলতি বছরের কোরিয়ান ভাষা ব্যাচের (মে-আগষ্ট) শিক্ষার্থীরা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো ওই অভিযোগে িক্ষার্থীরা বলে, বিদেশ গমনেচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা শুধু কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হতে চান তাদেরকে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হতে হলে কার্পেন্ট্রি কোর্স করা বাধ্যতামূলক। তবে নিয়মানুযায়ী এটা বাধ্যতামূলক না হলেও অতিরিক্ত টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের এই কোর্স ভর্তি হতে বাধ্য করা হয়। এক হাজার টাকা দিয়ে কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। অথচ তাদেরকে অতিরিক্ত আরো ৩ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কার্পেণ্ট্রি কোর্স করতে হয়। সব মিলিয়ে তাদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা অন্যায়ভাবে আদায় করা হয়।

এতে আরো জানানো হয়, রাজশাহী টিটিসিতে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে লটারির মাধ্যমে ৩০ জন এবং বাকি ২০ জন প্রার্থী অধ্যক্ষের রেফারেন্সের (সুপারিশ) মাধ্যমে ভর্তি হয়। ফলে গরিব শিক্ষার্থীরা এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হন।

একটি ব্যাচেই ৫০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এই টাকার কোনো হিসাব নেই। ১৯ থেকে ২৩ তম ব্যাচ পযর্ন্ত অধ্যক্ষ এভাবে দুর্নীতি করে আসছেন বলেও অভিযোগ উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, কার্পেন্ট্রি ক্লাস করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দেখতে পান, প্রশিক্ষণের জন্য ভালো কাঠের ব্যবস্থা করা হয়নি। আগের ব্যবহার করা ছোট কাঠের টুকরো দিয়ে পরবর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থীরা কাজ করেন। এছাড়া কাঠের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো অনেক পুরানো। আবার যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তার কিছু ক্ষেত্রে কোরিয়ার বাস্তব কাজের সাথে কোনো মিল নেই। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা জানতে চাইলে তাদেরকে বলা হয়, এই কার্পেন্ট্রি কোর্স হলো লেভেল-১ এর ব্যাসিক কাজ শিখে আরপিএল এর মাধ্যমে অ্যাসেসমেন্ট পরীক্ষা। তখন শিক্ষার্থীরা জানতে চান লেভেল-১ অ্যাসেসমেণ্টের রেজিস্ট্রেশন ফি মাত্র ৫৫০ টাকা, তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা কেনো নেওয়া হল। শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে এ ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।

এছাড়া অটোমেকানিক্স ট্রেডে এসইআইপি প্রজেক্ট এবং দেশ-বিদেশে ড্রাইভিং প্রজেক্টের অধীনে ফ্রি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কোর্সেও ড্রাইভিংয়ের লেভেল-১ া লেভেল সার্টিফিকেট দেওয়ার নামে ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। কেউ যদি বলেন, আমি লেভেল করবো না শুধু ফ্রি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ করব। তখন তাকে ভাইবা পরীক্ষাতেই বাদ দেওয়া হয়। অর্থাৎ টাকা দিতে না পারায় তাকে ড্রাইভিং কোর্সে সুযোগ দেয়া হয় না। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স বের করার নামে প্রতিটি প্রার্থীর কাছ থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মতো উৎকোচ নেয়া হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এভাবে অধ্যক্ষের যোগসাজসে বিভিন্ন কোর্সে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয় বলেও জানান তারা।

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হক বলেন, কোনো মামলায় আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেনি আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি সঠিক নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে তারা চাইলে টাকা ফেরত নিতে পারবে।

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি : মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রাজশাহী সিআইডির ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান বলেন, মামলার এজাহারে প্রথমে আসামি ছিলেন দুইজন। পরে ঘটনাটি তদন্তকালে টিটিসির অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হক ও ইনস্ট্রাকটর আইউব উল আজাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তদন্তে উঠে আসা প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকসহ মোট চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় গত বছরের (২০২৩) ৩১ ডিসেম্বর। মামলাটির বাদী হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার বাসুদেবপুর গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান।

তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, বর্তমানে মামলাটির চার আসামির মধ্যে আদালত কর্তৃক টিটিসির অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। আর বাকি অপর তিন আসামি জামিনে রয়েছেন।

মামলাটির আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা জানান, প্রতারণার একটি মামলায় অধ্যক্ষ এমদাদুল হকসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে চার আসামির মধ্যে অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি জারি রয়েছে। অপর তিন আসামি জামিনে রয়েছেন।

কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ অধ্যক্ষ এমদাদুল হককে গ্রেফতার করছে না বলে ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।

পুঠিয়া থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করছে না এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করা হবে।

মামলার এজাহার ও আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে বলা হয়, মোস্তাফিজুর রহমান (২২) সহ ৭ জন চাকরি প্রত্যাশী বেকার যুবকের সাথে সুরাইয়া সুলতানা নামে এক নারীর পরিচয় হয়। এরই সূত্র ধরে ুরাইয়া সুলতানা াদেরকে বিভিন্ন কোম্পানিতে উচ্চ বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেন। সুরাইয়া সুলতানা এক পর্যায়ে মোস্তাফিজুর রহমানদের জানান, তাদের বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে। এমকি নিয়োগ পত্রও প্রদান করেন। পরবর্তীতে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলম চাকরি প্রত্যাশীদেরকে একত্রে করে বলেন, রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) তাদের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সে মোতাবেক তারা ২০২১ সালের ১৯ মে টিটিসির কোইকা ডরমেটরিতে উঠেন এবং প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। প্রশিক্ষণ কোর্সে সুরাইয়া সুলতানার ভাই জাহাঙ্গীর আলম প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিতেন। সুরাইয়া সুলতানা তাদেরকে জানান যে প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে যোগদান করতে হলে প্রত্যেককে মোটা অংকের টাকা দিতে হবে। সে মোতাবেক তারা চাকরি প্রত্যাশী ৭ জন একই বছরের ১৯ মে হতে ২৪ মে পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে সুরাইয়া সুলতানাকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন।

তবে পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ চলাকালীন চাকরির বিষয়ে তাদের সন্দেহ হয়। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হতে তারা নেসকো অফিসে গিয়ে তাদের নিয়োগপত্র যাচাইয়ের চেষ্টা করেন। নেসকো কোম্পানি তাদেরকে জানায় যে, এসব নিয়োগপত্র তাদের অফিস থেকে দেওয়া হয়নি। এগুলো ভুয়া। এরপর ভুক্তভোগীরা প্রতারণার অভিযোগে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলমসহ আরো দুই থেকে তিন জনকে আসামি করে একই বছরের ২৫ মে নগরীর শাহ মখদুম থানায় মামলা রুজু করেন। এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন শাহমখদুম থানা পুলিশ টিটিসি থেকে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতি চলাকালে সরকারি আদেশে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা সত্বেও নিজেরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশে ওই প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেয়া হয়। করোনাকালে ওই প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি কোনো আদেশ বা নির্দেশের কোনো কাগজও দেখাতে পারেননি অধ্যক্ষ। সরকারি সকল নিয়ম-নীতি বিসর্জন দিয়ে আসামিদের প্রতারণা করার সুযোগ প্রদান করেন অধ্যক্ষ। তদন্তে এ ঘটনার সাথে টিটিসির অধ্যক্ষ ও এক ইনস্ট্রাকটরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে।

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

হোমনাকে জেলা ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

রাজশাহীর টিটিসির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

আপলোড সময় : 05:29:22 pm, Wednesday, 18 September 2024

রাজশাহী প্রতিনিধি : প্রতারণার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ক্ষমতাচ্যুত আ’লীগ সরকারের কিছু মন্ত্রী, এমপি ও দলটির কতিপয় নেতার অত্যন্ত ঘণিষ্ঠ হিসেবে বহুল পরিচিত এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। অধ্যক্ষ এমদাদুল হক নিয়মিত অফিস করছেন। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডও নিয়মিত পরিচালনা করছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাকে ধরছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে জোরপূর্বক একাধিক কোর্সে ভর্তি করিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির চলতি বছরের কোরিয়ান ভাষা ব্যাচের (মে-আগষ্ট) শিক্ষার্থীরা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো ওই অভিযোগে িক্ষার্থীরা বলে, বিদেশ গমনেচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা শুধু কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হতে চান তাদেরকে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হতে হলে কার্পেন্ট্রি কোর্স করা বাধ্যতামূলক। তবে নিয়মানুযায়ী এটা বাধ্যতামূলক না হলেও অতিরিক্ত টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের এই কোর্স ভর্তি হতে বাধ্য করা হয়। এক হাজার টাকা দিয়ে কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। অথচ তাদেরকে অতিরিক্ত আরো ৩ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কার্পেণ্ট্রি কোর্স করতে হয়। সব মিলিয়ে তাদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা অন্যায়ভাবে আদায় করা হয়।

এতে আরো জানানো হয়, রাজশাহী টিটিসিতে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে লটারির মাধ্যমে ৩০ জন এবং বাকি ২০ জন প্রার্থী অধ্যক্ষের রেফারেন্সের (সুপারিশ) মাধ্যমে ভর্তি হয়। ফলে গরিব শিক্ষার্থীরা এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হন।

একটি ব্যাচেই ৫০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এই টাকার কোনো হিসাব নেই। ১৯ থেকে ২৩ তম ব্যাচ পযর্ন্ত অধ্যক্ষ এভাবে দুর্নীতি করে আসছেন বলেও অভিযোগ উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, কার্পেন্ট্রি ক্লাস করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দেখতে পান, প্রশিক্ষণের জন্য ভালো কাঠের ব্যবস্থা করা হয়নি। আগের ব্যবহার করা ছোট কাঠের টুকরো দিয়ে পরবর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থীরা কাজ করেন। এছাড়া কাঠের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো অনেক পুরানো। আবার যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তার কিছু ক্ষেত্রে কোরিয়ার বাস্তব কাজের সাথে কোনো মিল নেই। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা জানতে চাইলে তাদেরকে বলা হয়, এই কার্পেন্ট্রি কোর্স হলো লেভেল-১ এর ব্যাসিক কাজ শিখে আরপিএল এর মাধ্যমে অ্যাসেসমেন্ট পরীক্ষা। তখন শিক্ষার্থীরা জানতে চান লেভেল-১ অ্যাসেসমেণ্টের রেজিস্ট্রেশন ফি মাত্র ৫৫০ টাকা, তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা কেনো নেওয়া হল। শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে এ ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।

এছাড়া অটোমেকানিক্স ট্রেডে এসইআইপি প্রজেক্ট এবং দেশ-বিদেশে ড্রাইভিং প্রজেক্টের অধীনে ফ্রি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কোর্সেও ড্রাইভিংয়ের লেভেল-১ া লেভেল সার্টিফিকেট দেওয়ার নামে ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। কেউ যদি বলেন, আমি লেভেল করবো না শুধু ফ্রি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ করব। তখন তাকে ভাইবা পরীক্ষাতেই বাদ দেওয়া হয়। অর্থাৎ টাকা দিতে না পারায় তাকে ড্রাইভিং কোর্সে সুযোগ দেয়া হয় না। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স বের করার নামে প্রতিটি প্রার্থীর কাছ থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মতো উৎকোচ নেয়া হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এভাবে অধ্যক্ষের যোগসাজসে বিভিন্ন কোর্সে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয় বলেও জানান তারা।

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হক বলেন, কোনো মামলায় আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেনি আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি সঠিক নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে তারা চাইলে টাকা ফেরত নিতে পারবে।

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি : মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রাজশাহী সিআইডির ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান বলেন, মামলার এজাহারে প্রথমে আসামি ছিলেন দুইজন। পরে ঘটনাটি তদন্তকালে টিটিসির অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হক ও ইনস্ট্রাকটর আইউব উল আজাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তদন্তে উঠে আসা প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকসহ মোট চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় গত বছরের (২০২৩) ৩১ ডিসেম্বর। মামলাটির বাদী হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার বাসুদেবপুর গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান।

তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, বর্তমানে মামলাটির চার আসামির মধ্যে আদালত কর্তৃক টিটিসির অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। আর বাকি অপর তিন আসামি জামিনে রয়েছেন।

মামলাটির আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা জানান, প্রতারণার একটি মামলায় অধ্যক্ষ এমদাদুল হকসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে চার আসামির মধ্যে অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি জারি রয়েছে। অপর তিন আসামি জামিনে রয়েছেন।

কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ অধ্যক্ষ এমদাদুল হককে গ্রেফতার করছে না বলে ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।

পুঠিয়া থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করছে না এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করা হবে।

মামলার এজাহার ও আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে বলা হয়, মোস্তাফিজুর রহমান (২২) সহ ৭ জন চাকরি প্রত্যাশী বেকার যুবকের সাথে সুরাইয়া সুলতানা নামে এক নারীর পরিচয় হয়। এরই সূত্র ধরে ুরাইয়া সুলতানা াদেরকে বিভিন্ন কোম্পানিতে উচ্চ বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেন। সুরাইয়া সুলতানা এক পর্যায়ে মোস্তাফিজুর রহমানদের জানান, তাদের বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে। এমকি নিয়োগ পত্রও প্রদান করেন। পরবর্তীতে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলম চাকরি প্রত্যাশীদেরকে একত্রে করে বলেন, রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) তাদের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সে মোতাবেক তারা ২০২১ সালের ১৯ মে টিটিসির কোইকা ডরমেটরিতে উঠেন এবং প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। প্রশিক্ষণ কোর্সে সুরাইয়া সুলতানার ভাই জাহাঙ্গীর আলম প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিতেন। সুরাইয়া সুলতানা তাদেরকে জানান যে প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে যোগদান করতে হলে প্রত্যেককে মোটা অংকের টাকা দিতে হবে। সে মোতাবেক তারা চাকরি প্রত্যাশী ৭ জন একই বছরের ১৯ মে হতে ২৪ মে পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে সুরাইয়া সুলতানাকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন।

তবে পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ চলাকালীন চাকরির বিষয়ে তাদের সন্দেহ হয়। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হতে তারা নেসকো অফিসে গিয়ে তাদের নিয়োগপত্র যাচাইয়ের চেষ্টা করেন। নেসকো কোম্পানি তাদেরকে জানায় যে, এসব নিয়োগপত্র তাদের অফিস থেকে দেওয়া হয়নি। এগুলো ভুয়া। এরপর ভুক্তভোগীরা প্রতারণার অভিযোগে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলমসহ আরো দুই থেকে তিন জনকে আসামি করে একই বছরের ২৫ মে নগরীর শাহ মখদুম থানায় মামলা রুজু করেন। এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন শাহমখদুম থানা পুলিশ টিটিসি থেকে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতি চলাকালে সরকারি আদেশে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা সত্বেও নিজেরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশে ওই প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেয়া হয়। করোনাকালে ওই প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি কোনো আদেশ বা নির্দেশের কোনো কাগজও দেখাতে পারেননি অধ্যক্ষ। সরকারি সকল নিয়ম-নীতি বিসর্জন দিয়ে আসামিদের প্রতারণা করার সুযোগ প্রদান করেন অধ্যক্ষ। তদন্তে এ ঘটনার সাথে টিটিসির অধ্যক্ষ ও এক ইনস্ট্রাকটরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে।