প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ২:২৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ৭, ২০২৪, ১:১৪ পি.এম
৭ ডিসেম্বর নোয়াখালী মুক্ত দিবস
৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল। সি-জোনের গুপ্তচরের মাধ্যমে জানতে পারে জেলা শহর মাইজদীতে পাক হানাদার বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে গেছে। তাৎক্ষনিক জোন এর রাজনৈতিক প্রধান মরহুম আলী আহম্মদ চৌধুরী সহ অন্যান্য কমান্ডারবৃন্দ জরুরী বৈঠকে বসে এবং নোয়াখালী শহরে অবস্থিত পাক বাহিনী ও রাজাকারদের উপর আক্রমন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১২টি ট্রুপকে ৬ ডিসেম্বর রাত ২টার মধ্যে নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নিয়ে নির্দেশ মোতাবেক কাজ করে যেতে বলা হয় সকলকে। সন্ধ্যায় তৎকালীন নোয়াখালীর ডিসি মঞ্জুরুল করিমের সাথে এডভোকেট খায়ের আহম্মদ ও মরহুম রফিক উল্যাহ্ মিয়াকে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সেদিন ডিসির সহযোগিতার কারণে লাইনের সমস্থ পুলিশ বাহিনী সকালেই আত্মসর্মপন করে।
৭ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে তৎকালীন বি.এল.এফ কমান্ডার মাহমুদুর রহমান বেলায়েত এবং ডিজোনের কমান্ডার মরহুম রফিক উল্যাহ্’র বাহিনী এবং এম.এফ, বি.এল.এফ ও এফ.এফ সবাই একত্রে মিলে মাইজদী ভোকেশনাল, নাহার মঞ্জিল, কোর্ট ষ্টেশন, রৌশন বাণী সিনেমা হল, দত্তের হাট, কোল্ড ষ্টোরিজ সহ সব রাজাকার ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে নিয়ে আসা হয়। শুধু বাকি থাকে মাইজদী পিটিআই। সেখানে মূলত রাজাকার ও পাকিস্তানিদের মূল ক্যাম্প ছিল। অন্যান্য ক্যাম্পগুলো দখলে আনার ফলে একা হয়ে যায় পিটিআই।
একদিকে সাধারণ মানুষের আনন্দ মিছিল, অন্যদিকে আক্রমন করতে হবে পিটিআই। পিটিআই হোস্টেল দিঘির উত্তর পাড়ে ৩ তলা বিল্ডিং এ রাজাকারদের হেড কোয়াটার ছিল। কিন্তু এ বিল্ডিং ভাঙার মতো কোন বিধংসি অস্ত্র ছিলনা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। তাই ফেনী থেকে একটা ২ ইঞ্চি মোটার এনে তা থেকে তিন তিনটা মোটার সেলের দ্বারা পিটিআই হোস্টেলে আক্রমনের মাধ্যমে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা দিকে মাইজদী শহরে সর্বশেষ রাজাকার ক্যাম্প এর পতন ঘটিয়ে নোয়াখালী শহর হেড কোয়ার্টার হানাদার মুক্ত করা হয়। জেলা শহরের চারিদিকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তি পাগল মানুষের আনন্দ জোয়ারের ঢল উঠে।
নতুন প্রজন্মের কাছে ৭ ডিসেম্বরের স্মৃতিকে পরিচয় করিয়ে দিতে ১৯৯৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর পাক-বাহিনীর ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত নোয়াখালী পিটিআই সম্মুখে স্থাপন করা হয় স্মরণিকা স্তম্ভ ‘‘মুক্ত নোয়াখালী’’। আর বিগত সরকারের আমলে একই স্থানে বর্ধিত পরিসরে স্থাপন করা হয় নোয়াখালী মুক্ত মঞ্চ।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে পাকিস্থানী বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর মুক্তিকামী ছাত্রজনতা পুলিশ ও ইপিআর ফেরত জওয়ানদের সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত নোয়াখালী ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীতে পাকবাহিনীর হামলার মুখে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে পিছু হটলে নোয়াখালীর নিয়ন্ত্রণ নেয় পাকিস্থানীরা। নোয়াখালী পিটিআই এবং বেগমগঞ্জ সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে শক্তিশালী ঘাটি গাড়ে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী। তাদের সাথে এদেশীয় রাজাকাররা মিলে শুরু করে লুটপাট। এরই মধ্যে নোয়াখালীর অসংখ্য ছাত্রজনতা প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারত থেকে এসে পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জাপিয়ে পড়ে। কোম্পানীগঞ্জের বামনীর যুদ্ধ, বেগমগঞ্জের বগাদিয়াসহ অসংখ্য যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। শহীদ হয় শত শত মুক্তিযোদ্ধা। শুধুমাত্র সোনাপুরের শ্রীপুরে তারা হত্যা করেছিলো শতাধিক ব্যক্তিকে। ডিসেম্বরের শুরুতেই নোয়াখালীর প্রত্যন্ত প্রান্তরে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্থানিদের পিছু হটিয়ে দেয়। ৬ ডিসেম্বর দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা বেগমগঞ্জ মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা। আর ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় গোটা নোয়াখালী।
প্রকাশক : মাসুদ রানা সুইট । সম্পাদক : আবুল হাসনাত অমি । নগর সম্পাদক : ইফতেখার আলম বিশাল নির্বাহী সম্পাদক : রুবেল আহম্মেদ । মফস্বল সম্পাদক : মোস্তাফিজুর রহমান । ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নীলা সুলতানা । বার্তা সম্পাদক : -------------- । সহ-বার্তা সম্পাদক : আলিফ বিন রেজা । সহ-বার্তা সম্পাদক :
Copyright © 2024 Dainiksopnerbangladesh.com. All rights reserved.