মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আর দ্বিতীয় পালা (শিফট) থাকছে না। দেশের যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় পালা চালু আছে, সেগুলো আগামী পাঁচ বছরে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। এর অংশ হিসেবে আগামী বছর দ্বিতীয় শিফটে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না। এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই সিদ্ধান্তের পক্ষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যুক্তি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই পালা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে বাধা। দুই পালার বিদ্যালয়ে শিখন ঘণ্টা যথাযথ অনুসরণ করা না যাওয়ায় শিখন মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত না করে তাড়াহুড়োর মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পক্ষে নন শিক্ষাবিদেরা। তাঁরা বলছেন, হঠাৎ একটি পালা বন্ধ করা হলে ওই শিক্ষার্থীদের জায়গা হবে কোথায়? নামী বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হারাবে অনেকে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৪৬৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রভাতি ও দিবা নামে দুই পালা চালু আছে। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬৫টি, বেসরকারি ৩০০টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৩৪১ জন। দুই পালার কোনো কোনো বিদ্যালয়ে প্রভাতি শাখায় ছাত্রী ও দিবা শাখায় ছাত্র রয়েছে।
দ্বিতীয় পালা বন্ধ হলে এমন ব্যবস্থা থাকা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি অর্ধেকে নেমে আসবে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা উচিত নয়। সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক শেখ একরামুল কবির বলেন, পর্যাপ্ত মানসম্মত বিকল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি না করে তাড়াহুড়োর মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। না হলে শিক্ষার্থীদের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। কেননা, ভালো বিদ্যালয়েরই দ্বিতীয় পালার চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, এমন হলে মানসম্মত প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে পড়াতে অভিভাবকদের ভোগান্তি বাড়বে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ২১ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক-৩ শাখার সভায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় পালা বন্ধের এবং নতুন করে কোনো বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় পালা চালুর অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, দুই পালার বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সংকট হতে পারে। কারণ, নতুন শিক্ষাক্রমে কার্যক্রমভিত্তিক শিখন অন্তর্ভুক্ত থাকায় ক্লাস চলবে ৫০ মিনিট করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় পালা বিলুপ্ত হবে।
সভায় দুই পালার বিদ্যালয়ে শনিবারও পাঠদানের এবং শাখা ক্যাম্পাস থাকা বিদ্যালয়গুলোর প্রতি শাখার জন্য আলাদা শনাক্তকরণ (ইআইআইএন) নম্বর দেওয়ার ও পৃথক অ্যাডহক কমিটি করারও সিদ্ধান্ত হয়। শিগগির এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে অফিস আদেশ জারি করা হবে। তবে শনিবার পাঠদানের সিদ্ধান্ত আগামী ৪ মে কার্যকর হচ্ছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একাধিক কর্মকর্তা জানান, দুই পালার বিদ্যালয়ে শিখন ঘণ্টা অনুসরণ সম্ভব হয় না। এ ছাড়া শিখনকালীন মূল্যায়নেও সমস্যা হয়।
জানতে চাইলে গতকাল রোববার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক অনুবিভাগ-২) মো. রবিউল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। শিগগির মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের অনুমতি সাপেক্ষে সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করা হবে। সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শ্রেণি কার্যক্রম ৬ ঘণ্টা। দুই পালার বিদ্যালয়ে তা হবে ১২ ঘণ্টা। দিনে একজন শিক্ষকের পক্ষে ১২ ঘণ্টা শ্রেণি কার্যক্রম চালানো কষ্টসাধ্য। এতে অনেক ক্ষেত্রে শিখনের মান ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
অবশ্য শিক্ষকেরা বলছেন, অধিকাংশ সরকারি বিদ্যালয়েই দুটি পালা রয়েছে এবং প্রতি পালার জন্যই পৃথক শিক্ষকেরা রয়েছেন। শুধু প্রধান শিক্ষক একজন। নামী বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও প্রতি পালার জন্য আলাদা শিক্ষক রয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, যারা ইতিমধ্যে দ্বিতীয় পালায় পড়ছে তাদের পর্যায়ক্রমে শিক্ষাজীবন শেষ করার সুযোগ দিতে হবে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। না হলে সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
অবশ্য দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক পালায় চালানোর পরিকল্পনা ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।
জানতে চাইলে গতকাল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে, অচিরেই তা আলোর মুখ দেখবে।
২১ এপ্রিল বেসরকারি মাধ্যমিক-৩ শাখার সভায় উপস্থিত ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেসব বিদ্যালয়ের একাধিক শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে, সেগুলোকে প্রতিটি শাখার জন্য আলাদা ইআইআইএন নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে প্রতিটি শাখা একেকটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে। স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানও হবেন আলাদা।
বর্তমানে একটি বিদ্যালয়ের একাধিক শাখা থাকলেও পরিচালনা কমিটি একটিই। প্রতিটি শাখার জন্য পৃথক শাখাপ্রধান থাকলেও প্রতিষ্ঠানপ্রধান একজনই।
ঢাকার মিরপুরের মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের তিনটি, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তিনটি, সাভারের বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছয়টি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তিনটি শাখা রয়েছে। এগুলোতে মোট শিক্ষার্থী ২৫ হাজার ৪৫৮ জন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, একই পরিচালনা কমিটি এবং একই প্রতিষ্ঠানপ্রধানের মাধ্যমে শাখা ক্যাম্পাসগুলো ভালোভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ ওঠে। এসব বিবেচনায় শাখা ক্যাম্পাসকে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকাশক : মাসুদ রানা সুইট । সম্পাদক : আবুল হাসনাত অমি । নগর সম্পাদক : ইফতেখার আলম বিশাল নির্বাহী সম্পাদক : রুবেল আহম্মেদ । মফস্বল সম্পাদক : মোস্তাফিজুর রহমান । ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নীলা সুলতানা । বার্তা সম্পাদক : -------------- । সহ-বার্তা সম্পাদক : আলিফ বিন রেজা । সহ-বার্তা সম্পাদক :
Copyright © 2024 Dainiksopnerbangladesh.com. All rights reserved.