সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ, বাগেরহাটের আওতাধীন চাঁদপাই রেঞ্জের অন্তর্গত আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির নিয়ন্ত্রণাধীন বনাঞ্চলের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যেসব স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছোট পরিসরে আগুন ও ধোঁয়া দেখা গিয়েছিল। গত রবিবার সারা রাত বন বিভাগের কর্মীরা দলভিত্তিক নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং ইকুপমেন্টের মাধ্যমে এসব স্থানের আগুন নিভিয়ে ফেলেছেন। তবে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বন বিভাগের পক্ষ থেকে এখন ড্রোনের মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল তিনবার আগুনের ধোঁয়া শনাক্ত করে তা দ্রুত নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ব্যপ্তি ছিল ৭.৯ একর। যার মধ্যে ৫ একর এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বনের আগুনের ক্ষেত্রে মাটির গভীরে গাছের শিকড়ের মধ্যেও আগুন থেকে যায়, যা পরবর্তীতে কয়েক ঘণ্টা পর পুনরায় আগুনের বা ধোঁয়ার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। সেজন্য যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে গতকাল থেকে মোট তিন দিন পর্যন্ত ঘটনাস্থলে বন বিভাগের টহল দল আগুন মনিটরিং এবং কোনো স্থানে নতুন কোনো আগুনের সূত্রপাত ঘটলে তা নিভিয়ে ফেলার জন্য কাজ করবেন।
বর্তমানে ঘটনাস্থলে বন বিভাগের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। ফায়ার সার্ভিসের টিম আজ মঙ্গলবারও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকবেন। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী এবং বিমান বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এবং প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী সুন্দরবনের আগুন নির্বাপণ কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি ও সমন্বয় করছেন। সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের পর জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ বের করতে কমিটি গঠন করেছে বন অধিদফতর। বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর স্বাক্ষরে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো-কে সভাপতি এবং খুলনার ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে সদস্য-সচিব করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পরিবেশ অধিদফতরের প্রতিনিধি, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ, বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. এস এম ফিরোজ, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের ম্যানগ্রোভ ইকোলজিস্ট এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের প্রফেসর ড. স্বপন কুমার সরকার এবং ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির প্রতিনিধি। এই কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে বনজসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতি বের করে ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রণয়ন করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। আমাদের বাগেরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় লাগা আগুন ৪৭ ঘণ্টা পর গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশাসন) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী লতিফের ছিলা এলাকার বনে অগ্নিকা এলাকা পরির্দশন শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় আগুন শতভাগ নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেন। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের এই উঁচু এলাকাটিতে পাতা পড়ে মাটির নিচে গ্যাস তৈরি হওয়ার কারণে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন ছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পরও কখনো কখনো ধোঁয়ার কু লী পাকিয়ে আগুন জ্বলে উঠছিল। সেজন্য দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাইন অব ফায়ার (নালা) কেটে পানি ভরে দেওয়া হয়েছে। আগুন যাতে আবাও জ্বলে উঠতে না পারে সেজন্য আরও তিন দিন ড্রোন দিয়ে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ২৫টি টিম পালা করে লতিফের ছিলা এলাকায় কাজ করবে।