জি-টু-জি চুক্তির আওতায় বিশ্বের ৭টি দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে পরিশোধিত জ্বালানি তেল, স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি ও রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে দুই লটে ৮০ হাজার টন এমওপি সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে প্রায় ১৭ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার বিকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সংস্কার সচিব বলেন, ‘তেল কেনার আগে একটু নেগোশিয়েট করে রাখতে হয়। আমরা কোন কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ জ্বালানি তেল কিনব এসব বিষয়ে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এই ক্রয় প্রস্তাবের ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৮৪ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা।’
কিনি জানান, জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪ সময়ের প্রিমিয়াম ও রেফারেন্স প্রাইস অনুযায়ী এই ক্রয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ওকিউটি ওমান, পিআইএলসিএল মালয়েশিয়া, পিআইটিটি থাইল্যান্ড, এনকো আরব আমিরাত, পেট্রো চায়না, চীন, বিএসপি ইন্দোনেশিয়া, ইউনিপেক চীন ও আইওসিএল মালয়েশিয়া।
কানাডা থেকে কেনা হবে ৮০ হাজার টন সার : সংস্কার সচিব জানান, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে কানাডার কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন থেকে দুই লটে ৮০ হাজার টন এমওপি সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬০ কোটি ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।
সচিব বলেন, কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় কানাডার কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন থেকে তৃতীয় লটে ৪০ হাজার টন এমওপি সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় এ সার আনতে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতি টনের দাম পড়বে ২৭৫.৫০ মার্কিন ডলার।
এছাড়া ৫ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় কানাডার কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন থেকে ৪র্থ লটের ৪০ হাজার টন এমওপি সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতি টনের দাম পড়বে ২৭৫.৫০ মার্কিন ডলার।
কেনা হবে এক কার্গো এলএনজি : সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, সুইজারল্যান্ডের টোটাল ইঞ্জিনিয়ারিং গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৫৮৩ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ৫২৮ টাকা।
তিনি বলেন, ‘বিদু্যৎ ও জ্বালানির দ্রম্নত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধনী ২০২১)-এর আওতায় মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেস এগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে কোটেশন সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
সংস্কার সচিব জানান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সুইজারল্যান্ডের টোটাল ইঞ্জিনিয়ারিং গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডের কাছ থেকে এক কার্গো (২০২৪ সালের ২৩তম) এলএনজি কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫৮৩ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ৫২৮ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি দাম পড়বে ১২.৫৮ মার্কিন ডলার। এর আগে আমদানি করা প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ছিল ১৩.৫৫৮ মার্কিন ডলার।
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভার অনুমোদনের প্রেক্ষিতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। পেট্রোবাংলা ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। তার মধ্যে ৩টি প্রস্তাব কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) সুপারিশে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক মেসার্স টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর মাধ্যমে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দ্বিতীয় এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিল মন্ত্রিসভা কমিটি। এর আগে গত ৩ জুলাই অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ‘বিদু্যৎ ও জ্বালানির দ্রম্নত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১’-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৪ সালের ২২তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দেওয়া হয়।