Dhaka 8:51 pm, Saturday, 21 December 2024

শুকিয়ে যাচ্ছে তিস্তা,হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছেন নদী পথচারীরা।

পালিত হচ্ছে সারাদেশে বিশ্ব পানি দিবস।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সংস্থা এ দিবসটি পালন করছেন।
১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ ২২ মার্চকে বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

কিন্তু দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস তিস্তা নদীতে আজ নেই।
বাংলাদেশ অংশে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারী জেলায় ১১৫ কিলোমিটার তিস্তা নদী প্রায় পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে নদীটি শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে।

আর তিস্তার বুকজুড়ে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর।
হাজার বছর ধরে যে নদীকে ঘিরে উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রা শুরু হয়েছে। যে তিস্তাকে নিয়ে নানা গান তৈরি হয়েছে সেই তিস্তা আজ যেন মৃত।
নদীটির বুকজুড়ে খরতা জলের ধারা আর নেই।
ধু-ধু বালু চর এখন ফসলের দখলে।
চাষ করা হচ্ছে ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, আলু, বাদাম, পেয়াজ, রসুন, গমসহ নানান জাতের ফসল।
পানি না থাকায় মিলছে না মাছ, অনেক সংকটে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা
নদীপাড়ের মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করছেন।

এসব বালুচর হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষকে।
কোথাও ৬ মাইল, আবার কোথাও ৮ মাইল বালুচর পাড়ি দিতে হচ্ছে তাদের।
আবার পানি না থাকায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না।
ফলে নৌকা ঘাটগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে।
এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েকশ মাঝি। জীবিকার জন্য পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও ভারত একতরফা তিস্তার পানি প্রত্যাহার করছে।
দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত শান্তনা ছাড়া কিছুই জোটেনি।
উজানে ভারত সরকার ব্যারেজ (বাঁধ) নির্মাণ করে তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে।
পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বাংলাদেশে এই নদী শুকিয়ে এখন মৃত।
নদীর ওপর নীলফামারী ও লালমনিরহাটের ডালিয়া ও দোয়ানীতে নির্মিত তিস্তা ব্যারেজের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলে কৃষিজমিতে যে সেচ দেওয়ার কথা, তাও অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
এদিকে ভয়াবহ পানি সংকটের শঙ্কা নিয়ে চলতি বোরো মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১৫ জানুয়ারি।
ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, এবারও তিস্তার পানি দিয়ে শতভাগ সেচ দেওয়া সম্ভব হবে না।
৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের কথা থাকলেও এ বছর সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার হেক্টরে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, তিস্তা নদী নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারীর ভেতর দিয়ে ১২৪ কিলোমিটার অতিক্রম করে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ১৯৭৭ সালে তিস্তার ওপর ব্যারাজ, হেড রেগুলেটর ও ক্লোজার ড্যাম তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকার।
বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নজরে গেলে গজলডোবায় (বাংলাদেশ থেকে ৬৩ কিলোমিটার উজানে) তারা ব্যারেজ নির্মাণ করে, যার মাধ্যমে ভারত তিস্তার মোট পানিপ্রবাহের ৮০ শতাংশ নিয়ে তাদের কৃষিজমিতে সেচ প্রদান করছে।

সূত্রটি আরও জানান, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টের উজানে ১২০০-১৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া যাচ্ছে।
তা দিয়ে কোনো রকমে সেচ সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
তবে ব্যারেজের ভাটিতে প্রায় ১০২ কিলোমিটার তিস্তায় ১০০ কিউসেক পানি সরবরাহ নেই।
১৯৮৩ সালে উজানে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের পর থেকে বাংলাদেশে তিস্তা নদীর এ অবস্থা হয়েছে।
এ বাঁধটি নির্মাণের আগে বাংলাদেশে তিস্তা নদীতে সারাবছর পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ছিল।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামের মকবুল হোসেন ও আশরাফ হোসেন বলেন, তিস্তা নদীতে পানি নেই বললেই চলে।
মাইলের পর মাইল বালুচর। এই বালুচর দিয়ে যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিস্তার বুকে ফসল চাষাবাদ করছি, অথচ সেচের পানি পেতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে।

পাশ্ববর্তী হলদিবাড়ী গ্রামের নৌকার মাঝি মোশারফ হোসেন বলেন, তিস্তায় পানি না থাকায় নৌকা ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে।
লোকজন পায়ে হেঁটে তিস্তা পাড়ি দিচ্ছেন।
নৌকা চলাচল না করায় নৌকা চালানোর কাজে নিয়োজিত মাঝিরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে পরিবার পরিজন নিয়ে করতে হচ্ছে মানবেতর জীবনযাপন।

‘তিস্তা বাচাঁও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান বলেন, তিস্তা নদী খননসহ ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি চুক্তি বাস্তবায়ন হলে এবং তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তা জেগে উঠবে আগের রুপে। এতে তিস্তাপাড়ে আসবে অর্থনৈতিক উন্নতি, বাড়বে কৃষি উৎপাদন।
জীবিকা নির্বাহের উৎস সৃষ্টি হবে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষের।রক্ষা হবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র।
কথা হয় লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার এর সাথে তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে তিস্তা নদীতে বছরে ৩-৪ মাস পানি প্রবাহ থাকে।
তিস্তা শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। তিস্তা ব্যারেজের উজানে সামান্য কিছু পানি থাকলেও ভাটিতে কোনো পানি নেই।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

শুকিয়ে যাচ্ছে তিস্তা,হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছেন নদী পথচারীরা।

আপলোড সময় : 12:13:07 am, Saturday, 23 March 2024

পালিত হচ্ছে সারাদেশে বিশ্ব পানি দিবস।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন সংস্থা এ দিবসটি পালন করছেন।
১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ ২২ মার্চকে বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

কিন্তু দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস তিস্তা নদীতে আজ নেই।
বাংলাদেশ অংশে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারী জেলায় ১১৫ কিলোমিটার তিস্তা নদী প্রায় পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে নদীটি শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে।

আর তিস্তার বুকজুড়ে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর।
হাজার বছর ধরে যে নদীকে ঘিরে উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রা শুরু হয়েছে। যে তিস্তাকে নিয়ে নানা গান তৈরি হয়েছে সেই তিস্তা আজ যেন মৃত।
নদীটির বুকজুড়ে খরতা জলের ধারা আর নেই।
ধু-ধু বালু চর এখন ফসলের দখলে।
চাষ করা হচ্ছে ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, আলু, বাদাম, পেয়াজ, রসুন, গমসহ নানান জাতের ফসল।
পানি না থাকায় মিলছে না মাছ, অনেক সংকটে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা
নদীপাড়ের মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করছেন।

এসব বালুচর হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষকে।
কোথাও ৬ মাইল, আবার কোথাও ৮ মাইল বালুচর পাড়ি দিতে হচ্ছে তাদের।
আবার পানি না থাকায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না।
ফলে নৌকা ঘাটগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে।
এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েকশ মাঝি। জীবিকার জন্য পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও ভারত একতরফা তিস্তার পানি প্রত্যাহার করছে।
দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত শান্তনা ছাড়া কিছুই জোটেনি।
উজানে ভারত সরকার ব্যারেজ (বাঁধ) নির্মাণ করে তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে।
পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বাংলাদেশে এই নদী শুকিয়ে এখন মৃত।
নদীর ওপর নীলফামারী ও লালমনিরহাটের ডালিয়া ও দোয়ানীতে নির্মিত তিস্তা ব্যারেজের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলে কৃষিজমিতে যে সেচ দেওয়ার কথা, তাও অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
এদিকে ভয়াবহ পানি সংকটের শঙ্কা নিয়ে চলতি বোরো মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১৫ জানুয়ারি।
ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, এবারও তিস্তার পানি দিয়ে শতভাগ সেচ দেওয়া সম্ভব হবে না।
৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের কথা থাকলেও এ বছর সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার হেক্টরে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, তিস্তা নদী নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারীর ভেতর দিয়ে ১২৪ কিলোমিটার অতিক্রম করে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ১৯৭৭ সালে তিস্তার ওপর ব্যারাজ, হেড রেগুলেটর ও ক্লোজার ড্যাম তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকার।
বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নজরে গেলে গজলডোবায় (বাংলাদেশ থেকে ৬৩ কিলোমিটার উজানে) তারা ব্যারেজ নির্মাণ করে, যার মাধ্যমে ভারত তিস্তার মোট পানিপ্রবাহের ৮০ শতাংশ নিয়ে তাদের কৃষিজমিতে সেচ প্রদান করছে।

সূত্রটি আরও জানান, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টের উজানে ১২০০-১৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া যাচ্ছে।
তা দিয়ে কোনো রকমে সেচ সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
তবে ব্যারেজের ভাটিতে প্রায় ১০২ কিলোমিটার তিস্তায় ১০০ কিউসেক পানি সরবরাহ নেই।
১৯৮৩ সালে উজানে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের পর থেকে বাংলাদেশে তিস্তা নদীর এ অবস্থা হয়েছে।
এ বাঁধটি নির্মাণের আগে বাংলাদেশে তিস্তা নদীতে সারাবছর পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ছিল।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামের মকবুল হোসেন ও আশরাফ হোসেন বলেন, তিস্তা নদীতে পানি নেই বললেই চলে।
মাইলের পর মাইল বালুচর। এই বালুচর দিয়ে যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিস্তার বুকে ফসল চাষাবাদ করছি, অথচ সেচের পানি পেতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে।

পাশ্ববর্তী হলদিবাড়ী গ্রামের নৌকার মাঝি মোশারফ হোসেন বলেন, তিস্তায় পানি না থাকায় নৌকা ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে।
লোকজন পায়ে হেঁটে তিস্তা পাড়ি দিচ্ছেন।
নৌকা চলাচল না করায় নৌকা চালানোর কাজে নিয়োজিত মাঝিরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে পরিবার পরিজন নিয়ে করতে হচ্ছে মানবেতর জীবনযাপন।

‘তিস্তা বাচাঁও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান বলেন, তিস্তা নদী খননসহ ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি চুক্তি বাস্তবায়ন হলে এবং তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তা জেগে উঠবে আগের রুপে। এতে তিস্তাপাড়ে আসবে অর্থনৈতিক উন্নতি, বাড়বে কৃষি উৎপাদন।
জীবিকা নির্বাহের উৎস সৃষ্টি হবে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষের।রক্ষা হবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র।
কথা হয় লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার এর সাথে তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে তিস্তা নদীতে বছরে ৩-৪ মাস পানি প্রবাহ থাকে।
তিস্তা শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। তিস্তা ব্যারেজের উজানে সামান্য কিছু পানি থাকলেও ভাটিতে কোনো পানি নেই।