Dhaka 8:26 pm, Saturday, 21 December 2024

রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষ এমদাদুল গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরছেন!    

প্রতারণার একটি মামলায় রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি জারি করেছেন আদালত। ক্ষমতাচ্যুত আ’লীগ সরকারের কিছু মন্ত্রী, এমপি ও দলটির কতিপয় নেতার অত্যন্ত ঘণিষ্ঠ হিসেবে বহুল পরিচিত এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। অধ্যক্ষ এমদাদুল নিয়মিত অফিস করছেন। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডও নিয়মিত পরিচালনা করছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাকে ধরছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে আড়াই বছর আগে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করে পুলিশ।

মামলাটির তদন্তকারী ও রাজশাহী সিআইডির ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান বলেন, মামলার এজাহারে প্রথমে আসামি ছিলেন দুইজন। তবে ওই দুই আসামির মধ্যে অধ্যক্ষ এমদাদুল হকের নাম ছিল না। পরে ঘটনাটি তদন্তকালে টিটিসির অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকসহ আরো দুইজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তদন্তে উঠে আসা প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী কষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটির বাদী হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে মামলাটির চার আসামির মধ্যে আদালত কর্তৃক টিটিসির অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। আর বাকি অপর তিন আসামি জামিনে রয়েছেন।

মামলাটির আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা জানান, প্রতারণার একটি মামলায় অধ্যক্ষ এমদাদুল হকসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে চার আসামির মধ্যে অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি জারি রয়েছে। অপর তিন আসামি জামিনে রয়েছেন।

কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ অধ্যক্ষ এমদাদুল হককে গ্রেফতার করছে না বলে ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হক বলেন, কোনো মামলায় আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেনি আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি সঠিক নয়।
পুঠিয়া থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করছে না এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করা হবে।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, মোস্তাফিজুর রহমান (২২)সহ ৭ জন চাকরি প্রত্যাশী বেকার যুবকের সাথে সুরাইয়া সুলতানা নামে এক নারীর পরিচয় হয়। এরই সূত্র ধরে সুরাইয়া সুলতানা তাদেরকে বিভিন্ন কোম্পানিতে উচ্চ বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেন। সুরাইয়া সুলতানা এক পর্যায়ে মোস্তাফিজুর রহমানদের জানান, তাদের বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে। এমকি নিয়োগ পত্রও প্রদান করেন। পরবর্তীতে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলম চাকরি প্রত্যাশীদেরকে একত্রে করে বলেন, রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) তাদের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সে মোতাবেক তারা ২০২১ সালের ১৯ মে টিটিসির কোইকা ডরমেটরিতে উঠেন এবং প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। প্রশিক্ষণ কোর্সে সুরাইয়া সুলতানার ভাই জাহাঙ্গীর আলম প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিতেন। সুরাইয়া সুলতানা তাদেরকে জানান যে প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে যোগদান করতে হলে প্রত্যেককে মোটা অংকের টাকা দিতে হবে। সে মোতাবেক তারা চাকরি প্রত্যাশী ৭ জন একই বছরের ১৯ মে হতে ২৪ মে পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে সুরাইয়া সুলতানাকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন।

তবে পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ চলাকালীন চাকরির বিষয়ে তাদের সন্দেহ হয়। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হতে তারা হেতেমখাঁ এলাকায় অবস্থিত নেসকো অফিসে গিয়ে তাদের নিয়োগপত্র যাচাইয়ের চেষ্টা করেন। নেসকো কোম্পানি তাদেরকে জানায় যে, এসব নিয়োগপত্র তাদের অফিস থেক য়নি। এগুলো ভুয়া। এরপর ভুক্তভোগীরা প্রতারণার অভিযোগে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলমসহ আরো দুই থেকে তিন জনকে আসামি করে একই বছরের ২৫ মে নগরীর শাহ মখদুম থানায় করে মামলা রুজু করেন। এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন শাহমখদুম থানা পুলিশ টিটিসি থেকে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছিল, রাজশাহী টিটিসির প্রশিক্ষণ কক্ষ ভাড়া নিয়ে ভুয়া প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষিত বেকার সহজ সরল যুবকদের চাকরি দেওয়ার নাম করে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই প্রতারক চক্রের মূল হোতা সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও আরো পলাতক দুইজন প্রতারক এই প্রতারণার সাথে জড়িত। পরবর্তীতে তদন্তে এ ঘটনার সাথে টিটিসির অধ্যক্ষ ও এক ইনস্ট্রাকটরের সংশ্লিষ্টতা পান তদন্তকারী কর্মকর্তা।

জিএমআরএ

ট্যাগস :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষ এমদাদুল গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরছেন!    

আপলোড সময় : 09:20:40 pm, Sunday, 15 September 2024

প্রতারণার একটি মামলায় রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি জারি করেছেন আদালত। ক্ষমতাচ্যুত আ’লীগ সরকারের কিছু মন্ত্রী, এমপি ও দলটির কতিপয় নেতার অত্যন্ত ঘণিষ্ঠ হিসেবে বহুল পরিচিত এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। অধ্যক্ষ এমদাদুল নিয়মিত অফিস করছেন। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডও নিয়মিত পরিচালনা করছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাকে ধরছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে আড়াই বছর আগে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করে পুলিশ।

মামলাটির তদন্তকারী ও রাজশাহী সিআইডির ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান বলেন, মামলার এজাহারে প্রথমে আসামি ছিলেন দুইজন। তবে ওই দুই আসামির মধ্যে অধ্যক্ষ এমদাদুল হকের নাম ছিল না। পরে ঘটনাটি তদন্তকালে টিটিসির অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকসহ আরো দুইজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তদন্তে উঠে আসা প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী কষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটির বাদী হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে মামলাটির চার আসামির মধ্যে আদালত কর্তৃক টিটিসির অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। আর বাকি অপর তিন আসামি জামিনে রয়েছেন।

মামলাটির আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা জানান, প্রতারণার একটি মামলায় অধ্যক্ষ এমদাদুল হকসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে চার আসামির মধ্যে অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি জারি রয়েছে। অপর তিন আসামি জামিনে রয়েছেন।

কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ অধ্যক্ষ এমদাদুল হককে গ্রেফতার করছে না বলে ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হক বলেন, কোনো মামলায় আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেনি আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি সঠিক নয়।
পুঠিয়া থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করছে না এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করা হবে।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, মোস্তাফিজুর রহমান (২২)সহ ৭ জন চাকরি প্রত্যাশী বেকার যুবকের সাথে সুরাইয়া সুলতানা নামে এক নারীর পরিচয় হয়। এরই সূত্র ধরে সুরাইয়া সুলতানা তাদেরকে বিভিন্ন কোম্পানিতে উচ্চ বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেন। সুরাইয়া সুলতানা এক পর্যায়ে মোস্তাফিজুর রহমানদের জানান, তাদের বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে। এমকি নিয়োগ পত্রও প্রদান করেন। পরবর্তীতে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলম চাকরি প্রত্যাশীদেরকে একত্রে করে বলেন, রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) তাদের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সে মোতাবেক তারা ২০২১ সালের ১৯ মে টিটিসির কোইকা ডরমেটরিতে উঠেন এবং প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। প্রশিক্ষণ কোর্সে সুরাইয়া সুলতানার ভাই জাহাঙ্গীর আলম প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিতেন। সুরাইয়া সুলতানা তাদেরকে জানান যে প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে যোগদান করতে হলে প্রত্যেককে মোটা অংকের টাকা দিতে হবে। সে মোতাবেক তারা চাকরি প্রত্যাশী ৭ জন একই বছরের ১৯ মে হতে ২৪ মে পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে সুরাইয়া সুলতানাকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন।

তবে পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ চলাকালীন চাকরির বিষয়ে তাদের সন্দেহ হয়। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হতে তারা হেতেমখাঁ এলাকায় অবস্থিত নেসকো অফিসে গিয়ে তাদের নিয়োগপত্র যাচাইয়ের চেষ্টা করেন। নেসকো কোম্পানি তাদেরকে জানায় যে, এসব নিয়োগপত্র তাদের অফিস থেক য়নি। এগুলো ভুয়া। এরপর ভুক্তভোগীরা প্রতারণার অভিযোগে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলমসহ আরো দুই থেকে তিন জনকে আসামি করে একই বছরের ২৫ মে নগরীর শাহ মখদুম থানায় করে মামলা রুজু করেন। এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন শাহমখদুম থানা পুলিশ টিটিসি থেকে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছিল, রাজশাহী টিটিসির প্রশিক্ষণ কক্ষ ভাড়া নিয়ে ভুয়া প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষিত বেকার সহজ সরল যুবকদের চাকরি দেওয়ার নাম করে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই প্রতারক চক্রের মূল হোতা সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও আরো পলাতক দুইজন প্রতারক এই প্রতারণার সাথে জড়িত। পরবর্তীতে তদন্তে এ ঘটনার সাথে টিটিসির অধ্যক্ষ ও এক ইনস্ট্রাকটরের সংশ্লিষ্টতা পান তদন্তকারী কর্মকর্তা।

জিএমআরএ