রাজশাহী মহানগরীতে আওমীলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে করা একটি নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় বিএনপি নেতাকে আসামি করা হয়েছে।
তিনি হলেন রাজশাহীর (রাসিক) ১১ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক মো. রাসেল। এ ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতিত হওয়ার আগে অর্থাৎ গত ১২ জুলাই ২০২৪ইং তারিখে ১১ নং ওয়ার্ড আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে রাজশাহী মহানগর জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
এতে আহবায়ক করা হয় সেকেন্দার আলীকে এবং যুগ্ন আহবায়ক করা হয় মো. রাসেলকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নিজ দলের একটি পক্ষের কাছে প্রভাবিত হয়ে মামলাটিতে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিগত ১৬ বছর আওমীলীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী দেশ পরিচালনায় বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী গুম-খুন ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়। এছাড়া স্থানীয় বিএনপি’র দুই গ্রুপের অভ্যান্তরীণ কোন্দলের কারণে রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে অনেক নেতাকর্মী।
৫ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওমী সরকারের পতন হওয়ার সাথে সাথে বিএনপির নেতাকর্মীরা উঠে দাড়ায়। অথচ এর আগে ওয়ার্ড কমিটির জন্য কোন নেতা খুজে পাওয়া যায়নি! এখন শুরু হয়েছে পদপদবী পাওয়ার প্রতিযোগীতা।
এদিকে মহানগর বিএনপির দ্বন্দ্বের জেরে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে চাপে ফেলতেই মামলায় জড়াচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ৪ আগষ্ট বাটার মোড় এলাকায় চলমান ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে হামলা ও নাশকতার ঘটনায় মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে প্রধাণ আসামি করে ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়। এ ঘটনায় বোয়ালিয়া থানা পুর্ব ছাত্র দলের আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. সাইমন রেজা বাদী হয়ে গত ২৭ অক্টোবর বোয়ালিয়া মড়েল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। উক্ত মামলায় ১১ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ন আহবায়ক মো. রাসেলকে ৪৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মো. রাসেল বলেন, আমার বাবার নাম মো. চাঁদ মিয়া তিনি ১১ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র একজন কার্ডধারী সদস্য। বিগত ছয় বছর ধরে আমি বিএনপির কর্মী হিসেবে রাজনীতি করতাম। আমার কোন পদপদবী ছিলনা। এ ছয় বছর ধরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম।
গত ৯ বছর আগে শুধু বিএনপি করার কারণে আমার ফ্লেক্সিলোডের দোকান ভাংচুর করে লুটপাট চালায় তৎকালীন আওমী সন্ত্রাসীরা। এছাড়া তাদের দ্বারা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে আমাকে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই মাসের ১২ তারিখে রাজশাহী মহানগর বিএনপির অহবায়ক কমিটির স্বাক্ষরিত একটি প্যাডে আমাকে যুগ্ন আহবায়ক করা হয়। এর আগে আমাদের ওয়ার্ডে একজন নেতাও খুজে পাওয়া যায়নি পদ দেওয়ার জন্য। এখন অনেকে পদ পাওয়ার আশায় প্রতিযোগীতা দৌড় শুরু করেছেন। পদ পাওয়ার পর নিজ দলের মধ্যেই আমি সড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মামলার আসামি হয়েছি। এই সড়যন্ত্রের সাথে কিছু সংখ্যক আওমীলীগ নেতাকর্মীদের
ইন্ধনও রয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে ফেক আইডি খুলে ফেসবুকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
দল এবং দেশের জন্য আন্দোলন করেও যদি নতুন বাংলাদেশে আসামি হই তাহলে কোথায় ন্যায় বিচার চাইব?
এব্যাপারে মামলার বাদি বোয়ালিয়া থানা পুর্ব ছাত্র দলের আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. সাইমন রেজা বলেন, অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সবাইকে আমি চিনিনা। বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে আসামিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ভালো মানুষও থাকতে পারে। একারণে পুলিশকে বলা হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক নজরুর হুদা বলেন, ২০১৮ সালে বৈষম্যর কারণে দলের মধ্যে একটি পক্ষ ত্যাগী ছেলেদের স্থান দেয়নি। এছাড়া রাসেল গত তিন বছর থেকে আমাদের সাথে সক্রীয় রাজনীতি করে আসছে। তাই তাকে ১১ নং ওয়ার্ড কমিটির যুগ্ন আহবায়ক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের আওমীলীগ নেতাদের সাথে রাসেলের ছবি দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে সড়যন্ত্রমুলক মামলা করা হয়েছে। তবে যে মামলার বাদি সে কোন দলের সে ব্যাপারে নিশ্চিৎ জানেন না নজরুল হুদা। তিনি বলেন, সাইমন রেজার দলীয় পরিচয় আমার জানা নেই। তবে মামলায় যাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে অর্থাৎ রাসেল আওমীলীগে কোনদিন যোগদান করেনি। কোন কমিটিতে তার নামও নাই।
এ ব্যাপারে আরএমপ’র গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পুলিশ পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলিম বলেন, তদন্তের সময়ে বিষয়টি আমরা দেখব।