মমির হোসেন বেনাপোল প্রতিনিধি:- যশোরের শার্শা উপজেলা বেনাপোল-শার্শা সীমান্তের ইছামতী নদীর পাড় থেকে একদিনেই তিন যুবকের মরদেহ উদ্ধার নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের মরদেহ নদীতে ভাসমান অবস্থায় এবং দুজনের নদীর তীর থেকে উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে ৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সকালে ২টি ও বিকেলে ১টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ৩ দিন পার হলেও এখনো জানা যায়নি কীভাবে তাদের মৃত্যু হলো? সে বিষয়ে এখনও পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি। তবে নিহতদের পরিবারের দাবি ভারতীয় বিএসএফের নির্যাতনে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতদের মরদেহ গত বৃহস্পতিবার যশোর ২৫০ শষ্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে আত্মীয়স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২ জনকে বেনাপোলে ও ১ জনকে চৌগাছার শাহাজাদপুরে দাফন করা হয়েছে।
জানা গেছে, বুধবার বিকালে শার্শা উপজেলার অগ্রভুলোট সীমান্তের ইছামতী নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহটি বেনাপোল পোর্ট থানার চৌগাছার শাহাজাদপুরের জামিলুর রহমানের ছেলে সাকিবুর রহমানের (২২)। সে বেনাপোলের দিঘীরপাড় গ্রামের নানা বাড়িতে থাকতো এর আগে, সকালে একই এলাকার আরিফুল ইসলামের ছেলে সাবু হোসেন (৩৫) ও কাগজপুকুর গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের ৯৩০) মরদেহ সীমান্তের পাঁচভুলোট ও পুটখালী থেকে উদ্ধার করা হয়।
জাহাঙ্গীরের ভাই আলমগীর জানান, তার ভাই দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভারতে থাকেন। তিনি ভারতীয় একটি মেয়েকে বিয়ে করে ওই দেশেরই নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানে বসবাস করতেন। বর্তমানে ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় জাহাঙ্গীর অবৈধ পথে কয়েকদিন আগে ভারত থেকে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। মঙ্গলবার রাতে ভারতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। পরে সকালে লোকমুখে খবর পাই, জাহাঙ্গীরের মরদেহ পাঁচভুলোট সীমান্তের ইছামতী নদীর পাড়ে পড়ে আছে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
সাবু হোসেনের স্ত্রী হাসি বেগম জানান, সকালে লোকমুখে খবর পান পুটখালী সীমান্তের ইছামতী নদী পাড়ে তার স্বামী আহত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসার পথেই সাবু মারা যান। পরে পুলিশ এসে মরদেহ যশোর ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যান। মাঝে মাঝে তিনি মালামাল আনতে ভারতে যেতেন। বিএসএফের নির্যাতনে আমার স্বামী মারা গেছে।
সাকিবুরের মামা আজগার আলি বলেন, সাকিবুর ট্রাকের হেলপারি করতেন। মঙ্গলবার দুপুরে ট্রাকে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। বুধবার বিকালে লোকমুখে খবর পেয়ে শার্শার অগ্রভুলোট সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড়ে গিয়ে তার মরদেহ শনাক্ত করি। পরে জানতে পারি, লোভে পড়ে স্থানীয় কিছু চোরাকারবারির সঙ্গে সে মঙ্গলবার রাতে চোরাচালানের পণ্য আনতে গিয়েছিল ভারতে। কীভাবে মৃত্যু হলো, সে বিষয়ে পরিবার এখনও কিছুই জানতে পারেনি।
সীমান্তের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যে ৩ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে তাদের ৫-৭ জনের একটি দল আছে। তারা ভারত থেকে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক এবং চোরাচালানি পণ্য পাচার করে এনে দেশে সরবরাহ করে। বিএসএফের হাতে তারা আটক হয়। বিএসএফ আটকদের বেদম মারপিট করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে রাতের আধারে সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড়ে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয় লোকজন মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশ ও বিজিবিকে খবর দেয়। পরে সকালে দুইটি ও বিকেলে একটি মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। উদ্ধারকৃত মরদেহ গুলোর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
আর একটি সূত্র জানায়, ওই এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে লেনদেনের ঝামেলায় অথবা বিএসএফের নির্যাতনের শিকার হয়ে তাদের মৃত্যু হতে পারে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল মিয়া জানান, মরদেহ সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড়ে পড়ে আছে খবর পেয়ে শার্শা থানা ও বেনাপোল পোর্ট থানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত লাশের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ময়নাতদন্তের পর নিহতদের মরদেহ বৃহস্পতিবার নিজ নিজ এলাকায় দাফন করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোন মামলাও করা হয়নি। তবে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি পৃথক মামলা করেছে। কীভাবে মরদেহগুলো সীমান্তে নদীর পাড়ে এলো এবং কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি। ময়না তদন্ত রিপোর্টের পর প্রকৃত কারণ জান যাবে।
খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খুরশিদ আনোয়ার জানান, পাঁচভুলোট, অগ্রভুলাট ও পুটখালী সীমান্তের ইছামতী নদীর পাড় থেকে বুধবার সকালে ও বিকালে পৃথক পৃথক স্থান থেকে মরদেহগুলো পাওয়া যায়। পরে পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। বিএসএফের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কিছু জানে না বলে জানিয়েছে। দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শেষে কারণ জানা যাবে।
এদিকে একদিনে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। হত্যাকান্ডের শিকার তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে ওপার এপারে কেউ হত্যা করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তদন্তে নেমেছেন বলে জানা গেছে।#
প্রকাশক : মাসুদ রানা সুইট । সম্পাদক : আবুল হাসনাত অমি । নগর সম্পাদক : ইফতেখার আলম বিশাল নির্বাহী সম্পাদক : রুবেল আহম্মেদ । মফস্বল সম্পাদক : মোস্তাফিজুর রহমান । ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নীলা সুলতানা । বার্তা সম্পাদক : -------------- । সহ-বার্তা সম্পাদক : আলিফ বিন রেজা । সহ-বার্তা সম্পাদক :
Copyright © 2024 Dainiksopnerbangladesh.com. All rights reserved.