রায়হানুল হক রিফাত : রাজশাহীর মোহনপুরে গত বছরের তুলনায় ২৯% কৃষি জমিতে বেড়েছে আলু চাষ। ভাল দাম ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের পরামর্শ পেয়ে আলু চাষে ভাগ্য খোলায় এ বছর ৪৯২০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করেছে মোহনপুরের কৃষকরা, যেখানে গতবছর আলুর আবাদ ছিলো ৩৮২৫ হেক্টর।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীর মোহনপুরে আলুচাষিরা ক্ষেতের পরিচর্চা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ অঞ্চলে অর্থকরি ফসলের অন্যতম হচ্ছে পান চাষ ও আলুর আবাদ। বর্তমানে আলু আবাদ নিয়ে রঙ্গীণ স্বপ্ন বুনছে এ এলাকার চাষিরা। আগে প্রকৃত কৃষকদের ঠকিয়ে, শুধুমাত্র আলু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লাভবান হতো। কিন্তু বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে উৎপানের ফলে আলুর মান ও প্রশাসনের তদারকিতে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করায় প্রান্তিক কৃষকরাও আলু ভাল দাম পেয়েছেন। এবার আলু চাষ শুরুর আগেই প্রকৃত কৃষকদের মাঝে আলুর বীজ ও সার সরবারহ স্বাভাবিকসহ সকল ধরনের সিন্ডিকেট ভাঙতে আলু বীজ ব্যবসায়ী, হিমাগারের কর্তৃপক্ষ, সার ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথে একাধিক বার মিটিং করা সহ তৃণমূলে বীজ নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি সার বিতরণ কালে উপস্থিত থেকে কাজ করতে দেখা গেছে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়শা সিদ্দিকা, উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার (ভূমি) জোবায়দা সুলতানা, অতিরিক্ত কৃষি অফিসার এম. এ. মান্নানসহ উপজেলার সকল কৃষি কর্মকর্তাদের। বর্তমানেও তারা আলু চাষীদের সাথে মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ রেখে সরকারি দামে সার পাওয়ার ব্যপারে তদারকি করছেন ও কৃষকদের আলুসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনের মান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নানান ধরনের রোগ দমনের পরামর্শ দিচ্ছেন। তাই এবার মোহনপুরের কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রেখে হাসি মুখে জমিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।
ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের গোছা গ্রামের আলু চাষী আফাজ উদ্দিন বলেন, গত ৫ বছর আমি আলু উৎপাদন করে সংরক্ষণ করেছিলাম। পরে ভাল দামে বিক্রি করে লাভবান হয়েছি, তাই এবার ৮ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করছি। প্রথমে আলুর বীজ পাইতে কিছুতা সমস্যা হলেও পরে বীজ পেয়েছি। তবে এবার বিগত বছরের মতো সারের সংকটে ভুগতে হয়নি, আমার জমির চাহিদা মতো সার পেয়েছি। এছাড়া আমাদের যে কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কর্মকর্তারা আছেন তারা আমাদের জমি পরিদর্শন করে ভালো ফলনের দিক নির্দেশনা প্রদান করছেন।
ধুরইল ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, গত বছর আমি জমিতে সরিষা চাষ করেছিলাম। আলু দাম ভালো হওয়া দেকে আমি এবার সেই ৩ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছি। আমি আগাম সার কিনে রাখছিলাম, সেই গুলো পর্যায়ক্রমে আমার জমিতে প্রয়োগ করছি।
মৌগাছি ইউনিয়নের হরিহরপুর গ্রামের জোবায়ের হোসেন বলেন, আমি এবার ২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। প্রায় আমাদের বিলে এসে উপজেলা কৃষি অফিসার ফসল দেখে যান। আমাদের সকল ফসলের রোগ বালাই মুক্ত রাখতে ও ভালো ফলনের জন্য পরামর্শ দিয়ে যান।
মোহনপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, এবার মোহনপুর অঞ্চলে বিশেষ করে রাতে শৈত্যপ্রবাহ বৃদ্ধি থাকায় আলু উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করছি। প্রতিনিয়ত চাষিদের সাথে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ যোগাযোগ রাখছেন। সুষম সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আলু চাষে তারা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকের স্বার্থই সরকারের স্বার্থ। কৃষকের সেবা ও দেখভালের জন্যই আমরা নিয়োজিত।
তিনি আরো বলেন, এবছরে উপজেলা জুড়ে ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, এসটেরিক্স, এ্যালুয়েট, ষাটে জাতের আলু ৪৯২০ হেক্টর জমি চাষ হচ্ছে। আমাদের পরমার্শ ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০ টন করে উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ টন আলু উৎপাদন হবে বলেও জানান তিনি।
এবিষয়ে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়শা সিদ্দিকা বলেন, প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে আলু বীজ ও সার সরবরাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর একযোগে কাজ করছে। আলু অত্র অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফসল। আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি এই এলাকার চাষীদের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।