আরিফ রববানী ময়মনসিংহ।।
ময়মনসিংহে ২৪ ঘন্টায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের পর আসামীকে গ্রেফতার করে চমক দেখিয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা গোয়েন্দা শাখা ও কোতোয়ালী থানা পুলিশের চৌকস টিম এই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও হত্যাকারীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। খুনের ২৪ ঘন্টায় রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারে সক্ষম হওয়ায় জনমনে পুলিশের কার্যক্রমে ব্যাপক সন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে। মিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি জ্ঞাপনসহ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার(০৬ ডিসেম্বর) দুপুর ২ টায় ময়মনসিংহের নগরীর নওমহল এলাকার সারদা ঘোষ রোডস্থ নির্মাণাধীন ভবন টাওয়ার বিল্ডিং নং-৪৩-এর ৩য় তলায় এক যুবকের মৃতদেহের সন্দান পায় পুলিশ।
সংবাদ পেয়ে কোতোয়ালী থানার ৩নং ফাঁড়ির ইনচার্জ, অফিসার ইনচার্জ কোতোয়ালী মডেল থানা, জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ ও জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিং এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম মোহাইমেনুর রশিদ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান- নিহত শ্রমিকের নাম
রমজান আলী (২৪)। সে নির্মাণাধীন সেই
ভবনের নির্মাণ শ্রমিকদের ফোরম্যান হিসাবে কাজ করতেন। রমজান আলী নীলফামারী জেলার জলঢাকা থানার কাশিনাথপুর এলাকর পূর্ব বরগ্রামের
মোঃ রশিদুল ইসলামের পুত্র। পুলিশ নিহতের মৃতদেহ তার নিজ শয়নকক্ষে পেয়েছে বলে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশঙ্খা করে জানান-নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, তার মাথায় ভারী ভোতা বস্তু দ্বারা উপর্যুপরি আঘাতে তার মুখমন্ডল ও মস্তকের ডান অংশ পুরোপুরি বিকৃত অবস্থায় রয়েছে।ঘটনাটি ময়মনসিংহ শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
পরে সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা গোয়েন্দা শাখা ও কোতোয়ালী থানা পুলিশ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও হত্যাকারীকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে কার্যক্রম শুরু করে।
তিনি জানান-ভবনের অপরাপর নির্মাণ শ্রমিকদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ফোরম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে মৃত রমজান আলীর কাছে কতিপয় নির্মাণ শ্রমিকের মজুরী পাওনা ছিল।
সেই আলোকে ঘটনাস্থল থেকে জব্দকৃত ভিকটিমের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে এবং ভবনের প্রবেশপথে স্থাপিত একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে নির্মাণাধীন ভবনে রডমিস্ত্রি হিসেবে কর্মরত মোঃ আমিনুর ইসলাম (২৫)-কে সন্দিগ্ধ হিসেবে সনাক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে ডিবি ও কোতোয়ালী থানার একটি যৌথ আভিযানিক দল ০৭/১২/২০২৪ তারিখ সকাল ৭ টায় এই নারকীয় হত্যাকান্ড সংঘটনকারী আমিনুর ইসলামকে নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন শাহপ্রতাপ মোড় এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী আমিনুর জানায় যে,গত অক্টোবর মাসে সে রংপুর থেকে ময়মনসিংহে এসে উক্ত ভবনে রডমিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করে। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করার জন্য তার শশুর ও চাচা শশুরকে সে সাথে নিয়ে আসে।
প্রথম দুই সপ্তাহ তাদেরকে নিয়মিত পারিশ্রমিক প্রদান করা হলেও বিগত প্রায় দেড়মাস যাবৎ তারা নিয়মিত পারিশ্রমিক পেত না। একপর্যায়ে তার শশুর ও চাচা শশুর পারিশ্রমিক না নিয়েই গ্রামের বাড়ি ফিরে যায় এবং গ্রামের আত্মীয় স্বজনের কাছে আমিনুরের সম্মানহানি হয়।
এই ধারাবাহিকতায় গত ৬ নভেম্বর অনুমান বেলা ১২ টায় মৃত রমজানের সাথে আমিনুরের তীব্র বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে রমজান তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করলে আমিনুর উত্তেজিত হয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা ভারী লোহার রড দ্বারা রমজানের মাথায় স্বজোরে উপর্যুপরি আঘাত করে।
মৃত্যু নিশ্চিত করার পর সে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পলায়ন করে প্রথমে ঢাকা এরপর নারায়ণগঞ্জ এবং অবশেষে নরসিংদী গমন করে।
ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা লোহার রড জব্দ করা হয়।আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণে করা হবে।
এ সংক্রান্তে আজ ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ বিকাল ৪ টায় পুলিশ সুপার, ময়মনসিংহ এর সম্মেলন কক্ষে একটি প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়।পুলিশ সুপারের পক্ষে বেশ ব্রিফিং এ বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম মোহাইমেনুর রশিদ।
এসময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শহিদুল ইসলাম, কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম খান, ওসি তদন্ত সাইফুল ইসলাম ও সেকেন্ড অফিসার এস আই আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।