৬ এপ্রিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে হস্তান্তর করা হবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নবনির্মিত থার্ড টার্মিনাল। জানা গেছে, যাত্রী পরিবহণ পুরোপুরি চালু করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। টার্মিনালের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পরই শুরু হবে পুরোনো টার্মিনাল থেকে নতুন টার্মিনালে স্থানান্তরে অপারেশন রেডিনেন্স অ্যান্ড এয়ারপোর্ট ট্রান্সফার (ওআরএটি) প্রকল্পের কাজ। শুরুতে ৩-৪ মাস চলবে ট্রায়াল। ট্রায়াল শেষে অক্টোবরের শুরু থেকে অপারেশন শুরু করবে এ টার্মিনাল।
এদিকে প্রাথমিক অপারেশন চালুর প্রথমদিন থেকেই নতুন টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের প্রয়োজন হবে। সরকারের পক্ষ থেকে জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির কথা বলা হলেও মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। তাই শুরুতে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ দেওয়ার কথা ভাবছে বেবিচক। ইতোমধ্যে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে বিমান।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ৬ এপ্রিল থার্ড টার্মিনাল বুঝে নেওয়ার জন্য তারা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হতে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত সময় লাগবে। এই চুক্তি হয়ে গেলে তারা টেকওভার করবে। তবে আগস্টে টেকওভার করে অক্টোবরে পুরোপুরি অপারেশনে আনা অসম্ভব। তাই সিভিল এভিয়েশন ৬ এপ্রিল বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করে দেবে। বিমানকে আপাতত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ দিয়ে আমরা শুরু করব।
হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক একেএম মাকসুদুল ইসলাম বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের সিভিলসহ সব ধরনের কাজ শেষ। বেবিচকের ব্যবস্থাপনায় অক্টোবর থেকে টার্মিনালটি পুরোদমে চালু করতে কাজ চলছে। এজন্য অপারেশন রেডিনেন্স অ্যান্ড এয়ারপোর্ট ট্রান্সপার (ওআরএটি) বিষয়ক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এরই মধ্যে সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ও ক্যালিবেরেশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যা একাধিক যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল দ্রুত কাজ শেষ করার। তাই আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করছি। আরেকটি বিষয় বাজেটের মধ্যে কাজ করতে পেরেছি। সব প্রজেক্ট থেকে এটি ভিন্ন। কারণ নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে কাজ শেষ করা হয়েছে। এবং কাজের গুণগত মান বজায় রাখতে পেরেছি।
তিনি বলেন, যাত্রীদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করতেই এই টার্মিনাল করা হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি লাগানো হয়েছে। অক্টোবরে চালু হলে দেশি-বিদেশি যাত্রী বাড়বে। রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প ফেজ-১, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকার। সরকারের অগ্রাধিকারমূলক এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি রোহানি বাহারিনের করা নকশায় তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিটা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং। যা এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম নামে পরিচিত।
এর আগে ৭ অক্টোবর টার্মিনালটির আংশিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অক্টোবর থেকে তৃতীয় টার্মিনাল পুরোদমে চালুর পর বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়বে আড়াই গুণ। বাড়বে উড়োজাহাজ ওঠানামা। বছরে যাত্রী চলাচল ৮০ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে দুই কোটি ৪০ লাখে।
বেবিচক সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে দুটি টার্মিনালে জায়গা রয়েছে এক লাখ বর্গমিটারের কিছু বেশি। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এর সঙ্গে যুক্ত হবে আরও দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার জায়গা। তিনতলা টার্মিনাল ভবনে থাকছে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৪টি ডিপারচার ও ৬৪টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক। নিরাপত্তা নিশ্চিতে থাকবে ২৭টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ৪০টি স্ক্যানিং মেশিন, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১৬টি ক্যারোসেল ও ১১টি বডি স্ক্যানার।
তৃতীয় টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে। রানওয়েতে উড়োজাহাজের অপেক্ষা কমাতে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ে। পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দুটি ভবন। একসঙ্গে এক হাজার ৩৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তিনতলা ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। তৃতীয় টার্মিনালের মোট ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের মধ্যে প্রথম ধাপে চালু হবে ১২টি। বহির্গমনের জন্য মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টারের মধ্যে ১৫টি থাকবে সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টার। এছাড়া স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারও থাকবে ১০টি।
বেবিচক জানায়, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে দেশি-বিদেশি ৩৬টি এয়ারলাইন্স প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। তৃতীয় টার্মিনালকে ঘিরে ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ দেশিয় বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো। আগ্রহ দেখাচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোও।
প্রকল্প থেকে জানা যায়, তৃতীয় টার্মিনাল ভবনকে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযোগ করতে পাতালপথ ও উড়ালসড়ক থাকবে। স্বতন্ত্র কোনো ভিভিআইপি টার্মিনাল না থাকলেও টার্মিনাল ভবনের দক্ষিণ পাশে সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন জায়গা থাকবে।
প্রকাশক : মাসুদ রানা সুইট । সম্পাদক : আবুল হাসনাত অমি । নগর সম্পাদক : ইফতেখার আলম বিশাল নির্বাহী সম্পাদক : রুবেল আহম্মেদ । মফস্বল সম্পাদক : মোস্তাফিজুর রহমান । ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নীলা সুলতানা । বার্তা সম্পাদক : -------------- । সহ-বার্তা সম্পাদক : আলিফ বিন রেজা । সহ-বার্তা সম্পাদক :
Copyright © 2024 Dainiksopnerbangladesh.com. All rights reserved.