ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের মধ্যে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি করিডোর। বিশেষায়িত এ গণপরিবহনসেবা দিতে কেনা হচ্ছে ১৩৭টি ডিজেলচালিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস। এজন্য ১৮ এপ্রিল নতুন করে দরপত্র আহ্বান করেছে ঢাকায় বিআরটি নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থা ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানির কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিআরটি সেবার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। এর আগেও একবার বাস কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল বিআরটি কোম্পানি, যা পরে বাতিল হয়ে যায়।
বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি করিডোরে বিশেষায়িত বাসসেবা পরিচালিত হবে ‘ঢাকা লাইন’ নামে। আধুনিক এ গণপরিবহন ব্যবহার করে ঢাকা-গাজীপুরের মধ্যে কোনো ধরনের যানজট ছাড়াই যাতায়াত করতে পারবে যাত্রীরা। যানজট এড়িয়ে চলাচলের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষায়িত লেন। এ লেন দিয়ে কেবল বিআরটির বাস চলাচল করবে। ইন্টারসেকশন, মোড়, ফিডার রোডের সংযোগস্থলের মতো যানজটপ্রবণ এলাকায় বিআরটি লেনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ফ্লাইওভার। ফলে পথে কোথাও যানজটে পড়তে হবে না। এ করিডোর ব্যবহার করে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরে যেতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৫০ মিনিট। পুরো করিডোরে রয়েছে ২৫টি স্টেশন।
‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট’ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার প্রথম বাসভিত্তিক এ বিশেষায়িত সেবার জন্য ১৩৭টি বাস কেনা হচ্ছে। বাসগুলো কেনায় অর্থায়ন করছে ফ্রেঞ্চ ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এএফডি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় অধীন ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাস সংগ্রহ প্রক্রিয়া শেষ হলেই ঢাকা-গাজীপুরের মধ্যে বিআরটি সেবা চালু করে দেয়া হবে। আমরা আশা করছি, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ কার্যক্রম শুরু করতে পারব। প্রথম দিকে হয়তো সীমিত পরিসরে বাস চলাচল করবে। পর্যায়ক্রমে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে।’
চলমান দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছি। সাধারণত এ ধরনের দরপত্র জমা দেয়ার জন্য সর্বনিম্ন ৪২ দিন সময় দিতে হয়। আমরা সময় দিয়েছি ৫০ দিন। দরপত্র জমার পরে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথভাবে আমরা সেগুলো মূল্যায়ন করব। আমরা ওয়ার্ক অর্ডার না দেয়া পর্যন্ত কিন্তু দরপত্রে উত্তীর্ণ হওয়া কোম্পানি বাস তৈরি করবে না, যদি বড় কোম্পানি না হয়। কারণ বড় কোম্পানিগুলোর এমন বাস তৈরিই থাকে। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে সব না হলেও কিছুসংখ্যক বাস আমরা পেয়ে যাব। এসব বাস দিয়েই আমরা বিআরটি করিডোর উদ্বোধন করব।’
শুরুর দিকে সীমিত পরিসরে বিআরটি সেবা চালু হতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় মেট্রোরেল কিন্তু শুরুতেই পুরোপুরি চালু হয়নি। ধাপে ধাপে চালু হয়েছে। আর বিআরটি যেহেতু বাংলাদেশে নতুন, সেহেতু সেবাটির সঙ্গে মানুষের মানিয়ে নিতেও কিছুটা সময় লাগবে। এখন আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাস সংগ্রহ।’
ঢাকায় বিআরটি প্রকল্পের সূত্রপাত হয় সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (আরএসটিপি) আলোকে। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যে বিআরটি নির্মাণ হচ্ছে, সেটি চিহ্নিত করা হয়েছে বিআরটি-৩ নামে। ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বিআরটি করিডোর নির্মাণে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি) ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ)। সব মিলিয়েং প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।
প্রকল্পটির মাধ্যমে ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার বিশেষায়িত বাস লেন, টঙ্গী সেতু পুনর্নির্মাণ করে ১০ লেনে উন্নীতকরণ, সাতটি ফ্লাইওভার, একটি বাস টার্মিনাল, ১১৩টি সংযোগ সড়ক, উচ্চ ক্ষমতার ড্রেনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার সঙ্গে গাজীপুর, টঙ্গী ও উত্তরা এলাকায় দ্রুত, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব যাতয়াত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে বিআরটির মাধ্যমে। প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে ঢাকার যানজট নিরসনেও। ২০১২ সালে অনুমোদিত বিআরটি প্রকল্পের কাজ মাঠ পর্যায়ে শুরু হয় ২০১৭ সালে। নির্মাণকাজে ধীরগতি ও একাধিক দুর্ঘটনার কারণে বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছে এ প্রকল্প। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও প্রকল্পটিকে ‘গলার কাঁটা’ হিসেবে একাধিকবার অভিহিত করেছেন।
ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির তথ্য বলছে, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৯১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিআরটি করিডোরের বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। যেটুকু বাকি আছে তা ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে। বর্তমানে স্টেশনগুলোর ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। এ স্টেশনের সঙ্গে আবার অনেকগুলো বিষয় চলে আসে। লোকবল নিয়োগ, স্টেশন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ, অপারেটর নিয়োগের মতো কাজগুলো করতে হবে। সবকিছু আমরা পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে নিচ্ছি।’
প্রকাশক : মাসুদ রানা সুইট । সম্পাদক : আবুল হাসনাত অমি । নগর সম্পাদক : ইফতেখার আলম বিশাল নির্বাহী সম্পাদক : রুবেল আহম্মেদ । মফস্বল সম্পাদক : মোস্তাফিজুর রহমান । ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নীলা সুলতানা । বার্তা সম্পাদক : -------------- । সহ-বার্তা সম্পাদক : আলিফ বিন রেজা । সহ-বার্তা সম্পাদক :
Copyright © 2024 Dainiksopnerbangladesh.com. All rights reserved.