Dhaka 9:06 pm, Saturday, 21 December 2024

বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে রংপুরের আলু

রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় প্রত্যাশিত দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পাওয়ায় আলু চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে জমিতেই চড়া দাম পেয়ে খুশি তারা।আলু তুলেই লাভের মুখ দেখতে পাওয়ায় স্বস্তির ঢেঁকুর তুলছেন তারা।এবার ভালো দাম ও হিমাগারে ভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কায় জমিতেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা- এমনটাই জানা গেছে বিভিন্ন সূত্রে।তবে হিমাগারে রাখার পর শেষপর্যন্ত আলুর দাম কেমন মিলবে তা নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা।রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য আলু চাষ করতেন চাষিরা।চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় সেই সময় বিপাকে পড়তেন চাষিরা তবে বর্তমানে সেই সমস্যা নেই। আর লোকসানের শঙ্কা নেই। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনই দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।বর্তমানে রংপুরসহ বিভাগের আট জেলার আলু স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।আলুর বর্তমানে বড় বাজার তৈরি হয়েছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, নেপালসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানির প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাবসায়ীরা।সরেজমিন রংপুর নগরীর তামপাট, দর্শনা, মাহিগঞ্জ, সাতমাথা, বীরভদ্র বালাটারি, কলাবাড়ি, তপোধন, পশুরাম, কেরানিরহাটসহ সদরের জানকি ধাপেরহাট, পালিচড়া, পানবাড়ি, রামজীবন, শ্যামপুর, চন্দনপাট ও তিস্তা নদীবেষ্টিত রংপুরের পীরগাছার ছাওলা, শিবদেব, গাবুড়ার চর, কাউনিয়ার হারাগাছ, টেপামধুপুর, আজমখা, বুড়িরহাট, ভায়ারহাট, গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নারী-পুরুষ ও শিশুসহ দলবেঁধে মনের আনন্দে জমি থেকে আলু তুলছেন। পাইকাররা খেত থেকে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার স্থানীয় বাজারে কৃষক নিজে পাইকারি ও খুচরা দুইভাবেই আলু বিক্রি করছেন। চাষিরা বলছেন, চলতি বছর আলুর ফলন বাম্পার হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগবালাই কম হয়েছে। আলুর মান ও আকার অনেক ভালো। তবে কিছু স্থানে উৎপাদন কিছুটা কম হলেও চাহিদা ভালো। জমিতেই রকমভেদে প্রতি কেজি আলু ২৮ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।প্রত্যাশিত দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম পাওয়ায় এবার খুশি রংপুর অঞ্চলের আলু চাষিরা।রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলায় চলতি বছর ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।গতবারের চেয়ে এবার ৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর বেশি জমিতে স্থানীয় ও উফশী জাতের আলুর চাষ করা হয়েছে।এর মধ্যে তিস্তার চরাঞ্চলসহ রংপুর জেলাতেই আলু চাষ হয়েছে প্রায় ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ টন। তবে আশানুরূপ দাম ও চাহিদা থাকায় অনেক চাষি পরিপক্ব হওয়ার আগে খেতেই আলু বিক্রি করে দিয়েছেন।ইতোমধ্যে ৬০ ভাগ জমির আলু উত্তোলন হয়েছে বলে সূত্র জানায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলিক উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গত বছর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আলুর মোট উৎপাদন হয়েছিল ২৭ লাখ ৩২ হাজার ১৫৪ মেট্রিক টন।এবার এর চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।নগরীর তামপাট এলাকার চাষি নুর ইসলাম ও ইছার আলী বলেন, গত কয়েক বছর থেকে আলুর উৎপাদন ভালো হচ্ছে।তবে এবার প্রত্যাশিত দামের চেয়ে চড়া দামে আলু জমিতে বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে সৌদি আরব, মালোশিয়া, নেপাল, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হওয়ায় তারা স্বস্তিতে রয়েছেন। লোকসানের সম্ভাবনা এবার নেই।তবে হিমাগারে রাখার পর শেষ পর্যন্ত আলুর দাম কেমন মিলবে তা নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে। তাই জমিতেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন।রংপুর জেলা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোছদ্দেক হোসেন বাবলু জানান, রংপুর জেলায় ৩৯টি হিমাগার রয়েছে।প্রত্যেক বছর আলু উত্তোলন শুরু হবার পরেই হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয়; কিন্তু এবার ব্যতিক্রম।চলতি মৌসুমে চাহিদার কারণে আগাম ও অপরিপক্ব আলু জমিতেই বিক্রি করেছেন অনেক চাষি।এর ফলে হিমাগারগুলো খালি থাকার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে রংপুরের আলু

আপলোড সময় : 12:21:33 am, Saturday, 23 March 2024

রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় প্রত্যাশিত দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পাওয়ায় আলু চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে জমিতেই চড়া দাম পেয়ে খুশি তারা।আলু তুলেই লাভের মুখ দেখতে পাওয়ায় স্বস্তির ঢেঁকুর তুলছেন তারা।এবার ভালো দাম ও হিমাগারে ভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কায় জমিতেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা- এমনটাই জানা গেছে বিভিন্ন সূত্রে।তবে হিমাগারে রাখার পর শেষপর্যন্ত আলুর দাম কেমন মিলবে তা নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা।রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য আলু চাষ করতেন চাষিরা।চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় সেই সময় বিপাকে পড়তেন চাষিরা তবে বর্তমানে সেই সমস্যা নেই। আর লোকসানের শঙ্কা নেই। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনই দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।বর্তমানে রংপুরসহ বিভাগের আট জেলার আলু স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।আলুর বর্তমানে বড় বাজার তৈরি হয়েছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, নেপালসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানির প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাবসায়ীরা।সরেজমিন রংপুর নগরীর তামপাট, দর্শনা, মাহিগঞ্জ, সাতমাথা, বীরভদ্র বালাটারি, কলাবাড়ি, তপোধন, পশুরাম, কেরানিরহাটসহ সদরের জানকি ধাপেরহাট, পালিচড়া, পানবাড়ি, রামজীবন, শ্যামপুর, চন্দনপাট ও তিস্তা নদীবেষ্টিত রংপুরের পীরগাছার ছাওলা, শিবদেব, গাবুড়ার চর, কাউনিয়ার হারাগাছ, টেপামধুপুর, আজমখা, বুড়িরহাট, ভায়ারহাট, গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নারী-পুরুষ ও শিশুসহ দলবেঁধে মনের আনন্দে জমি থেকে আলু তুলছেন। পাইকাররা খেত থেকে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার স্থানীয় বাজারে কৃষক নিজে পাইকারি ও খুচরা দুইভাবেই আলু বিক্রি করছেন। চাষিরা বলছেন, চলতি বছর আলুর ফলন বাম্পার হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগবালাই কম হয়েছে। আলুর মান ও আকার অনেক ভালো। তবে কিছু স্থানে উৎপাদন কিছুটা কম হলেও চাহিদা ভালো। জমিতেই রকমভেদে প্রতি কেজি আলু ২৮ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।প্রত্যাশিত দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম পাওয়ায় এবার খুশি রংপুর অঞ্চলের আলু চাষিরা।রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলায় চলতি বছর ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।গতবারের চেয়ে এবার ৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর বেশি জমিতে স্থানীয় ও উফশী জাতের আলুর চাষ করা হয়েছে।এর মধ্যে তিস্তার চরাঞ্চলসহ রংপুর জেলাতেই আলু চাষ হয়েছে প্রায় ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ টন। তবে আশানুরূপ দাম ও চাহিদা থাকায় অনেক চাষি পরিপক্ব হওয়ার আগে খেতেই আলু বিক্রি করে দিয়েছেন।ইতোমধ্যে ৬০ ভাগ জমির আলু উত্তোলন হয়েছে বলে সূত্র জানায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলিক উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গত বছর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আলুর মোট উৎপাদন হয়েছিল ২৭ লাখ ৩২ হাজার ১৫৪ মেট্রিক টন।এবার এর চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।নগরীর তামপাট এলাকার চাষি নুর ইসলাম ও ইছার আলী বলেন, গত কয়েক বছর থেকে আলুর উৎপাদন ভালো হচ্ছে।তবে এবার প্রত্যাশিত দামের চেয়ে চড়া দামে আলু জমিতে বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে সৌদি আরব, মালোশিয়া, নেপাল, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হওয়ায় তারা স্বস্তিতে রয়েছেন। লোকসানের সম্ভাবনা এবার নেই।তবে হিমাগারে রাখার পর শেষ পর্যন্ত আলুর দাম কেমন মিলবে তা নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে। তাই জমিতেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন।রংপুর জেলা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোছদ্দেক হোসেন বাবলু জানান, রংপুর জেলায় ৩৯টি হিমাগার রয়েছে।প্রত্যেক বছর আলু উত্তোলন শুরু হবার পরেই হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয়; কিন্তু এবার ব্যতিক্রম।চলতি মৌসুমে চাহিদার কারণে আগাম ও অপরিপক্ব আলু জমিতেই বিক্রি করেছেন অনেক চাষি।এর ফলে হিমাগারগুলো খালি থাকার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।