আওয়ামী লীগের ২৫, শেখ হাসিনার ২১তম
আরও আট বছর আগেই সবচেয়ে বেশি বাজেট দেওয়ার রেকর্ড গড়ে আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাও রেকর্ড গড়েছেন আরও আগেই।
গতকাল জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেটটিসহ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার এ পর্যন্ত ২৫ বার, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ২১ বার এবং ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ টানা ১৬ বার বাজেট দিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ৫৩তম বাজেট, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষে ২১তম বাজেট। বাজেট ঘোষণায় আওয়ামী লীগের পরই রয়েছে বিএনপি। তিন মেয়াদে দলটির নেতৃত্বাধীন সরকার ১৬টি বাজেট দিয়েছে। আর জাতীয় পার্টি দিয়েছে ৯টি। জনগণের আস্থার কারণেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার বাজেট পেশের রেকর্ড করতে পেরেছে বলে মনে করেন দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। গতকাল বিকালে জাতীয় সংসদে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শিরোনামে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এবারের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেট পেশ করার পর রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতৃত্বগুণে ভোটের আগে জনবান্ধব, গণমুখী এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সহায়ক বাজেট পেশ করার মধ্য দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১২ জন ৫১টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩০ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম বাজেট পেশ করে। অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ উপস্থাপিত সে বাজেটটি ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। এরপর ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালেও তিনি বাজেট পেশ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সরকারের দ্বিতীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে ড. এ আর মল্লিক দেশের চতুর্থ বাজেট উপস্থাপন করেন। এটিই ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের শেষ বাজেট। ওই বাজেটের আকার ছিল ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা আসে। ১৯৯৭ সালের ২৮ জুন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ঘোষণা করেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম বাজেট। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরের ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকার সে বাজেট তৎকালীন সরকারের শেষ বছরে গিয়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকায়। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় এলে প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যা পরবর্তী কয়েক অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে বেশ বড় আকার নেয়। নবম জাতীয় সংসদের শেষ বাজেটেই রেকর্ড ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ক্ষমতায় এসে তৃতীয়বারের মতো অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন আড়াই লাখ কোটি টাকার ওপরে। আওয়ামী লীগ সরকারের পঞ্চম মেয়াদের প্রথম বাজেট দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট দেন। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য তৃতীয়বারের মতো ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট দেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। দেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি। বাজেট অধিবেশনে ছিল রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ। গতকাল বাজেট পেশ করার পর আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এবারের বাজেট হলো জনবান্ধব বাজেট। এ বাজেটে মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। সংকটের মধ্যেও স্বস্তির এ বাজেট। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংকটের এই সময়ে গণমুখী বাজেট হয়েছে। দলের নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকার ও অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় নিয়ে বাজেট দেওয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেও একই ফোকাস থাকবে। বাস্তবসম্মত হয়েছে এ বাজেট।’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে এগিয়ে যাচ্ছি, এ বাজেটের মাধ্যমে সেটাই প্রমাণ।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জনবান্ধব সরকার। জনগণের কথা চিন্তা করেই সরকার এ বাজেট দিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ হয়েছে, এখন স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।’
সংসদ অধিবেশন থেকে বেরিয়ে সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করেন। দেশের ইতিহাসে সেরা বাজেট দিয়ে শুধু সরকারেরই নয়, দেশেরও সক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই দেশ এগিয়ে যাবে।’