Dhaka 3:08 am, Monday, 23 December 2024

বদলগাছীতে ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এক নারী উদ্যোক্তা

২০১৯ সাল থেকে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত এক নারী উদ্যোক্তা। নিয়েছেন কেমো থেরাপি। কিছুদিন আগে ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন তিনি। মোটামুটি সুস্থ, তবে মনের দিক থেকে শান্তিতে নেই তিনি। কারণ ক্যান্সারের মতো এক চেয়ারম্যানের সাথে যৌন হয়রানির মামলায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি চেয়ারম্যান মাসুদ রানার রিটের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে করা আপিল গ্রহণ করায় তার মনোবল এখনও শক্ত। আগামী মে মাসে মামলার তারিখ আছে। বিষয়টি চেয়ারম্যান নিশ্চিত করেছেন। তাই ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে যেমন টিকে আছেন, তেমনি চেয়ারম্যানের সাথে লড়াই করেও জিততে চান তিনি। স্বামীসহ জমজ দুই মেয়েকে নিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। চেয়ারম্যানের যৌন হয়রানির কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে। ঘটনাটি নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের এক নারী উদ্যোক্তার কথা। গত ২০১০ সালের ১১নভেম্বর থেকে ওই ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) নারী উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করছেন তিনি।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগ থেকে চেয়ারম্যান মাসুদ রানা তাকে বিভিন্ন ভাবে যৌন হয়রানিসহ মোবাইল ফোনে এবং বেশকিছু চিঠির মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে যৌন হয়রানি আরও বেড়ে যায়। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ব্যবহৃত মুঠোফোনটি কেড়ে নেন। এরপর মুঠোফোন থেকে কিছু গোপন তথ্য ডিলিট করে পরবর্তীতে স্থানীয় লোকের মাধ্যমে ফোনটি ফেরত দেন। চেয়ারম্যানের কারণে সংসারে কলহের সৃষ্টি হয়েছে, যার পরিণতি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে। সামাজিক ভাবে সম্মানহানি হয়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে ভূক্তভোগী নারী উদ্যোক্তা ২০২২ সালের ১৩ জুন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২২ সালের ২৬অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমীন প্রধান স্বাক্ষর করা কারণ দর্শানোর নোটিশের এক স্মারকে চেয়ারম্যান মাসুদ রানার বিরুদ্ধে কেন ইউনিয়ন পরিষদ আইন-২০০৯ অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবেনা তার জবাব ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দিতে বলা হয়েছিল।

এরপর গত ২৩ সালের ২২ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান সই করা এক প্রজ্ঞাপনে চেয়ারম্যান মাসুদ রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এক নারী উদ্যোক্তাকে যৌন হয়রানি এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯- এর ৩৪ (ঘ) ধারা অনুযায়ী নওগাঁ জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল এবং ২০০৯ এর ৩৪ (৪) (ঘ) ধারার অপরাধ সংঘটিত করায় ধারা ৩৪ (১) অনুযায়ী উল্লিখিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে তার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ভূক্তভোগী বলেন, চেয়ারম্যান তার বহিস্কারের স্থগিতাদেশ চেয়ে গত ২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২য় সপ্তাহে হাইকোর্টে রিট করেন। তার রিটের প্রেক্ষিতে বহিস্কারাদেশ বলবৎ রাখার জন্য আমিও একই বছরের ২৩ জুন আপিল করি। বিচারক সেই আপিলটি গ্রহণ করে পরপর পোস্ট অফিসের মারফত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে আমাকে দুটি চিঠি প্রেরণ করেন। ফলে এখন আইনী লড়াই করে আমার সাথে করা অন্যায়ের জবাব দিতে পারবো।

ওই নারী উদ্যোক্তা বলেন, ঘটনার পর থেকে কর্মস্থলে কোনো কাজ করতে পারিনা। চেয়ারম্যান করতে দেননা। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন বিভাগে লিখিত অভিযোগ দেই। তার প্রেক্ষিতে তদন্তকারীরা যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পান। চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করায় আমি সন্তুষ্ট নই। তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করলেই আমি সন্তুষ্ট হবো।

মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদ রানা মুঠোফোনে বলেন, বহিস্কারাদেশের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করে রিট করেছি। এখনও পর্যন্ত এই অবস্থায় আছি। নারী উদ্যোক্তার আপিলের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী ৩ মে মামলার তারিখ আছে। অভিযোগ অস্বীকার করে আইনী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান তিনি।

চেয়ারম্যানের রিট ও ভূক্তভোগীর আপিল করার বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সোহেল রানা মুঠোফোনে বলেন, আমি আপনার তথ্যগুলো নিলাম, খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com

বদলগাছীতে ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এক নারী উদ্যোক্তা

আপলোড সময় : 08:14:14 pm, Saturday, 30 March 2024

২০১৯ সাল থেকে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত এক নারী উদ্যোক্তা। নিয়েছেন কেমো থেরাপি। কিছুদিন আগে ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন তিনি। মোটামুটি সুস্থ, তবে মনের দিক থেকে শান্তিতে নেই তিনি। কারণ ক্যান্সারের মতো এক চেয়ারম্যানের সাথে যৌন হয়রানির মামলায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি চেয়ারম্যান মাসুদ রানার রিটের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে করা আপিল গ্রহণ করায় তার মনোবল এখনও শক্ত। আগামী মে মাসে মামলার তারিখ আছে। বিষয়টি চেয়ারম্যান নিশ্চিত করেছেন। তাই ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে যেমন টিকে আছেন, তেমনি চেয়ারম্যানের সাথে লড়াই করেও জিততে চান তিনি। স্বামীসহ জমজ দুই মেয়েকে নিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। চেয়ারম্যানের যৌন হয়রানির কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে। ঘটনাটি নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের এক নারী উদ্যোক্তার কথা। গত ২০১০ সালের ১১নভেম্বর থেকে ওই ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) নারী উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করছেন তিনি।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগ থেকে চেয়ারম্যান মাসুদ রানা তাকে বিভিন্ন ভাবে যৌন হয়রানিসহ মোবাইল ফোনে এবং বেশকিছু চিঠির মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে যৌন হয়রানি আরও বেড়ে যায়। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ব্যবহৃত মুঠোফোনটি কেড়ে নেন। এরপর মুঠোফোন থেকে কিছু গোপন তথ্য ডিলিট করে পরবর্তীতে স্থানীয় লোকের মাধ্যমে ফোনটি ফেরত দেন। চেয়ারম্যানের কারণে সংসারে কলহের সৃষ্টি হয়েছে, যার পরিণতি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে। সামাজিক ভাবে সম্মানহানি হয়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে ভূক্তভোগী নারী উদ্যোক্তা ২০২২ সালের ১৩ জুন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২২ সালের ২৬অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমীন প্রধান স্বাক্ষর করা কারণ দর্শানোর নোটিশের এক স্মারকে চেয়ারম্যান মাসুদ রানার বিরুদ্ধে কেন ইউনিয়ন পরিষদ আইন-২০০৯ অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবেনা তার জবাব ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দিতে বলা হয়েছিল।

এরপর গত ২৩ সালের ২২ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান সই করা এক প্রজ্ঞাপনে চেয়ারম্যান মাসুদ রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এক নারী উদ্যোক্তাকে যৌন হয়রানি এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯- এর ৩৪ (ঘ) ধারা অনুযায়ী নওগাঁ জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল এবং ২০০৯ এর ৩৪ (৪) (ঘ) ধারার অপরাধ সংঘটিত করায় ধারা ৩৪ (১) অনুযায়ী উল্লিখিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে তার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ভূক্তভোগী বলেন, চেয়ারম্যান তার বহিস্কারের স্থগিতাদেশ চেয়ে গত ২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২য় সপ্তাহে হাইকোর্টে রিট করেন। তার রিটের প্রেক্ষিতে বহিস্কারাদেশ বলবৎ রাখার জন্য আমিও একই বছরের ২৩ জুন আপিল করি। বিচারক সেই আপিলটি গ্রহণ করে পরপর পোস্ট অফিসের মারফত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে আমাকে দুটি চিঠি প্রেরণ করেন। ফলে এখন আইনী লড়াই করে আমার সাথে করা অন্যায়ের জবাব দিতে পারবো।

ওই নারী উদ্যোক্তা বলেন, ঘটনার পর থেকে কর্মস্থলে কোনো কাজ করতে পারিনা। চেয়ারম্যান করতে দেননা। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন বিভাগে লিখিত অভিযোগ দেই। তার প্রেক্ষিতে তদন্তকারীরা যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পান। চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করায় আমি সন্তুষ্ট নই। তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করলেই আমি সন্তুষ্ট হবো।

মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদ রানা মুঠোফোনে বলেন, বহিস্কারাদেশের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করে রিট করেছি। এখনও পর্যন্ত এই অবস্থায় আছি। নারী উদ্যোক্তার আপিলের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী ৩ মে মামলার তারিখ আছে। অভিযোগ অস্বীকার করে আইনী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান তিনি।

চেয়ারম্যানের রিট ও ভূক্তভোগীর আপিল করার বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সোহেল রানা মুঠোফোনে বলেন, আমি আপনার তথ্যগুলো নিলাম, খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।