বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দীর্ঘ ৮ বছর পর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে পেট্রোবাংলা। সমুদ্রের ২৪টি ব্লক ইজারা দিতে আজ রোববার দরপত্র প্রকাশ করা হবে। ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দর প্রস্তাব দাখিল করতে হবে। সেগুলো মূল্যায়নে এক বছর সময় লাগতে পারে।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোকে (আইওসি) দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী করে তুলতে একাধিক রোডশোর আয়োজন করা হবে। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন দেশের ৫৫টি কোম্পানিকে দরপত্রে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এর মধ্যে মার্কিন কোম্পানি শেভরন, এক্সোনমবিল, কনোকো ফিলিপস, ডিভন এনার্জি, যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, তাল্লো, শেল ও নেপচুন এনার্জি, চীনের চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল, চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, সিনোপ্যাক, ভারতের ওএনজিসি ও অয়েল ইন্ডিয়া, ফ্রান্সের টোটাল এনার্জিস, অস্ট্রেলিয়ার সান্তোস, রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ও লুকঅয়েল উল্লেখযোগ্য।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, দর প্রস্তাব দাখিলের জন্য ৬ মাস সময় দেওয়া হবে। অনেক কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সাগরে অনুসন্ধান কার্যক্রম
বঙ্গোপসাগরে গভীর-অগভীর সমুদ্রে মোট ২৬টি ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ১১টি। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সর্বশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৬ সালে। ২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। ২০০৮ সালে ডাকা দরপত্রের মাধ্যমে ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে দুটি ব্লকে কাজ নেয় কনোকো ফিলিপস। তারা দ্বিমাত্রিক জরিপ চালালেও পরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। এ ছাড়া একইভাবে চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার সান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু। দাইয়ু কাজ করে গভীর সমুদ্রের ১২ নম্বর ব্লকে।
বর্তমানে একমাত্র কোম্পানি হিসেবে অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি। এ দুটি বাদ দিয়ে বাকি ২৪টি ব্লকে দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে।
বেড়েছে গ্যাসের দাম
মডেল পিএসসি-২০২৩ অনুযায়ী বিদেশি কোম্পানিগুলোকে ব্লক ইজারা দেওয়া হবে। সংশোধিত এ মডেল চুক্তি অনুযায়ী, সাগরে গ্যাস পাওয়া গেলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের ১০ শতাংশ ধরে সরকার প্রতি ইউনিট গ্যাস কিনবে। ২০১৯ সালের মডেল পিএসসিতে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের প্রাথমিকভাবে অনুমিত মূল্য ধরা হয় অগভীর ও গভীর সমুদ্রে যথাক্রমে ৫ ডলার ৬০ সেন্ট ও ৭ ডলার ২৫ সেন্ট। এবার হিসাব করা হবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দামের সারা মাসের গড় মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ ধরে।
নতুন মডেল পিএসসি চুক্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের হিস্যা গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করবে। তবে ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের দুই বছরের মধ্যে কূপ খনন করে গ্যাস না পেলে বা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য না হলে শর্তসাপেক্ষে যথাক্রমে ১ ও ২ শতাংশ হিস্যা বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।
এক্সোনমবিলের প্রস্তাব
মার্কিন কোম্পানি এক্সোনমবিল গভীর সমুদ্রের ১৫ ব্লকে বিনা দরপত্রে কাজ চেয়েছিল। গত বছরের মার্চে কোম্পানিটি এ বিষয়ে দুই দফায় প্রস্তাব দেয়। এর মধ্যে গত বছরের ১৬ জুলাই এক চিঠিতে কোম্পানিটি গভীর সমুদ্রে ২৫-৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগেরও কথা জানায়।
সর্বশেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি এক্সোনমবিলের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জ্বালানি সচিব ও পেট্রোবাংলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন তারা। কিন্তু মার্কিন কোম্পানিটি দরপত্রে অংশ নেবে কিনা, সে বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি।
ভারত ও মিয়ানমারের সাফল্য
গভীর বঙ্গোপসাগরে নিজ সীমানায় অনুসন্ধান চালিয়ে এরই মধ্যে বড় সাফল্য পেয়েছে ভারত ও মিয়ানমার। চলতি বছরের শুরুতে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে গভীর সাগরে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বড় মজুত আবিষ্কার করেছে ওএনজিসি।
আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমানার নিকটবর্তী এলাকার মিয়া ও শোয়ে নামে দুটি গ্যাসকূপ থেকে এরই মধ্যে কয়েক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে ফেলেছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় মিয়ানমারের। এরপর ২০১৩ সালে এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে দেশটি।