বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। বাংলাদেশের অস্তিত্ব আর জাতির পিতার জীবন এক সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন আত্মনির্ভরশীল সমৃদ্ধ জাতি। বাঙালি, বাংলার স্বাধীনতা, স্বাধিকার আন্দোলন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর দুটি বিপ্লব ছিল। প্রথমটি- বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা। নিজস্ব মানচিত্র, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা। বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দ্বিতীয় বিপ্লব হলো- ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ে তোলা। নিরস্ত্র জাতিকে ধীরে ধীরে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করে মাত্র নয় মাসে সুসজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ জয় করার দুঃসাহসিক মনোবল তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু। জাতিকে দিয়েছেন আত্মমর্যাদা। বিশ্বের ইতিহাসে তৈরি করেছেন নতুন ভূখণ্ড; ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের লাল-সবুজের বাংলাদেশ।
জাতির পিতা শুধু একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেননি, স্বাধীন রাষ্ট্রের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেননি, স্বাধীন রাষ্ট্রটি কেমন হবে তার একটি রূপকল্প তৈরি করেছিলেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে যেভাবে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন, তেমনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্ত বাংলাদেশে ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তার দ্বিতীয় বিপ্লব অর্থাৎ সোনার বাংলার রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কেমন বাংলাদেশ চান, তার একটি স্বপ্নও বঙ্গবন্ধু এঁকেছিলেন। সেই স্বপ্নের চূড়ান্ত পরিণতি হলো- আধুনিক, অসা¤প্রদায়িক, প্রগতিশীল, স্ব-নির্ভর আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কেমন বাংলাদেশ চান- তার চিন্তার প্রকাশ তিনি ঘটিয়েছেন বহুবার।
বঙ্গবন্ধু দেশ ও দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করতেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, হেঁটে, গরুর গাড়িতে চড়ে সারাদেশ ঘুরে তিনি সংগঠন গড়েছিলেন। তিনি যেখানে যেতেন সেখানকার দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর আর্থিক অবস্থা কেমন তা জেনে নিতেন। সে তথ্য খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। যখন যেভাবে পারতেন নেতাকর্মীদের সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। তার কাছে কেউ কখনো কিছু চেয়ে খালি হাতে ফেরেনি।
বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতেন। সেই স্বপ্ন নিজের জন্য নয়। বাঙালির মনের ভেতরের সুপ্ত বাসনাগুলো জানতেন বঙ্গবন্ধু। সমস্ত বাঙালির স্বপ্নের বোঝা কাঁধে নিয়েছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর শাসনামলে সংবিধান, রাষ্ট্রীয় কাঠামো গঠন, অর্থনৈতিক মুক্তি, ধর্ম নিরপেক্ষক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ভিত স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ অর্জন, দক্ষ পররাষ্ট্রনীতি, কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন, ফারাক্কা চুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করে বিশ্বের মানচিত্রে বাঙালিকে আত্ম-মর্যাদাশীল জাতিতে পরিচিত করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যান বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৪ সালেই সমুদ্রসীমার রূপরেখা দিয়ে গেছেন তিনি। কক্সবাজারকে পর্যটনকেন্দ্র করা, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক নির্মাণ, এফডিসি স্টুডিও প্রতিষ্ঠা, পরিকল্পনা কমিশন গঠন, ওয়াপদা প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তার ভাবনার প্রতিফলন পাওয়া যায়। তার দ্বিতীয় স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার আগেই ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নেয় তার প্রাণ। পিতৃহন্তারকরা মুছে দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর আঁকা স্বপ্নের ক্যানভাস, রক্তাক্ত করেছে বঙ্গবন্ধুর দেয়া বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান।
পিতৃ হত্যার দায় নিয়ে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া জাতিকে অন্ধকারের চোরাগলি থেকে আবারো উন্নয়নের আলোতে নিয়ে আসেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অর্ধশতক পেরোনো বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণেই দুপারের স্বপ্ন ছুঁয়েছে পদ্মা সেতু। মেট্টো রেল, এলিভেটর এক্সপ্রেস, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বন্দর, বঙ্গবন্ধু টানেল থেকে শুরু করে মহাবিশ্বে উড়ছে বাংলাদেশের পতাকা। পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নেই রূপকল্প-২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে বিভোর জাতি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ রূপান্তরিত হয়েছে উন্নয়নের বাংলাদেশে, পদার্পণ করেছে উন্নয়নশীল দেশে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল ক্ষুধামুক্ত দেশ। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে চলছে ৫৩ বছর বয়সি বাংলাদেশ। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ হয়েছে। মুজিববর্ষে গৃহহীন মানুষকে পাকা বাড়ি দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নত দেশের মতোই। টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান প্রতিশ্রæতি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া। বাঙালির আলোকবর্তিকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছেন কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। টুঙ্গিপাড়ার খোকার জন্মদিনে বিন¤্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। ‘অঞ্জলি লহো পিতা।’