ক্ষমার প্রভাবে শত্রু বন্ধু হয়ে যায় : ক্ষমা এমন এক অদৃশ্য শক্তি, যা ঘোরতর শত্রুকেও আপন বানিয়ে দেয়। প্রতিশোধস্পৃহা সব ধরনের অশান্তি তৈরি করে। সর্বত্র শান্তি এনে দিতে পারে প্রতিশোধ নয়—ক্ষমা। অত্যাচার ও উৎপীড়নের প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কারো প্রতি সহনশীলতা ও উদারতা প্রদর্শন করাকে ক্ষমা বলা হয়। ক্ষমা মানুষের মহত্ত্বের লক্ষণ। প্রতিশোধ নয়, বরং ক্ষমা প্রদর্শন ও বিনয়ের মাধ্যমেই মানুষের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। সর্বোপরি কাউকে ক্ষমা করার মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা লাভ ও ভালোবাসা পাওয়া যায়।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায় ব্যয় করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। আর এ ধরনের সৎকর্মশীলদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)
কাউকে ক্ষমা করার মাধ্যমে যেমন মানসিক শান্তি পাওয়া যায়, তেমনি সমাজের মানুষের কাছে সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। আবু হুরায়া (রা.) থকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না, আর যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে সবাইকে কিছু ক্ষমতা দান করেন। এই ক্ষমতা কিছু লোকের জন্য আল্লাহর রহমত হিসেবে আবির্ভূত হয়, আবার কিছু লোকের জন্য ধ্বংসের কারণ হয়। যারা ক্ষমতার যথার্থ ব্যবহার করে, ইনসাফ ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে ক্ষমতা প্রয়োগ করে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে, অধীনস্থ মানবতার প্রতি সুবিচার ও ন্যায্য আচরণ করে সর্বোপরি মানবতার কল্যাণে ক্ষমতাকে ব্যবহার করে তাদের জন্য ক্ষমতা আল্লাহর বিশেষ রহমত হিসেবে দেখা দেয়। দুনিয়া ও আখিরাতে এদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সীমাহীন মর্যাদা ও সম্মান। কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে যখন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না, সেই দিন সাত ব্যক্তি আরশের ছায়াতলে স্থান পাবেন, হাদিসের ভাষায় তাদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হলেন ‘ন্যায়পরায়ণ শাসক’। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহারকারী কোনো জালিমকে আল্লাহ তায়ালা কখনো পছন্দ করেন না। ক্ষমতার প্রকৃত মালিক আল্লাহ তায়ালা। তিনি যাকে চান ক্ষমতার সামান্য দান করেন। কিন্তু মানুষের ক্ষমতা অস্থায়ী একটি বিষয়। এটি কারো মধ্যে স্থায়ীভাবে অবস্থান করে না। আজ আপনি বিশাল ক্ষমতার অধিকারী, কাল ক্ষমতাহীন সাধারণ মানুষ। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘বলো, হে আল্লাহ! বিশ্ব-জাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও। যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান করো এবং যাকে চাও লাঞ্ছিত ও হেয় করো। কল্যাণ তোমার হাতেই নিহিত। নিঃসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী।"
সুতরাং কেউ শাসনক্ষমতা বা অন্য কোনো দায়িত্ব পেলে অহঙ্কার বা বড়াই না করে পূর্ণ আমানতদারিতার সাথে ক্ষমতার প্রয়োগ করতে হবে। কেউ যাতে জুলুমের শিকার না হয় সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। যার যা প্রাপ্য তাকে তা বুঝিয়ে দিতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারো অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলে পরকালে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করে ক্ষমতার ুযোগ রহণ করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বা প্রভাব খাটিয়ে অন্যায়ভাবে স্বার্থ হাসিল করা ক্ষমতার সুস্পষ্ট অপব্যবহার। ক্ষমতা বা পদ-পদবি ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে জনগণ ও রাষ্ট্রের সম্পদ লুট করে সম্পদের পাহাড় গড়া অন্যায় ও জুলুম।
লেখক: চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ,শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।
প্রকাশক : মাসুদ রানা সুইট । সম্পাদক : আবুল হাসনাত অমি । নগর সম্পাদক : ইফতেখার আলম বিশাল নির্বাহী সম্পাদক : রুবেল আহম্মেদ । মফস্বল সম্পাদক : মোস্তাফিজুর রহমান । ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নীলা সুলতানা । বার্তা সম্পাদক : -------------- । সহ-বার্তা সম্পাদক : আলিফ বিন রেজা । সহ-বার্তা সম্পাদক :
Copyright © 2024 Dainiksopnerbangladesh.com. All rights reserved.