বিমার প্রকৃত দাবিদার যেন স্বল্প সময়ে বিমা কোম্পানির কাছ থেকে তাদের দাবি বুঝে পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিমা খাতের উন্নয়নে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ এখনো বিমার বিষয়ে সচেতন নয়। আমরা সবাইকে সচেতন করতে ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন ও বিমা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএকে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। বিমার প্রকৃত দাবিদারের দাবি স্বল্প সময়ে বুঝিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ‘করব বিমা গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’ এমন প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল শুক্রবার সারাদেশে পালিত হয়েছে জাতীয় বিমা দিবস। সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র বিমা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিমা শিল্পের ওপর এবং ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’-এর ওপর নির্মিত পৃথক দুটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও বিমা নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ও সেরা বিমা প্রতিষ্ঠানের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশে বর্তমানে মোট ৮১টি বিমা কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিমার আওতায় এসেছে ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষ। বিমা খাতের সার্বিক উন্নয়ন ও বিমা সম্পর্কে মানুষের ইতিবাচক ধারণা ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর দেশে পালিত হয়ে থাকে জাতীয় বিমা দিবস। বিমা খাতের উন্নয়ন ও বিকাশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিমা মানুষের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষের জীবনকে ঝুঁকিমুক্ত করতে সাহায্য করে। বঙ্গবন্ধু বিমা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। পাকিস্তান আমলে নানা বাঁধার মধ্যেও বঙ্গবন্ধু এই বিমার কাজের জন্য দেশের নানা জায়গায় ঘুরে রাজনৈতিকভাবে মানুষকে সংগঠিত করেছেন। স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন।
সরকারপ্রধান বলেন, অনেকেই অসাধু উপায়ে বিমার সুবিধা নিয়ে থাকেন। তাদের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বিমার দাবি মেটানোর ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে কোনো একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ঘন ঘন আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে একটি ভয়াবহ চিত্র দেখতে পান বলে জানান। যেখানে প্রায় একটি পরিত্যক্ত জায়গায় কিছু মালপত্র, বর্জ্য রেখে ওই কোম্পানির এক শ্রমিককে ২০ হাজার টাকা দিয়ে সেখানে আগুন লাগিয়ে ৪০ কোটি টাকা বিমা দাবি করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে অনেক সময় বিমা কোম্পানির
লোকজন যারা তদন্তে যান তাদেরও ম্যানেজ করার অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে যথাযথ তদন্তপূর্বক অর্থ ছাড় করারও পরামর্শ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যারা বিমার সঙ্গে জড়িত অবশ্যই তারা এই বিষয়টাতে গুরুত্ব দেবেন। আর এই ধরনের ঘটনা যেন কেউ আর ঘটাতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের লক্ষ্য দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার হলেও দুর্ঘটনা, দুর্বিপাক যে কোনো সময় ঘটতে পারে। তাছাড়া আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এক্ষেত্রে মানুষকে একটু সঞ্চয়মুখী করা, মানুষকে আরো উদ্বুদ্ধ করা, উৎপাদন বাড়ানো এবং মানুষকে নিরাপত্তা দেয়া জরুরি। আর এক্ষেত্রে ইন্সুরেন্স মানুষকে নিরাপদ জীবন দিতে পারে। কোনো দুর্ঘটনা বা অসুখ-বিসুখ হলে এই বিষয়ে ইন্সুরেন্স করা থাকলে পরে মানুষ অন্তত নিশ্চিত থাকতে পারে বিমার টাকা পাওয়ার। এ বিষয় সম্পর্কে মানুষকে আরো জানানো দরকার।
তিনি বলেন, সরকার বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ায় একের পর এক যখন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিচ্ছিল তখন অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা (উন্নয়ন সহযোগী) প্রশ্ন তুলেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি এত ছোট, এতগুলো ব্যাংক দিয়ে কী হবে? আমার উত্তর ছিল- আমাদের অর্থনীতি এত ছোট থাকবে না, অবশ্যই বড় হবে। সেই বড়তো আমরা করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের ব্যাংকগুলো উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত শাখা খুলতে যাচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো কাজ করছে। সে সঙ্গে এই বিমাগুলো যখন যুক্ত হবে এবং বিমার প্রিমিয়াম দেয়া শুরু করে সবকিছু ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে, অনলাইনে করা যাবে, তখন মানুষের আর ওই দ্বিধা থাকবে না। ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রিমিয়াম জমা হবে। এইজন্য আলাদা করে জমা ও দিতে হবে না তামাদীও হবে না। এতে ইন্সুরেন্সেরও লাভ হবে ব্যাংকেরও সুবিধা হবে। ব্যাংকের কার্যক্রমও বাড়বে।
বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে মর্মান্তিক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের প্রাণহানির ঘটনা খুবই দুঃখজনক। অপরিকল্পিতভাবে ভবনটি নির্মাণ করায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ভবনটির নির্মাণ কাজের ত্রæটি নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকাশক : মাসুদ রানা সুইট । সম্পাদক : আবুল হাসনাত অমি । নগর সম্পাদক : ইফতেখার আলম বিশাল নির্বাহী সম্পাদক : রুবেল আহম্মেদ । মফস্বল সম্পাদক : মোস্তাফিজুর রহমান । ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নীলা সুলতানা । বার্তা সম্পাদক : -------------- । সহ-বার্তা সম্পাদক : আলিফ বিন রেজা । সহ-বার্তা সম্পাদক :
Copyright © 2024 Dainiksopnerbangladesh.com. All rights reserved.