আগামী এপ্রিলেই বেড়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা। সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) আগামী এপ্রিলের শুরুতেই পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে (পিসিটি) অপারেশন শুরু করবে। শুরুতে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ছাড়া গিয়ারভ্যাসেল হ্যান্ডলিং এর মাধ্যমে পিসিটিতে কার্যক্রম শুরু হবে। পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট স্থাপন করে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হবে। পিসিটি চালুর মাধ্যমে বন্দরের বিদ্যমান কন্টেনার হ্যান্ডিলং সক্ষমতা এক লাফে বেশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে পিসিটির কার্যক্রম শুরু হলে বন্দরের হিস্যায় ভাগ বসবে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল, নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল এবং জেনারেল কার্গো বার্থের তিনটি জেটিতে কন্টেনার ভ্যাসেল হ্যান্ডলিং করা হয়। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের চাহিদার পুরোটাই সামাল দিয়ে চলেছে। অফিসিয়ালি যে সক্ষমতার কথা বলা হয় বাস্তবে তার থেকে বহু বেশি সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে বন্দর।
বন্দরের সিসিটি, এনসিটি এবং জেনারেল কার্গো বার্থে কন্টেনার হ্যান্ডলিং অফিসিয়াল সক্ষমতা বিশ লাখ টিইইউএসের কম হলে বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ৩৩ লাখের বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর রেকর্ড করেছে। বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, বিদ্যমান ইকুইপমেন্ট এবং অবকাঠামোতে বন্দর অনায়াসে ৩৫ লাখ টিইইউএসের বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে পারবে। ইয়ার্ড সুবিধাসহ ব্যাকআপ ফ্যাসিলিটি বাড়ানোর ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর ক্ষেত্রে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বেসরকারি আইসিডিগুলোও বন্দরের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করায় বন্দরে কন্টেনারজট হচ্ছে না। বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে কন্টেনার রাখার সক্ষমতাও বেশ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডে ৫০ হাজার টিইইউএসের বেশি কন্টেনার রাখার জায়গা থাকলেও সেখানে গড়ে ৪০ হাজারের কম কন্টেনার থাকছে। ফলে ইয়ার্ডে ইকুইপমেন্ট মুভমেন্ট গতিশীল হয়েছে। যার সার্বিক প্রভাব পড়ছে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে (পিসিটি) অফিসিয়াল সক্ষমতা সাড়ে ৪ লাখ টিইইউএস হলেও যথোপযুক্ত ইককুইপমেন্ট সংযোজনের মাধ্যমে এই টার্মিনাল অনেক বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে পারবে বলে শিপিং বিশেষজ্ঞরা জানান। তারা বলেন, সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) নিজের দেশসহ বহুদেশে টার্মিনাল অপারেট করে। বেশ আগ্রহ নিয়ে তারা পিসিটি ইজারা নিয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে শুরুতে তারা কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রধান ইকুইপমেন্ট কী গ্যান্ট্রি ক্রেন স্থাপন করতে পারছে না। এ জন্য আরো বেশ কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, ইকুইপমেন্ট খাতে বিনিয়োগের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আর্থিক সংকট। কিন্তু রেড সি গেট ওয়ের সেই সংকট নেই। উপচে পড়া অর্থ রয়েছে পেট্রো ডলারে সমৃদ্ধ দেশটির। ২২ বছরের জন্য পিসিটি ইজারা নেয়া সৌদি রাজ পরিবারের মালিকানাধীন কোম্পানিটি পৃথিবীর সেরা ইকুইপমেন্টেরই সংযোজন ঘটাবে। তারা এই টার্মিনালের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগই নেবে। এছাড়া অবস্থানগত কারণে বড় এবং বেশি ড্রাফটের জাহাজ এই টার্মিনালে নোঙর করতে পারবে। যা পিসিটি কন্টেনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতায় নয়া মাত্রা যোগ করবে বলেও সূত্রগুলো আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
আগামী মাস কয়েকের মধ্যে পিসিটি চালু হলে তা বন্দরের বিদ্যমান ৩৫ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর সক্ষমতা বেশ বৃদ্ধি পাবে। যা দিয়ে দেশের আগামী বেশ কয়েক বছরের চাহিদা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন, দেশের বর্তমান যে বৈদেশিক বাণিজ্য তাতে সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হতে পারে। পিসিটি অপারেশন শুরু করলে বন্দরের বিদ্যমান বাণিজ্য থেকে বেশ বড় একটি অংশ পিসিটিতে চলে যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, পিসিটি এপ্রিলের শুরুতে অপারেশন শুরু করবে। শুরুতে তারা কী গ্যান্ট্রি ক্রেনে অপারেশন করতে পারবে না। তবে মাস কয়েকের মধ্যে তারা কী গ্যান্ট্রি ক্রেন আনার পদক্ষেপ নেবে। শুরুতে তারা জাহাজের ক্রেন দিয়ে কন্টেনার হ্যান্ডলিং শুরু করবে বলেও বন্দর সচিব জানান।